ঢাকা ১৯ বৈশাখ ১৪৩২, শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
English

মাটিকাটা শ্রমিক সাইফুর পেয়েছে জিপিএ-৫

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১০:০০ এএম
আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ০৭:১৪ পিএম
মাটিকাটা শ্রমিক সাইফুর পেয়েছে জিপিএ-৫
সাইফুর রহমান

বয়স যখন ছয় মাস, ওই সময় তার বাবা পরিবার ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এর ৩-৪ বছর পরে তার মায়েরও বিয়ে হয় অন্য জায়গায়। এরপর থেকেই দুঃখের জীবন শুরু। নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে ট্রলিতে মাটি ভরে দেওয়ার কাজও করতে হয়েছে তাকে। বলছিলাম, সাইফুর রহমানের কথা। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চরমহল্লা উচ্চবিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

ছোট্ট শিশু সাইফুরকে কোলেপিঠে করে অনেক কষ্টে মানুষ করেন তার নানি আফতেরা বেগম (৭০)। তিনি বলেন, ‘বাবা-মা ছাড়া সাইফুরকে নিয়ে অথৈ দরিয়ায় পড়ে যাই। প্রথম প্রথম কোনো কূল-কিনারা করতে পারিনি। এরপরও নাতিকে মানুষ করতে চেষ্টা করেছি। তবে মা-বাবা ছাড়া বাচ্চাকে মানুষ করা খুব কঠিন। কিন্তু সাইফুরের নিজের চেষ্টা ছিল। তাই আজকে সে এত ভালো করেছে।’

সাইফুর জানায়, তার নানি আফতেরা বেগম তাকে বড় করেছেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। নানি আফতেরা বেগমই তাকে পড়াশোনায় বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষকদের সহযোগিতা ও উৎসাহ রয়েছে। 

চরমহল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক ফয়েজ আহমদের কাছে প্রাইভেট পড়েছে সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাইফুর নবম শ্রেণিতে ক্লাসে অমনোযোগী ছিল। পরে আমি তাকে পড়ানো শুরু করি। একপর্যায়ে দেখি সে অন্যদের চেয়ে যেকোনো বিষয় সহজেই বুঝে যায়। এত ভালো ফল করবে ভাবিনি। আর্থিক কারণে যেন তার এগিয়ে যাওয়াটা থেমে না যায়। সহযোগিতা পেলে সে আরও ভালো করবে।’

গ্রামের ওই স্কুল থেকে এবার তিনজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে একজন সাইফুর রহমান। ছোটবেলা থেকেই গ্রামের পাশে চৈত্র মাসে গাড়িতে মাটি ভরে দেওয়ার কাজ করত সে। এতে যা পেত, তা দিয়ে লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ মেটানোর চেষ্টা করত।

মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ১২:৪০ পিএম
মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য
ছবি: খবরের কাগজ

মাইক্রোবাসে লেখা অ্যাম্বুলেন্স, ছাদে সাইরেন, আর ভেতরে সাধারণ সিট, চিকিৎসা সরঞ্জামের বালাই নেই। চিকিৎসা নগরী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসব অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে প্রতিনিয়ত রোগী বহন করছে, চার্জ নিচ্ছে পেশাদার হাসপাতালের সমান বা তারও বেশি। মাইক্রোবাসকে সামান্য পরিবর্তন করে গড়ে তোলা এই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা এখন রীতিমতো লাভজনক বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। এসব অ্যাম্বুলেন্সের বেশিরভাগই অবৈধ। অথচ এর পেছনে লুকিয়ে আছে জীবনের ঝুঁকি, অনিয়ম আর নজরদারির ঘাটতি। একটি ট্রলি আর সাইরেন ছাড়া কিছুই থাকে না এসব অ্যাম্বুলেন্সে।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও পুলিশ, বিআরটিএসহ সব জায়গায় ম্যানেজ করে সেবার নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি হলেও একবার মামলা খেয়ে এক মাস চলতে পারে এবং মামলার দেওয়া কাগজ দিয়ে দীর্ঘদিন ট্রাফিক সিগন্যাল এড়িয়ে চলেন বলে জানান অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। দিনেরবেলা অ্যাম্বুলেন্সের তকমা লাগিয়ে রোগী পরিবহন করলেও আশেপাশের জেলাগুলোতে রাতের বেলা বিভিন্ন মোড় থেকে যাত্রী পরিবহন করা হয় এই অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সগুলো দিয়ে।

প্রশাসন এসব অবৈধ যানবাহন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি করেন চালকরা। ফলে দীর্ঘমেয়াদি কোন সুরাহা করতে পারে না পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও বিআরটিএ।

বিআরটিএর ভাষ্য অনুযায়ী, গাড়ী আমদানির সময় "হেলথ ভেহিক্যাল সার্ভিস" হিসেবে অ্যাম্বুলেন্স আমদানি করা হয়। যেগুলো পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে রোগী পরিবহন করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এসব তালিকা বিআরটিএকে পাঠানো হয়। তালিকা ধরেই অ্যাম্বুলেন্সের নিবন্ধন দেওয়া হয়। কোন ব্যক্তির নামে নিবন্ধন দেওয়া হয় না। ব্যক্তি মালিকানার অ্যাম্বুলেন্স চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ। 'গ' সিরিয়ালে প্রাইভেটকার এবং 'ঠ' সিরিয়ালে পিকাপের রেজিস্টেশন দেওয়া হয়। 'ছ' সিরিয়ালে ৭১ ও ৭৪ দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স রেজিষ্ট্রেশন দেওয়া হয়। এই সিরিয়ালের বাইরে যেসব অ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় চলাচল করে সেগুলো মূলত মাইক্রোবাস কেটে বানানো।

এছাড়াও শর্ত থাকে যে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর জন্য স্থায়ী শয্যা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাস্ক, চিকিৎসকের বসার ব্যবস্থা, স্ট্রেচার ও সাইরেন থাকতে হবে। চালক চিকিৎসক, রোগীসহ মোট ছয়জন বসতে পারে এমন গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স বানাতে হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর মেডিকেল ক্যাম্পাসের ভেতরেই রোগীর জন্য অপেক্ষা করছে লক্কর ঝক্কর মাইক্রোবাস। তবে সেগুলোর বেশিরভাগ লাইসেন্সবিহীন ও ঢাকা মেট্রো চ ও গ সিরিজের নম্বর প্লেট। তবে কিছু কিছু গাড়ীতে ঠ সিরিজ আছে। এসব গাড়িতে নেই ফিটনেসের বালাই, নেই কোন অক্সিজেন। বেশিরভাগ গাড়িই ব্যাক্তিমালিকানাধীন।

এই অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের একজন রাসেল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে সমিতি আছে সেই সমিতির আন্ডারে এই গাড়িগুলো চলে। এগুলো বেশিরভাগই নোয়া মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানানো। একটা এম্বুলেন্সের ভাড়া রোগীরা দিতে পারে না তাই আমরা কম দামে যাত্রীদের সেবা দেই। আমরা সেবা না দিলে রোগী যাবে কোথায়। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স কম। তাছাড়া সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে দামও অনেক বেশি চায়। তাই রোগীরা যেতে চায় না। সবাই সময় মত তাদেরকে পায়না।

আর একচালক রিপন মিয়া বলেন, আমাদের সবাই একজোট রয়েছি। এ কারণে নতুন করে কেউ এই অ্যাম্বুলেন্স চালাতে গেলে সমিতির আন্ডারে আসতে হয়। তখন আর সমস্যা হয় না।

তবে অভিযোগ রয়েছে, কোন রোগী মারা গেলে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সিন্ডিকেটে পড়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হয়। মারা যাওয়ার সাথে সাথেই এই সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হয় রোগীর স্বজনদের। ফলে লাশ নিয়ে বিপাকে পড়েন স্বজনরা।

জানা গেছে, এই অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট চালায় বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি রংপুর শাখা। এই কমিটির সদস্যরা অনেকেই পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গেও রয়েছে। সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণে হাসপাতাল এলাকায় ৭০ টি অ্যাম্বুলেন্স চলে যার ৫৫টিই মাইক্রোবাস কেটে বানানো। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাজাহান হাওলাদার ম্যাক্স সহ হাসপাতালে কর্মরত আওয়ামী পন্থী সংগঠনের কয়েকজন নেতা। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন ম্যাক্সের নিজের ভাই শরিফুল ইসলাম সহ অন্যান্য নেতারা।

সংগঠনের জেলা ও মহানগর শাখার সভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, এই অ্যাম্বুলেন্স গুলো বেশিরভাগই মাইক্রোবাস কেটে বানানো। ৭০ টির মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি বৈধ। অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও আমরা সংগঠন থেকে বেশ কিছু দাবি-দাওয়া জানিয়েছি। আমরা মাঝখানে আন্দোলনে গিয়েছিলাম পরে পুলিশের সাথে সমঝোতা করে চলছে। পুলিশ কিছু দাবি-দাওয়া মেনে নিয়েছে আরও কিছু দাবি-দাওয়া আছে। যদি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে সেন্ট্রাল থেকে পরবর্তীতে যে ঘোষণা আসবে আমরা সেটাই করব। তবে এই অ্যাম্বুলেন্স গুলো থাকাতে রোগীরা কম দামে সেবা নিতে পারে। যার কারণে অবৈধ হলেও চাহিদা বেশি।

অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, এরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে ব্যবসা করে আসছে। আমাদের দুটি অ্যাম্বুলেন্স তাই তারা থাকলে রোগীরা কিছুটা সেবা পায়। অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাপারে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে হবে এবং অ্যাম্বুলেন্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এর আগে তাদের সাথে বসা হয়েছিল আবারও বসার চেষ্টা করব।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ- পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুর রশিদ বলেন, এটা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণ করার।

বিআরটিএ রংপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম সরকার জানান, মাইক্রোবাস বা পিক-আপ কেটে অ্যম্বুলেন্স বানানো একেবারেই অবৈধ। আমরা এই অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সের দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ না হবে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।

সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তাদেরর স্বজনরা।

সিফাত/

বেপরোয়া অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্মে নিশ্চুপ প্রশাসন

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ১১:৪২ এএম
বেপরোয়া অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্মে নিশ্চুপ প্রশাসন

ঝালকাঠি শহরের অভ্যন্তরে, মহাসড়কে এবং গ্রামীণ জনপদের প্রত্যন্ত এলাকার সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন। বেপরোয়া গতিতে চলাচল করায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে হতাহত হচ্ছেন অনেকেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব যানবাহন অবাধে চললেও কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

জানা গেছে, বেপরোয়া গতির এই যানগুলো শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করায় পথচারীদের চলাফেরায় অসুবিধা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়কে অনুমোদনহীন যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে তিন চাকার ডিজেলচালিত ডাইসু, ট্রলি, টমটম, ভটভটি, নসিমন, করিমন মালামাল বোঝাই করে চলাচলের ফলে সড়কগুলো হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। এসব যানবাহনের চালকদের নেই কোন লাইসেন্স বা কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ, ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। একদিকে চালকরা নিজেরাই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে পথচারীদের জন্যও তৈরি হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকি। রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স না থাকায় সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা তিন চাকার এই ডাইসুগুলো মূলত ইট, বালু ও কাঠ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে অদক্ষ চালকদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে এগুলো ভয়ংকর হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছরে উপজেলার সড়কগুলোতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ডাইসুর কারণে ঘটেছে। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ডাইসু দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় মো. নয়ন হোসেন নামে এক হেলপার। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডাইসু উল্টে চাপা পড়ে মারা যান নলছিটির সূর্যপাশা গ্রামের বাসিন্দা রুবেল হাওলাদার। এছাড়া ২০২২ সালে শুকতারা ব্রিকস এলাকায় ইটবোঝাই ডাইসুর নিচে চাপা পড়ে ভাবনা নামে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে এবং ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়।

