কোক স্টুডিও বাংলা ধীরে ধীরে পাল্টে দিচ্ছে শ্রোতাদের কান। শ্রোতারা এ প্ল্যাটফর্মের নতুন গানের জন্য মুখিয়ে থাকেন সব সময়। তাদের নতুন কোনো গান এলেই চারদিকে পড়ে যায় শোরগোল। বর্তমানে চলছে এর তৃতীয় সিজন। এই সিজনে গান প্রকাশিত হয়েছে মাত্র দুটি। প্রথম গান ‘তাঁতি’। এই গান নিয়ে আলোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই তারা প্রকাশ করে নতুন গান ‘মা লো মা’।
এটি প্রকাশের পর থেকেই ঝড় উঠেছে নেট দুনিয়ায়। ছাদ পেটানোর স্মৃতি, লোকগান ও র্যাপের মিশেলে তৈরি হওয়া এ গানের পরিবেশনের ছন্দে ছন্দে শ্রোতারা উচ্ছ্বসিত হয়েছে। খালেক দেওয়ানের গীতিকবিতায় গানটি গত ৩ মে কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পেয়েছে। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম হাসান, সাগর দেওয়ান, আরিফ দেওয়ান ও র্যাপার আলী হাসান। গানটি সংগীতায়োজন করেছেন প্রীতম হাসান। প্রকাশের ৬দিনেই ৬০ লাখের বেশি মানুষ শুনেছে গানটি। শুধু তাই নয়, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত গানের মধ্যে ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে এক নাম্বারে জায়গা করে নিয়েছে ‘মা লো মা’। পাশাপাশি সারা বিশ্বে গানের র্যাঙ্কিংয়ে এ গানের অবস্থান রয়েছে ৪৪ নাম্বারে। এমনটি জানিয়েছেন এই গানের সংগীত পরিচালক প্রীতম হাসান। পাশাপাশি গানটি নিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে তৈরি হচ্ছে টিকটক ও নাচের ভিডিও। যেগুলো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। অল্প সময়ে বাংলা গান যেখানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে তাতে করে দারুণ খুশি সংগীত পরিচালক প্রীতম হাসানসহ এই গানের সংশ্লিষ্টরা।
তবে গানটি যখনই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে সেসময়ই উঠেছে বিতর্ক। গানটির প্রকৃত মালিক কে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
কোক স্টুডিওতে প্রকাশিত এই গানটির গীতিকারের নাম নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। ‘মা লো মা’ গানটির গীতিকারের ঘরে খালেক দেওয়ানের নাম উল্লেখ করেছে কোক স্টুডিও কর্তৃপক্ষ। তবে দাবি করা হচ্ছে এই তথ্য মিথ্যা। গানটি নাকি নেত্রকোনার বাউল রশিদ উদ্দিনের লেখা। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ নেত্রকোনার সংস্কৃতিকর্মীরা। ৬ মে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-সাহিত্য সংগঠনসমূহ ও সম্মিলিত নাগরিক সমাজের ব্যানারে কোক স্টুডিও বাংলার বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে গানটি বাউল আব্দুল খালেক দেওয়ানের লেখা বলে প্রচারের অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন নেত্রকোনার স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা।
দিন যতই গড়াচ্ছে এই গানের গীতিকবির নাম নিয়ে ততই বিতর্কের পাল্লা ভারী হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন বাউল সাধক খালেক দেওয়ানের নাতি ও সংগীতশিল্পী সাগর দেওয়ান। অভিযোগকারীদের নিয়ে সাগর দেওয়ান বলেন, ‘এমন দাবি করছেন যারা আমরা তাদের আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের কাছে যদি কোনো প্রমাণ থাকে সেগুলো উপস্থাপন করতে। গানটি যখন রেকর্ড করা হচ্ছিল তখনো আহ্বান জানিয়েছি। শুধু আমরা কেন, আমাদের মা-বাবা, গ্রাম বাংলার যারা আছেন, মুরব্বিরা যারা আছেন তাদের জিজ্ঞেস করলে সবাই এক বাক্যে বলবেন এটা খালেক দেওয়ানের গান। জন্মের পর থেকেই এই গান খালেক দেওয়ানের নামে শুনে আসছি। তাকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি তো পালাকার ছিলেন। মঞ্চে শতাধিকবার এই গানটি গেয়েছেন। ৫০-৬০ বছর আগের কথা বলছি। এ ছাড়া ১৯৬০ সালে হিজ মাস্টার্স ভয়েস কোম্পানিতে এই গান রেকর্ড করা হয়েছিল। সে সময় নিজের নামেই গানটি গেয়েছিলেন খালেক দেওয়ান। ইউটিউবে খুঁজলে এখনো পাওয়া যাবে।’
সাগর দেওয়ান আরও বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছেন তাদের আবারও আহ্বান জানিয়ে বলছি, আপনাদের কাছে যদি কোনো উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ থাকে সেগুলো নিয়ে আসুন, প্রমাণ দিন। আমাদের মানতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে আমাদের হাতে যে প্রমাণ আছে সেসবের চেয়ে অবশ্যই শক্ত প্রমাণ হতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের কথা।’
এদিকে বিতর্ক এড়াতে কোক স্টুডিওতে প্রকাশিত ইউটিউবে গানটির বর্ণনায় বাউল রশিদ উদ্দিনের নামও উল্লেখ করেছে। লেখা হয়েছে, ‘মা লো মা লিখেছেন মো. খালেক দেওয়ান (গানটির আরেকটি সংস্করণ লিখেছেন বাউল রশিদ উদ্দিন, নাম মা গো মা)।’
তবে এই গান নিয়ে বিতর্কের মেঘ যতই উড়ুক না কেন শ্রোতাদের হৃদয়ে কিন্তু আনন্দের বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে এ গানের কথা, সুর ও সংগীত। সব বাধা ভেঙে এগিয়ে চলছে আপন গতিতে ‘মা লো মা’।
জাহ্নবী