চাকরি মানে ব্যস্ততা। আর ব্যস্ততা কর্মজীবনেরই অংশ। কিন্তু এই ব্যস্ততা বা কাজের চাপ যদি আপনার স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, সেক্ষেত্রে তা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। অফিসে কাজের চাপ বিভিন্ন কারণেই বেড়ে যেতে পারে। অনেকগুলো ছোট ছোট কাজ জমে গেলেও যেমন চাপ বেড়ে যায়, তেমনই একটা বা দুটো সময়সাপেক্ষ কাজও দিনভর ব্যস্ত রাখতে পারে আপনাকে। কাজের চাপ যে ধরনেরই হোক না কেন, ঠিকমতো ম্যানেজ করতে পারলে সময়মতো কাজ শেষ করা খুব কঠিন কিছু নয়। অফিসে কাজের চাপ সামলানোর কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে
বিস্তারিত জানাচ্ছেন আফসানা আক্তার।
হাসিখুশি থাকুন
গোছানো ও পরিপাটি স্বভাবের মানুষ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে থাকেন। চেষ্টা করুন হাসিখুশি থাকতে। কপালে সারাক্ষণ চিন্তার ভাঁজ ফেলে রাখলে তা কিন্তু স্থায়ী দাগ হিসেবে বসে যেতে পারে। তাই কাজ যখন করতেই হবে, মনে আনন্দ নিয়ে করুন। নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করুন। এতে কাজের চাপে আর অস্থির লাগবে না।
কাজের তালিকা তৈরি করুন
যেসব কাজ হাতে রয়েছে, তার একটা তালিকা তৈরি করুন। কাজের উন্নতি অনুযায়ী প্রতিনিয়ত সেই তালিকা আপডেট করতে থাকুন। সবকিছু যদি মনে রাখার চেষ্টা করেন, সেক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়বে।
দিনের কাজ দিনেই করুন
বড় বা সময়সাপেক্ষ কাজগুলোকে ছোট ছোট কাজে ভাগ করে নিন। প্রতিদিনের গোল সেট করুন। যে দিনের কাজ সে দিনই শেষ করার চেষ্টা করুন। কাজ পরের দিনের জন্য ফেলে রাখবেন না। তাহলে দেখবেন সব কাজ হবে। আর কাজ সময়ের মধ্যেও শেষ হবে। কাজ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
গুরুত্ব অনুযায়ী কাজ সাজিয়ে নিন
গুরুত্ব অনুযায়ী কাজগুলোকে সাজিয়ে নিতে পারেন। যে কাজ যত বেশি জটিল, সেটাকে তালিকার প্রথমেই রাখুন। এতে মানসিক চাপ কমবে। আর সব কাজই যদি জটিল হয়, সেক্ষেত্রে ডেডলাইন অনুযায়ী কাজগুলোকে সাজিয়ে নিন।
সময়ের হিসাব রাখুন
অনেক সময় অজান্তেই আমরা কিছু কিছু কাজ করতে গিয়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে ফেলি। তাই কোন কাজে কতটা সময় খরচ করছেন, তার একটা হিসাব রাখতে পারেন। এতে বুঝতে সুবিধা হবে যে, কোথায় বেশি নজর দিতে হবে।
সময় বাঁচাতে চেষ্টা করুন
অনেক সময় পরপর মিটিং থাকলেও কাজের সময় পাওয়া যায় না। যদি ইন-পারসন মিটিংয়ের প্রয়োজন না থাকে, সেক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মিটিং করে যাতায়াতের সময় বাঁচাতে পারেন। অথবা মিটিংয়ের বিষয়, সময়সীমা ইত্যাদি আগেভাগে সবাইকে পাঠিয়ে রাখুন, যাতে সময়ে সবটা শেষ করতে পারেন।
অতিরিক্ত কাজ ঘাড়ে নেবেন না
আপনি যেহেতু মেশিন নন, তাই আপনার কাজ করার নির্দিষ্ট সীমা থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই মাত্রাতিরিক্ত কাজ ঘাড়ে নিলে ব্যস্ততা পিছু ছাড়বে না কোনো দিনই। যতটুকু কাজ করতে পারবেন ঠিক ততটুকু কাজেরই দায়িত্ব নিন।
ব্যস্ততাকে নিয়ন্ত্রণ করুন
একটানা ব্যস্ততা দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ব্যস্ততাকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এতে ক্লান্তিও কমবে, আর কাজের প্রতি একঘেয়েমিও তৈরি হবে না।
কাজের ফাঁকে ব্রেক রাখুন
যখন কাজের খুব চাপ থাকবে তখন মনকে হালকা রাখতে হবে। নইলে মনোযোগে সমস্যা হবে। বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে রাখুন। যে কাজ পরে করলেও হবে তা মাথাতে এখনই আনবেন না। কাজগুলো কয়েকটা ভাগে ভাঙুন। কাজের ফাঁকে অবশ্যই ব্রেক রাখুন। দেখবেন সব ঠিকমতো হবে।
অন্যের ওপর ভরসা করবেন না
কাজের জন্য অন্য কারও ওপর ভরসা করবেন না। নিজের কাজ নিজেই গুছিয়ে করুন। এ ব্যাপারে কেউ আপনাকে সাহায্য করতে পারে তা মাথাতেও রাখবেন না। ফলে নিজের কাজের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কাজের চাপও সামলাতে পারবেন সহজে। তাই অন্যের ওপর ভরসা না করে নিজের কাজ নিজে করুন।
মাথা ঠান্ডা রাখতেই হবে
অযথা মাথা গরম করবেন না। এতে আপনার নিজের ক্ষতি। নিজের শরীরের ক্ষতি। অফিসে কাজের চাপ থাকলে তা সহকর্মীর সঙ্গে শেয়ার করুন। দেখবেন, আপনার সমকর্মী মানসিক পরিস্থিতি বিচার করে আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।
সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন
অনেক সময় অফিসের কাজের চাপকে অসহনীয় করে তোলে সহকর্মীরা। তাই সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাদের সম্পর্কে বুঝতে জেনে নিন তারা কোথা থেকে এসেছেন এবং কীভাবে কাজ করেন। তাদের সাধারণ প্রশ্ন করুন এবং প্রতিদিন তাদের উপস্থিতির সময়ে সতর্ক হোন, এক চিলতে হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। যেকোনো সমস্যায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। একই সঙ্গে অফিসে কারও অগোচরে তার সম্পর্কে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। পরস্পর আলাপ করুন। কাজের পাশাপাশি অফিসে মজার কিছু মুহূর্ত কাটানোর চেষ্টা করুন। সুযোগ পেলে অফিসের বাইরেও তা অব্যাহত রাখুন। এভাবেই ধীরে ধীরে একটা সময় দেখবেন অফিসের চাপকে সামলে নিয়েছেন।
দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট হোন
কোনো ব্যাপারে অনিশ্চয়তা থাকলে প্রশ্ন করতে কিংবা অতিরিক্ত তথ্য চাইতে দ্বিধা করবেন না। প্রতিষ্ঠান আপনার কাছে কী প্রত্যাশা করে বা সহকর্মীদের প্রতি আপনার কী কী দায়িত্ব আছে, তা জেনে নেওয়া আপনার কর্তব্য। এসব ব্যাপারে স্পষ্ট হতে চাওয়াকে কখনোই আপনার জ্ঞানের অভাব হিসেবে দেখবেন না। আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আপনি যদি স্পষ্ট থাকেন তাহলে যেকোনো কাজের চাপকেই আপনার কাছে বোঝা মনে হবে না।
কলি