‘দোলনা’ শব্দটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে শৈশবে ফেলে আসা সময়গুলো। বর্তমানে অন্দরসজ্জায় জনপ্রিয় উপকরণের একটি হচ্ছে দোলনা। ছোট থেকে বড় সবাই দোলনা দেখে আকর্ষিত হয়। দোলনা যেমন মনে আনন্দ দেয়, তেমনি ঘরের সৌন্দর্যও বাড়িয়ে তোলে। ঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হয়ে ওঠে, যখন একটি দোলনা রাখা হয়। ঘরে বাঙালিয়ানা ও নান্দনিকতা ফুটিয়ে তোলার জন্য শৌখিন মানুষ বেছে নেয় দোলনা। গৃহসজ্জায় দোলনার ব্যবহার নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ শিশির।
সাধারণত বসার ঘরে অথবা অন্দরে বাড়ির সদস্যদের একান্ত সময় কাটানোর স্থানে দোলনা ব্যবহার করা হয়। আজকাল অনেকে বসার ঘরে সোফার বিকল্প হিসেবেও দোলনার ব্যবহার শুরু করেছেন। তবে কেমন দোলনা দিয়ে ঘর সাজাবেন- এটা ঠিক করার আগে মাথায় রাখতে হবে আপনার ঘরের সাইজ ও ধরন। ড্রয়িংরুমে দোলনা রাখার কথা ভাবলে অবশ্যই রুমের অন্যান্য ফার্নিচারের কথা খেয়াল রাখতে হবে। বাকি ফার্নিচারে থিম ও ডিজাইনের সঙ্গে মিলিয়ে দোলনা বাছাই করলে দেখতে বেশ সুন্দর লাগবে। বেডরুম বড় হলে এর খালি জায়গাতেও দোলনা রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বেডরুমের পর্দার সঙ্গে মিলিয়ে দোলনার থিম ঠিক করতে হবে।
আবার চাইলে কনট্রাস্ট রং বাছাই করা যেতে পারে। যেমন- পর্দার রং হাল্কা হলে বেছে নিতে পারেন গাঢ় রঙের দোলনা। বেডরুমের এককোণে দোলনা রাখুন, যাতে চলাফেরায় খুব সমস্যা না হয়। দোলনাটি যদি একজনের ব্যবহারের জন্য তৈরি করেন, তবে আয়তন দুই ফুট বাই আড়াই ফুট হওয়া ভালো। আর দুজনের জন্য হলে দুই ফুট বাই সাড়ে তিন ফুট আয়তনের হতে পারে। এতে দোলনাটি শুধু শোপিস নয়, বাসায় অন্য আসবাবের মতো প্রয়োজনীয় আসবাব হিসেবে ব্যবহার করা হবে। আসলে, দোলনা সাধারণত সব ঘরেই মানিয়ে যায়। কিন্তু ছোট ঘরে বড় সাইজের একটা দোলনা মানানসই হবে না। তাই সবকিছু বুঝেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিশেষ পরামর্শ
চেষ্টা করতে হবে বেডরুমের দোলনাটা যেন সাইজে ছোট হয়। কারণ বেডরুম যত বড়ই হোক না কেন, বেশি বড় সাইজের দোলনা রাখলে তা দৃষ্টিনন্দন হয় না। ছোটদের রুমে দোলনা যাতে নিচু হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে, দোলনাতে উঠতে গিয়ে শিশুরা যেন ব্যথা না পায়। দোলনায় শিশুদের পছন্দের কার্টুন মোটিভের কুশন দিতে পারেন। আর শিশুদের রুমের দোলনা একটু উজ্জ্বল রঙের বেছে নেওয়া যেতে পারে।
অন্যান্য আসবাব থেকে দোলনা যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। কারণ দোলনা আর বাকি আসবাব কাছাকাছি থাকলে দোল খাওয়ার সময় ব্যথা পেতে পারে।
দোলনা ছোট হোক বড় হোক যেন আরামদায়ক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দোলনার দড়ি যেন মজবুত হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
দোলনা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই যথেষ্ট।
বিভিন্ন ধরনের দোলনা
কাঠের দোলনা : ঘরের কোণে একটি কাঠের দোলনা বেশ নান্দনিক ও রুচির পরিচয় তুলে ধরে। কাঠের দোলনায় নানা ধরনের কারুকাজ থাকে। এসব দোলনা বড় ড্রইংরুমের জন্য বেশ মানানসই।
পাটের দোলনা : পাটের দোলনা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কারণ এটি ছোট ফ্ল্যাটেও খুব সহজে মানিয়ে যায়। ড্রয়িংরুম কিংবা শোবার ঘর হোক- পাটের দোলনা সব জায়গাতেই ভালো লাগে। তা ছাড়া এটি যখন-তখন রিং থেকে খুলে রাখা যায়।
বাঁশ ও বেতের দোলনা: ঘরে দেশীয় ছোঁয়া আনতে অনেকেই বেছে নেন বাঁশ ও বেতের দোলনা। পাটের মতো এসব দোলনাও সব জায়গায় মানিয়ে যায়।
লোহার দোলনা : এ দোলনা দেখতে সুন্দর এবং দামেও সাশ্রয়ী। পুরোটাই লোহা দিয়ে তৈরি হলেও আরামদায়ক। এসব দোলনায় বসার জায়গাটিতে ফোম দেওয়া হয় এবং কারুকাজ করা হয় একেবারে চিকন রড দিয়ে খুব হাল্কার ওপর।
বিভাজন দোলনা: চারকোণার এ দোলনার জন্য বেশ জায়গার প্রয়োজন হয়। যাদের ঘরের রুম বড়, তারা এটি বেছে নিতে পারেন। এটি বেশ অভিজাত দোলনা। তবে এতে অবশ্যই আরামদায়ক কুশন থাকতে হবে।
যেখানে পাবেন
দোলনা এখন সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দোলনা পাওয়া যায়। অনলাইনেও পাট ও বেতের দোলনা বিক্রি হয়ে থাকে। পুরান ঢাকায়ও রয়েছে বেশকিছু দোলনার দোকান। আর নিজের পছন্দমতো কাঠ ও ডিজাইন দিয়ে দোলনা কাস্টমাইজড করে বানিয়ে নিতে চাইলে ফার্নিচারের দোকানে যোগাযোগ করতে হবে।
দরদাম
বাঁশ ও বেতের দোলনা পাবেন ১ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। শৌখিন কারুকাজের চিকন বেতের দোলনা পাবেন ৬ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। স্টিলের তৈরি দোলনা ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে এবং লোহার দোলনা ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় পাবেন। এ ছাড়া কাঠের তৈরি কারুকাজের দোলনা পাবেন ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে।
কলি