নন্দিত অভিনেতা আজিজুল হাকিম। মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী করতে বর্তমানে তিনি আমেরিকায় রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য হয়েছেন। এসব বিষয়ের পাশাপাশি অভিনয় এবং অন্যান্য প্রসঙ্গে আমেরিকা থেকে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ মিজান
সেন্সর বোর্ডের সদস্য হলেন। অভিনন্দন আপনাকে।
কেমন লাগছে?
অনেক অনেক ধন্যবাদ। সেন্সর বোর্ডের সদস্য হয়ে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আমার দায়িত্ব আরও অনেক বেশি বেড়ে গেল। শিল্পী হিসেবে যে দায়িত্ববোধের কথা আমরা সব সময় বলে থাকি, এটি আরও একধাপ এগিয়ে গেল। চেষ্টা করব আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে।
সেন্সর বোর্ডে কাজের ক্ষেত্রে কোন দিকগুলোয় গুরুত্ব দিতে চান?
চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নে চলচ্চিত্রের ছাড়পত্রের যে বিষয়টি, এই ক্ষেত্রে কাজ করতে পারার সুযোগ পেয়ে নিজেকে খুব সম্মানিতবোধ করছি। অভিনয়, গল্প, সংগীত, এডিটিং সবকিছু মিলিয়েই একটি পরিপূর্ণ চলচ্চিত্র হয়। যেহেতু এটি একটি বোর্ড, এখানে অনেক অভিজ্ঞ সদস্য আছেন, আমরা সবাই মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব। যেহেতু আমি অভিনয়শিল্পী তাই আমার ফোকাসটা অভিনয়ের ওপর বেশি থাকবে।
আপনি বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছেন। প্রবাসে বসে এমন খবরে কেমন অভিবাদন পেয়েছেন?
সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ও টেলিফোনে আমার যারা শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন তারা সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমাকে যারা ভালোবাসেন, আমার প্রতি যাদের প্রত্যাশা আছে তারা আমাকে অভিনন্দিত করেছেন। আমার এই প্রাপ্তিতে সবাই অনেক বেশি আনন্দিত হয়েছেন, সেটি আমি বুঝতে পেরেছি।
সেন্সর বোর্ড নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করতে চান?
আসলে বোর্ড যখন তার সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভালো চলচ্চিত্রের ছাড়পত্র দেবে এবং সেগুলো যখন দর্শকদের ভালো লাগবে, তখন কিন্তু সমালোচনা থাকবে না। সঠিক কাজের মাধ্যমেই আমরা সব সমালোচনা মোকাবিলা করব।
যারা গঠনমূলক সমালোচনা করবেন, আমরা অবশ্যই তাদের সমালোচনা গ্রহণ করব। আর যারা সমালোচনা করার জন্য সমালোচনা করবে, সেটি ভিন্ন কথা। আমি মনে করি, এখনই কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার অবস্থা তৈরি হয়নি। নতুন সেন্সর বোর্ড আগে কাজ শুরু করুক, তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হবে।
সেন্সর বোর্ডের হস্তক্ষেপের কারণে চলচ্চিত্রে স্বাধীন গল্প দেখাতে পারেন না নির্মাতারা। এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। আপনি কী মনে করেন?
আমি মনে করি, সেন্সরের কারণে স্বাধীনভাবে নির্মাতা গল্প দেখাতে পারেন না, এটি ঠিক নয়। চলচ্চিত্র কিন্তু একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। এই গণমাধ্যমে আমরা আমাদের সমাজের কথা, দেশের কথা বলতে পারি। এটির একটি প্রভাব আছে। আমি স্বাধীন মানেই যা ইচ্ছা তাই করব বা দেখাব, সেই ভাবনা থেকে নির্মাতাদের বেরিয়ে আসা উচিত। আমি যে কাজটি করতে চাই যদি আমার পরিবার, সমাজ ও দেশকে নীতিবাচকভাবে প্রভাবিত না করে, তাহলে অবশ্যই আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পাবে। সুতরাং এই বিষয়টি চিন্তার কিছু নেই।
প্রবাসে বসে জন্মদিন পালন করলেন। বিশেষ কোনো আয়োজন ছিল কি?
আমার এবারের জন্মদিনটি পালন করেছি আমেরিকার বাফেলোতে। খুবই সুন্দর একটি জায়গা। এখানে আমার আত্মীয়স্বজন যারা আছেন, তারা সবাই মিলে আমার জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিয়েছেন। আমার মেয়ে বাচ্চাদের মতোই আমার বার্থডে আয়োজন করেছিল। এবার আরও বেশি ভালো লেগেছে। কারণ যে নাটকের শো করতে আমেরিকায় এসেছি, তার সবগুলো শো অনেক বেশি সাকসেস হয়েছে। আর এখানে বসেই সেন্সর বোর্ডের সদস্য হয়েছি, এই খবরটিও পেয়েছি। সেটিও আমার জন্মদিনের একটি বিশেষ উপহার বলে মনে করি। সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ করেছি।
আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে মঞ্চনাটকে অভিনয় করছেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
আমি ১৯৯৬ সাল থেকে দেশের বাইরে নিয়মিতভাবে মঞ্চনাটকে কাজ করছি। ইংল্যান্ড, দুবাই, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ অনেক দেশে মঞ্চনাটকে কাজ করেছি। দেশের বাইরে আমাদের বাংলাদেশি যে কমিউনিটি আছে তাদের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মঞ্চে নাটক করার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। আমি দেশের বাইরে যে নাটকগুলো করি, তার অধিকাংশ নাটকই আমার স্ত্রী জিনাত হাকিমের লেখা। আমেরিকার বোস্টন থেকে এবার নাটকের শো শুরু করেছি। এরপর নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, বাফেলো স্টেটগুলোতে ‘দুই দুই গুনে চার’, ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’ নাটকগুলোর শো করেছি। এই যে প্রতিবার এখানে নাটকের শো করতে এখানে আসি, দর্শকদের যে প্রতিক্রিয়া পাই, তাতে অনেক বেশি উৎসাহিত হই। মঞ্চে উঠলে এখনো দর্শকদের যে ভালোবাসা পাই, তার আনন্দ বলে শেষ করা যাবে না। আর এই যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মঞ্চনাটক দেখানো এটি জিনাত দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে করে আসছে। তাদের বাংলাদেশের নাটকের প্রতি যে আগ্রহ, তা আমাকে মুগ্ধ করে।
দেশে ফিরবেন কবে?
চলতি মাসের শেষের দিকে দেশে ফেরার ইচ্ছা আছে। আমি মিশিগান হয়ে কানাডায় যাব। এরপর আমেরিকা হয়ে দেশে ফিরব।
নতুন কাজের খবর বলুন?
আমি নিয়মিত কাজ করার চেষ্ট করছি। আমার কাজের পরিধি আগের মতোই আছে। টেলিভিশন, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউব চ্যানেলে বেশ কিছু কাজ করছি। চলচ্চিত্রেও কাজ করছি। দেশে ফিরেই আবার কাজ শুরু করব। এ ছাড়া বেতারেও নিয়মিত কাজ করছি। অনেকেই মনে করতে পারেন আমি ওয়ালটন পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, এ জন্য অভিনয়ে হয়তো আগের মতো সময় দিতে পারছি না এমনটি নয়। আমি ওয়ালটনে কাজের পাশাপাশি অভিনয়ে নিয়মিত কাজ করি। দুটোই সমন্বয় করি।
জাহ্নবী