![পাকিস্তানে ব্যাট ছাড়াই সেঞ্চুরি](uploads/2024/02/13/1707797902.Abbas-Nasir.jpg)
একজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী বলেন, ইমরান খানের বিজয় ছিল অসাধারণ। এটি ছিল প্রায় ‘ব্যাট ছাড়াই সেঞ্চুরি করার মতো’। ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল ধীর গতিতে এগিয়েছে। পিটিআই ভোটারদের ক্ষোভ এবং বিশৃঙ্খলার কারণে দেশব্যাপী বিভিন্ন মন্তব্য শোনা যাচ্ছে। তাদের নেতাদেরও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ইমরান খানের গ্রেফতার ও জেলে যাওয়ার পর থেকেই এটা পরিষ্কার যে, ‘রিসেট টু ২০১৬’ শুরু হতে যাচ্ছে। দলটিকে তার হিংস্র ও শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। এটা কাউকে হাত বেঁধে রিঙে নিক্ষেপ করার মতো। সামরিক বাহিনী-সমর্থিত নওয়াজ শরিফের দল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল।
ঠিক এক সপ্তাহ আগে আমরা এটিও পর্যবেক্ষণ করেছি যে, ভোটের মাঠে ইমরান খানকে ব্যর্থ করতে তারা সব পরিকল্পনা নিয়েছিল। পিটিআই নেতার প্রতি অবিচারে তার সমর্থকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভোটের দিন পর্যন্ত সব বাধা সত্ত্বেও ভোটাররা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের, যাদের বেশির ভাগই পিটিআই সমর্থক তাদের শতাধিক আসনে জয়ী করেছেন। নির্বাচনে ট্যাবুলেশন এবং ফলাফল ঘোষণা সংক্রান্ত অনেক সমস্যা ছিল। নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ও আদালতে বেশ কিছু ফলাফল বিতর্কিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মাসের পর মাস পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ ২০১৬-এর তথাকথিত ঘটনা পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তিনি এটি সফল করার জন্য সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক কৌশলীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। যখন সময় চলে এল, তখন মনে হলো তিনি নির্বাচনি প্রচারণার পরিবর্তে তাদের প্রতি বিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিলেন। দল প্রায় অলস ও উদাসীন হয়ে পড়ল।
অতীতের নির্বাচন অন্য দেশের ইন্ধনে পরিচালিত হয়েছে, কিন্তু আমরা আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে জানি না। এই নির্বাচনে ইমরান খানকে পরাজিত করতে ভোট কারচুপির সব বন্দোবস্ত পাকা করা হয়েছিল। এ কারণে পিএমএল-এন নির্বাচনে তেমন প্রচার করেনি। ভোটারদের কাছে ভবিষ্যতের জন্য একজন কার্যকর বিকল্প নেতা হিসেবে নিজেকে তুলেও ধরেননি নওয়াজ শরিফ। তারা ‘ভোট কো ইজ্জত দো’ অর্থাৎ- ভোটকে সম্মান করো এই স্লোগান পরিত্যাগ করেছে। কিন্তু সারা দেশে লাখ লাখ মানুষ এই স্লোগানে মুখর হয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।
যখন নওয়াজ শরিফ তার ‘বিজয়ের বক্তৃতা’ দিচ্ছিলেন, তখন তিনি সাহসী শব্দ উচ্চারণ করলেও তাকে দুর্বল, ক্লান্ত, এমনকি পরাজিত দেখাচ্ছিল। তার এই প্রচেষ্টা গণতন্ত্র থেকে দুঃখজনক প্রস্থান হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ২০১৩ সালে একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পরও ক্ষমতায় আসতে পিটিআইয়ের সব পথ (অধিক সংখ্যক আসন সত্ত্বেও) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
তিনি ইতোমধ্যেই পিডিএম-২ নামে পরিচিত একটি জোট সরকারের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত কি না, তা আগামীতে বোঝা যাবে। তার ছোট ভাইকে বিশেষ বিনিয়োগ সুবিধা দিয়ে কাউন্সিলের নেতৃত্বের মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো শাহবাজ শরিফকে সভাপতির দায়িত্ব দেবে কি না, তা-ও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
