![রাইসির শেষ বিদায়ে জনসমুদ্র](uploads/2024/05/24/Iran-3-1716524037.jpg)
ইরানের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইব্রাহীম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহিয়ানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মে) প্রেসিডেন্ট রাইসিকে দাফন করা হয়েছে ইরানের ধর্মীয় শহর মাশহাদে ইমাম রেজার মাজার কমপ্লেক্সে। মাশহাদ রাইসির নিজ শহর। আর আমির আবদোল্লাহিয়ানকে দাফন করা হয়েছে তেহরানের পার্শ্ববর্তী রেই শহরে অবস্থিত ইমামজাদা আব্দুল আজিমের মাজারে।
মাশহাদ শহরে প্রেসিডেন্ট রাইসির লাশ প্রবেশের পর থেকেই শহরটি যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সেখানে লাখ লাখ মানুষ চোখের জলে তাকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন। সবার হাতে হাতে রাইসির ছবি এবং বিভিন্ন বক্তব্য লেখা প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছিল।
এ সময় লোকজন নানাভাবে প্রেসিডেন্টের জন্য দোয়া করেন। মাশহাদ যেহেতু প্রেসিডেন্ট রাইসির জন্ম শহর, সে কারণে সেখানকার মানুষের ভালোবাসা ছিল ভিন্ন রকমের। তারা নানাভাবে নিজেদের আবেগের বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছেন। সেখানে কান্নার রোল পড়ে যায়। শেষ বিদায় অনুষ্ঠান শেষে লাশ মাজার কমপ্লেক্স নেওয়া হয় এবং আগে থেকেই প্রস্তুত করা কবরে দাফন করা হয়। এর আগে গত বুধবার রাজধানী তেহরানে জানাজার নামাজ পড়ান ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। সেখানেও লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন।
তেহরানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহু রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তি উপস্থিত থেকে প্রেসিডেন্ট ও তার সফরসঙ্গীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। গত রাতে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে বৈঠক করে শোক ও সমবেদনা জানান। এ সময় নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গত রাতেই প্রেসিডেন্ট রাইসির বাসভবনে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং আলোচনা করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্টের শ্বশুর, যিনি একজন বড় আলেম। এ ছাড়া তার স্ত্রী এবং দুই মেয়ে।
প্রেসিডেন্ট রাইসির স্ত্রী একজন শিক্ষাবিদ। তিনি শহিদ বেহেশতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। রাইসির মেয়েরাও উচ্চশিক্ষিত। রাইসির শ্বশুর আয়াতুল্লাহ আহমাদ আলামুল হুদা মাশহাদে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি এবং জুমা নামাজের প্রধান খতিব। এদিকে প্রেসিডেন্ট রাইসির প্রতি সম্মান জানাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিরোধ সংগঠনের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও ছিলেন। তারা তেহরানে নিজেদের উপস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন গতকাল।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া, লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব শেখ নায়িম কাসেম, ইয়েমেনের হুথি আনসারউল্লাহর প্রতিনিধিসহ আরও কয়েকজন প্রতিরোধকামী নেতা।
গত রবিবার যে আটজন হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন, তাদের একেকজনকে একেক জায়গায় দাফন করা হয়েছে। কেউ কেউ তাদের দাফনের বিষয়ে ওসিয়াত করে গিয়েছিলেন। আত্মীয়স্বজনরা তাদের নিজেদের এলাকায় দাফন করতে নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে গতকাল বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়। তেহরানে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও ওই দোয়ার অনুষ্ঠানে অংশ নেন। নিহতদের সম্মানে দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।