নির্বাচনের আগেই ভারতকে সতর্ক করেছিল মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এআই সৃষ্ট কনটেন্ট দিয়ে বাধাবিঘ্ন তৈরির চেষ্টা করা হতে পারে। বাস্তবে ঘটেছেও তাই। প্রথম দফার ভোটের আমেজের মধ্যেই অন্তত দুজন প্রথম সারির বলিউড তারকার ডিপফেক ভিডিও ছড়িয়েছে। এসব ভুয়া ভিডিওতে ওই তারকাদের বলতে শোনা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ব্যর্থ হয়েছে, দেশের জনসাধারণ যাতে বিরোধী দল কংগ্রেসকে ভোট দেয়।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, বলিউড তারকা আমির খানের ৩০ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ ছড়িয়েছে। অন্যদিকে রণবির সিংয়ের ৪১ সেকেন্ডের একটি ডিপফেক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। দুটোর বক্তব্যই প্রায় এক। বলা হচ্ছে– মোদি দুই মেয়াদে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণ ও গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে ভোটারদের উচিত ‘ন্যায়ের জন্য ভোট দেওয়া, কংগ্রেসের জন্য ভোট দেওয়া।’
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই দুই ভিডিওতে ভিউ হয়েছে, পাঁচ লাখেরও বেশি। ভিডিও দুটি ছড়ানোর ঘটনায় আবারও সামনে চলে এসেছে এআই সৃষ্ট কনটেন্ট লোকসভা নির্বাচনের মতো বড় আয়োজনে কী ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়টি। প্রশ্ন উঠছে যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচনে এটির প্রভাব কতটা পড়তে পারে, তা নিয়েও।
ভারতের এখন পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচারণা চলছে দোরগোড়ায় গিয়ে গিয়ে, জনসমাবেশের মাধ্যমে। তবে ২০১৯ সাল থেকেই প্রচারণার কাজে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো ব্যবহার হচ্ছে এআই। ভারতের একাধিক সমীক্ষা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদি তৃতীয় মেয়াদে আবারও নির্বাচিত হতে পারেন।
এআই দিয়ে তৈরি বলিউড তারকাদের ভুয়া ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করতে দেখা গেছে খোদ কংগ্রেসের ব্যক্তিবর্গকেই। যেমন– কংগ্রেস মুখপাত্র সুজাতা পল ১৭ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে রণবির সিংয়ের ভিডিওটি শেয়ার করেন। এক্সে তার অনুসারী ১৬ হাজার। তার ওই পোস্ট পুনরায় শেয়ার হয় ২ হাজার ৯০০ বার, লাইক দেওয়া হয় ৮ হাজার ৭০০ বার এবং ভিউ পায় ৪ লাখ ৩৮ হাজার বার।
সুজাতা পল রয়টার্সকে জানান, তিনি জানতের ভিডিওটিকে এক্স এআই দিয়ে তৈরি বলে শনাক্ত করেছে। কিন্তু তিনি সেটি মুছে দিতে চাননি। কারণ ব্যক্তিটিকে দেখতে রণবির সিংয়ের মতোই মনে হচ্ছিল এবং ভিডিওটিতে সুনিশ্চিতভাবেই সৃজনশীলতার ছোঁয়া ছিল।
গত রবিবার থেকেই ভিডিওটিকে আর এক্সে দেখা যাচ্ছে না। এর কয়েক ঘণ্টা আগে কংগ্রেসের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রধানকে এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া দেননি।
ডিপফেক ভিডিওর কবলে পড়া দুই তারকাই জানিয়েছেন, তাদের ভিডিও ভুয়া। এ ছাড়া আটটি সত্যতা যাচাই সাইট জানিয়েছে, ওই ভিডিও দুটি বদলে দেওয়া হয়েছে ও বিকৃত করা হয়েছে। রয়টার্সের ডিজিটাল তথ্য যাচাইকরণ ইউনিউটও সেসব দাবির সত্যতা পেয়েছে। তবে কে ভিডিও তৈরি করেছে তা জানতে পারেনি রয়টার্স।
আমির খান জানিয়েছেন, তিনি ভুয়া ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে রণবির সিং জানিয়েছেন, তার দল বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রণবির সিং লিখেছেন, ‘বন্ধুরা ডিপফেক থেকে সতর্ক থাকুন।’
এসব ঘটনায় মোদির দপ্তর, তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আইটি প্রধান মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
ভারতে প্রায় ৯০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এক জরিপে দেখা গেছে, গড়ে একজন ভারতীয় তিন ঘণ্টারও বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটায়। দেশটিতে মোট ভোটার রয়েছে প্রায় ১০০ কোটি। ভুয়া ভিডিও দুটির কিছু সংস্করণ ব্লক করা হয়েছে। তারপরও অন্তত ১৪টি ভিডিও শনিবার পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেখা গেছে। ফেসবুক ভিডিও মুছে দেওয়ার খবর নিশ্চিত করলে, এক্স এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এ ঘটনায় আমির খান অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এবং মুম্বাই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সূত্র: রয়টার্স