সৌদিতে সাড়ে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গা পাসপোর্ট দিতে রিয়াদের চাপ । খবরের কাগজ
ঢাকা ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

সৌদিতে সাড়ে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গা পাসপোর্ট দিতে রিয়াদের চাপ

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম
সৌদিতে সাড়ে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গা পাসপোর্ট দিতে রিয়াদের চাপ

গলা কাটা পাসপোর্ট ও তৃতীয় দেশের ট্রানজিট ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া ৬৮ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। তবে এসব রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দিতে সৌদি কর্তৃপক্ষ অব্যাহত চাপ দিচ্ছে বলে জানা গেছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতে বিষয়টি উঠে আসে। বিষয়টি আমলে আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের।

তবে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এখনো কোনো সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি। তবে যদি পাসপোর্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে, তাহলে কোন প্রক্রিয়ায় সৌদি আরবে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়া হবে, সে বিষয়ে তারা চিন্তা-ভাবনা করছে। কেননা, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিলেই তারা নিজেদের এ দেশের নাগরিক ভাবা শুরু করবে এবং অন্য দেশ তাদের বাংলাদেশের নাগরিক মনে করবে। আবার রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পেয়ে নতুন করে বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করে দেশের অন্য নাগরিকদের মতো পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছে তারা।

পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, যদি তাদের পাসপোর্ট দেওয়া হয়, তাহলে এমআরপি পাসপোর্ট দেওয়া হবে। ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। যেসব রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল, ওই সময় তাদের হাতের আঙুলের যে ছাপ নেওয়া হয়েছিল, সেই বায়োমেট্রিক ছাপ পাসপোর্টে থাকবে। যাতে তাদের পরে শনাক্ত করা যায়। এসব রোহিঙ্গা যাতে এই পাসপোর্ট দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র না পেতে পারে, সে জন্য পাসপোর্টে একটি আলাদা পিন নম্বর দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে আপডেট জানা নেই।’

যোগাযোগ করা হলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন) সেলিনা বানু গতকাল দুপুরে খবরের কাগজকে জানান, বিষয়টি খুব জটিল প্রক্রিয়া। তিনি ডিজির সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের রোহিঙ্গারা অনেক দিন ধরে সৌদি আরবে বসবাস করছে। অনেকেই গলা কাটা পাসপোর্ট ব্যবহার করে সেই দেশে গেছে। যাদের গলা কাটা পাসপোর্ট ছিল, সেই সব পাসপোর্টের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। কিছু রোহিঙ্গা অবৈধভাবে সেখানে বসবাস করছে।

সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এতে তাদের দায় বাংলাদেশের ওপর বর্তায়। তারা যখন সৌদি পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয়, তখন সেখানকার পুলিশ বাংলাদেশি দূতাবাসকে ফোন করে এক বাংলাদেশিকে ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ করে। এতে বিপাকে পড়েন সেই দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আবার এর প্রভাব পড়ে সেই দেশের বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর। প্রভাব পড়ে সৌদি আরবের শ্রমবাজারে।

কারণ বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার হচ্ছে সৌদি আরব। আবার দেশের বড় শ্রমবাজারের কথা চিন্তা করে অত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে খুব সতর্ক ও গোপনীয়তা রক্ষা করে কাজ করছে পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। কারণ এখানে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন জড়িত, পাশাপাশি যেসব রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দেওয়া হবে, যাতে তারা আবার নতুন করে দেশে জাতীয় আইডি কার্ড না পেতে পারে, সেই দিক চিন্তা করে তারা কাজ করছেন। এই রোহিঙ্গাদের যে পাসপোর্ট দেওয়া হবে সেই পাসপোর্টের একটি বিশেষ পিন নম্বর থাকবে। এ ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া রোহিঙ্গারা যতবার বিমানবন্দর দিয়ে আসা-যাওয়া করবে তাদের আলাদা করে ছবি তোলা হবে এবং এই ছবি রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা করে পাসপোর্টের সার্ভারে আপডেট হিসাবে রাখা হবে। যাতে তাদের দ্রুতই চিহ্নিত করা যায়।

সূত্র জানায়, সৌদিতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করেছেন। তারা বিষয়টি আলোচনার মধ্যে রেখেছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো সিগন্যাল না পাওয়ায় তারা এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি : ঘুরেফিরে একই সিন্ডিকেট