২০১৩ সালের নির্বাচনের মতো এবারের নির্বাচন নিয়েও কিছু গণমাধ্যম খোলামেলা আলোচনা করেছিল। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, গণমাধ্যমের এই স্বাধীনতা আদৌ থাকবে নাকি ভেঙে পড়বে, সেটাই দেখার বিষয়।
নেতা হিসেবে ইমরান খানকে ধারণ করতে পিটিআই ব্যর্থ হতে পারে, এই ভাবনায় ইমরানকে নিয়ে গণমাধ্যমগুলো তেমন ইতিবাচক প্রচার চালায়নি। কারণ, পিটিআই নির্বাচনে হেরে গেলে মিডিয়াগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
অতীতের সব নির্বাচন অন্য দেশও পর্যবেক্ষণ করেছে। কিন্তু আমরা আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারিনি। এটা সত্য যে, আপনি নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে ‘ম্যানেজ’ করতে পারবেন, কিন্তু শুধু একটা বিন্দু পর্যন্ত এবং আর কিছু নয়। আমরা যেমন গত সপ্তাহে আলোচনা করেছি, এই সপ্তাহে ভোটাররা যেমন দেখিয়েছেন, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
বেলুচিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলেই মতো দেশের বৃহত্তম মহানগর করাচিতেও ভোটারদের ভোট প্রদান থেকে অনেকটাই দূরে রাখা হয়েছে। টানা দুই নির্বাচনে এই দুই জায়গার জনগণকে কতটা সুপরিকল্পিতভাবে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তা চিন্তার বিষয়।
আমি মনে করি, এটি আপনার ভাগ্য, যখন আপনি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কৌশলীদের হাতিয়ার হিসেবে গণনা করেন। ইচ্ছামতো তাদের ব্যবহার করে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। প্রয়োজনে তাদের উচ্চ পদে আসীন করা যায়। আবার তাদের উপযোগিতা শেষ হয়ে গেলে পদচ্যুত করা হয়।
যে কেউ নিজে ক্রন্দন করে বলতে পারে, এক বা একাধিক রাজনৈতিক দল উপযুক্ত সময়ে যেন দোষ স্বীকার না করে এবং অন্যান্য কাজে সক্রিয়ভাবে ষড়যন্ত্র না করে। কিন্তু যারা গুরুত্বপূর্ণ লোক, কেউই তার কথায় মনোযোগ দেয় না।
তাই ২০১৬ সালে তারা যেভাবে ক্ষমতায় এসছিল এবারও তারা একই পন্থা অবলম্বন করেছে। এটা কি ইতিবাচক কিছু? আমি মনে করি না। প্রশ্নবিদ্ধ বছরটি সেই বিন্দুটিকে চিহ্নিত করে, যেখানে অনিশ্চয়তা, তিক্ততা এবং ক্ষোভ দেশকে আঁকড়ে ধরেছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠকে দেশের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি, একজন জুনিয়র অংশীদার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
২০২৪ সালের নির্বাচনের বছরটিও সেই বিন্দুটিকেও চিহ্নিত করবে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা কমপক্ষে বৃহত্তম একক সত্তাকে নৃশংসভাবে ক্ষমতার মাধ্যমে দূরে ঠেলে দেওয়া হবে। জুনিয়র অংশীদাররাও সেভাবে বিশ্বাসযোগ্যতার একই সংকটের মুখোমুখি হবে; যা ২০১৮ সালে করা হয়েছিল। এটাই কি সত্যিকারের অগ্রগতি!
‘একটি ভিন্ন ফলাফলের আশায় একই কাজ করতে থাকুন’ এটা আইনস্টাইনের উন্মাদনার সংজ্ঞা। তবে এটি বেশ সঠিক। ঘড়ির কাঁটা পেছনে ফেরানোর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎকে খুঁজে পাওয়া যায় এবং এটি বৈধ হবে।
যাদের ব্যাট কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং তবুও তারা কমবেশি সেঞ্চুরি করেছে। তারাও ক্ষমতায় আসার যোগ্যতাসম্পন্ন।
লেখক: সাবেক সম্পাদক, ডন
ডন থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল