আজ ২৫ বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী। এ উপলক্ষে বাংলাভিশনে সরাসরি গান পরিবেশন করবেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অণিমা রায়। এ ছাড়া দেশের কয়েকটি চ্যানেলে গান নিয়ে হাজির হবেন তিনি। গান ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন এ মিজান
রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আপনার ব্যস্ততা কেমন?
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে বড় অনুষ্ঠান ছিল, কিন্তু আমাদের ভিসি মহোদয় সময় দিতে পারছেন না বলেই অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই অনুষ্ঠানটি হবে। এ ছাড়া সকালে চ্যানেল আইতে তারকাকথন অনুষ্ঠানে থাকব। অনুষ্ঠানের মধ্যে পাপিয়া সারওয়ার আপাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হবে। রাতে বাংলাভিশনে সরাসরি অনুষ্ঠানে গান গাইব। বিটিভিতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান যাবে। এ ছাড়া চ্যানেল আইতে সন্ধ্যা ৬টায় আমার পাঁচটা নতুন গান নিয়ে একটা অনুষ্ঠান প্রচার হবে, যেখানে ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় আবৃত্তি করবেন। এনটিভিতেও একটা অনুষ্ঠান প্রচার হবে। এ ছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৩ দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানের ২য় দিন আমি গাইব শিল্পকলায়।
রাতে সরাসরি অনুষ্ঠানে কোন গানগুলো গাইবেন?
আসলে এই বিশেষ দিনগুলোতে রবীন্দ্রনাথের সব ধরনের গান স্পর্শ করার চেষ্টা করি আমি। পূজা, প্রেম, প্রকৃতি থেকে শুরু করে ভানুসিংহের পদাবলী মানে সব ধরনের শ্রোতার কথা চিন্তা করেই গান করি। কারণ রবীন্দ্রনাথকে সবাই ভালোবাসেন। একেক শ্রোতা রবীন্দ্রনাথের একেক ধরনের গান পছন্দ করেন। তাই সবার কথা ভেবেই অনুষ্ঠান সাজিয়েছি।
রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন বা মৃত্যুদিবস এলেই টেলিভিশনগুলোতে নানা আয়োজন দেখা যায়। সারা বছর কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তেমন আয়োজন চোখে পড়ে না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
এই অভিযোগ এখন ঢালাওভাবে করা যাবে না। কারণ কিছু চ্যানেল নিয়মিত রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আয়োজন করে থাকে। এই চ্যানেলে আমরা ঘুরেফিরে গান করি। তাই ২৫ বৈশাখ বা ২২ শ্রাবণ শুধু যে অনুষ্ঠান করছি তা নয়। সারা বছর ধরেই কিছু চ্যানেলে রবীন্দ্রনাথের গান করছি। তবে শুধু সকালের এইটুকু অনুষ্ঠানে দু-তিনটা চ্যানেলের যে উদ্যোগ তা কিন্তু যথেষ্ট নয়। কারণ দেশে অনেক টিভি চ্যানেল আছে। আমাদের ইয়াং জেনারেশন সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে কিন্তু ওই সময়গুলোতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কোনো আয়োজন করা হয় না। তরুণ প্রজন্মের জন্য এই আয়োজন আরও বেশি দরকার। কারণ তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি অস্থির। তাই তাদের মনোযোগী করার জন্য রবীন্দ্রচর্চা চিন্তাভাবনা করেই অ্যাপ্লাই করতে হবে। কারণ এটা হচ্ছে মেডিসিনের মতো। আমাদের প্রজন্মের অসুখ হচ্ছে অস্থিরতা।
তাই তাদের মাঝে স্থিরতা, মনোযোগ ও মানবিকতা সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য রবীন্দ্রনাথের চর্চার বিকল্প নেই। আর এ জন্য প্রাইম টাইমে টিভিতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের একটা রবীন্দ্র মঞ্চ নেই, যেখানে রবীন্দ্রনাথের গান, নাটক বা চিত্র প্রদর্শনী হবে। যেখানে আমাদের একটা রবীন্দ্র মঞ্চ নেই, সেখানে কীভাবে বলি আমরা রবীন্দ্রনাথকে ‘ওন’ করি। যে মানুষটা আমাদের জাতীয় সংগীতের রূপকার। আমাদের বঙ্গবন্ধু যেটা আগেই বুঝেছিলেন, আমরা যদি এখন এসে সেটা বুঝতাম তাহলে কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ শুধু ইট, পাথর আর বড় বড় ফ্লাইওভারেই উন্নত হতো না। মানবিকতা ও সুন্দর মনের দিক দিয়ে উন্নত হতো।
সৃষ্টিশীলতার দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের গান হয়, আবার দুই মাস পর হারিয়ে যায়। এ প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথকে পরিচয় করে দেওয়ার জন্য আমরা যদি দেশকে ভালোবেসে থাকি, তাহলে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোসহ চ্যানেলগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে প্রাইম টাইমে বেশি অনুষ্ঠান প্রচার করা।
তার মানে রবীন্দ্রচর্চা যথেষ্ট হচ্ছে না?
