ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

বুয়েটে অনড় সাধারণ শিক্ষার্থীরা, প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম
আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৩ এএম
বুয়েটে অনড় সাধারণ শিক্ষার্থীরা, প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি
ছবি : সংগৃহীত

বুয়েটকে স্মার্ট বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির মডেল থেকে শুরু করে আধুনিক, যুগোপযোগী, বৈচিত্র্যময়-সৃষ্টিশীল, জ্ঞান-যুক্তি-তথ্য-তত্ত্বনির্ভর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ছাত্রলীগ। তবে ছাত্রলীগের এমন প্রতিশ্রুতিতে মন গলেনি আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের। দাবি পূরণ ও রাজনীতিমুক্ত বুয়েট গড়ার দাবিতে অনড় এসব শিক্ষার্থী। এদিকে বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এক খোলা চিঠিতে এই দাবি জানান তারা। 

‘দেশের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি জানানো’ ওই খোলা চিঠিতে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক দিক উল্লেখ করে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘটেছে আধিপত্য, দাপট, র‍্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন, খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মতো ঘটনা এবং এর ব্যাপ্তি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে এর চরমতম মূল্য হিসেবে কেমিকৌশল ৯৯ ব্যাচের সাবেকুন্নাহার সনি, যন্ত্রকৌশল ৯ ব্যাচের আরিফ রায়হান দ্বীপ এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭ ব্যাচের আবরার ফাহাদের মতো মেধাবীদের হারিয়েছি।’

শিক্ষার্থীরা র‍্যাগিং-মারধরের ঘটনায় ছাত্ররাজনীতির দিকে অভিযোগের তীর তুলে আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডই নয়, এর আগেও অসংখ্য শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিং কিংবা ছাত্ররাজনৈতিক দাপটের মাধ্যমে অমানুষিকভাবে নিপীড়িত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। যা বুয়েটের র‍্যাগিং স্টোরি আর্কাইভে সারি সারি আকারে লিপিবদ্ধ আছে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার শাহরিয়ারকে স্ট্যাম্প দিয়ে রাতভর বেধড়ক মারধর করা হয়। ১৭ ব্যাচের মেহজাদ গালিবকে নগ্ন করে সোহরাওয়ার্দী হলের ছাদে তুলে স্ট্যাম্প দিয়ে সারারাত মারা হয়। ১৫ ব্যাচের সামিউত তৌসিফকে মেরে হাত পা ভেঙে দেয়। মারতে মারতে তিনটা স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলা হয়। এই সামিউত তৌসিফ ছিল এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, তার চাচা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে শহিদ। তার লিগামেন্ট ছিঁড়ে পায়ে ফ্র‍্যাকচার হয়ে যায়। সালাম না দেওয়াতে সাখাওয়াত অভির হাত ভেঙে ফেলে আবরার ফাহাদের হত্যাকারী অমিত সাহা। সৌমিত্র লাহিড়ী থাপ্পড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলে একজনের। এরকম আরও অসংখ্য কাহিনি রয়েছে।’

ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ওই শিক্ষার্থীরা। 

এ ছাড়া এতে দেশ-বিদেশে বুয়েটের বিভিন্ন সাফল্যের গল্প উল্লেখ করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুয়েট শিক্ষার্থী মনে-প্রাণে ধারণের কথা বলা হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় মূল্যবোধ, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য এবং একান্ত পালনীয়। আমরা সাংগঠনিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে এসেই এই সচেতনতা রাখি। অথচ অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কতিপয় ব্যক্তি বা গণমাধ্যমের তৎপরতায় ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েট ক্যাম্পাসকে জাতীয় চেতনার বিরোধী মতাদর্শের স্থান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।’

দাবি পূরণ ও ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস দাবিতে চলমান আন্দোলন দুর্দিন আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আপনার কাছে সবিনয়ে অনুরোধ, আপনি আমাদের পাশে দাঁড়ান। আপনি সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন, আমরা জানি এই দুর্দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে যাবেন না।’

বুয়েটের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাতের একটি বক্তব্য এতে তুলে ধরা হয়। ওই বক্তব্যে বলা হয়, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন অধ্যাদেশ করে শিক্ষকদের রাজনীতি, রাজনৈতিক কার্যকলাপ ইত্যাদির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের জন্য অধ্যাদেশের খসড়া যখন বঙ্গবন্ধুর সামনে উপস্থাপন করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন যে এই দুটো বিশ্ববিদ্যালয় নষ্ট করা চলবে না। খসড়া অর্ডিন্যান্স বঙ্গবন্ধু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বুয়েটের শিক্ষকরা তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। এই এজেন্ডাতে তিনি দেখা করতে রাজি হননি। তখন শিক্ষকরা কথা বলতেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলীর সঙ্গে।’

প্রধানমন্ত্রী প্রতি আবেদন জানিয়ে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করা ওই খোলা চিঠিতে বলেন ‘আপনার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, বুয়েটকে নিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে পলিসি গ্রহণ করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন করুন। বুয়েটকে ছাত্র রাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও। কারণ সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি। আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন; ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গত কয়েকবছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দিব শিগগিরই।’