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৭:০০ এএম
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি : ঘুরেফিরে একই সিন্ডিকেট
ছবি : সংগৃহীত

চলতি মাসের ৩১ তারিখের পর মালয়েশিয়ায় আবার অভিবাসী কর্মীদের দরজা বন্ধ হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত সব ‘সোর্স কান্ট্রির’ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কারণে দেশটির সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এর আগে দুই দফা বাংলাদেশের সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো কর্মীদের ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

প্রথম ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের কারণে বন্ধ হয়েছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। কিন্তু ততদিনে শ্রমিকদের ৮ হাজার কোটি টাকা এই ১০ এজেন্সির পেটে চলে গেছে। তারপর এল ২৫ এজেন্সির সিন্ডিকেট। এই ২৫ এজেন্সি যদিও সেই পুরোনো ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেট দিয়েই তৈরি। দ্বিতীয় দফায়ও শ্রমিকদের লুট হওয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি। 

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত ফি ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা হলেও কর্মীপ্রতি সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো নিয়েছে সাড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। বিষয়টি আমলে নিয়ে দুদক তদন্ত করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই সিন্ডিকেট মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে। এ কারণে সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটন করা যাচ্ছে না। এমনকি ৩ বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ফের বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি করা হয়। তখন মালয়েশিয়ার তৎকালীন মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ঢাকায় এসে বলেন, ২৫ এজেন্সি এবং তাদের অধীনে ২৫০ সাব-এজেন্ট মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে। এটাই চূড়ান্ত। 

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চুক্তি হওয়ার পর ২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক গেছেন ৫০ হাজার ৯০ জন। ২০২৩ সালে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গেছেন ২৬ হাজার ৮৫০ জন শ্রমিক।

সরকার এ ক্ষেত্রে ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিয়েই খালাস। এই বিপুলসংখ্যক কর্মী সাড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে দেশটিতে গেছেন। সেই হিসাবে মাত্র দুই বছরে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। 

এ প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম বলেন, উভয় দেশেই সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ায় গিয়ে বাংলাদেশি কর্মীরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ১ থেকে ২ লাখ বাংলাদেশির কাজ না পাওয়ার বিষয়টি মালয়েশিয়ার সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। 

আগেও শ্রমিকদের পকেট কাটা হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথম সিন্ডিকেট দৃশ্যমান হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই বছর দেশটিতে কর্মী পাঠাতে জিটুজি প্লাস পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছিল। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান কর্মী পাঠাতে পারত। সেই সময় সরকার ফি নির্ধারণ করেছিল জনপ্রতি ৩৩ হাজার ৫৭৫ টাকা। কিন্তু সে সময় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় কর্মী নেয় সিন্ডিকেটভুক্ত ১০টি এজেন্সি। 

জিটুজি প্লাস চুক্তির পর বিএমইটির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন কর্মী। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে গেছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২ জন। একটি হিসাবে এসব কর্মী পাঠাতে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছিল ৮ হাজার ২৯৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। 

সেই সময় যে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নাম আসে সেগুলো হলো আইএসএনটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, আল ইসলাম ওভারসিস, আমি ট্যুর্স অ্যান্ড ট্রাভেলস, সাজনারি ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, ক্যারিয়ার ওভারসিজ কনসাল্ট্যান্ট লিমিটেড, মেসার্স প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেড এবং প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস।
 
তখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি হিসাবে বলা হয়, শ্রমিকপ্রতি নেওয়া বাড়তি টাকা থেকে ১ লাখ টাকা দিতে হয় মালয়েশীয় নিয়োগদাতাসহ সে দেশের সিন্ডিকেটকে। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায় মাঠের দালালরা। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা চলে যায় যাতায়াত, আনুষঙ্গিক খরচ ও সরকারি অফিসে ঘুষ দেওয়া বাবদ। বাকি ১ লাখ টাকা মুনাফা থাকে এজেন্সির। 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব টিপু সুলতান খবরের কাগজকে বলেন, জিটুজি প্লাসের সময়কার সেই সিন্ডিকেটই এখনো বহাল। তাদের কারণেই মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে এই স্থবিরতা। 

টিপু সুলতান বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশসহ মোট ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নেয়। কিন্তু বাকি ১৩ দেশের ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সি দেশটি নির্ধারণ করে দেয় না। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়।

৩১ মের পর মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া বন্ধ

৩১ মের পর মালয়েশিয়া নতুন করে আর কোনো কর্মী নেবে না। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা বলা হলেও দেশটির অভিবাসন দপ্তর বলছে, নতুন করে আর কর্মী দরকার নেই। তাই অভিবাসী কর্মী নেওয়া বন্ধ। 

কিন্তু বায়রার সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক বছর ধরেই নতুন কোনো ডিমান্ড দিচ্ছে না মালয়েশিয়া। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনে সিন্ডিকেট করে প্রতারণা করার কারণে বেশ কয়েকটি মামলাও বিচারাধীন।

এ প্রসঙ্গে বায়রা মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, দেশটি কী করতে চাইছে স্পষ্ট নয়। তাই সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান হবে।

৩ এমপির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আ.লীগ

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৫:৩০ এএম
৩ এমপির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আ.লীগ
খবরের কাগজ ডেস্ক

মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আওয়ামী লীগের। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র খবরের কাগজকে জানিয়েছে, প্রভাবশালী তিন এমপির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নেপথ্যে কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতা। 

তবে নির্দেশ অমান্যকারীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার করা না হলেও তাদের শাস্তি হবে ভিন্ন মাত্রায়। জানা গেছে, যেসব নেতা দলের হাইকমান্ডের বিরাগভাজন হয়েছেন, ভবিষ্যতে তারা আওয়ামী লীগের পদ-পদবি, পদোন্নতি, মনোনয়ন সর্বোপরি রাজনৈতিক সুবিধার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হবেন। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের ‘কর্মকাণ্ড’ বিবেচনায় রাখবেন। এমনকি যেসব মন্ত্রী ও এমপি নির্দেশ অমান্যকারীদের মদদ দিয়েছেন, তাদের কর্মকাণ্ড নজরদারিতে রাখবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম খবরের কাগজকে বলেন, তাদের (নির্দেশ অমান্যকারী) বিষয়ে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। এই নির্বাচন (উপজেলা) শেষ হবে, সামনে আরও বহু নির্বাচন আছে। দলের কমিটিতে পদ-পদবির বিষয় রয়েছে। তাদের (নির্দেশ অমান্যকারী) বিষয়ে তখনো ভাবা হতে পারে। 

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান এবং নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে ঢালাওভাবে নিষেধাজ্ঞা দেন। ড. আবদুর রাজ্জাকের দুই ভাই এবং শাজাহান খান ও একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলেরা প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে দলে বিভেদ সৃষ্টি হবে- এই আশঙ্কায় নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন নীতিনির্ধারক। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে শাস্তি পেতেই হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৩ জন এমপি দলের মনোনয়ন পাননি, ২৫ জন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। শাস্তিটা অনেকভাবেই আসতে পারে। 

জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন খবরের কাগজকে বলেন, যারা (নির্দেশ অমান্যকারী) দলের নির্দেশনা মানেননি, তারা প্রকাশ্য অথবা অপ্রকাশ্য শাস্তি ভোগ করবেন। 

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান এবং সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগেই শাজাহান খান ও একরামুল করিম চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড নির্দেশ দিয়েছিলেন তাদের ছেলেরা যেন সরে দাঁড়ান। কিন্তু দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করেন তারা দুজন। 

শাজাহান খান আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তার সঙ্গে বিরোধ রয়েছে দলের প্রভাবশালী নেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রাজধানী ঢাকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের। এই দুই নেতা প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একাধিক বৈঠকে বাগবিতন্ডায় জড়িয়েছেন। শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। আর একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সুবর্ণচর উপজেলায়। নিজ জেলার সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে তীব্র বিরোধ রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের।

জাতীয় সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হারুনার রশিদ হীরা ও মামাতো ভাই খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের (৮ মে) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে ড. রাজ্জাক হারুনার রশিদ হীরাকে সমর্থন করেন। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ। 