জেলায় ইটভাটাগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টি ডাইসু চলাচল করে। বিশেষ করে ঝালকাঠি পৌরসভার ভিতরে ভারী যানবাহনের চাপে সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে, বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা, অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ঝালকাঠি শহরবাসী। শব্দ ও বায়ুদূষণের কারণেও ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রা। ফজরের নামাজের পর থেকেই এসব যানবাহনের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন ঝালকাঠি বাসিন্দারা। রাস্তায় উড়তে থাকা ইটের গুড়া ও ধুলাবালিতে শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার পৌর এলাকা, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সড়কগুলোসহ একাধিক এলাকায় অবৈধ যানবাহনের বেপরোয়া গতিতে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে । কখনো কখনো রাস্তার পাশে খাদে উল্টে পড়ে থাকতে দেখা যায় এসব ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ যানবাহন।

দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদনহীন এসব যানবাহন বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় মহলে প্রতিবাদ হলেও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ যানবাহনের মালিকদের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন, ফলে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পান না সাধারণ মানুষ। মৌখিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও তেমন কোনো প্রতিকার মেলেনি। ইটভাটা যেসব এলাকায় বেশি, সে এলাকায় এসব অবৈধ যানবাহনের দাপটও বেশি।

ঝালকাঠি বিআরটিএ সহকারি পরিচালক এসএম মাহফুজুর রহমান জানান, জেলায় মটর সাইকেল ৮ হাজার এবং বাস, ট্রাক, মাইক্রো ইত্যাদির ৮ হাজার ৮৭৫ বৈধ লাইসেন্স দেওয়া আছে।

ঝালকাঠি শহর পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেকগুলি অবৈধ (ট্রাক টলির) তিন চাকা ওয়ালা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে এবং থাকবে।

ঝালকাঠি পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায় খবরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এব্যাপারে অভিযান অব্যাহত আছে।

দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঝালকাঠির সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা এবং অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দিন দিন এর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সামনে ঈদুল আজহা, ডাইসুর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সড়ক পরিণত হতে পারে মৃত্যুকূপে। স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনুমোদনহীন যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, দক্ষ চালকদের প্রশিক্ষণ ও সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। অন্যথায় ঝালকাঠিতে বিভিন্ন উপজেলার সড়কে দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে।

সিফাত/

গাইবান্ধায় ট্রাকের ধাক্কায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
আপডেট: ০২ মে ২০২৫, ১০:৪২ এএম
গাইবান্ধায় ট্রাকের ধাক্কায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় কৌশিক মিয়া (২২) ও শ্রাবণ মিয়া (২১) নামে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুই আরোহী। 

বৃহস্পতিবার (১ মে) রাত ১১টার দিকে পলাশবাড়ীর ঢোলভাঙ্গা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

আহতদের গুরুতর অবস্থায় পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

কৌশিক পলাশবাড়ীর মহদীপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের আরিফ মিয়ার ছেলে। শ্রাবণ একই ইউনিয়নের শ্যামপুর (আমতলা) গ্রামের সাদা মিয়ার ছেলে।

পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলফিকার আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, ‘একই মোটরসাইকেলে চারজন আরোহী ছিলেন। তারা রাত ১১টার দিকে ঢোলভাঙ্গা এলাকায় সড়ক পার  হচ্ছিলেন। এ সময় গাইবান্ধা থেকে অজ্ঞাতনামা একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে মোটরসাইকেলটি সড়কে ছিটকে পড়লে ঘটনাস্থলেই দুইজন আরোহী নিহত হন। অপর দুই আরোহী গুরুতর আহত হন।’