আগামী ৫-৬ বছরের ভেতরে বুয়েট র‍্যাংকিং ৫০ এর মধ্যে চলে আসবে বুয়েট উপ-উপাচার্যের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, ‘শেষ কয়েকবছর এই প্রত্যয় নিয়েই প্রতিটি প্রকৌশল বিভাগে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি, ইতোমধ্যে যার ফলও পেতে শুরু করেছি। আমাদের এই পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এই চিঠি। আমরা, আপনার হাজারও সন্তান আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি।’

চতুর্থ দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

বুয়েট শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পঞ্চম দিন পার হতে চলছে। অন্যদিকে দাবি পূরণে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের চতুর্থ দিনেও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে ছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে ওই দিন কোনো ব্যাচের পরীক্ষা না থাকলেও ক্লাস বর্জনে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। যদিও অন্যান্য দিনের মতো প্রশাসনিক কার্যক্রম যথারীতিতে চালু ছিল। 

আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবারে একটি পরীক্ষা রয়েছে। বাকি পরীক্ষাগুলো ঈদের পর অনুষ্ঠিত হবে। তবে বুধবারের ক্লাস-পরীক্ষাতে অংশ নিবেন কি না এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে ক্লাস-পরীক্ষাগুলো বিগত দিনের মতই বর্জন থাকবে।

হ্যাশট্যাগ আন্দোলন

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বুয়েটে রাজনীতি না চেয়ে ‘হ্যাশট্যাগ’ আন্দোলন শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্ট্যাটাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেখানে বর্তমান থেকে শুরু করে সাবেক শিক্ষার্থীরা হ্যাশট্যাগে- ‘নো স্টুডেন্টস পলিটিক্স ইন বুয়েট’ লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ ছাড়া নাম পরিচয়, বিভাগ ব্যাচ উল্লেখ করে স্ট্যাটাসগুলোতে বলা হয়েছে, ‘একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং এলামনাই হিসেবে, আমি বুয়েটে সব প্রকার সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং তাদের সফলতা কামনা করছি।’ 

ঢাবির জনসংযোগ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি ক্যাম্পাস ও ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি উপাচার্য

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৫ পিএম
ক্যাম্পাস ও ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের বরাত দিয়ে ‘ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ হবে না’ এমন একটি প্রতিবেদন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনলাইন ভার্সন, ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়েছে। তবে উপাচার্য এমন কোনো মন্তব্য করেননি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে দাবি করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, উপাচার্য শুক্রবার গণমাধ্যমে রাজনীতি নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করেননি এবং তিনি কখনোই বলেননি যে, ‘ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে’। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এই বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে গণমাধ্যমকে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল লিখেছেন, ‘ছাত্ররাজনীতি-বিষয়ক কোনো কথা আমি কোথাও বলিনি। ছাত্ররাজনীতি-বিষয়ক কোনো প্রশ্নও আমাকে করা হয়নি এবং আমি মন্তব্যও করিনি।’ একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও লেখেন, ‘প্রতিবেদকের মুখ দিয়ে প্রকাশিত বক্তব্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অসত্য। সবাইকে অপপ্রচার ও গুজব থেকে সাবধান থাকার অনুরোধ রইল।’

এর আগে দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল এবং স্যার এএফ রহমান হল পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান এবং সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।

আরিফ জাওয়াদ/এমএ/

শাবির প্রধান ফটককে ‘শহিদ রুদ্র তোরণ’ ঘোষণা

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম
শাবির প্রধান ফটককে ‘শহিদ রুদ্র তোরণ’ ঘোষণা
ছবি: খবরের কাগজ

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রধান ফটককে ‘শহিদ রুদ্র তোরণ’ ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (২৬ জুলাই) বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব এ ঘোষণা দেন। তারপর গণসংযোগের জন্য ৯ দফা দাবিতে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। এর আগে জুমার নামাজের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহিদদের জন্য দোয়া করেন শিক্ষার্থীরা। 

নিহত রুদ্র সেন শাবিপ্রবির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স (সিইপি) বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি গত ১৮ জুলাই রাতে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ভেলা দিয়ে খাল পার হওয়ার সময় ডুবে মারা যান।

প্রধান ফটককের নামকরণকালে সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘কাগজের এই লেখা যদি ছিঁড়ে ফেলা হয়, আমরা আবারও রক্ত দিয়ে লিখে রেখে আসব একই নাম। রুদ্র মরে গিয়েও আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে চিরকাল। সারা দেশের শহিদদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি দ্রুত আমাদের ৯ দফা মেনে নেওয়া না হয়, যদি অনতিবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিরস্ত্র করে রাজপথ থেকে অপসারণ, ইন্টারনেট কানেকশন স্বাভাবিক করা, ক্যাম্পাগুলোতে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে সন্ত্রাসমুক্ত না করা হয়, যদি হল-ক্যাম্পাস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেওয়া হয়, যদি এখনো টিয়ার শেল-গ্রেনেড-গুলি অব্যাহত থাকে তাহলে সরকারকেই সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে। শহিদদের রক্তের ওপর কোনো সংলাপ হবে না। পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসী দ্বারা নির্মমভাবে সব হত্যা (শহিদ), হামলা-নির্যাতন, মামলা, গ্রেপ্তারের চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালমান থাকবে।’

এ সময় তিনি নিরাপত্তা বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ছাত্রদের পাশে থাকার আহ্বান জানান। পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার বা গুম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে দেশে চলমান গণহত্যা-নির্যাতনের ভয়াবহতা সর্বত্র তুলে ধরার আহ্বান জানান।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বেরোবি

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪৮ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪৮ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বেরোবি
নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিহত আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহত আবু সাঈদের মা-বাবার হাতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদল।

এ সময় নিহত আবু সাঈদের বৃদ্ধ বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে আরেক দিন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। সে সময় ভিসি আমার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। তিনি আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। আমি স্যারকে বলেছিলাম, আমাদের পরিবারের একজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয়। ভিসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন। সন্তানকে তো আর ফিরে পাব না। আমাদের পরিবারের একজনকে একটা চাকরি দিলে আমরা হয়তো একটু ভালোভাবে চলতে পারব।’ সাঈদের বাবা আরও জানান, প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ না কেউ খোঁজ রেখেছেন। এ ছাড়া পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই সহায়তা করছেন। 

মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরা ছিল আবু সাঈদ। তার টিউশনির জমানো টাকায় চলতাম আমরা। সন্তান হারিয়েছি, এ শোকের কোনো সান্ত্বনা নেই। পিতা হয়ে সবচেয়ে ভারী কাজ হলো সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া।’ আল্লাহর কাছে এখন শুধু সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান বৃদ্ধ এ বাবা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল আসাদ, কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরোজুল ইসলাম।

প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ভিসি স্যারের নির্দেশে সাঈদের মা-বাবার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিনি নিজেও সাঈদের পরিবারের খোঁজ রাখছেন, পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে আজ সাড়ে ৭ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।’ এ সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ার পর গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেরোবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এর পর থেকেই নতুন মাত্রা পায় কোটাবিরোধী আন্দোলন। সেদিন সন্ধ্যার পর পরই দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নিহত আবু সাঈদের পরিবারের পাশে বেরোবি থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হাসিবুর রশীদ। ১৭ জুলাই থেকে আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাবি শিক্ষকের স্বেচ্ছায় অব্যাহতি

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাবি শিক্ষকের স্বেচ্ছায় অব্যাহতি
অধ্যাপক জাহিদুল করিম

সারা দেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ ও কিছু প্রতিবাদী শিক্ষককের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইলে অব্যাহতিপত্রটি পোস্ট করার পর ভাইরাল হয়ে যায়। 

এ ব্যাপারে ম্যাসেঞ্জারে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অব্যাহতিপত্র রেজিস্ট্রারকে মেইল করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

জাহিদুল করিম ২০১০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করছেন। 

শিক্ষকদের ভূমিকা আজ জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলীয়করণের কারণে শিক্ষক সমাজের বিবেক লোপ পেয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।’ 

জাবিতে ১৪ বছর ধরে শিক্ষকতা করা এই শিক্ষক বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের মূল্যবোধ ও নৈতিকতাবোধকে জাগ্রত করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের চাকরি থেকে আমি অব্যাহতি ঘোষণা করছি।’

জবির হতাহত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার নির্দেশ উপাচার্যের

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৩ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৭ পিএম
জবির হতাহত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার নির্দেশ উপাচার্যের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের তালিকা করে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এ তথ্য জানান উপাচার্য। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী  আহত হয়েছে, এমন সব শিক্ষার্থীদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছি প্রক্টরকে। তালিকার মাধ্যমে হতাহত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করা হবে। অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে গেছে তাদের তালিকা পেলে আমরা যেকোনো সাহায্য করতে পারব।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজনকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে, অনিক নামের একজন শিক্ষার্থীকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার খাদ্যনালী ফুটাে হয়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক খোঁজখবর রাখা হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে তালিকা করা শুরু করেছি। ৮-৯ জন শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খোঁজ পেয়েছি। যাদের টাকার প্রয়োজন ছিল, দ্রুত টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। আমাদের তালিকার কাজ চলমান রয়েছে। আজ থেকে বিভাগ অনুযায়ী খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যার যে ধরণের সহয়তা দরকার হবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গুলিবিদ্ধ ৫ শিক্ষার্থী ঢামেকে ছিল। তাদের চারজন রিলিজ পেয়েছে। আরেকজনকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। আমরা সাবর্ক্ষণিক তাদের খোঁজ রেখেছি। আমি নিজেও নিয়মিত ঢামেকে যেয়ে তাদের দেখে এসেছি। উপাচার্য মহোদয়ও আমাদের মাধ্যমে তাদের খোঁজ নিয়েছেন নিয়মিত।’

মুজাহিদ বিল্লাহ/অমিয়/