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন ড. আবদুর রাজ্জাক। সে সময় কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। দলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করার পর থেকেই ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার সম্পর্ক শীতল রূপ ধারণ করে। তবে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গেও বিরোধ রয়েছে ড. আবদুর রাজ্জাকের। আবুল হাসান চৌধুরী তার আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। 

জানা গেছে, শাসক দলের এই তিন এমপির নির্বাচনি এলাকায় অনেক আগে থেকেই আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত। দিন দিন স্থানীয় নেতাদের মধ্যকার দূরত্ব ও সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। এ নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ আসে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে। তেমনি প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন এমপির স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে অভিযোগ আসে। আর এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থিতায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকমান্ড। অন্য মন্ত্রী-এমপিরা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের বিষয়টি জানিয়ে গোপন রাখতে বলা হয়। তাদেরই একাধিক সূত্র খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

যদিও এ বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীর জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর এই সুযোগ নিয়ে দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। যার মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র এমপি।

এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন নিজের চেয়েও বেশি নাবিকদের নিয়ে চিন্তা করেছি

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০১:২৫ এএম
নিজের চেয়েও বেশি নাবিকদের নিয়ে চিন্তা করেছি
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ

প্রায় ছয় মাস পর বাসায় পৌঁছে মেয়ের আবদার রক্ষায় কেক কাটলেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে চট্টগ্রামের মাটিতে পা রেখেই প্রথমে যান জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সেরে রাত পৌনে ১০টার দিকে ফ্লাইটে ঢাকা যান তিনি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্যাপ্টেনকে রিসিভ করেন স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে। সেখান থেকে বসুন্ধরা আবাসিকের বাসায় পৌঁছে মেয়ের আবদারের কেক কেটে বাবার আগমনের উৎসব করেন বাসায়। 

ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদের বাড়ি চট্টগ্রামের গোসাইলডাঙ্গা এলাকায়। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। মেয়ের লেখাপড়ার সুবিধার কথা বিবেচনা করেই ঢাকায় বসবাস করছেন। তবে আগামী কোরবানির ঈদে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে আসবেন। বাসায় ফেরার প্রথম দিনে ক্যাপ্টেনকে সাবেক কলিগ ও বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনরা ফোন করেছেন। খোঁজখবর নিয়েছেন সবাই।
 
বাসায় পরিবারের কাছে ফেরার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাসায় পৌঁছে বাবা-মেয়ে কেক উৎসব করেছি। আমার জন্য স্পেশাল কেক করা হয়েছে। সেটি কেটে খেয়েছি পরিবারের সবাই মিলে। বাসায় পরিবারের কাছে থাকা প্রশান্তির ব্যাপার। গতকাল বিভিন্ন জনের ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে দিন পার করেছি। সবাই খোঁজখবর নিচ্ছেন, ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইছেন। অনেকে ফোন করে বলেছেন জিম্মি থাকা অবস্থায় দোয়া করেছেন।’
 
জিম্মি থাকার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ক্যাপ্টেন বলেন, ‘জিম্মিদশায় মুখে সাহসের কথা বললেও অন্তরে ভয় ছিল। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করতে চাই না। তবু বলতে হয়, অন্য ২২ নাবিকের দায়িত্ব আমার ওপর ছিল। আমি জাহাজের মাস্টার। তাদের জীবন রক্ষা, নির্যাতন থেকে রক্ষা করা এসব বিষয় সব সময় চিন্তা করতাম। তাদের খাবার, পানির ব্যবস্থার চিন্তা করতে হতো। আমার নিজের চেয়েও বেশি নাবিকদের নিয়ে চিন্তা করেছি। কবে এই জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হব, সেটিই মাথায় বারবার ঘুরপাক করত। অবশেষে আমরা মুক্ত করতে পেরেছি এবং নাবিকরা ফিরে এসেছেন বাড়িতে।’ 

ক্যাপ্টেনের মনোবল শুরু থেকেই শক্ত ছিল। ফলে জাহাজ জিম্মি হওয়ার পর থেকে ক্যাপ্টেনের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার এনি তেমন বিচলিত ছিলেন না। কারণ তিনি জানতেন চলার পথে এ ধরনের বিপদ আসতে পারে। তবে আজ হোক কাল হোক- এর একটা সমাধান হবেই। 

বুধবার বিকেলে ফাহমিদা আক্তার এনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাসায় মেয়ের আবদারের কেক কেটে উৎসব করেছি। ক্যাপ্টেনকে সুস্থ অবস্থায় পেয়েছি এটিই কাম্য ছিল। তবে আমার মনোবল শক্ত থাকার একটিই কারণ, আমি সব সময় ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল আমার সঙ্গে। ফলে আমার চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণই ছিল না। জিম্মি থাকা অবস্থায় জাহাজে কী ঘটত সবই আমার জানা ছিল, ক্যাপ্টেন জানাতেন। নাবিকদের এমনই জীবন বাসা থেকে গেলেই ৬-৭ মাস ফিরতে পারেন না। এভাবেই আমিও শক্ত হয়ে গেছি।’ 

ক্যাপ্টেন গত ২২ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের দায়িত্ব নেন। সেখান থেকে কার্গো নিয়ে আসেন সিঙ্গাপুর। সেখান থেকে চট্টগ্রাম এবং পরে ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকে যায় জাহাজটি। ৪ মার্চ মোজাম্বিক ছেড়ে দুবাই যাওয়ার পথে ১২ মার্চ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ। ফলে জিম্মি হন তিনিসহ ২৩ নাবিক। ১৪ এপ্রিল মুক্ত হয়ে দুবাই যায় জাহাজটি। সেখানে কয়লা খালাস করে পুনরায় চুনাপাথর লোড করে চট্টগ্রামে পৌঁছে এমভি আবদুল্লাহ। গত সোমবার নোঙর করে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরে উষ্ণ সংবর্ধনার মাধ্যমে পরিবারের কাছে ফেরেন নাবিকরা। 

কাজের ক্ষেত্রে মানসিকতা পাল্টাচ্ছে নতুন প্রজন্মের

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১২:৫২ পিএম
কাজের ক্ষেত্রে মানসিকতা পাল্টাচ্ছে নতুন প্রজন্মের
কাজের প্রতি বিভিন্ন ট্যাবু ভেঙ্গে মানসিকতা পাল্টাচ্ছে নতুন প্রজন্মের। ছবি: সংগৃহীত

গুলশানের একটি জমজমাট কফি শপে অফার চলছে। সদ্য সন্ধ্যা নেমেছে। ছিমছাম ক্যাফের হলুদ বাতিগুলো মিষ্টি আলো ছড়াচ্ছে ভেতরে। তাজা বিন থেকে ব্রিউ করা কফির গন্ধে ম-ম করছে চারদিক। সময় যত গড়াচ্ছে, ভিড় তত বাড়ছে ছোট দোকানটাতে। কিছুক্ষণ পরই হই-হুল্লোড় আর হাসি-আড্ডায় জমজমাট হয়ে ওঠে বহু মানুষের আড্ডার এই প্রাণকেন্দ্র। 

গল্পের ফাঁকে কেউ অর্ডার করছেন এসপ্রেসো, কেউ মকা, কেউ লাটে, কেউবা ক্যাপেচিনো। কাস্টমারদের চাহিদামাফিক অর্ডার নিয়ে ছোটাছুটি করতে করতে ঘাম ছুটছে ক্যাফেতে কাজ করা তরুণ কর্মচারীদের। এদের মধ্যে একজন মাহীন। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার চটপটে যুবক। সদ্য স্নাতক পাস করেছেন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে। একই বিষয় নিয়ে মাস্টার্সও করার ইচ্ছে আছে তার। 

এত দূর পড়াশোনা করে কফি শপে কেন কাজ করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দিন চাকরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিয়েছি। কিন্তু কোথাও সুযোগ হয়নি। অবশেষে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে এই কফি শপে কাজের সুযোগ পেলাম। এখানে জয়েন করার পর আসলে জায়গাটাকে উপভোগ করতে শুরু করেছি। সন্ধ্যার পর থেকে কত মানুষ এখানে আড্ডা দেন, এদের মধ্যে কত মুখ পরিচিত হয়ে ওঠে। প্রথমে এত পড়াশোনা করে একটা কফি শপে ওয়েটারের কাজ করব ভেবে এক রকম হীনম্মন্যতা কাজ করত, এটা ঠিক। তবে এখন মনে হয়, কোনো কাজই ছোট নয়। তা ছাড়া এখানকার বেতন অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র অফিসারের কাছাকাছি। 

