ইজিপ্ট এয়ারের বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে রাষ্ট্রের ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার ক্ষতি করার মামলায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেভিন জন স্টিলসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে বুধবার (১৫ মে) এ চার্জশিট ঢাকার জজকোর্টে দুদকের জিআর শাখায় পাঠানো হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম খবরের কাগজকে জানান, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে দুদকের জিআর শাখা থেকে এই চার্জশিট সংশ্লিষ্ট আদালতে দাখিল করা হবে।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন ১. সাবেক পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ; ২. সাবেক ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল আলম সিদ্দিক (মো. এস এ সিদ্দিক); ৩. সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (সার্ভিসেস অ্যান্ড অডিট) শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফ; ৪. সাবেক প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (এমসিসি অ্যান্ড এল/এম) দেবেশ চৌধুরী; ৫. সাবেক ইন্সপেক্টর অব এয়ারক্রাফট (বর্তমানে এয়ারওয়ার্দিনেস কনসালট্যান্ট সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, পুরাতন সদর দপ্তর) গোলাম সারওয়ার; ৬. সাবেক এয়ারক্রাফট ম্যাকানিক (বর্তমানে প্রকৌশল কর্মকর্তা) সাদেকুল ইসলাম ভূঁইয়া; ৭. প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (স্ট্রাকচার) শরীফ রুহুল কুদ্দুস; ৮. সাবেক উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান; ৯. সাবেক ইঞ্জিনিয়ার অফিসার জাহিদ হোসেন; ১০. সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন জন স্টিল; ১১. সহকারী পরিচালক (এওসি- এয়ারওয়ার্দিনেস) মোহাম্মদ সফিউল আজম; ১২. সহকারী পরিচালক (অ্যারোস্পেস/এভিয়নিক্স- এয়ারওয়ার্দিনেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) দেওয়ান রাশেদ উদ্দিন; ১৩. প্রকৌশল কর্মকর্তা হীরালাল চক্রবর্তী; ১৪. প্রিন্সিপাল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস বিভাগ) অশোক কুমার সর্দার; ১৫. প্রকৌশলী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান এবং ১৬. উপপরিচালক আব্দুল কাদির (পিতা জজুর মিয়া)। তালিকার শেষ সাতজনের নাম তদন্তে আসা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলায় প্রয়োজনীয় নথিসহ আট ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছে দুদক। সাক্ষীর তালিকায় আছেন তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২৯ জন।
বিমানের সাবেক পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করে দুদক। তদন্তে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় মহাব্যবস্থাপক (মুদ্রণ ও প্রকাশনা) আবদুর রহমান ফারুকী, ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহমেদ, উপমহাব্যবস্থাপক (এওসি, এসিপি) জিয়া আহমেদ, সাবেক ক্যাপ্টেন (ড্যাশ-৮-৪০০) নজরুল ইসলাম শামিম, সাবেক চিফ পার্সার (কাস্টমার সার্ভিস) কাজী মোসাদ্দেক আলী, ফ্লাইট পার্সার শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (করপোরেট প্ল্যানিং) আজাদ রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদির (পিতা তালেব হোসেন), সহকারী ব্যবস্থাপক ফজলুল হক বসুনিয়া, ব্যবস্থাপক (এসিপি) আতাউর রহমান, সাবেক চিফ পার্সার মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক (শাহিন), ফ্লাইট পার্সার শাহনাজ বেগম ঝর্ণা, প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস) গাজী মাহমুদ ইকবালকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, মামলার আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে আগে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অপরকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে পরবর্তী সময়ে রি-ডেলিভারি পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে মিসরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের উড়োজাহাজ দুটি লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। প্রথম বছর শেষেই দুটি এয়ারক্রাফটেরই ইঞ্জিন বিকল হয়। ইঞ্জিনগুলো প্রায় ১২-১৫ বছরের পুরোনো এবং এর উড্ডয়ন-যোগ্যতার মেয়াদকাল কম থাকায় পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। প্লেন সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় সেটিও। এতে দেশের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা, যা একাদশ জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে।
এয়ারক্রাফট লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে ২০২২ সালে দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ও জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর চিঠি দিয়ে লিজসংক্রান্ত নথি তলব করেন দুদক কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে লিজ প্রক্রিয়ায় জড়িত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনুসন্ধান শেষে দুদকের উপপরিচালক জেসমিন আক্তার মামলার করেন। পরে কমিশন তাকেই তদন্তের দায়িত্ব দিলে তিনি তদন্ত শেষ করেন।