টিলা ও জলাভূমির ৩২০ একর জায়গাজুড়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। ভূমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পুরো এলাকায় রয়েছে প্রাণপ্রকৃতির ছাপ। টিলাভূমির সবুজ বন আর সমতলে জলাভূমি ঘিরে আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বিচরণ। এই বিচরণকে নির্বিঘ্ন করতে উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩৮ বছর পর ক্যাম্পাসে গড়া হচ্ছে পাখির অভয়ারণ্য। একই সঙ্গে অভয়ারণ্য ঘিরে তৈরি করা হবে নান্দনিক ওয়াকওয়ে ও লেক। সিলেট সিটি করপোরেশনের সহায়তায় পাখির অভয়ারণ্য গড়ার কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ফুডকোর্ট সংলগ্ন এলাকায় লাল নিশান লাগানো। সেখানে ৮৯ হাজার ৭২৭ স্কয়ার ফিট জায়গায় লেক খনন করা হচ্ছে। লেকের চারপাশে থাকবে ওয়াকওয়ে। লেক-ওয়াকওয়ের মধ্যে ১২ হাজার ৭০১ স্কয়ার ফিট জায়গা থাকবে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে সংরক্ষিত। ১৯৮৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের পর এই প্রথম ক্যাম্পাসে পাখির অভয়ারণ্য হচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের নির্দেশনায় প্রকৃতিবান্ধব ক্যাম্পাস গড়তে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লেক খননে সহযোগিতা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিলোরোড ও কিলোরোডের পাশের লেক সংস্কারে যৌথভাবে সহযোগিতা করে সিসিক। পাশাপাশি ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত রাখতেও সহযোগিতা করবে সিসিক। সিটি করপোরেশন এলাকা বর্ধিত হওয়ায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এখন সিসিকের অন্তর্ভুক্ত। এই অন্তর্ভুক্তির সুফল হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নান্দনিক উন্নয়নে সিসিকের সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকিতে লেক, ওয়াকওয়ে ও পাখির অভয়ারণ্য গড়তে একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়েছে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামকে।
কমিটির কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং পরিবেশকে সুন্দর রাখা। জলবায়ু পরিবর্তন ও বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত পরিবেশ রক্ষায় গাছ এবং প্রাণিসম্পদকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে লেক, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে পাখির অভয়ারণ্য গড়ার কাজটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এ কাজটি সম্পন্ন হলে প্রাণী ও প্রকৃতির সুরক্ষায় অনন্য এক নিদর্শন স্থাপন হবে বলে আমি মনে করি।’
পাখির অভয়ারণ্য গড়াসহ নান্দনিক ওয়াকওয়ে-লেক নির্মাণকাজে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেওয়ায় সিলেট সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সিসিকের সহযোগিতায় আমরা এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিলোরোডে কার্পেটিংয়ের কাজ করেছি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে আমরা সবসময় সিসিককে পাশে পাচ্ছি। আশা করি সিসিকের সহযোগিতায় এ কাজটিও আমরা শেষ করতে পারব। এটি হলে সিলেটের অন্যতম নান্দনিক নিদর্শন হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়।’
প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করা হবে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা চাই সবুজ ক্যাম্পাস আরও সবুজ হোক, প্রকৃতিবান্ধব হোক। লেকগুলো সংস্কার করে জলাধার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি যেন ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে। আমরা সবসময় চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ যেন প্রাকৃতিক ও সুন্দর থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি না করে আমরা উন্নয়নমূলক কাজগুলো করে থাকি। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা এবার লেকের মধ্যে পাখির অভয়ারণ্য তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে করে দেশীয় পাখির পাশাপাশি অতিথি পাখির আবাসস্থল হিসেবে এটা ব্যবহৃত হতে পারে।’
পাখির অভয়ারণ্য গড়ার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসকে প্রকৃতিবান্ধব করার উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। সিলেটের স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’-এর সমন্বয়ক মোহাম্মদ আশরাফুল কবীর বলেন, ‘যে জায়গায় অভয়ারণ্য গড়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, সেটি অনেকটা নিরিবিলি হওয়ায় শীতে সেখানে অতিথি পাখির বিচরণ দেখা যায়। বর্তমান বাস্তবতায় পাখিদের আবাসস্থল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাখির অভয়ারণ্য গড়ার উদ্যোগটি হবে মাইলফলক। এই কর্মযজ্ঞকে আমরা অভিনন্দন জানাই।’