দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে তুলনামূলক বেশি তাপমাত্রা থাকে রাজশাহীতে। গত কয়েক দিন ধরে এখানে তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। এরই মধ্যে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি আবাসিক হলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। তাছাড়া বেড়েছে লোডশেডিং। এমন পরিস্থিতিতে সশরীরে ক্লাস করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তীব্র গরমে ক্লাস করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। এ ছাড়া সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়ে যায় মশার উৎপাত।
জানা গেছে, চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সশরীরে ক্লাস স্থগিত করে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তুলনামূলক বেশি তাপমাত্রার অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও গত ২৪ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সশরীরে ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিভাগগুলোকে প্রয়োজনে অনলাইনে ক্লাস নিতে পারার স্বাধীনতাও দেওয়া হয় প্রশাসন থেকে। যদিও এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ছাড়া অন্য কোনো বিভাগে অনলাইন ক্লাস চালু হয়নি।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৮টার মধ্যেই সূর্যের তীব্র রোদে আবাসিক হলের ট্যাংকের পানি অনেক গরম হয়ে যায়। এরপর সারা দিন আর সেই ট্যাংকের পানি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এমনকি ক্লাস শেষে হলে ফিরে ফ্রেশ হওয়ার জন্যও ঠাণ্ডা পানি পান না শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি হলে সাবমারসিবল পাম্প থাকলেও পানি অপচয় রোধে অধিকাংশ সময়েই তা বন্ধ রাখা হয়। পানি প্রচণ্ড উত্তপ্ত থাকায় আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজও যথাযথভাবে করতে পারছেন না। এ ছাড়া ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা। ক্লাসরুমে এসি না থাকায় তীব্র গরমে শিক্ষকের লেকচারে মনোযোগী হতে পারছেন না তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি অনলাইনে ক্লাস চালু হলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে তারা। গরমের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বেড়েছে মশার উপদ্রব। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ড্রেন, নর্দমা ও হলগুলোর আশপাশের জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এসব জায়গায় পানি জমে ও অতিরিক্ত আবর্জনার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে।
এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আবাসিক হলগুলোতে বিশুদ্ধ পানি পেতে বেগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অধিকাংশ সময়ই টিউবওয়েল দিয়ে পানি উঠছে না। এমন সমস্যাকে ‘সাময়িক’ উল্লেখ করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তীব্র গরমে প্রতিটি বিভাগেই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস চলছে। অধিকাংশ ক্লাসরুমগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় শিক্ষকরা ঠিকমতো পাঠদান করতে পারছেন না। অপরদিকে শিক্ষার্থীরাও ক্লাসরুমে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। ফলে একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তীব্র গরমে ক্লাস করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান শোভন। তিনি বলেন, ‘রোদের মধ্যে ক্লাসে যাতায়াতের কারণে প্রচুর পিপাসা লাগত। আর বোতলের পানি তো গরম হয়ে থাকে। তৃষ্ণা লাগলে এটাই খেয়েছি। এখন একসঙ্গে জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছি।’
একদিকে গরম ও অন্যদিকে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ সৈয়দ আমীর আলী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রনি আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সামনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতির জন্য দিনের বেলাতেও পড়াশোনা করতে হয়। মশার অত্যাচারে পড়াশোনার মনযোগ নষ্ট হয়ে যায়। তাই দিনের বেলায় মশারি টানিয়ে পড়াশোনা করতে হয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক ডা. তবিবুর রহমান বলেন, ‘এই রোদে বাইরে বের হওয়া মোটামুটি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বেশি বেশি পানি পান করলে, ছাতা ব্যবহারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করলে সমস্যা হওয়ার কথা না।’
ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহীর অসহ্য গরমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে অনলাইন ক্লাস চালু করা প্রয়োজন। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই গরমের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে বিভাগগুলো প্রয়োজন মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সব বিভাগ অনলাইনেও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এ ছাড়া আমরা লক্ষ্য করেছি মশার উৎপাত বেড়েছে। এ বিষয়ে ভিসি মহোদয়কে জানানো হয়েছে। দ্রুতই মেশিনের মাধ্যমে মশার ওষুধ স্প্রে করা হবে।’