গাড়িতে চালকবিহীন বা অটোপাইলট প্রযুক্তি বেশ সাড়া ফেলেছে গাড়িপ্রেমীদের মাঝে। বড় বড় গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান চালকবিহীন গাড়ি নির্মাণের দিকে ঝুঁকছে। এরই মাঝে কয়েকটি কোম্পানির চালকবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চালকবিহীন গাড়ির দুর্ঘটনা এ বিষয়ে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
চলতি মাসের ১০ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোয় ক্ষুব্ধ জনতা ওয়েমোর একটি চালকবিহীন গাড়ি ভাঙচুর করার পর আগুন দেয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চালকবিহীন গাড়ি শহরটিতে কয়েকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এসব ঘটনায় কয়েকজন পথচারী আহতও হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চালকবিহীন গাড়ির বিষয়ে মতভেদ তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। অনেকে মনে করেন, চালকবিহীন গাড়ি মনুষ্যচালিত গাড়ি থেকে নিরাপদ। আবার অন্যরা চালকবিহীন গাড়ির প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত।
মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় সান ফ্রান্সিসকোর ফায়ার সার্ভিস বিভাগ জানিয়েছে, রাস্তার পাশে থাকা ওয়েমোর একটি চালকবিহীন গাড়ি ঘিরে প্রথমে একদল মানুষ ভিড় করে। এরপর তারা গাড়িটির গায়ে বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকে ও জানালা ভেঙে ফেলে। এরপর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে গাড়িটির বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাড়িটিতে আগুন দেওয়ার কারণ সুনির্দিষ্টভাবে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চালকবিহীন গাড়ির কারণে সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ও উদ্বেগের কারণেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
পুলিশের বরাত দিয়ে দ্য লসঅ্যাঞ্জেলেস টাইমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন দেওয়ার সময় গাড়ির ভেতরে যাত্রী না থাকায়, হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। গাড়িতে আগুন দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ওয়েমোর মুখপাত্র স্যান্ডি কার্প জানিয়েছেন, এ ঘটনার পর স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে ওয়েমো।
গত ডিসেম্বরে অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন ওয়েমো প্রতিষ্ঠানের দুটি চালকবিহীন গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। একই ট্রাকের সঙ্গে পরপর সংঘর্ষ ঘটে। গাড়িগুলোর ভেতরে কোনো যাত্রী না থাকায় সে সময় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। দুর্ঘটনার পর কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করে ওয়েমো। তবে দুর্ঘটনার প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও কারণ জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি রাস্তায় নিয়মিত চলাচল করেছে ওয়েমোর চালকবিহীন গাড়িগুলো। এ অবস্থায় সান ফ্রান্সিসকোয় হঠাৎ করেই ক্ষুব্ধ জনতা ওয়েমোর চালকবিহীন গাড়িটি ভাঙচুর করে ও আগুন দেয়। এরপরই টনক নড়ে প্রতিষ্ঠানটির। গাড়িতে আগুন দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই নিজেদের তৈরি চালকবিহীন সব গাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে জেনারেল মোটরসের চালকবিহীন গাড়ি ‘ক্রুজ’ সান ফ্রান্সিসকোয় পথচারীকে আহত করেছে। এমন দুটি অভিযোগ পাওয়ার পর কোম্পানিটির চালকবিহীন গাড়ি ক্রুজ নিয়ে তদন্ত শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এর জেরে তাদের তৈরি ৯৫০টি চালকবিহীন গাড়ি ফিরিয়ে নেয় জেনারেল মোটরসের মালিকানাধীন ক্রুজ।
গত বছরের আগস্টে ওয়েমো ও ক্রুজ প্রতিষ্ঠানকে ২৪ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য। এর আগে শুধু রাতে ট্যাক্সি সার্ভিস হিসেবে এ প্রতিষ্ঠান দুটির গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল। ওয়েমোর দাবি, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় মনুষ্যচালিত গাড়ি থেকেও ওয়েমোর চালকবিহীন গাড়ি অনেক নিরাপদ।
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করা ২০ লাখের বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি ফেরত নিয়েছে। এসব ছিল অটোপাইলট প্রযুক্তিনির্ভর গাড়ি। ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনএইচটিএসএ) নির্দেশে এসব গাড়ি ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় টেসলা।
এনএইচটিএসএর তদন্তে দেখা গেছে, টেসলার অটোপাইলট প্রযুক্তিতে ত্রুটি রয়েছে। এ ত্রুটির কারণে গাড়ি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেন পরিবর্তন করতে গিয়ে অন্য গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে টেসলা গাড়িতে ব্যবহৃত অটোপাইলট প্রযুক্তির কার্যকারিতা তদন্ত করছিল প্রতিষ্ঠানটি। টেসলার অটোপাইলট প্রযুক্তি মূলত গাড়ির স্টিয়ারিং, অ্যাকসেলেরেশন এবং ব্রেক স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
টেসলা বলছে, তারা এসব গাড়িতে ত্রুটি সারিয়ে ফেলার জন্য কাজ করছে। ত্রুটি সারিয়ে ফেলার পর গাড়িগুলো আবার ক্রেতাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় টেসলার শেয়ারের দাম কমে যায়। এনএইচটিএসএর তদন্তে টেসলার অটোপাইলট প্রযুক্তিতে ত্রুটি ধরা পড়ার পর এটি টেসলার জন্য একটি বড় ধাক্কা।
এ ঘটনায় চালকবিহীন বা অটোপাইলট প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পরিচালিত গাড়িগুলো উঠিয়ে নিচ্ছে, যা এই প্রযুক্তির বিকাশে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে চালকবিহীন বা অটোপাইলট প্রযুক্তির এসব গাড়িতে দুর্ঘটনা এড়ানো গেলে যাতায়াত ব্যবস্থা হবে আরও নিরপাদ।
জাহ্নবী