![বিএনপি এলে কৌশলী হবে আওয়ামী লীগ](uploads/2024/02/24/1708752423.Upazilla_Election.jpg)
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও একই কৌশল নেওয়ার চিন্তা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি নৌকার প্রতীক না দিয়ে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে। তবে যেসব উপজেলায় বিএনপির তৃণমূল নেতারা অংশ নেবেন, সেখানে আওয়ামী লীগের নেতারা একক প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও বিএনপিকে বেশি সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। নেতাদের ভাষ্য, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরাসরি জনগণের সঙ্গে প্রার্থীদের সম্পর্ক থাকে। তাই ভোটকেন্দ্রে অধিক লোকসমাগম ঘটাতে একাধিক প্রার্থী থাকা প্রয়োজন। এ জন্য উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রতীক না দিয়ে দলে এবং দলের বাইরে একাধিক প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর ফলে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরাও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে বলে মনে করছেন তারা। তাদের মতে, বিএনপি অংশ নিলে প্রার্থীরা নিজের প্রয়োজনে ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির নেতারা নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগ থেকে বাধা না দিয়ে বরং স্বাগত জানানোর কৌশল নেওয়া হবে। তবে বিএনপি অংশ নিলে যাতে বেশিসংখ্যক উপজেলায় জয় না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক আওয়ামী লীগ। আর এ জন্যই আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে এককভাবে সমর্থন দেবেন দলীয় নেতারা।
সূত্রমতে, সংসদ নির্বাচনের মতো উপেজেলায় যাতে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, এ লক্ষ্যে একাধিক প্রার্থী যাতে না হন, সে বিষয়ে কেন্দ্র থেকেও পরামর্শ দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে কোনো জায়গায় একাধিক প্রার্থী দাঁড়ালে অসুবিধা নেই। আমরা চাই বিএনপিও নির্বাচনে আসুক। তারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। এ ক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন না দিলেও জেলা-উপজেলা থেকে সমর্থনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একজনকে তো প্রার্থী করতেই পারেন। এটা তৃণমূলের বিষয়। সবাই মিলে একক সিদ্ধান্তে এলে দ্বন্দ্ব কমে আসে। তবে বিষয়টি কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনে দেশের অনেক জায়গায় নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলেন। এর ফলে নির্বাচনের আগে ও পরে অনেক জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) প্রতিবেদনে দেখা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ৪১ জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সহিংস এসব ঘটনায় ৭ জন নিহত ও অন্তত ৬৯৬ জন আহত হন। এ ছাড়া চার শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের এসব বিষয় আমলে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ডেকে এ বিষয়ে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। পাশাপাশি তৃণমূলে নতুন করে সংঘাত ও সংঘর্ষ রোধে উপজেলায় ‘নৌকা’ না রাখার পক্ষেও সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। উদ্দেশ্য হলো- প্রথমত, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং দ্বিতীয়ত, সংঘাত এড়ানো। তা ছাড়া স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হওয়ার ঘটনা এড়াতেও নৌকা প্রতীক না দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, যেখানে বিএনপি বা সরকারবিরোধী কোনো প্রার্থী নির্বাচন করবেন সেখানে একাধিক প্রার্থী হলে দলে ঝামেলা তৈরি হতে পারে। কারণ স্থানীয় এমপি ও দলের জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজের পছন্দের প্রার্থীকে চেয়ারম্যান বানাতে তলে তলে কাজ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দলীয় একাধিক প্রার্থী থাকলে বিরোধীরা এর সুযোগ নিতে পারেন। আর দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন থাকলে সবাই নিজ দলের জন্য কাজ করবেন। এতে দ্বন্দ্বের সুযোগ কম হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধীরা নির্বাচন করতেই পারে। তবে অবস্থা বুঝে দল প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারে। তৃণমূল চাইলে দলের একক প্রার্থীকে সমর্থন জানাতেই পারে। সেটা তৃণমূলের বিষয়। এখানে কেন্দ্রীয় কোনো বিষয় নয়।’
মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে বিএনপির কেউ এলে আমরা অব্যশই দলের প্রার্থীকে সমর্থন দেব। তখন হিসাব ভিন্ন হবে।’
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ নুরুল হুদা মুকুট বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধীরা নির্বাচনে এলে আমরা দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দেব। নির্বাচনে প্রতিযোগিতার মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে দল থাকবে।’