![সুদানের নারীদের নিপীড়ন উপেক্ষা করা যাবে না](uploads/2023/12/02/1701505900.Untitled.jpg)
২০১৯ সালে সুদানের জনগণ যখন রাষ্ট্রপতি ওমর হাসান আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান জানিয়ে রাস্তায় নেমেছিল, তখন গণতন্ত্র ও পরিবর্তনের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে মহিলারা এগিয়ে এসেছিলেন। যে মহিলারা সুদানে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন, হয়রানি এবং যৌন সহিংসতায় ভুগছিলেন তারাই এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিক্ষোভে আলা সালাহ নামে এক যুবক গাড়ির ওপরে দাঁড়িয়ে শাসকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিলেন। সেই আন্দোলনের যুবকটির কথা কেউ ভুলে যায়নি। বিক্ষোভের ঠিক চার মাস পর প্রেসিডেন্ট আল-বশিরের শাসনের অবসান হয়।
বর্তমানে সুদানের নারীরা সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এবং আধা-সামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে শুরু হওয়া ভয়ংকর যুদ্ধের কবলে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সুদানে গর্ভবতী নারীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার বেড়েছে এবং ৬ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ১ দশমিক ২ মিলিয়নের বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে গেছে। তবে পালিয়ে যাওয়া ১০ জনের মধ্যে নয়জনই নারী ও শিশু। সুদানের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়েছে। সুদানের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হাসপাতালই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। মায়েদের চিকিৎসার জরুরি কোনো ওষুধ নেই বললেই চলে।
সুদানে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে, সুদানে ৪ মিলিয়নেরও বেশি নারী ও মেয়ে যৌন সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরএসএফ কর্তৃক ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতিগত এবং বর্ণগত বিদ্বেষের কারণেই ধর্ষণ করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে পশ্চিম দারফুরের রাজধানী এল-জেনিনায় হামলার সময় আরএসএফ নৃশংস ধর্ষণ এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধ করে। হর্ন অব আফ্রিকার নারীরা আরএসএফ দ্বারা শত শত ঘটনার শিকার হয়েছেন। আরএসএফের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টার সময় অনেক নারী নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছে। এমনকি যৌনদাসী হিসেবে তাদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ২১ বছর বয়সী একজন নারী বলেছিলেন, ‘আমি চার মাসের গর্ভবতী, আমি কতবার ধর্ষিত হয়েছি তা নিজে গণনাও করতে পারব না’।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বর্ণনা করা হয়েছে, দারফুরের র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) কীভাবে নারীদের অপহরণ করেছে। তাদের অমানবিক, অবমাননাকর ও দাসী অবস্থায় রাখা হয়েছে। মুক্তিপণের জন্য আটকে রাখা হয়েছে এবং তাদের জোরপূর্বক বিয়ে করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ট্রাক এবং গাড়িতে করে নারীদের শিকল বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সুদানের নারীদের শোচনীয় পরিস্থিতি জন্য আঞ্চলিক শক্তির অভিপ্রায়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি বিচলিত হয়েছি যখন শুনেছি; সংযুক্ত আরব আমিরাত আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। সুদান সংকটের একজন বিশিষ্ট বিশ্লেষক বলেছেন, আরএসএফের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আমরা সুদান যুদ্ধে জড়িত সব দেশকে অপচেষ্টা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছি। সংযুক্ত আরব আমিরাত অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সুদানে শান্তির জন্য আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নেতাদের গঠনমূলক ভূমিকা পালন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে যখন বিশ্বের মনোযোগ অন্যান্য সংকটের দিকে। অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তাদের অবশ্যই উপেক্ষা করা উচিত নয়।
যখন আমাকে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তখন আমি যুদ্ধ ও লুণ্ঠনের কারণে প্রায় ধ্বংস হওয়া একটি জাতিকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আমি উপলব্ধি করেছি, একটি দেশকে সমঝোতা ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নারীর ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। তাই সুদানেও নারীর ক্ষমতায়ন করতে হবে। আমরা সবাই মিলে সেই প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে পারি।
লেখক: সাবেক প্রেসিডেন্ট, লাইবেরিয়া
আল জাজিরা থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল