গলা কাটা পাসপোর্ট ও তৃতীয় দেশের ট্রানজিট ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া ৬৮ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। তবে এসব রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দিতে সৌদি কর্তৃপক্ষ অব্যাহত চাপ দিচ্ছে বলে জানা গেছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতে বিষয়টি উঠে আসে। বিষয়টি আমলে আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের।
তবে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এখনো কোনো সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি। তবে যদি পাসপোর্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে, তাহলে কোন প্রক্রিয়ায় সৌদি আরবে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়া হবে, সে বিষয়ে তারা চিন্তা-ভাবনা করছে। কেননা, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিলেই তারা নিজেদের এ দেশের নাগরিক ভাবা শুরু করবে এবং অন্য দেশ তাদের বাংলাদেশের নাগরিক মনে করবে। আবার রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পেয়ে নতুন করে বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করে দেশের অন্য নাগরিকদের মতো পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছে তারা।
পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, যদি তাদের পাসপোর্ট দেওয়া হয়, তাহলে এমআরপি পাসপোর্ট দেওয়া হবে। ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। যেসব রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল, ওই সময় তাদের হাতের আঙুলের যে ছাপ নেওয়া হয়েছিল, সেই বায়োমেট্রিক ছাপ পাসপোর্টে থাকবে। যাতে তাদের পরে শনাক্ত করা যায়। এসব রোহিঙ্গা যাতে এই পাসপোর্ট দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র না পেতে পারে, সে জন্য পাসপোর্টে একটি আলাদা পিন নম্বর দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে আপডেট জানা নেই।’
যোগাযোগ করা হলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন) সেলিনা বানু গতকাল দুপুরে খবরের কাগজকে জানান, বিষয়টি খুব জটিল প্রক্রিয়া। তিনি ডিজির সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের রোহিঙ্গারা অনেক দিন ধরে সৌদি আরবে বসবাস করছে। অনেকেই গলা কাটা পাসপোর্ট ব্যবহার করে সেই দেশে গেছে। যাদের গলা কাটা পাসপোর্ট ছিল, সেই সব পাসপোর্টের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। কিছু রোহিঙ্গা অবৈধভাবে সেখানে বসবাস করছে।
সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এতে তাদের দায় বাংলাদেশের ওপর বর্তায়। তারা যখন সৌদি পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয়, তখন সেখানকার পুলিশ বাংলাদেশি দূতাবাসকে ফোন করে এক বাংলাদেশিকে ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ করে। এতে বিপাকে পড়েন সেই দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আবার এর প্রভাব পড়ে সেই দেশের বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর। প্রভাব পড়ে সৌদি আরবের শ্রমবাজারে।
কারণ বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার হচ্ছে সৌদি আরব। আবার দেশের বড় শ্রমবাজারের কথা চিন্তা করে অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে খুব সতর্ক ও গোপনীয়তা রক্ষা করে কাজ করছে পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। কারণ এখানে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন জড়িত, পাশাপাশি যেসব রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দেওয়া হবে, যাতে তারা আবার নতুন করে দেশে জাতীয় আইডি কার্ড না পেতে পারে, সেই দিক চিন্তা করে তারা কাজ করছেন। এই রোহিঙ্গাদের যে পাসপোর্ট দেওয়া হবে সেই পাসপোর্টের একটি বিশেষ পিন নম্বর থাকবে। এ ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া রোহিঙ্গারা যতবার বিমানবন্দর দিয়ে আসা-যাওয়া করবে তাদের আলাদা করে ছবি তোলা হবে এবং এই ছবি রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা করে পাসপোর্টের সার্ভারে আপডেট হিসাবে রাখা হবে। যাতে তাদের দ্রুতই চিহ্নিত করা যায়।
সূত্র জানায়, সৌদিতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করেছেন। তারা বিষয়টি আলোচনার মধ্যে রেখেছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো সিগন্যাল না পাওয়ায় তারা এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।