চর্চা হচ্ছে একটা শ্রেণির কাছে। যেমন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ছেলেরা আসছে, শিখছে। কিন্তু এত বড় বাংলাদেশে ঘরে ঘরে রবীন্দ্রচর্চা হচ্ছে না। আমাদের গভীর ভাবনার মানুষ আসছে না। একটা ভালো বই নেই ঘরে ঘরে। রবীন্দ্রনাথের একটা বই তরুণদের হাতে আমরাও তুলে দিচ্ছি না। এটা তো ওদের অপরাধ নয়, এটা আমাদের দায়। সবকিছু মিলিয়ে একটা ছন্দহীনতা আছে।
এ সময়ে তরুণ প্রজন্ম যারা রবীন্দ্রসংগীত গাইছেন, তাদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কেমন?
আমার কাছে মনে হয় এখন সবাই সবকিছু করতে চায়। মানে রবীন্দ্রনাথের গানও একটু গাইব, আবার অন্য গানও গাইব। তারা আসলে গানটা গাইতে চায়। শুধু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে থাকার জন্য যে ধৈর্য দরকার সেটা সবার নেই। আর সাধনার জায়গাটা একেবারে নেই বললেই চলে। কারণ রবীন্দ্রসংগীতে মাস্টার্স করা ছেলেমেয়েদেরও আমরা আটকে রাখতে পারি না। তারা অন্য গানও গায়। ওদের টিকে থাকতে হবে। ওরা ভয় পায়।
কোনো আক্ষেপ আছে?
রবীন্দ্রনাথের গান দিয়ে আমাদের এখানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া যায় না। এটা খুবই একটা খারাপ দিক। এটা নিয়ে আমাদের সবার কথা বলা উচিত। এটার একটা সংস্কার হওয়া দরকার। অন্য গীতিকবি বা শিল্পীদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, রবীন্দ্রনাথের মূল্যায়ন সেভাবে হয় না। এই মূল্যায়ন সঠিকভাবে হলে আজ সাদি মহম্মদ স্যার আমাদের ছেড়ে এভাবে চেলে যেতেন না।
আপনার ‘সুরবিহার’ স্কুলের কী খবর?
‘সুরবিহার’ থেকে অনেক ছেলেমেয়ে বের হচ্ছে। সম্প্রতি চ্যানেল আইতে একটা লাইভ করলাম আমরা। আবার সামনে একটা অনুষ্ঠান করব।
নতুন কাজের ব্যস্ততা জানতে চাই?
নতুন দশটি গান করেছি। গত ঈদে চ্যানেল আইতে পাঁচটি গান ভিডিও আকারে প্রচার হয়েছে। আর পাঁচটি গান আজ সন্ধ্যায় আবার প্রচার হবে। যেখানে ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় আবৃত্তি করেছেন। এই গানগুলোই আমার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করব।
কলি