রাজস্ব অব্যাহতির বিপক্ষে আইএমএফ । খবরের কাগজ
ঢাকা ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

রাজস্ব অব্যাহতির বিপক্ষে আইএমএফ

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
রাজস্ব অব্যাহতির বিপক্ষে আইএমএফ

আগামী অর্থবছরের বাজেটে নতুনভাবে কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে কোনো ধরনের অব্যাহতি দেওয়া যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে বর্তমানে যেসব খাতে বড় অঙ্কের অব্যাহতি রয়েছে, তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্যও বলেছেন। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প, মোবাইল এবং জ্বালানি খাতের রাজস্ব অব্যাহতি প্রত্যাহার বা কমানোর ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) কোনো ধরনের যুক্তি উপস্থাপন না করার অনুরোধ করেছে আইএমএফ।

গতকাল রবিবার এনবিআরের বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সকাল ১০টা থেকে টানা সাড়ে ৫ ঘণ্টার বৈঠকে এসব সুপারিশ করে আইএমএফ। এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে এনবিআরের কর, ভ্যাট ও শুল্ক শাখার সদস্য, দ্বিতীয় ও প্রথম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আইএমএফের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতের সুপারিশগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরে। একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিরা করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ করেন। তারা ন্যূনতম কর বাতিল করে এর হার বাড়ানোর পক্ষে বলেন। এ প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করে এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হলে করদাতা হারাবে এনবিআর।

এ বৈঠকে আইএমএফ রাজস্ব প্রশাসনের সততা নিশ্চিতে জোর দিয়ে আদায় কর অবকাশ সুবিধার আওতা কমানো, করদাতার সংখ্যা বাড়ানো, নতুন প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণে বাধ্য করা, ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনা, রাজস্ব পরিশোধে সম্পূর্ণ ই-পেমেন্টের ব্যবহার, অটোমেশনের মাধ্যমে রাজস্ব পরিশোধের তথ্য এনবিআরের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয় আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে। আইএমএফ থেকে ৩ কোটি টাকা টার্নওভারে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণে জোর দিয়েছে।

এভাবে বৈঠকের শুরু থেকেই আইএমএফ প্রতিনিধিরা আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটের ছক কষে এনবিআর কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে জানিয়েছেন। এ সময় দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা অনেক দিন থেকেই তৈরি পোশাকশিল্প বিভিন্ন রাজস্ব সুবিধা পেয়ে আসছে উল্লেখ করে এসব সুবিধা এখন কমানোর সময় হয়েছে বলেও যুক্তি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তারা মোবাইল ও জ্বালানি খাতের রাজস্ব অব্যাহতি প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন।

আগামী অর্থবছরের আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে এনবিআরের কৌশল কী জানতে চাওয়া হলে এনবিআর থেকে জানানো হয়, ভূমি রেজিস্ট্রেশন, সিগারেট, মোবাইল, ভ্রমণ কর, পরিবেশ সারচার্জ, কার্বোনেটেড বেভারেজ, করের পরিধি বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং বকেয়া কর আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে।

পরোক্ষ কর আদায়ের চেয়ে পর্যায়ক্রমে প্রত্যক্ষ কর আদায়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে বলে আইএমএফ প্রতিনিধিরা জানান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ বিষয়টির চর্চা হয়ে এলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখনো ভ্যাটের ওপরই ভর করে রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতের লক্ষ্য ১ লাখ ৬২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার কম হওয়া যাবে না। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৯৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার কম হওয়া যাবে না।

বৈঠকে এনবিআরের আদায়ের ঘাটতি নিয়ে আলোচনা হয়। দাতা সংস্থা থেকে আবারও এনবিআরকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, ঋণের কিস্তি ছাড়ের অন্যতম শর্ত হলো রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও রাজস্ব খাতের সংস্কার।

এ সময় এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের হিসাব নিয়েও আলোচনা হয়। জানানো হয়, রাজস্ব খাতে সংস্কারের মাধ্যমে এনবিআরকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৩ করতে হবে। এ শর্ত পূরণ করতে গেলে বর্তমানে যে রাজস্ব আয় আছে, তার থেকে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করতে হবে। অথচ এরই মধ্যে এনবিআরের ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলেও বৈঠকে আলোচনা হয়।

বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিরা স্পষ্ট বলেন, আগামী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে কর-জিডিপির অনুপাত ৮ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে রাজস্ব থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করতে হবে। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির সর্বশেষ বছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে বলেছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এ অর্থবছরে এনবিআরকে বর্তমান আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত আরও ৯৬ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে। সব মিলিয়ে এনবিআরকে আগামী ৩ অর্থবছর শেষে ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের হিসাব মিলিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়। 

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি : ঘুরেফিরে একই সিন্ডিকেট

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৭:০০ এএম
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি : ঘুরেফিরে একই সিন্ডিকেট
ছবি : সংগৃহীত

চলতি মাসের ৩১ তারিখের পর মালয়েশিয়ায় আবার অভিবাসী কর্মীদের দরজা বন্ধ হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত সব ‘সোর্স কান্ট্রির’ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কারণে দেশটির সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এর আগে দুই দফা বাংলাদেশের সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো কর্মীদের ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

প্রথম ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের কারণে বন্ধ হয়েছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। কিন্তু ততদিনে শ্রমিকদের ৮ হাজার কোটি টাকা এই ১০ এজেন্সির পেটে চলে গেছে। তারপর এল ২৫ এজেন্সির সিন্ডিকেট। এই ২৫ এজেন্সি যদিও সেই পুরোনো ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেট দিয়েই তৈরি। দ্বিতীয় দফায়ও শ্রমিকদের লুট হওয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি। 

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত ফি ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা হলেও কর্মীপ্রতি সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো নিয়েছে সাড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। বিষয়টি আমলে নিয়ে দুদক তদন্ত করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই সিন্ডিকেট মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে। এ কারণে সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটন করা যাচ্ছে না। এমনকি ৩ বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ফের বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি করা হয়। তখন মালয়েশিয়ার তৎকালীন মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ঢাকায় এসে বলেন, ২৫ এজেন্সি এবং তাদের অধীনে ২৫০ সাব-এজেন্ট মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে। এটাই চূড়ান্ত। 

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চুক্তি হওয়ার পর ২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক গেছেন ৫০ হাজার ৯০ জন। ২০২৩ সালে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গেছেন ২৬ হাজার ৮৫০ জন শ্রমিক।

সরকার এ ক্ষেত্রে ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিয়েই খালাস। এই বিপুলসংখ্যক কর্মী সাড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে দেশটিতে গেছেন। সেই হিসাবে মাত্র দুই বছরে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। 

এ প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম বলেন, উভয় দেশেই সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ায় গিয়ে বাংলাদেশি কর্মীরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ১ থেকে ২ লাখ বাংলাদেশির কাজ না পাওয়ার বিষয়টি মালয়েশিয়ার সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। 

আগেও শ্রমিকদের পকেট কাটা হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথম সিন্ডিকেট দৃশ্যমান হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই বছর দেশটিতে কর্মী পাঠাতে জিটুজি প্লাস পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছিল। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান কর্মী পাঠাতে পারত। সেই সময় সরকার ফি নির্ধারণ করেছিল জনপ্রতি ৩৩ হাজার ৫৭৫ টাকা। কিন্তু সে সময় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় কর্মী নেয় সিন্ডিকেটভুক্ত ১০টি এজেন্সি। 

জিটুজি প্লাস চুক্তির পর বিএমইটির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন কর্মী। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে গেছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২ জন। একটি হিসাবে এসব কর্মী পাঠাতে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছিল ৮ হাজার ২৯৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। 

সেই সময় যে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নাম আসে সেগুলো হলো আইএসএনটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, আল ইসলাম ওভারসিস, আমি ট্যুর্স অ্যান্ড ট্রাভেলস, সাজনারি ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, ক্যারিয়ার ওভারসিজ কনসাল্ট্যান্ট লিমিটেড, মেসার্স প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেড এবং প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস।
 
তখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি হিসাবে বলা হয়, শ্রমিকপ্রতি নেওয়া বাড়তি টাকা থেকে ১ লাখ টাকা দিতে হয় মালয়েশীয় নিয়োগদাতাসহ সে দেশের সিন্ডিকেটকে। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায় মাঠের দালালরা। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা চলে যায় যাতায়াত, আনুষঙ্গিক খরচ ও সরকারি অফিসে ঘুষ দেওয়া বাবদ। বাকি ১ লাখ টাকা মুনাফা থাকে এজেন্সির। 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব টিপু সুলতান খবরের কাগজকে বলেন, জিটুজি প্লাসের সময়কার সেই সিন্ডিকেটই এখনো বহাল। তাদের কারণেই মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে এই স্থবিরতা। 

টিপু সুলতান বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশসহ মোট ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নেয়। কিন্তু বাকি ১৩ দেশের ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সি দেশটি নির্ধারণ করে দেয় না। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়।

