![দার্জিলিংয়ের চায়ের দাম পাল্লা দিচ্ছে সোনার সঙ্গে](uploads/2024/04/02/1712032399.diponker-das.jpg)
চা-প্রেমীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে সুগন্ধযুক্ত দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশ টি। এবারে দার্জিলিংয়ের এই চায়ের বিশ্বব্যাপী রমরমা বাজার। মৌসুমের শুরুতেই এক কিলো প্রিমিয়াম জাতের প্রথম ফ্লাশ চায়ের দাম মিলছে ৩১ হাজার টাকা। গত বছরের প্রথম ফ্লাশ চায়ের তুলনায় প্রতি কিলোতে ৪ হাজার টাকা বেশি। দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের উৎপাদন এই মার্চে কম হয়েছে। তার প্রধান কারণ শুষ্ক আবহাওয়া এবং এক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টি।
শীর্ষস্থানীয় দার্জিলিং চা কোম্পানি গোল্ডেন টিপস। এই কোম্পানি রেকর্ড দামে গুডরিক গ্রুপের বাদামতাম চা এস্টেট থেকে নতুন মৌসুমের বিদেশি দার্জিলিং বসন্ত চা সংগ্রহ করেছে এবং কিনেছে। গোল্ডেন টিপস প্রতি কেজি জৈব সাদা চা ৩১ হাজার টাকায় সংগ্রহ করেছে। এই বিশেষ চা এস্টেটের একটি অংশ থেকে তোলা হয়েছিল, যা উচ্চ মানের ক্লোন এসওয়াই-১২৪০ দিয়ে রোপণ করা হয়েছে। এই চায়ের বৈশিষ্ট্য হলো দেখতে সাদা ও উজ্জ্বল সবুজের মতো এবং একটি ফলের মতো স্বাদ রয়েছে। কোম্পানিটি ৫ কেজি অর্গানিক হোয়াইট টি কিনেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এস্টেট থেকে কয়েকদিন আগে ফার্স্ট ফ্লাশ চা তোলা হয়েছিল। রোদ, আর্দ্রতা, মাটির গুণাগুণ এবং বাতাসের একটি বিশেষ সংমিশ্রণ এই অঞ্চলের চাকে বিশেষ করে তোলে। দীর্ঘ শীতের সুপ্তাবস্থার পর সূক্ষ্ম কোমল কুঁড়ি এবং রসালো পাতা গজিয়েছে। বিশেষ প্রশিক্ষিত শ্রমিকরা সাবধানে সেই পাতা ছিঁড়ে নিয়ে বাঁশের ঝুড়িতে বাগানের কারখানায় নিয়ে যান। এই উচ্চমূল্যের চা-গুলো মূলত ইউরোপ এবং জাপানের মতো বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়।
গোল্ডেন টিপসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাধব সারদা বলেছেন, ‘আমরা কয়েক দশক ধরে বাগান থেকে উচ্চমানের চা সংগ্রহ করেছি। আমরা আবারও বাদামতাম চা বাগান থেকে সবচেয়ে বিদেশি স্প্রিং টি সংগ্রহ করতে পেরে আনন্দিত। সারা বিশ্বের চা-প্রেমীদের বিশ্বমানের চা সরবরাহ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে আমাদের প্রাকৃতিক অংশীদার করে তুলেছে এবং আমাদের সম্পর্ক কেবল চায়ের উৎসের বাইরেও অনেক বেশি বিস্তৃত।’ এই অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গোল্ডেন টিপসের ‘ডাইরেক্ট সোর্সিং’ মডেল, যা সরাসরি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে চা সংগ্রহ করে এবং চাষিরা যাতে ভালো দাম পায় তা নিশ্চিত করে। এটি চা শ্রমিকদের জন্য উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং উন্নত জীবনযাত্রার আকারে একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। এটি উৎপাদনকারীদের নিলামের থেকেও দূরে রাখে। কারণ গোল্ডেন টিপস তাদের থেকে সারা বছর চা কেনার আশ্বাস দেয়। উচ্চমানের, বাগানের তাজা চা তোলার কয়েক দিনের মধ্যে এবং সঠিক দামে সরাসরি চা বাগান থেকে পাওয়া।
ব্রিটিশ আমলের মতো নির্যাতন চলছে ভারতে, ক্ষুব্ধ অমর্ত্য সেনরা
‘বিট্রিশ শাসনে ভারতীয়দের প্রায়ই কোনো কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হতো। কম বয়সে এসব ঘটনা দেখে আশা করেছিলাম একদিন ভারত মুক্ত হবে এবং এসব অনাচারের অবসান ঘটবে। কিন্তু আজ মুক্ত গণতান্ত্রিক ভারতেও মানুষকে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হচ্ছে।’ এক বিবৃতিকে এই ভাষায় নিজের দেশ নিয়ে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। একই সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতিতেও স্বাক্ষর করেছেন তিনি। তাতে বলা হয়েছে, ভারতে বিপুল সংখ্যায় লেখক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী বিনা বিচারে দীর্ঘদিন ধরে জেলে আটকে আছেন। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো গুরুতর অভিযোগ নেই।
ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে অমর্ত্য সেন ছাড়াও আছেন বিশিষ্ট লেখক অমিতাভ ঘোষ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক এবং ইউরোপ ও আমেরিকার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্টজন। তারা আরও বলেছেন, ‘আটক থাকা ব্যক্তিদের অপরাধ তারা ভারতের বর্তমান সরকারের সমালোচনা করেছেন। ৭৫ বছর বয়সী প্রবীর পুরকায়স্থ একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক এবং নিউজক্লিক-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। যার অফিস এবং বাড়িতে বারবার তদন্ত চালানো হয়েছিল। কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাকে অপরাধ দমনমূলক ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছয় মাস হয়ে গেছে তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের স্বপক্ষেও চার্জশিট পেশ করা হয়নি। এভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে।’
ভারতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার হরণ নিয়ে অমর্ত্য সেন এর আগে একাধিকবার সরব হয়েছেন। এবার এমন একটি সময় সরব হয়েছেন যখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারির ঘটনা নিয়ে জার্মানি, আমেরিকার মতো বিশ্বের দুটি শক্তিশালী দেশ কূটনীতির ভাষায় কার্যত ভারতের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডলের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসন কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারির পর কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া নিয়েও সরব হয়।
তাৎপর্যপূর্ণ হলো, অমর্ত্য সেন, অমিতাভ ঘোষেরা সরব হওয়ার দিনেই ফ্রান্সের একটি সংস্থা রিপোর্টাস সান্স ফ্রন্টিয়ার্স দিল্লি পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার সে দেশে প্রবেশাধিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি পেশ করেছে। তারা বলেছে, ওই পুলিশ কর্তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার এবং তথ্যের অধিকার হরণের মতো গুরুতর বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, খবরের কাগজ