ধারাবাহিক পতনের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজার। গত সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৭০৫ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহে এর পরিমাণ ছিল ৫৫২ কোটি টাকা। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে হাজার কোটি টাকা। প্রায় আড়াই মাস পর প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭৪ কোটি টাকার।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের মতো দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবারও পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মিলেছে। এর মাধ্যমে শেষ ছয় কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকল পুঁজিবাজার।
এ বিষয়ে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছায়েদুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন নেতিবাচক ধারায় ছিল। মূলত পুঁজিবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা বা গুজবের কারণেই বাজারটা নেতিবাচক অবস্থানে ছিল। গত সপ্তাহে পুঁজিবাজার সম্পর্কে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।’
গতকাল ডিএসইর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়লেও ১৬টি প্রতিষ্ঠান বড় দাপট দেখিয়েছে। লেনদেনের বেশির ভাগ সময় এই ১৬ প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে। অপরদিকে দিনের সর্বোচ্চ দামে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের জন্য বিপুল পরিমাণে ক্রয়ের আদেশ আসে। কিন্তু বিক্রেতারা সর্বোচ্চ দামেও শেয়ারগুলো ছাড়তে রাজি হননি।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কর্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। এতে এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ৬ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। আর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ৯৭ দশমিক ১৭ পয়েন্ট। এ পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার।
আর গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। লেনদেনের পুরো সময়ে এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৫২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৬টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৫৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭১টির দাম বেড়েছে ৪ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে ৫২টির দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি। আর ১৬টির দাম এক দিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৭২৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে হাজার কোটি টাকার ঘরে চলে আসে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২৭৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ১৫ ফেব্রুয়ারির পর ডিএসইতে আবারও হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।
অপর পুঁজিবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১২৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৮টির এবং ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।