বছরের দ্বিতীয়ার্ধে রিফাইনারি মার্জিন (পরিশোধনাগারের লাভ) কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী গ্যাসোলিন বা পেট্রলের চাহিদা বৃদ্ধি ২০২৪ সালে অর্ধেকে নামতে পারে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈদ্যুতিক গাড়িতে (ইভি) স্থানান্তর এবং কোভিড-১৯-এর পর গত বছর থেকে জ্বালানির ব্যবহার স্বাভাবিক হওয়ায়, চলতি বছর পেট্রলের চাহিদা কমবে। খবর বিবিসির।
প্রসঙ্গত, রিফাইনারি মার্জিন হলো পরিশোধনাগারের লাভ নির্ণয়ের একটি মাপকাঠি। এটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাঁচামাল (অপরিশোধিত তেল) থেকে পরিশোধিত পণ্য (যেমন- গ্যাসোলিন, ডিজেল, জেট ফুয়েল) উৎপাদনের মাধ্যমে পরিশোধনকারী কোম্পানি কতটা লাভ করেছে সেটিকে বোঝায়।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উডম্যাকেনজি (উডম্যাক) জানিয়েছে, ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন গতিতে এগিয়ে যাওয়া জ্বালানির চাহিদা চলতি বছর দৈনিক ৩ লাখ ৪০ ব্যারেল (বিপিডি) বৃদ্ধি পেয়ে ২ কোটি ৬৫ লাখ বিপিডি হবে। এটি গত বছরের ৭ লাখ বিপিডি চাহিদা বৃদ্ধির থেকেও কম। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চীনে পরিবহন জ্বালানির চাহিদা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর কাছাকাছি অবস্থান করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই তাদের সর্বোচ্চ স্তর অতিক্রম করেছে। এ কারণে জ্বালানি চাহিদা বৃদ্ধির হার কমেছে।
উডম্যাকের বিশ্লেষক সুশান্ত গুপ্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে ইলেকট্রিক যানবাহনের যুগে প্রবেশের মাত্রা বাড়ছে। তিনি বলেন, ইভি গ্রহণে প্রচণ্ড ঝোঁকের কারণে চলতি বছর চীনে জ্বালানির চাহিদা বাড়বে মাত্র ১০ হাজার বিপিডি।
পরামর্শক সংস্থা রিস্ট্যাড এনার্জির বিশ্লেষক মুকেশ সহদেব বলেছেন, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী গ্যাসোলিনের চাহিদা ২ কোটি ৬০ লাখ বিপিডি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ লাখ বিপিডি বৃদ্ধির তুলনায় এবার প্রায় ৩ লাখ বিপিডি বৃদ্ধি পাবে। এর আগে মহামারির পর ভোক্তা ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে ২০২৩ সালে গ্যাসোলিনের চাহিদা এই হারে বৃদ্ধি পায়।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) বলেছে, একসময় বিশ্বের পেট্রলের চাহিদা পরিবর্তনের বড় পরিচালক ছিল চীন। তবে চলতি বছরে বিশ্বে মোট ইভি বিক্রির অর্ধেকেরও বেশিতে দেশটি অবদান রাখবে বলা ধারণা করা হচ্ছে।
চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিএনপিসি) একটি গবেষণা শাখার পূর্বাভাস বলছে, বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি পণ্যের আমদানিকারক চীনের গ্যাসোলিনের ব্যবহার এই বছর প্রায় ১ দশমিক ৩০ শতাংশ বা প্রায় ২০ লাখ টন বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ কোটি ৫১ লাখ টন (৩৮ লাখ বিপিডি) দাঁড়াবে।
চীনের সবচেয়ে বড় পরিশোধনাগার সিনোপেকের একটি গবেষণা সংস্থার প্রত্যাশা হলো, এই বছর পেট্রলের চাহিদা ১ দশমিক ৭০ শতাংশ বা প্রায় ৩০ লাখ টন বেড়ে ১ কোটি ৮২ লাখ টন হবে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) অনুমান অনুসারে, দাম কমে যাওয়ায় পাশাপাশি চাহিদা বাড়ায়, চলতি বছর চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ির শেয়ার ৪৫ শতাংশ, ইউরোপে প্রায় ২৫ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১১ শতাংশের বেশি হতে পারে।
তুলনামূলকভাবে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি এবং কম ইভি তৈরি, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় পেট্রলের চাহিদাকে চালিত করছে।
সরকারি একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ মাস থেকে ভারতে পেট্রলের ব্যবহার ৩ কোটি ৯২ লাখ টনের (৯ লাখ ৮ হাজার বিপিডি) নতুন রেকর্ডে পৌঁছাবে, যা ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যবহার হওয়া ৩ কোটি ৭২ লাখ টন থেকে প্রায় ৫ শতাংশ বেশি।
ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের দৈনিক পেট্রলের ব্যবহার সর্বোচ্চ ৩৯ কোটি ২০ লাখ গ্যালনে পৌঁছানোর পর, ২০২৩ সালে মার্কিন পেট্টলের ব্যবহার দৈনিক ৩৭ কোটি ৬০ লাখ গ্যালনে (৮৯ লাখ ৪০ হাজার বিপিডি) নেমে এসেছে। তবে ২০২৪ সালে চাহিদা হ্রাস বা বৃদ্ধি হবে না বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।
উডম্যাক ও রাইস্ট্যাডের বিশ্লেষকরা বলেছেন, এর ফলে গ্রীষ্মের শীর্ষ যানবাহন চালানোর মৌসুমের পর মার্কিন রিফাইনিং মার্জিন চাপের মধ্যে পড়বে।
জ্বালানি পরামর্শক সংস্থা এফজিই জানিয়েছে, ২০২৪ সালে ইউরোপে পেট্রলের চাহিদা ৫০ হাজার বিপিডি বা ২ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়ে মোট ২১ লাখ ৯০ হাজার বিপিডি হবে। এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।