![সড়ক চলাচলে শিশুর নিরাপত্তা](uploads/2024/04/02/1712032236.Jebin-Afroz.jpg)
বিশ্বজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩’-এর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ নিহত হয় সড়ক দুর্ঘটনায় এবং ৫-২৯ বছর বয়সের মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। বাংলাদেশেও এই চিত্র ভিন্ন নয়। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর শিকার হচ্ছে বিভিন্ন পেশাজীবী ও বয়সের মানুষ। এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যাও কম নয়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত বছর (২০২৩) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৬ হাজার ৫২৪, যেখানে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ১২৮, যা মোট নিহতের ১৭ শতাংশের বেশি।
গবেষণায় দেখা যায়, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক নির্মাণ, অসতর্কতার সঙ্গে রাস্তা পারাপার, অনিয়ন্ত্রতি গতিতে গাড়ি চালনা, ফুটপাথ ও ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা এবং বেশির ভাগ যানবাহনে শিশুদের জন্য নির্ধারিত ও উপযুক্ত বসার স্থান না থাকায় শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেকোনো দুর্ঘটনায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর অনেক শিশুই চিকিৎসার সুযোগ পায় না। ফলে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের সংখ্যা বাড়ছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুমৃত্যুর হার কমাতে চাই শিশুদের জন্য উপোযোগী আসন। শিশু আসনটি এমন একটি আসন যা দুর্ঘটনার সময় বিশেষভাবে শিশুদের সুরক্ষা করে।
বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ২০১০ সাল থেকে ৫ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে, যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সরকারের অন্যান্য অনেক পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২’। এই আইন প্রণয়ন করা হলেও এখনো পর্যন্ত সড়কে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান আইনে পরিবহন ব্যাবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হলেও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে যেমন- সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য পাঁচটি আচরণগত ঝুঁকি যথা: ১. গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ না করা, ২. সিট বেল্ট ব্যবহার না করা, ৩. মানসম্মত হেলমেট পরিধান না করা, ৪. মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং ৫. শিশুবান্ধব বিশেষায়িত আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থাগুলো উল্লেখ না থাকায় আইনটি কার্যকর ফলাফল আনতে পারছে না। সুতরাং, সড়কে মৃত্যুহার কমাতে উপরোক্ত আচরণগত ঝুঁকির বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে একটি সম্পূর্ণ পৃথক আইন প্রয়োজন।
বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা জনসাধারণের ভিতরে এমন আতঙ্ক তৈরি করেছে যে, কোনো দরকারি কাজে ঘরের বাইরে বের হয়ে নিরাপদে পৌঁছানো একটি উদ্বেগের বিষয়। দুর্ঘটনার সময় বাবা কিংবা মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে অনেক শিশু আহত এবং নিহত হয়। তাই পরিবারের সঙ্গে শিশুর ভ্রমণকালে শিশু নিরাপত্তা একটি জরুরি বিষয়। ভ্রমণকালে শিশু যদি একটি নিরাপদ শিশু আসন ব্যবহারের মাধ্যমে অবস্থান করে তাহলে দুর্ঘটনায় ক্ষতি থেকে সুরক্ষা পেতে পারে। তাই যানবাহনে শিশু আসন খুবই জরুরি। শিশু আসনের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের করলে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২ গেজেট আকারে প্রকাশিত বিধিমালায় শিশুদের জন্য যানবাহনে সিটবেল্ট বাঁধার নির্দেশনা থাকলেও শিশু আসনের বিষয়টি বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাই সড়কে দর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন একটি সম্পূর্ণ পৃথক আইন যেখানে জাতিসংঘ ঘোষিত সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ অন্তর্ভুক্ত থাকা অত্যন্ত জরুরি।
সড়কে পথচারীদের নিরাপত্তায় একটি সম্পূর্ণ পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণোয়নে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। একটি সুন্দর, স্বাভাবিক, নিরাপদ পরিবেশ শিশুর বিকাশকে করে তরান্বিত এবং তাকে দেশের কল্যাণকর হয়ে উঠতে সাহায্য করে। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনায় শিশুর প্রাণনাশ হলে, তার ভবিষ্যৎ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে তাদের চলাচল হওয়া উচিত নিরাপদ। এই নিরাপত্তার জন্যই যানবাহনে শিশু আসন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া দরকার গাড়িচালক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা। তাই সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু প্রাণনাশ রক্ষায় নতুন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: অ্যাডভোকেসি অফিসার (পলিসি), রোড সেইফটি প্রকল্প, স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন
[email protected]