রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এক ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে হল ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতাসহ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। মারধরের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।
ওই শিক্ষার্থীর নাম সবুজ বিশ্বাস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান আতিক। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জন ছাত্রলীগ কর্মী। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।
সবুজ বিশ্বাস গতকাল ছাত্রলীগ নেতার হাতে শারীরিক নির্যাতন এবং শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকির বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।
তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, ‘গত বুধবার রাত ২টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান আতিক ও তার ৮-১০ জন অনুসারী আমাকে কক্ষ থেকে বের করে হলের ছাদে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। পরে নিজেকে সনাতনী দাবি করলে আরও বেশি মারপিট করে। আমি প্রাণ রক্ষার্থে দৌড়ে হল ত্যাগ করি। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়িতে অবস্থান করছি। এমতাবস্থায় নিজের নিরাপত্তা-শঙ্কায় পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।’
এর আগে গত শনিবার রাত ৯টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী হলের সহসভাপতি আতিকুর রহমানসহ কয়েকজন গেস্টরুমে বসেছিলেন। এমন সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ তার কয়েকজন অনুসারীকে নিয়ে এসে তাদের কয়েক মিনিটের জন্য গেস্টরুম ত্যাগ করতে বলেন। এ বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে সেটি সংঘর্ষে রূপ নেয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সবুজ বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘ওই ঘটনার সময় আমি হলেও ছিলাম না। ঘটনার পরের দিন আমি হলে আসি। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আমি যে ব্লকে থাকি, সেই ব্লকে নিয়াজ মোর্শেদ ভাইয়ের ছেলেরা থাকত।’
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী না হয়েও হলে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এক বড়ভাই আমাকে এই হলে তুলেছেন। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না।’ তবে কোন বড়ভাই হলে তুলেছেন তা জানাতে রাজি হননি এই ভুক্তভোগী।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাদের অপকর্ম লুকানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। আমি তাকে চিনি না। আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করব।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু খবরের কাগজকে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী হলের যে ঘটনা, সেটি আমি জানার সঙ্গে সঙ্গে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলি। লিখিত অভিযোগ পুরোপুরি সত্যি নয়। সবুজ ওই হলের আবাসিক কোনো শিক্ষার্থী নয়। আবাসিকতা ছাড়া হলে থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। ওই ঘটনা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। হল প্রশাসন থেকে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’