৩১ মের পর মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া বন্ধ

৩১ মের পর মালয়েশিয়া নতুন করে আর কোনো কর্মী নেবে না। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা বলা হলেও দেশটির অভিবাসন দপ্তর বলছে, নতুন করে আর কর্মী দরকার নেই। তাই অভিবাসী কর্মী নেওয়া বন্ধ। 

কিন্তু বায়রার সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক বছর ধরেই নতুন কোনো ডিমান্ড দিচ্ছে না মালয়েশিয়া। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনে সিন্ডিকেট করে প্রতারণা করার কারণে বেশ কয়েকটি মামলাও বিচারাধীন।

এ প্রসঙ্গে বায়রা মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, দেশটি কী করতে চাইছে স্পষ্ট নয়। তাই সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান হবে।

৩ এমপির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আ.লীগ

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৫:৩০ এএম
৩ এমপির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আ.লীগ
খবরের কাগজ ডেস্ক

মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আওয়ামী লীগের। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র খবরের কাগজকে জানিয়েছে, প্রভাবশালী তিন এমপির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নেপথ্যে কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতা। 

তবে নির্দেশ অমান্যকারীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার করা না হলেও তাদের শাস্তি হবে ভিন্ন মাত্রায়। জানা গেছে, যেসব নেতা দলের হাইকমান্ডের বিরাগভাজন হয়েছেন, ভবিষ্যতে তারা আওয়ামী লীগের পদ-পদবি, পদোন্নতি, মনোনয়ন সর্বোপরি রাজনৈতিক সুবিধার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হবেন। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের ‘কর্মকাণ্ড’ বিবেচনায় রাখবেন। এমনকি যেসব মন্ত্রী ও এমপি নির্দেশ অমান্যকারীদের মদদ দিয়েছেন, তাদের কর্মকাণ্ড নজরদারিতে রাখবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম খবরের কাগজকে বলেন, তাদের (নির্দেশ অমান্যকারী) বিষয়ে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। এই নির্বাচন (উপজেলা) শেষ হবে, সামনে আরও বহু নির্বাচন আছে। দলের কমিটিতে পদ-পদবির বিষয় রয়েছে। তাদের (নির্দেশ অমান্যকারী) বিষয়ে তখনো ভাবা হতে পারে। 

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান এবং নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে ঢালাওভাবে নিষেধাজ্ঞা দেন। ড. আবদুর রাজ্জাকের দুই ভাই এবং শাজাহান খান ও একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলেরা প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে দলে বিভেদ সৃষ্টি হবে- এই আশঙ্কায় নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন নীতিনির্ধারক। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে শাস্তি পেতেই হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৩ জন এমপি দলের মনোনয়ন পাননি, ২৫ জন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। শাস্তিটা অনেকভাবেই আসতে পারে। 

জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন খবরের কাগজকে বলেন, যারা (নির্দেশ অমান্যকারী) দলের নির্দেশনা মানেননি, তারা প্রকাশ্য অথবা অপ্রকাশ্য শাস্তি ভোগ করবেন। 

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান এবং সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগেই শাজাহান খান ও একরামুল করিম চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড নির্দেশ দিয়েছিলেন তাদের ছেলেরা যেন সরে দাঁড়ান। কিন্তু দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করেন তারা দুজন। 

শাজাহান খান আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তার সঙ্গে বিরোধ রয়েছে দলের প্রভাবশালী নেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রাজধানী ঢাকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের। এই দুই নেতা প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একাধিক বৈঠকে বাগবিতন্ডায় জড়িয়েছেন। শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। আর একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সুবর্ণচর উপজেলায়। নিজ জেলার সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে তীব্র বিরোধ রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের।

জাতীয় সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হারুনার রশিদ হীরা ও মামাতো ভাই খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের (৮ মে) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে ড. রাজ্জাক হারুনার রশিদ হীরাকে সমর্থন করেন। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ। 

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন ড. আবদুর রাজ্জাক। সে সময় কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। দলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করার পর থেকেই ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার সম্পর্ক শীতল রূপ ধারণ করে। তবে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গেও বিরোধ রয়েছে ড. আবদুর রাজ্জাকের। আবুল হাসান চৌধুরী তার আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। 

জানা গেছে, শাসক দলের এই তিন এমপির নির্বাচনি এলাকায় অনেক আগে থেকেই আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত। দিন দিন স্থানীয় নেতাদের মধ্যকার দূরত্ব ও সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। এ নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ আসে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে। তেমনি প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন এমপির স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে অভিযোগ আসে। আর এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থিতায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকমান্ড। অন্য মন্ত্রী-এমপিরা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের বিষয়টি জানিয়ে গোপন রাখতে বলা হয়। তাদেরই একাধিক সূত্র খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