দেশে মাত্র দুই দশক আগেও শিক্ষিত যুবসমাজের মধ্যে একধরনের সংবেদনশীলতা কাজ করত। সেটি হলো, জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজের ধরন-সম্পর্কিত হীনম্মন্যতা। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী বড় কোনো পদে বা প্রতিষ্ঠানে চাকরি না পেলে লোকলজ্জায় সামাজিক মর্যাদা হারানোর ভয়ে তটস্থ থাকতেন তরুণরা। পশ্চিমা দেশগুলোতে বৈধ কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা হয় না। তবে আমাদের দেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ‘ভদ্রলোকদের’ প্রতিষ্ঠিত কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে অনীহা কাজ করে। এমনকি বাবা-মা ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যেও এমন মনোভাব থাকে যে স্নাতক পাস করলেই তরুণরা বড় প্রতিষ্ঠানে বড় পদে চাকরি করবে। 

তবে বেশ কিছু সময় ধরে দেশের এই চিত্রপটে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণীই কর্মস্থলের ব্যাপারে প্রচলিত ট্যাবু ভেঙে বিভিন্ন সুপার শপ, কফি শপ, চেইন শপ ও শোরুমগুলোতে কাজ শুরু করেছেন। সুপার শপ স্বপ্ন, আগোরা অথবা আড়ং-এর মতো চেইন শপগুলোতে বেশির ভাগ বিক্রয় কর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান এ বিষয়ে খবরের কাগজকে বলেন, ‘তরুণদের এ জাতীয় কাজে আগ্রহী হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হলো কর্মসংস্থানের অভাব। যে হারে উচ্চশিক্ষিত তরুণরা চাকরির বাজারে আসছে, ওই পরিমাণ কর্মসংস্থান বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে না। দেশে সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়, তা দীর্ঘমেয়াদি। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও যে পদগুলো খালি হচ্ছে, তার বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। সুতরাং কোনো প্রতিষ্ঠিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে ভালো কোনো পদে কাজ করতে হলে তরুণদের যে সময় বিনিয়োগ করতে হয়, সে সময়টা পর্যন্ত তাদের টিকে থাকতে তো হবে! এই সময়টা তারা বেকার না থেকে বিভিন্ন সুপার শপ, শোরুম বা রেস্টুরেন্টগুলোতে খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত হয়।’ 

বসুন্ধরা শপিংমলে আড়ং’-এর আউটলেটে বিক্রয় কর্মী পূজা গোমেজ তার কাজের পরিবেশ বেশ উপভোগ করেন বলে খবরের কাগজকে জানান। সেখানে কাজ করার পাশাপাশি অনলাইনের একটা ব্যবসাও সামলান স্নাতকোত্তর পূজা। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের বৈধ কাজকেই আমি সম্মানের চোখে দেখি।’ তার মতো আরও অনেক তরুণ-তরুণী কাজ করেন এই আউটলেটে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই স্নাতক পাস। সবাই তাদের কাজ উপভোগ করেন। 

অনেক তরুণ-তরুণী পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে করছেন খণ্ডকালীন চাকরি। অনেকে এখন হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং সেক্টরেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টর পারভেজ ববি খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ বাড়ছে। আগে এই সেক্টরে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করা গড়পড়তা তরুণদের আগ্রহ বেশি ছিল। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা তরুণদেরও ক্যাটারিং এবং হোটেল ম্যানেজমেন্টের কাজ শেখার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনেক তরুণ-তরুণীও আমাদের এখানে ক্যাটারিং কোর্সে ভর্তি হচ্ছেন।’ 

তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বড় একটি অংশ বিভিন্ন কফি শপে কাজ করছেন। গুলশানের বীনস অ্যান্ড বেরী’স-এর বারিস্তা ট্রেনার নাসরিন খবরের কাগজকে জানান, বারিস্তা ট্রেনিং নিতে আসা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষিত। অনেকে দেশের বাইরে যাওয়ার আগে বারিস্তা ট্রেনিং নিতে আসেন, আবার অনেকে দেশের ভেতরই বড় বড় হোটেল বা কফি শপগুলোতে কাজ করার আকাঙ্ক্ষায় বারিস্তা কোর্সে ভর্তি হন। অনেকে আবার প্যাশন থেকেই এই কোর্স করেন।