জুলফিকার আলী বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ দুটি থানায় আনা হয়েছে। ট্রাকটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’

রফিকুল/পপি/

মেঘনায় মিলছে না ইলিশ, ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ১১:০৪ পিএম
মেঘনায় মিলছে না ইলিশ, ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ
মাছ ধরা শেষে পাড়ে এসেছেন জেলেরা। ছবি: খবরের কাগজ

মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরার জন্য মধ্যরাত থেকে নেমেছেন জেলেরা। ৮ থেকে ১০ ঘন্টা নদীতে বিচরণ করে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ। ইলিশ না পেয়ে অনেক জেলে ফিরছেন খালি হাতে। তবে জেলেদের হতাশা কেটেছে পোয়া, শিলন, ভেলে, চেওয়া, ছোট চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পেয়ে।

বৃহস্পতিবার (১ মে) বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার তরপুচন্ডী ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে জেলেদের কর্মচাঞ্চল্য। কেউ মাছ ধরার জন্য নদীতে নামছেন। আবার অনেকে জাল ঠিকঠাক করছেন। কেউ কেউ ধরে আনা মাছ পাড়েই বিক্রি করছেন।

আনন্দ বাজার এলাকার জেলে সুজন দেওয়ান বলেন, তিনি গতকাল রাত ৩টায় নদীতে নেমেছেন। নৌকায় ছিলেন ৩ জেলে। সকাল ১০টায় মাছ ধরা শেষে পাড়ে এসেছেন। পেয়েছেন পোয়াসহ ছোট প্রজাতির মাছ। বিক্রি করেছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা।

একই এলাকার জেলে মিজানুর রহমান বলেন, ভোরে নেমেছেন নদীতে। উঠে এসেছেন বেলা ১১টার দিকে। ছোট সাইজের কয়েকটি ইলিশ ও পোয়া মাছ পেয়েছেন। বাজারে নিয়ে বিক্রি করে যা পাবেন, তা দিয়ে খরচ উঠবে। তবে আকাঙ্খিত ইলিশ পাননি।

ছোট মাছের সঙ্গে ৮ কেজি ওজনের পাঙাস মাছ পেয়েছেন জেলে আরিফুর রহমান ঢালী। তিনি বলেন, ৪ জন মিলে নৌকা নিয়ে ভোরে নদীতে নেমেছেন। উঠে এসেছেন বেলা ১১টার দিকে। পাঙ্গাসহ সব মাছ বিক্রি করেছেন ১৪ হাজার টাকা। নিষেধাজ্ঞা শেষে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা ওই পরিমাণ মাছ জালে উঠেনি।

শহরের লঞ্চঘাট এলাকার জেলে বাচ্চু দেওয়ান বলেন, ভোরে নেমেছেন নদীতে। ইলিশ পাওয়া যায়নি। তবে পোয়া মাছ পেয়েছেন। তিনি একই নেমেছেন নদীতে। তার পাওয়া মাছ বিক্রি করেছেন ২ হাজার টাকা।

একই এলাকার প্রবীণ জেলে মানিক খান বলেন, ভোরে নদীতে নেমে পাওয়া মাছ বিক্রি করেছি দেড় হাজার টাকা। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নদীর জাটকাসহ ইলিশ সাগরের দিকে নেমেছে। তিনবার জাল ফেলে ছোট সাইজের একটি ইলিশ পেয়েছি। তবে এ বছর অভয়াশ্রম অনেক কঠোর ছিলো। উজানের জেলেদের জাটকা ধরতে দেয়া হয়নি।

এদিকে চাঁদপুর অন্যতম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছঘাট সকাল থেকেই ছিল অনেকটা ফাঁকা। বেশ কয়েকটি আড়তে দেখাগেছে দেশীয় প্রজাতির পোয়া, বাটা, চিংড়িসহ কিছু মাছ।

চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক বলেন, ইলিশ পরিভ্রমণশীল মাছ। সাগর থেকে নদীতে আসে, আবার সাগরে চলে যায়। আশা করি জেলেরা তাদের কাঙ্খিত ইলিশ পাবে। শুধুই ইলিশই নয়, নদীর সব ধরণের মাছই মূল্যবান এবং জেলেরা পাচ্ছে।

ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার প্রায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকার। এই সময় ইলিশসহ সব ধরণের মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহন নিষিদ্ধ ছিলো।

ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ/এমএ/

মে দিবসের আলোচনায় নারী চা শ্রমিকরা ‘আমরা কাজ করি দেশের যেকোনো শ্রমিকের তুলনায় সবচেয়ে কম মজুরিতে’

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ০৮:১৫ পিএম
আপডেট: ০১ মে ২০২৫, ০৮:১৬ পিএম
‘আমরা কাজ করি দেশের যেকোনো শ্রমিকের তুলনায় সবচেয়ে কম মজুরিতে’
ছবি: খবরের কাগজ

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে সিলেটে নারী চা শ্রমিকদের নিয়ে গঠিত ‘ওমেন্স নেটওয়ার্ক হিলুয়াছড়া, কেওয়াছড়া এবং দলদলি চা বাগান’ এর উদ্যোগে র‌্যালি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল ১১টায় দলদলি চা বাগানের খেলার মাঠ থেকে শুরু করে প্রধান গেইট যায় র‌্যালিটি। পরে আবার খেলার মাঠে এসে র‌্যালি শেষ করে আলোচনায় সভা করেন চা শ্রমিকরা।

আলোচনা সভায় চা শ্রমিকরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন। এসময় চা শ্রমিক গীতা মুন্ডা বলেন, আমরা কাজ করি দেশের যেকোনো শ্রমিকের তুলনায় সবচেয়ে কম মজুরিতে। কিন্তু সপ্তাহ শেষে এই অল্প মজুরিটাও ঠিকঠাক পাই না। শ্রমিক দিবসে আমাদের দাবি আমাদের সকল অধিকার যেন ঠিকঠাক নিশ্চিত করা হয়।

চা শ্রমিক চিন্তা মনি দাস বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। বর্ষা এসেছে অথচ এখনও তা মেরামত করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নাই। চা শ্রমিকদের মজুরি যেমন কম দেওয়া হয় তেমনি থাকার জায়গা, খাবার, চিকিৎসাও কম দেওয়া হয়।

হিলুয়াছড়া, কেওয়াছড়া এবং দলদলি চা বাগানের নারী শ্রমিকদের সংগঠিত করে এই ‘ওমেন্স নেটওয়ার্ক’ তৈরি করে দিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এথনিক কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট ওরগানাইজেশান (একডো)। নারী চা শ্রমিকদের বিভিন্ন লিডারশিপ ট্রেনিং করিয়ে তারা এভাবে সংগঠিত করেছেন এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে কথা বলার জন্য জাগ্রত করেছেন। আজকের এই মে দিবসের আয়োজনটিও চা শ্রমিক নারীরা নিজেদের উদ্যোগে করেছেন।

আলোচনা সভায় একডোর প্রকল্প সমন্বয়কারী মোমতাহিনুর চৌধুরী বলেন, চা বাগানের মধ্যে নারী শ্রমিকদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উদযাপন আমাদের জন্য একটি বড় সাফল্য। আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় জুলাই ২০২৪ ইংরেজি থেকে আমরা দলদলি,হিলুয়াছড়া এবং কেওয়াছড়া চা বাগানে নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলার লক্ষ্যে ‘Leadership Development of Tea Garden Women Worker on Their Rights’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে তাদেরকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন ও সোচ্চার হতে উৎসাহী করে যাচ্ছি। আজ তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হচ্ছেন এবং তারা তাদের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলছেন। আমরা মনে করি আমাদের এই প্রকল্পের জন্য বড় একটি অর্জন।

শাকিলা ববি/এমএ/