যদিও এ বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীর জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর এই সুযোগ নিয়ে দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। যার মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র এমপি।

কাজের ক্ষেত্রে মানসিকতা পাল্টাচ্ছে নতুন প্রজন্মের

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১২:৫২ পিএম
কাজের ক্ষেত্রে মানসিকতা পাল্টাচ্ছে নতুন প্রজন্মের
কাজের প্রতি বিভিন্ন ট্যাবু ভেঙ্গে মানসিকতা পাল্টাচ্ছে নতুন প্রজন্মের। ছবি: সংগৃহীত

গুলশানের একটি জমজমাট কফি শপে অফার চলছে। সদ্য সন্ধ্যা নেমেছে। ছিমছাম ক্যাফের হলুদ বাতিগুলো মিষ্টি আলো ছড়াচ্ছে ভেতরে। তাজা বিন থেকে ব্রিউ করা কফির গন্ধে ম-ম করছে চারদিক। সময় যত গড়াচ্ছে, ভিড় তত বাড়ছে ছোট দোকানটাতে। কিছুক্ষণ পরই হই-হুল্লোড় আর হাসি-আড্ডায় জমজমাট হয়ে ওঠে বহু মানুষের আড্ডার এই প্রাণকেন্দ্র। 

গল্পের ফাঁকে কেউ অর্ডার করছেন এসপ্রেসো, কেউ মকা, কেউ লাটে, কেউবা ক্যাপেচিনো। কাস্টমারদের চাহিদামাফিক অর্ডার নিয়ে ছোটাছুটি করতে করতে ঘাম ছুটছে ক্যাফেতে কাজ করা তরুণ কর্মচারীদের। এদের মধ্যে একজন মাহীন। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার চটপটে যুবক। সদ্য স্নাতক পাস করেছেন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে। একই বিষয় নিয়ে মাস্টার্সও করার ইচ্ছে আছে তার। 

এত দূর পড়াশোনা করে কফি শপে কেন কাজ করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দিন চাকরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিয়েছি। কিন্তু কোথাও সুযোগ হয়নি। অবশেষে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে এই কফি শপে কাজের সুযোগ পেলাম। এখানে জয়েন করার পর আসলে জায়গাটাকে উপভোগ করতে শুরু করেছি। সন্ধ্যার পর থেকে কত মানুষ এখানে আড্ডা দেন, এদের মধ্যে কত মুখ পরিচিত হয়ে ওঠে। প্রথমে এত পড়াশোনা করে একটা কফি শপে ওয়েটারের কাজ করব ভেবে এক রকম হীনম্মন্যতা কাজ করত, এটা ঠিক। তবে এখন মনে হয়, কোনো কাজই ছোট নয়। তা ছাড়া এখানকার বেতন অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র অফিসারের কাছাকাছি। 

দেশে মাত্র দুই দশক আগেও শিক্ষিত যুবসমাজের মধ্যে একধরনের সংবেদনশীলতা কাজ করত। সেটি হলো, জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজের ধরন-সম্পর্কিত হীনম্মন্যতা। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী বড় কোনো পদে বা প্রতিষ্ঠানে চাকরি না পেলে লোকলজ্জায় সামাজিক মর্যাদা হারানোর ভয়ে তটস্থ থাকতেন তরুণরা। পশ্চিমা দেশগুলোতে বৈধ কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা হয় না। তবে আমাদের দেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ‘ভদ্রলোকদের’ প্রতিষ্ঠিত কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে অনীহা কাজ করে। এমনকি বাবা-মা ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যেও এমন মনোভাব থাকে যে স্নাতক পাস করলেই তরুণরা বড় প্রতিষ্ঠানে বড় পদে চাকরি করবে। 

তবে বেশ কিছু সময় ধরে দেশের এই চিত্রপটে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণীই কর্মস্থলের ব্যাপারে প্রচলিত ট্যাবু ভেঙে বিভিন্ন সুপার শপ, কফি শপ, চেইন শপ ও শোরুমগুলোতে কাজ শুরু করেছেন। সুপার শপ স্বপ্ন, আগোরা অথবা আড়ং-এর মতো চেইন শপগুলোতে বেশির ভাগ বিক্রয় কর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান এ বিষয়ে খবরের কাগজকে বলেন, ‘তরুণদের এ জাতীয় কাজে আগ্রহী হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হলো কর্মসংস্থানের অভাব। যে হারে উচ্চশিক্ষিত তরুণরা চাকরির বাজারে আসছে, ওই পরিমাণ কর্মসংস্থান বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে না। দেশে সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়, তা দীর্ঘমেয়াদি। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও যে পদগুলো খালি হচ্ছে, তার বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। সুতরাং কোনো প্রতিষ্ঠিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে ভালো কোনো পদে কাজ করতে হলে তরুণদের যে সময় বিনিয়োগ করতে হয়, সে সময়টা পর্যন্ত তাদের টিকে থাকতে তো হবে! এই সময়টা তারা বেকার না থেকে বিভিন্ন সুপার শপ, শোরুম বা রেস্টুরেন্টগুলোতে খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত হয়।’ 

বসুন্ধরা শপিংমলে আড়ং’-এর আউটলেটে বিক্রয় কর্মী পূজা গোমেজ তার কাজের পরিবেশ বেশ উপভোগ করেন বলে খবরের কাগজকে জানান। সেখানে কাজ করার পাশাপাশি অনলাইনের একটা ব্যবসাও সামলান স্নাতকোত্তর পূজা। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের বৈধ কাজকেই আমি সম্মানের চোখে দেখি।’ তার মতো আরও অনেক তরুণ-তরুণী কাজ করেন এই আউটলেটে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই স্নাতক পাস। সবাই তাদের কাজ উপভোগ করেন। 

অনেক তরুণ-তরুণী পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে করছেন খণ্ডকালীন চাকরি। অনেকে এখন হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং সেক্টরেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টর পারভেজ ববি খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ বাড়ছে। আগে এই সেক্টরে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করা গড়পড়তা তরুণদের আগ্রহ বেশি ছিল। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা তরুণদেরও ক্যাটারিং এবং হোটেল ম্যানেজমেন্টের কাজ শেখার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনেক তরুণ-তরুণীও আমাদের এখানে ক্যাটারিং কোর্সে ভর্তি হচ্ছেন।’ 

তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বড় একটি অংশ বিভিন্ন কফি শপে কাজ করছেন। গুলশানের বীনস অ্যান্ড বেরী’স-এর বারিস্তা ট্রেনার নাসরিন খবরের কাগজকে জানান, বারিস্তা ট্রেনিং নিতে আসা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষিত। অনেকে দেশের বাইরে যাওয়ার আগে বারিস্তা ট্রেনিং নিতে আসেন, আবার অনেকে দেশের ভেতরই বড় বড় হোটেল বা কফি শপগুলোতে কাজ করার আকাঙ্ক্ষায় বারিস্তা কোর্সে ভর্তি হন। অনেকে আবার প্যাশন থেকেই এই কোর্স করেন।

হাইটেক পার্ক প্রকল্প: মেয়াদ বাড়ছে তিন বছর, খরচ বাড়ল ১২৭ শতাংশ

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
হাইটেক পার্ক প্রকল্প: মেয়াদ বাড়ছে তিন বছর, খরচ বাড়ল ১২৭ শতাংশ
তিনবার মেয়াদ বাড়ার পরও শেষ হয়নি হাইটেক পার্ক প্রকল্পের কাজ। এতে করে খরচ বাড়ছে প্রকল্পের। ছবি: সংগৃহীত

দফায় দফায় প্রকল্পের সময় বাড়িয়েও দেশে হাইটেক পার্ক নির্মাণে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত সাত বছরে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। এখনো শুরু হয়নি চট্টগ্রাম হাইটেক পার্ক নির্মাণকাজ। এক শতাংশও অগ্রগতি হয়নি কুমিল্লা, কক্সবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রাম নলেজ পার্কের। প্রকল্পটি সংশোধন করে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খাতে খরচ বাড়ানো হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। পরামর্শক ফি চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। এবার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে তিন বছর। সঙ্গে খরচ বাড়ছে ১২৭ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষার খসড়া প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশে প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনে হাইটেক পার্ক নির্মাণে গুরুত্ব দিয়ে সরকার ২০১৭ সালে ‘জেলা পর্যায়ে আইটি/হাইটেক পার্ক স্থাপন (১২ জেলায়)’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বারবার সময় বাড়িয়েও সঠিকভাবে হয়নি কাজ। এতে অর্থের অপচয় হয়েছে। মানুষ প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ সরকারি প্রায় সব প্রকল্পে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বাড়ছে। অর্থের অপচয় হচ্ছে। প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না জনগণ। এই প্রকল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। শেষ সময়েও কাজ হচ্ছে না। খরচ বাড়ছে বহুগুণ।’

২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে চারজন দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১৫ মে থেকে এ কে এ এম ফজলুল হক (উপসচিব) দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকল্পের ধীরগতির ব্যাপারে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘২০১৭ সালে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রথম চার বছরে তিনজন পিডি দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন কারণে তেমন কোনো কাজ হয়নি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্যাকেজ ডব্লিউডির আওতায় রংপুর, নাটোর, ময়মনসিংহ ও জামালপুর এবং ডব্লিউডি-বির আওতায় ঢাকা, গোপালপুর, খুলনা ও বরিশাল হাইটেক পার্ক নির্মাণে এলওসি ঋণের শর্ত অনুযায়ী ভারতের এলএনটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর তারা সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করে। প্রকল্পের মেয়াদ জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এটা সত্য। গত এপ্রিল পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৮ শতাংশ। বাকি কাজ এই সময়ে হবে না।

দ্বিতীয়বার সংশোধন করে তিন বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থাৎ ২০২৭ সালের জুনে সমাপ্ত করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। আশা করি, এই সময়ের মধ্যে সব কাজ হয়ে যাবে। সময় বৃদ্ধির কারণে বেতন-ভাতা বাড়ছে। রেট শিডিউলও ২০১৮ থেকে ২০২২ সালে পরিবর্তন হচ্ছে। এ কারণে খরচ বাড়ছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা। ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আনতে বন্দরে আমদানি শুল্ক (সিডি) বাবদ খরচ বাড়ছে ১ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৫৫ কোটি ডলার বা ৬০৫ কোটি টাকা খরচ বাড়ছে। মোট খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের ঋণ ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ও দেশীয় অর্থ ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৭১ লাখ। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট তিন বছর মেয়াদ বাড়ানোর সম্মতি দিয়েছে।’ 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘প্যাকেজ ডব্লিউডি-সির আওতায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা ও সিলেট- এই চারটি হাইটেক পার্ক নির্মাণের অগ্রগতি একটু কম হবে। কারণ অল্প কয়েক মাস আগে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর চট্টগ্রামের মেয়র এখনো জায়গা বুঝিয়ে দেননি। কুমিল্লার আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে দশমিক ৫২ শতাংশ, চট্টগ্রামের দশমিক ৪৬ শতাংশ, কক্সবাজারের দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ও সিলেটের অগ্রগতি হয়েছে দশমিক ৪৭ শতাংশ। 

পরামর্শককে অতিরিক্ত ফি দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ার পরে তা নিষ্পত্তিযোগ্য বলে অডিট আপত্তিতে বিবেচনা করা হয়েছে। পাজেরো জিপ গাড়ি অন্য কাজে ব্যবহারের ব্যাপারে পিডি বলেন, ‘হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাড়ি না পাওয়ায় প্রকল্পের এই গাড়িটি ব্যবহার করতেন। পরে আমাকে ব্যবহার করার সুযোগ দেন।’ 

বাংলাদেশের আইটি শিল্পের উন্নয়ন ও আইটি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য সরকার ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের জন্য প্যাকেজ ডব্লিউডি-এ এবং প্যাকেজ ডব্লিউডি-বির আওতায় ৭ তলা স্টিল স্ট্রাকচার ভবন নির্মাণ এবং প্যাকেজ ডব্লিউ-সির আওতায় ৫তলা স্টিল স্ট্রাকচার ভবন নির্মাণের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের ঋণ ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ও জিওবি ২৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনে অর্থাৎ তিন বছরে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। 

অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পেও একই দশা হয়েছে। বাধ্য হয়ে খরচ ছাড়া এক বছর সময় বাড়ানো হয়। তারপরও কাজের কাজ হয়নি। ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সংশোধন করে সময় বাড়ানো হয় তিন বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার জন্য সরকার সময় বেঁধে দেয়। একই সঙ্গে ৫০ কোটি টাকা বা প্রায় ৩ শতাংশ খরচ বাড়িয়ে ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের বেতন ও ভাতা বাড়ানো হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণও দ্বিগুণ করা হয়েছে। পরামর্শক ফি চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। যানবাহনের খরচও বাড়ানো হয়েছে। ১ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশে ১ হাজার ও জাপানে ৫০ জন। আরও প্রায় ৭ হাজার জনকে প্রশিক্ষণের সংস্থান রাখা হয়েছে। 

প্রকল্প সূত্র মতে, এপ্রিল পর্যন্ত রংপুরের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া নলেজ পার্কের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, নাটোর নলেজ পার্কের ২৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ নলেজ পার্কের ২৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, জামালপুরের ২৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ, খুলনার ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বরিশাল নলেজ পার্কের ২০ শতাংশ, গোপালগঞ্জ নলেজ পার্কের ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ঢাকার কেরানীগঞ্জের ২৫ শতাংশ, সিলেটের ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার কুমিল্লা নলেজ পার্কের অগ্রগতি এক শতাংশও হয়নি। আগামী জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এখনো খুলনা নলেজ পার্কের জন্য প্রায় ৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের অফিসে প্রক্রিয়াধীন। চট্রগ্রাম নলেজ পার্ক নির্মাণে ৯ দশমিক ৫৫ একর জমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এখনো বুঝিয়ে দেয়নি। 

আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করতে ও উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত সমাধানে তিন মাস পর পর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি) সভা হওয়ার কথা। দীর্ঘ এই সময়ে ২৪টি হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১৫ পিআইসি ও ১৩টি পিএসসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভা নিয়মিত হলে বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যেত। 

এই প্রকল্পের কাজ করতে বিভিন্ন সময় অর্থের লেনদেন করতে কিছু ভুলত্রুটি ধরা পড়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯টি অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়। তার মধ্যে পাজারো জিপ গাড়ি প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না বলেও অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পরামর্শককে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়েছে। সেই অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি হয়নি। 

প্রতিবেদনে প্রকল্পের দুর্বল দিকের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের সহায়তা পুরোপুরি পাওয়া যায় না। এ জন্য জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। করোনাকালে ১৭ মাস কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ভ্যাট খাতে অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের ফলে নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পের প্যাকেজ ডব্লিউডি-সির আওতায় কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট নলেজ পার্ক বাস্তবায়নে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেখানে মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩০ মাস বা আড়াই বছর। তাই পুরো কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। 

ফিলিস্তিন ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অসন্তুষ্ট’ করতে রাজি নয় বিএনপি

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অসন্তুষ্ট’ করতে রাজি নয় বিএনপি
খবরের কাগজ গ্রাফিক্স

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে হতাশা রয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রকে অসন্তুষ্ট করতে রাজি নয় বিএনপি। এ কারণে ফিলিস্তিন ইস্যুতে কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে দলটি।

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের ওপরে নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ইসরায়েল। এই হামলায় এ পর্যন্ত নারী, শিশুসহ ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিধর রাষ্ট্র হয়েছে ইসরায়েল। এ কারণে সারা বিশ্ব ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও সরকারি দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দেশের ইসলামপন্থি দলগুলো ফিলিস্তিন ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।

যদিও এই ইস্যুতে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে অনেকে দলটির বর্তমান অবস্থানকে কিছুটা ‘নমনীয়’ বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মুসলিম উম্মাহর প্রতি একাত্মতা পোষণকারী দল বিএনপির ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে যেভাবে দাঁড়ানোর বা সোচ্চার হওয়ার কথা, তাদের ভূমিকা ঠিক ততটা জোরালো নয়।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অসন্তুষ্ট হবে, এ কারণে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপি কথা না বলতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক চমৎকার। আবার ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কও চমৎকার। ফলে বিষয়টি কিছুটা ঘোলাটে।’      

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা ও মন্ত্রী অভিযোগ তুলে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতেই বিএনপি ফিলিস্তিন ইস্যুতে নীরব রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ সারা দেশে ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ ছাড়া সরকারি দলের একাধিক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যও উঠে এসেছে। কিন্তু বিএনপির সভা-সমাবেশে ফিলিস্তিন ইস্যুতে এ ধরনের কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা দল ইসলামী আন্দোলন এ প্রশ্নে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। দলটি গত ১০ মে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে এক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে আগামী ১৭ মে শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসলামপন্থি ও বিএনপির মিত্র বলে পরিচিত জামায়াতে ইসলামী কিছুটা ভূমিকা পালন করলেও দলটি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। গত ২২ মে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার বৈঠকে ফিলিস্তিনে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। এর আগে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার প্রতিবাদে গত ৯ মে ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। একই দিন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান। দেশের বাম ও ইসলামপন্থি দলগুলোও ফিলিস্তিন ইস্যুতে কথা বলেছে। 

সরাসরি ইসলামপন্থি দল হিসেবে পরিচিত না হলেও জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দল বিএনপিকেই ইসলামপন্থিদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে মনে করা হয়। আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের বাম এবং ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে দাবিদার দলগুলো সব সময়ই ইসলামি মৌলবাদী দলগুলোর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার অভিযোগের আঙুল বিএনপির দিকেই তোলে। বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরিতে এই ইসলামপন্থি দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের ভূমিকায় বিএনপির পাশাপাশি ইসলামপন্থি কিছু দলও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে। তবে ভারতের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভের কিছুটা বহিঃপ্রকাশ বিএনপিতে ঘটলেও ইসরায়েলকে সমর্থনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে দলটি কৌশলী অবস্থান নিয়েছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে এমন অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারতের বিষয়ে যে কারণে আওয়ামী লীগ নীরব; ঠিক একই কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে বিএনপি নীরব বা কৌশলী।’    

বিএনপির ঘোষণাপত্রের ২৯(ঘ)-তে ‘মুসলিম দুনিয়ার ভ্রাতৃপ্রতিম সকল দেশের সঙ্গে গভীর ও স্থায়ী বন্ধুত্ব অটুট রাখা ও সম্প্রসারিত করা  এবং (ঙ)-তে আরব ও ফিলিস্তিনি ভাইদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় পূর্ণ সমর্থন দান করা’র কথা উল্লেখ রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য নজরুল ইসলাম অবশ্য দাবি করেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানে কোনো সমস্যা নেই। কারণ বিএনপি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে। তার মতে, ‘প্রয়াত ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে জিয়াউর রহমান তথা বিএনপির যে সম্পর্ক ছিল, সেটা পরবর্তীকালেও অব্যাহত থাকে এবং বিএনপি এখনো ওই নীতি মেনে চলে।’

বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রকে অসন্তুষ্ট করতে রাজি নয়, সরকারের এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার তো কত অভিযোগই করে। সরকারের কাজই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা। কিন্তু আমাদের কথা পরিষ্কার। আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিন এবং সে দেশের জনগণের পক্ষে। সেই জনগণের ওপরে যে নিপীড়ন ও অত্যাচার চলছে, আমরা তার বিরুদ্ধে।’ 

তবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপির প্রতিবাদ বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি কোনো মিছিল-সমাবেশ করেনি। হামলার দুই দিন পর গত ৯ অক্টোবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্সে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেছেন জানিয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, যেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন, সেখানে আলাদা করে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করার প্রয়োজন নেই। 

তবে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আলোচনা উঠেছে। দলটির প্রবীণ একজন নেতা ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে প্রতিবাদ করা উচিত বলে মতামত ব্যক্ত করেন। তার ওই প্রস্তাবে সমর্থন দেন উপস্থিত আরও দু-একজন নেতা। কিন্তু উপস্থিত অন্য নেতারা এ বিষয়ে একমত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত দলটি কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেনি। তবে বিএনপির ভেতরে আলোচনা হলো, ফিলিস্তিন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা ঠিক হবে না। কারণ তাতে যুক্তরাষ্ট্রের রুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ মে বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘কিছু করা উচিত’- এমন প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে  উপস্থিত দুজন নেতা বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রতিবাদ কিছু না কিছু তো হচ্ছে। নতুন কিছু করার ব্যাপারে তারা নেতিবাচক মত দেন বলে জানা যায়।

খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ফিলিস্তিন ইস্যুতে কথা কোথায় কম বলা হচ্ছে? বলা হচ্ছে তো। অন্যান্য দল কারা বেশি বলছে? সরকার এবং সরকারি দল বেশি বলছে। সরকারের দায়িত্ব বেশি বলে সরকার বলছে। তাদের বলতে হচ্ছে।’

স্থায়ী কমিটির অন্যতম আরেক সদস্য বেগম সেলিমা রহমান খবরের কাগজকে বলেন, সরকার তো সারাক্ষণ বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। যা নয় তাই বলে বেড়াচ্ছে। তারা নিজেদের কথাগুলো বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। সরকারের কথায় বিএনপির কিছু আসে যায় না। মুসলিম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বিএনপির সহানভূতি ও সহমর্মিতা সবই আছে।

‘তবে এ কথা ঠিক যে, আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে সমন্বয় করেই বিএনপিকে চলতে হয়। পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের দিকে খেয়াল রাখাও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া বিএনপি কিছু করতে গেলেই তো সরকারি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে হাজির হয়।’ যোগ করেন বিএনপির এই প্রবীণ নেতা।      

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। গত ২৪ মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে এক ইফতার পার্টিতে দেওয়া বক্তব্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফিলিস্তিনের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দুই রাষ্ট্রনীতি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত ওই ইফতার অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফাভসহ বাংলাদেশস্থ কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। 

সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসরায়েল থেকে দুটি কার্গো বিমান অবতরণের খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানানো হয়। বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ আক্রমণ এবং ফিলিস্তিনে নির্বিচারে হত্যার ঘটনায় সারা বিশ্বে যখন নিন্দার ঝড় বইছে, সেই সময় ইসরায়েল থেকে ঢাকায় বিমান অবতরণ রহস্যের সৃষ্টি করছে।