হাইটেক পার্ক প্রকল্প: মেয়াদ বাড়ছে তিন বছর, খরচ বাড়ল ১২৭ শতাংশ

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
হাইটেক পার্ক প্রকল্প: মেয়াদ বাড়ছে তিন বছর, খরচ বাড়ল ১২৭ শতাংশ
তিনবার মেয়াদ বাড়ার পরও শেষ হয়নি হাইটেক পার্ক প্রকল্পের কাজ। এতে করে খরচ বাড়ছে প্রকল্পের। ছবি: সংগৃহীত

দফায় দফায় প্রকল্পের সময় বাড়িয়েও দেশে হাইটেক পার্ক নির্মাণে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত সাত বছরে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। এখনো শুরু হয়নি চট্টগ্রাম হাইটেক পার্ক নির্মাণকাজ। এক শতাংশও অগ্রগতি হয়নি কুমিল্লা, কক্সবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রাম নলেজ পার্কের। প্রকল্পটি সংশোধন করে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খাতে খরচ বাড়ানো হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। পরামর্শক ফি চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। এবার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে তিন বছর। সঙ্গে খরচ বাড়ছে ১২৭ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষার খসড়া প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশে প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনে হাইটেক পার্ক নির্মাণে গুরুত্ব দিয়ে সরকার ২০১৭ সালে ‘জেলা পর্যায়ে আইটি/হাইটেক পার্ক স্থাপন (১২ জেলায়)’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বারবার সময় বাড়িয়েও সঠিকভাবে হয়নি কাজ। এতে অর্থের অপচয় হয়েছে। মানুষ প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ সরকারি প্রায় সব প্রকল্পে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বাড়ছে। অর্থের অপচয় হচ্ছে। প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না জনগণ। এই প্রকল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। শেষ সময়েও কাজ হচ্ছে না। খরচ বাড়ছে বহুগুণ।’

২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে চারজন দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১৫ মে থেকে এ কে এ এম ফজলুল হক (উপসচিব) দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকল্পের ধীরগতির ব্যাপারে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘২০১৭ সালে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রথম চার বছরে তিনজন পিডি দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন কারণে তেমন কোনো কাজ হয়নি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্যাকেজ ডব্লিউডির আওতায় রংপুর, নাটোর, ময়মনসিংহ ও জামালপুর এবং ডব্লিউডি-বির আওতায় ঢাকা, গোপালপুর, খুলনা ও বরিশাল হাইটেক পার্ক নির্মাণে এলওসি ঋণের শর্ত অনুযায়ী ভারতের এলএনটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর তারা সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করে। প্রকল্পের মেয়াদ জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এটা সত্য। গত এপ্রিল পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৮ শতাংশ। বাকি কাজ এই সময়ে হবে না।

দ্বিতীয়বার সংশোধন করে তিন বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থাৎ ২০২৭ সালের জুনে সমাপ্ত করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। আশা করি, এই সময়ের মধ্যে সব কাজ হয়ে যাবে। সময় বৃদ্ধির কারণে বেতন-ভাতা বাড়ছে। রেট শিডিউলও ২০১৮ থেকে ২০২২ সালে পরিবর্তন হচ্ছে। এ কারণে খরচ বাড়ছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা। ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আনতে বন্দরে আমদানি শুল্ক (সিডি) বাবদ খরচ বাড়ছে ১ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৫৫ কোটি ডলার বা ৬০৫ কোটি টাকা খরচ বাড়ছে। মোট খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের ঋণ ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ও দেশীয় অর্থ ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৭১ লাখ। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট তিন বছর মেয়াদ বাড়ানোর সম্মতি দিয়েছে।’ 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘প্যাকেজ ডব্লিউডি-সির আওতায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা ও সিলেট- এই চারটি হাইটেক পার্ক নির্মাণের অগ্রগতি একটু কম হবে। কারণ অল্প কয়েক মাস আগে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর চট্টগ্রামের মেয়র এখনো জায়গা বুঝিয়ে দেননি। কুমিল্লার আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে দশমিক ৫২ শতাংশ, চট্টগ্রামের দশমিক ৪৬ শতাংশ, কক্সবাজারের দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ও সিলেটের অগ্রগতি হয়েছে দশমিক ৪৭ শতাংশ। 

পরামর্শককে অতিরিক্ত ফি দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ার পরে তা নিষ্পত্তিযোগ্য বলে অডিট আপত্তিতে বিবেচনা করা হয়েছে। পাজেরো জিপ গাড়ি অন্য কাজে ব্যবহারের ব্যাপারে পিডি বলেন, ‘হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাড়ি না পাওয়ায় প্রকল্পের এই গাড়িটি ব্যবহার করতেন। পরে আমাকে ব্যবহার করার সুযোগ দেন।’ 

বাংলাদেশের আইটি শিল্পের উন্নয়ন ও আইটি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য সরকার ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের জন্য প্যাকেজ ডব্লিউডি-এ এবং প্যাকেজ ডব্লিউডি-বির আওতায় ৭ তলা স্টিল স্ট্রাকচার ভবন নির্মাণ এবং প্যাকেজ ডব্লিউ-সির আওতায় ৫তলা স্টিল স্ট্রাকচার ভবন নির্মাণের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের ঋণ ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ও জিওবি ২৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনে অর্থাৎ তিন বছরে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। 

অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পেও একই দশা হয়েছে। বাধ্য হয়ে খরচ ছাড়া এক বছর সময় বাড়ানো হয়। তারপরও কাজের কাজ হয়নি। ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সংশোধন করে সময় বাড়ানো হয় তিন বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার জন্য সরকার সময় বেঁধে দেয়। একই সঙ্গে ৫০ কোটি টাকা বা প্রায় ৩ শতাংশ খরচ বাড়িয়ে ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের বেতন ও ভাতা বাড়ানো হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণও দ্বিগুণ করা হয়েছে। পরামর্শক ফি চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। যানবাহনের খরচও বাড়ানো হয়েছে। ১ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশে ১ হাজার ও জাপানে ৫০ জন। আরও প্রায় ৭ হাজার জনকে প্রশিক্ষণের সংস্থান রাখা হয়েছে। 

প্রকল্প সূত্র মতে, এপ্রিল পর্যন্ত রংপুরের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া নলেজ পার্কের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, নাটোর নলেজ পার্কের ২৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ নলেজ পার্কের ২৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, জামালপুরের ২৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ, খুলনার ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বরিশাল নলেজ পার্কের ২০ শতাংশ, গোপালগঞ্জ নলেজ পার্কের ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ঢাকার কেরানীগঞ্জের ২৫ শতাংশ, সিলেটের ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার কুমিল্লা নলেজ পার্কের অগ্রগতি এক শতাংশও হয়নি। আগামী জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এখনো খুলনা নলেজ পার্কের জন্য প্রায় ৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের অফিসে প্রক্রিয়াধীন। চট্রগ্রাম নলেজ পার্ক নির্মাণে ৯ দশমিক ৫৫ একর জমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এখনো বুঝিয়ে দেয়নি। 

আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করতে ও উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত সমাধানে তিন মাস পর পর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি) সভা হওয়ার কথা। দীর্ঘ এই সময়ে ২৪টি হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১৫ পিআইসি ও ১৩টি পিএসসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভা নিয়মিত হলে বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যেত। 

এই প্রকল্পের কাজ করতে বিভিন্ন সময় অর্থের লেনদেন করতে কিছু ভুলত্রুটি ধরা পড়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯টি অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়। তার মধ্যে পাজারো জিপ গাড়ি প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না বলেও অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পরামর্শককে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়েছে। সেই অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি হয়নি। 

প্রতিবেদনে প্রকল্পের দুর্বল দিকের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের সহায়তা পুরোপুরি পাওয়া যায় না। এ জন্য জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। করোনাকালে ১৭ মাস কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ভ্যাট খাতে অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের ফলে নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পের প্যাকেজ ডব্লিউডি-সির আওতায় কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট নলেজ পার্ক বাস্তবায়নে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেখানে মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩০ মাস বা আড়াই বছর। তাই পুরো কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।