![শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৪ জন রিমান্ডে](uploads/2024/04/01/1711979794.Mohammadpur_Arrest.jpg)
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় শিকলে বেঁধে রেখে এক তরুণীকে টানা ২৫ দিন ধরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করার অপরাধে এক নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় এ চার আসামিকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত এই আদেশ দেন।
গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন সান (২৬), হিমেল (২৭), রকি (২৯) ও সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮)।
পুলিশের আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলাসূত্রে জানা যায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক ফারুকুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে তাদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আর আসামিপক্ষ এর বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও জামিনের বিরোধিতা করেন। সব পক্ষের শুনানি নিয়ে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আদালতে আসামি সান ঘটনার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে আইনজীবীর মাধ্যমে দাবি করেন। আইনজীবী বলেন, আসামির সঙ্গে বাদীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণে এই মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘যত বড় ব্যক্তি হোক না কেন, জড়িতদের নামগুলো যেন অভিযোগপত্রে আসে।’
এর আগে সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক। তিনি জানান, মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি ভবন থেকে ৯৯৯-এর কলে শিকলবন্দি অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। ভুক্তভোগী তরুণী জানান, তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকতেন। সে সময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদ নামের এক ব্যারিস্টারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ব্যারিস্টার মাসুদ বেশির ভাগ সময় বিদেশে অবস্থান করতেন এবং দেশে এলে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর সঙ্গে থাকতেন। পরে মাসুদের মাধ্যমে আরেক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সালমার সঙ্গে নবীনগরের ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠেন ওই তরুণী। তাদের সব খরচ বহন করতেন মাসুদ।
উপপুলিশ কমিশনার আরও জানান, আসামি সালমার মাধ্যমে ভুক্তভোগী তরুণীর পরিচয় হয় আসামি হিমেল ও সানের সঙ্গে। একপর্যায়ে সানের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সুবাদে হিমেল ও সান ভিকটিমের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। এ বিষয়টি ব্যারিস্টার মাসুদকে সালমা জানিয়ে দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ভুক্তভোগী তরুণীকে শিক্ষা দিতে তার পর্নো ভিডিও ধারণ করতে বলেন সালমাকে। মাসুদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে আটক এবং পর্নো ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি হিমেল, সান ও রকিকে জানান। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীর বাসায় আসামি সান তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ঘটনাটি সালমা রুমে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করেন। পরে সান একাধিকবার ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী তরুণীর হাত-পা বেঁধে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেন এবং সেদিন হিমেল তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর সালমা বাইরে গিয়ে শিকল ও তালা কিনে এনে তরুণীর হাতে ও পায়ে লাগিয়ে রুমের দরজা ও বাথরুমের দরজার সঙ্গে আটকে রাখেন। শুধু খাওয়ার সময় তরুণীর হাতের শিকল খুলে দিতেন তারা। এরপর গত ৭ মার্চ রাতে আসামি রকি ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। আর এর পর থেকে ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামি সান, হিমেল, রকি ও সালমা বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করে তাদের দেখানো পর্নো ভিডিওর মতো করে আলাদা আলাদা ভিডিও ধারণ করেন। প্রতিদিনের ধারণ করা ভিডিও আসামি সালমা ব্যারিস্টার মাসুদের কাছে পাঠাতেন। আসামিরা ওই তরুণীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালান ও অমানুষিক আচরণ করেন।
তিনি আরও জানান, গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাইরে যান। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তার ঘুম ভেঙে গেলে বাসায় কেউ নেই বুঝতে পেরে তিনি জানালা দিয়ে চিৎকার দেন। তার চিৎকার শুনে এক পথচারী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে সংবাদ দেন। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাকে শিকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে। বর্তমানে ওই তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন।