প্রচণ্ড গরমে পানিশূন্যতা ও হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। গরমের সঙ্গে লড়তে হলে দরকার প্রচুর শক্তি। না হলে সারা দিন পরিশ্রান্ত ও দুর্বল লাগে। তাই এ সময় সুস্থ থাকতে চাইলে খেতে হবে এমন কিছু খাবার, যা শরীর ঠাণ্ডা রাখবে। তীব্র তাপপ্রবাহে আরাম দেবে কোন কোন খাবার, সেই সম্পর্কে জানাচ্ছেন সানজিদা রিমু
পান্তা ভাত
পান্তা ভাতে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট। ফ্যাটি অ্যাসিড এবং কার্বোহাইড্রেটের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি বৈশিষ্ট্য আমাদের শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে। সারা রাত পানিতে ভেজানোর ফলে ভিটামিন-বি টুয়েলভের মাত্রা বেড়ে যায়। যে কারণে দূর হয় ক্লান্তি ও অনিদ্রা।
পুদিনা পাতা
এই গরমে পুদিনার চাটনি, পুদিনার শরবত কিংবা পুদিনা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন। সালাদের সঙ্গেও মেশাতে পারেন পুদিনা পাতা। আবার পুদিনা পাতা গুঁড়া করে ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। চায়ের সঙ্গেও খেতে পারেন পুদিনা পাতা।
শাকসবজি
বাজারে এখন ঝিঙ্গা, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, শজনে ডাঁটা, শাকের ডাঁটা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। চাইলে এগুলোকে পাতলা ঝোল করে রান্না করে খেতে পারেন। এ ছাড়া লাউ খেতে পারেন। লাউ ওজন কমায় ও হজমে সহায়তা করে। তাই লাউ সেদ্ধ করে দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। লাউ স্যুপ করে খেতে পারেন। এই খাবারগুলো একদিকে যেমন আপনার পুষ্টির চাহিদা জোগাবে, অন্যদিকে শরীরে গরম অনুভব করাবে না। সবুজ তাজা শাকসবজিও গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখে। যেমন- পালংশাক, পুঁইশাক, লেটুস, পুদিনা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি। এ সময় দুপুরে বা রাতের খাবারে সালাদ হিসেবে রাখতে পারেন।
ফলমূল
গরমে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য ফলমূল খাওয়া উচিত। স্ট্রবেরি, শসা, জাম ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তবে বাংলাদেশের বাজারে এই সময় তরমুজে ভরপুর থাকে। তাই গরমের ফল হিসেবে তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। কারণ, তরমুজে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পানি থাকে। তাছাড়া এই ফলে ক্যালরিও খুব কম। যারা ওজন কমাতে চান, তারা খাবার তালিকায় তরমুজ রাখতে পারেন। তরমুজ উচ্চ লাইকোপেনসমৃদ্ধ, যা ক্যানসারের কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে। এর আঁশ হজমে সহায়তা করে এবং ত্বক ও চুল সুন্দর রাখতে সহায়তা করে।
নিরাপদ পানি
গরমে নিরাপদ পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। কারণ গরমের সময় ঘাম ও প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম বের হয়ে যায়। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার বা ১২ থেকে ১৩ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
কাঁচা আমের শরবত
কাঁচা আমের মধ্যে ভিটামিন-সি থাকে। কাঁচা আমের সঙ্গে মরিচ যুক্ত না করে যদি এটিকে শরবত হিসেবে খাওয়া যায়, তাহলে গরম কম অনুভব হতে পারে।
টক দই
গরমকালে খুবই উপকারী খাবার হচ্ছে টক দই। কারণ, এতে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা শরীরকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাকস্থলীকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন টক দই খাওয়া যেতে পারে। টক দই খালিও খাওয়া যায়, আবার টক দইকে পানি দিয়ে গুলিয়েও খাওয়া যায়। অথবা টক দইয়ের সঙ্গে শসাও খাওয়া যেতে পারে।
ডিটক্স ওয়াটার
গরমের সময় ভারী খাওয়ার পর ডিটক্স খাবার খাওয়া যেতে পারে। ডিটক্স ওয়াটার হলো- পানি, লেবুর রস, শসা, গাজর, পুদিনা ইত্যাদির রসের সমন্বয়ে তৈরি একধরনের পানীয়।
ডাবের পানি
ডাবের পানিতে রয়েছে প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইটস। সেই সঙ্গে এনার্জি বাড়াতেও সহায়তা করে এটি। তাই গরমে স্বস্তি পেতে নিয়মিত ডাবের পানি পান করুন।
তোকমা দানা
এটি প্রাকৃতিকভাবেই গরম দূর করে। দেহের তাপমাত্রা সঠিক পর্যায়ে ধরে রাখে। তীব্র গরমেও তাপমাত্রা অসহনীয় হবে না। দুধের সঙ্গে মিলিয়ে তোকমা দানা খাওয়া যায়। এ ছাড়া লেবুর রসের সঙ্গে পিংক সল্ট মিশিয়ে শরবত করে খাওয়া যায়।
লেবুর শরবত
লেবুর শরবত গরমে আপনাকে প্রশান্তি দেবে। লেবুর রস, আখের গুড় অথবা চিনি এবং তার সঙ্গে সামান্য বিট লবণ মিশিয়ে তৈরি করা যায় লেবুর শরবত। তবে বাইরে থেকে ফিরেই ঠাণ্ডা বা বরফ দেওয়া শরবত খাবেন না যেন। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই এদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। লেবু খাবারের সঙ্গে, লেবু পানি হিসেবে, লেমোনেড করে বা সালাদের মধ্যে দিয়ে খেতে পারেন। লেবুর ভিটামিন-সি এই গরমে ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
তরমুজ, বাঙ্গিজাতীয় ফলের প্রায় ৭০ শতাংশই পানি। এগুলো খেলে পানির সঙ্গে পাবেন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন-বি। গরমে আমও খুব ভালো ফল। আম খেলে পানিশূন্যতা যেমন দূর হয়, তেমনি এটি শক্তি ও ক্যালরি জোগায়। লেবু শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। লেবু খাবারের সঙ্গে, লেবু পানি হিসেবে, লেমোনেড করে বা সালাদের মধ্যে দিয়ে খেতে পারেন। লেবুর ভিটামিন-সি এই গরমে ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
কলি