করোনা-পরবর্তী লোকসান কাটিয়ে উঠতে এবং বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ পরিষেবা চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
আগামী ১ জুন থেকে, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে ১নং কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কেএলআইএ-১) ব্যবহারকারী যাত্রীদের ৭৩ রিঙ্গিত বা ১৫ দশমিক ৫ ইউএস ডলার দিতে হবে। যেখানে বর্তমানে তাদের ৩৫ রিঙ্গিত বা ৭ দশমিক ৪১ ইউএস ডলার দিতে হয়।
তবে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাড়তি কোনো ফি দিতে হবে না।
অন্যদিকে বাজেট ক্যারিয়ার এয়ার এশিয়া নিয়ন্ত্রিত ২নং কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কেএলআইএ-২) থেকে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে ৩৫ রিঙ্গিত থেকে বাড়িয়ে ৫০ রিঙ্গিত বা ১০ দশমিক ৬০ ডলার করা হবে।
কুয়ালালামপুরের এই দুটি বিমানবন্দরে যাত্রীদের সেবার মান নিয়ে এমনিতেই রয়েছে যথেষ্ট অভিযোগ। এর মধ্যে বাড়তি চার্জ নির্ধারণ করায় যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
প্রাকৃতিক সাবান প্রস্তুতকারক কোম্পানি লেস্টারি ন্যাচারালের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা জেহান আবু বকর এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফি বাড়ানো উচিত। তবে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিষেবা, ওয়াইফাই থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম, ব্যাগেজ ক্লিয়ারেন্স সবকিছুতেই সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে তাদের আরও কাউন্টার খোলা উচিত।’
তিনি কেএলআইএ-১ থেকে কেএলআইএ-২ এ যাতায়াতে ব্যবহৃত অ্যারোট্রেন নিয়েও দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করেন।
আইনজীবী লিম ওয়েই জেইটও আবু বকরের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘আমাদের বিমানবন্দরের পরিষেবাগুলো যদি ভাল এবং নির্ভরযোগ্য হতো তাহলে ফি বৃদ্ধিতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু বিষয়টি তো এমন নয়। কয়েক মাস ধরে অ্যারোট্রেন নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। এটি আসলে একটি লজ্জাজনক ব্যাপার যে মালয়েশিয়া একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বিমানবন্দরের এই দুর্দশা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি মালয়েশিয়ার নাগরিকদের পূর্ণ অধিকার আছে পরিষেবা চার্জ বাড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন করার। এক দশক আগেও কেএলআইএ সেরা বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল কিন্তু এখন এই সুনাম ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
দেশটির পরিবহনমন্ত্রী অ্যান্টনি লোকের মতে, পুরোনো অ্যারোট্রেনটি ঠিক করার জন্য গত বছর থেকে বন্ধ পড়ে রয়েছে। এই বছরের শেষের দিকে বা ২০২৫ এর মার্চের মধ্যে অ্যারোট্রেনটির কাজ শেষে পুনরায় চালু করা হবে।
মালয়েশিয়ান অ্যাভিয়েশন কমিশন বলছে, ‘করনো-পরবর্তী সময়ে বিমান সেক্টরের পুনরুদ্ধার এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য ফি বাড়ানোর প্রয়োজন।’
তবে মালয়েশিয়ার নাগরিকদের মধ্যে সবার বিমানবন্দরের পরিষেবা চার্জ বাড়ানোর ফলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তা না। কেউ কেউ বিষয়টি ইতিবাচকভাবেও দেখছেন।
ইতালিয়ান অর্থনীতিবিদ কারমেলো ফারলিটো মিলান, জাকার্তাসহ এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন।
তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে সংশোধিত ফি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। আপনি যদি ম্যানিলা, ব্যাংকক, ঢাকা, কলম্বো, লাহোরের মতো শহরে থাকেন তাহলে আপনি বুঝবেন যে, ব্যাংকক, ম্যানিলাসহ সমসাময়িক অন্য বিমানবন্দরের থেকেও কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের অ্যারোট্রেন সেবা ছাড়া বাকি পরিষেবা ব্যবস্থা এখনো ভালো আছে।’
পেনেরাজু ফাউন্ডেশনের সিইও ইব্রাহিম সানি দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে প্রায়ই ভ্রমণ করে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি পাবে বলে সরকারের ফি বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।’
ফি প্রায় দ্বিগুণ করার পরও, মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরের চার্জ এখনো থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য বিমানবন্দরের তুলনায় কম।
গত ১ এপ্রিল থেকে থাইল্যান্ডের বিমানবন্দরগুলোয় নতুন অপারেটিং সিস্টেমের খরচ মেটাতে ছয়টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী পরিষেবা চার্জ জনপ্রতি ৩০ বাথ বাড়িয়ে ৭৩০ বাথ করা হয়েছে।
বিমানবন্দরের হিসাবরক্ষক মিখাইল হাফিজ বলেন, ‘যারা পরিবারসহ ভ্রমণ করেন তাদের জন্য এটি সমস্যার কারণ হলেও আমি বলব এয়ারলাইন শিল্পের মহামারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধারে এই চার্জ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।’ সূত্র: আল-জাজিরা
সাদিয়া নাহার/