মুক্তির তিন দিনের মাথায় স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে ‘শ্যামাকাব্য’ সিনেমাটি প্রত্যাহার করলেন নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ।
প্রযোজক-পরিচালকদের সঙ্গে দাক্ষিণ্যমূলক আচরণ, দুর্বল প্রদর্শন ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু কারণ দেখিয়েছেন তিনি। গত শুক্রবার দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি।
গত রোববার এ নিয়ে বিস্তারিত একটি লেখা পোস্ট করেন সৌদ। তিনি লেখেন, ‘নিম্নলিখিত কারণগুলোতে স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে আমার ‘শ্যামাকাব্য’ চলচ্চিত্রটি প্রত্যাহার করতে চাই। প্রথমত, প্রজেকশন সমস্যার কারণে দর্শকরা ছবিটি দেখার যথাযথ অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে উদ্বোধনী দিনে প্রায় হাউসফুল শো বাতিল করেছি। তবে পরদিন কর্তৃপক্ষ হল পরিবর্তন করে প্রজেকশন সমস্যাটির সমাধান করে। দ্বিতীয়ত, শো শুরুর পরদিন দেখা গেল শো চলার সময় এমন একটি দৃশ্যের পর বিরতি দেওয়া হয়েছে, যে সিকোয়েন্সের পর বিরতি দেওয়া যায় না। এই ঘটনায় প্রদর্শকের এই পেশাদারত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। সবশেষ, মিস রেবেকা শুক্রবার দুপুর ২টা ৫৮ মিনিটে প্রথম দিনের টিকিট বিক্রির একটা পরিসংখ্যান দেখিয়েছেন। পরদিন আমরা একই সময়ের টিকিট বিক্রির পরিসংখ্যানের মধ্যে অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছি। আমরা অনুরোধ করেছিলাম যে, আমাদের সকালের শো প্রয়োজন নেই। তারা শনিবার আমাদের অনুরোধ রেখেছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রবিবার দেখা গেল, শনিবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি! সেদিন সকালে কয়েকটি শো রাখা হয়েছিল। মিস রেবেকা, স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে আমি আমার ছবি প্রত্যাহার করতে চাই। দয়া করে আমার ছবির আর কোনো শো চালাবেন না।’
স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘শ্যামাকাব্য’র শো বন্ধ হয়েছে। শুরুতে স্টার সিনেপ্লেক্সের পান্থপথ শাখায় চারটি ও মিরপুরের সনিতে দুটো প্রদর্শনী হতো। দুটো প্রেক্ষাগৃহের কোনোটিতেই আর চলছে না শ্যামাকাব্য। বিস্তারিত জানতে চাইলে চলচ্চিত্রকার সৌদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের কাউকে প্রয়োজন নেই। বরং তাদেরকেই সবার দরকার। সবাই তাদের কাছে ধর্ণা দেয়। আমার মনে হয় না, অন্য কেউ স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে তিন দিনের মাথায় নিজ দায়িত্বে ছবি তুলে নিয়েছে। তারা নির্মাতা ও প্রযোজককে যে মানসিক পীড়া দেয়, সেটা থেকে বের হতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা মাথার ওপর একটা খড়্গ ঝুলিয়ে রাখে। স্টার সিনপ্লেক্সের মালিকেরা হয়তো এসবের কিছুই জানেন না। হলের কর্মকর্তাদের ব্যবহার এমন, যেন তারা প্রযোজক-পরিচালকদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য করছেন। এ রকম আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিনিয়ত কেন মনে করিয়ে দিতে হবে যে, ছবি ভালো না চললে নামিয়ে দেওয়া হবে! প্রথম দিন থেকেই তো আর প্রচুর টিকিট সেল হবে না। ধীরে ধীরে সেল বাড়বে।’
এ প্রসেঙ্গে স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই হলে শুধু বাংলা সিনেমা না, হলিউডের সিনেমাও চলে। প্রদর্শন নিয়ে কেউ কখনও অভিযোগ করেননি। তবু তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা হল পরিবর্তন করেছি। তারপরও তিনি ছবি প্রত্যাহার করেছেন। স্টার সিনেপ্লেক্স হয়তো তার সিনেমা চালানোর যোগ্য নয়।’ মেজবাহ জানান, ‘শ্যামাকাব্য’ সরিয়ে ওই সময়গুলোতে ‘কাজলরেখা’ চালানো হচ্ছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পায় শ্যামাকাব্য। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল মণ্ডল, ইন্তেখাব দিনার, নীলাঞ্জনা নীলা প্রমুখ। গত বছরের নভেম্বর মাসে ছবিটি মুক্তির কথা থাকলেও নির্বাচনের আগে সহিংসতার আশঙ্কায় ছবি মুক্তি পিছিয়ে দেন নির্মাতা। পরে গত শুক্রবার ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয়। রাজধানী ঢাকার অপর মাল্টিপ্লেক্স ব্লকবাস্টার সিনেমাসে ছবিটি চলছে।
জাহ্নবী