![পেশা নির্বাচনে যা লক্ষ রাখা দরকার](uploads/2024/01/12/1705044568.bb6.jpg)
ক্যারিয়ার বলতে আমরা অনেকেই মনে করি বড় কোনো অফিসার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অথবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ক্যারিয়ারের সংজ্ঞা থেকে আমরা বুঝি যেকোনো পেশায় তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে সফলভাবে পৌঁছানো। আমাদের দেশে অভিভাবকদের মধ্যে ছেলেমেয়েদের ওপর জোর করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়; যা অনেক ক্ষেত্রে মঙ্গলজনক হয় না। পড়াশোনা শেষ করে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে বসলে প্রতিযোগিতার দৌড়ে অনেকখানিই পিছিয়ে পড়তে হবে। এর জন্য স্কুলজীবন থেকেই একটি গোছাল পরিকল্পনা করে নিতে হবে। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কোনো ভুল করা যাবে না। সঠিক পরিকল্পনা ও সে অনুযায়ী নিজেকে যদি তৈরি করতে পারেন, চাকরির জন্য আপনাকে হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে না। বরং চাকরিই আপনাকে খুঁজে নেবে। চলুন জেনে নিই ভবিষ্যৎ পেশা নির্বাচনে কী কী বিষয় লক্ষ রাখা দরকার। বিস্তারিত জানাচ্ছেন তারেক বিন ফিরোজ
বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত
আমাদের দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে শাখা নির্বাচনের সময়ই শিক্ষার্থীদের একটি পথ বেছে নিতে হয়। মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান-এই তিনটি শাখার মধ্যে যেকোনো একটিকে নির্বাচন করার আগে নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত হতে হবে। অভিভাবকরা অনেক সময় ছেলেমেয়েদের ওপর জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। যা অনেক ক্ষেত্রেই মঙ্গলজনক হয় না। যদিও মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পরিপক্বতা আসে না, তারপরও তাদের মতকে একেবারেই অগ্রাহ্য করা ঠিক হবে না। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি শিক্ষার্থী ও অভিভাবক একসঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা ফলপ্রসূ হয়।
কাজের ধরন নির্ধারণ
পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কাজের পরিবেশ নির্ধারণ করা। অর্থাৎ আপনি কোন পরিবেশে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন সেটা ঠিক করা। যেমন, আপনি যদি ঘরে বসে নিরিবিলি কাজ করতে চান তাহলে আপনার জন্য উপযুক্ত পেশা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আবার আপনি যদি মানুষের সঙ্গে মিশতে, কথা বলতে পছন্দ করেন এবং আপনার যোগাযোগ দক্ষতা অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে তাহলে আপনি মার্কেটিং এবং অন্যান্য কর্পোরেট জবের দিকে ঝুঁকতে পারেন।
নিজেকে যাচাই করুন
আপনি কোন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন সেটা একান্ত আপনাকেই বেছে নিতে হবে। PathSource, Skills matcher, Socanu, O*NET Interests Profiler, Keirsey Temperament Sorter-সহ বেশকিছু ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ আছে যেগুলোর সাহায্যে আপনি নিজেই নিজেকে যাচাই করে নিতে পারেন। এসব ওয়েবসাইটে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জেনে নেওয়া যাবে নিজের ব্যক্তিত্ব, আগ্রহের জায়গাগুলোকে। তা ছাড়া সে অনুযায়ী যত পেশা আছে তার ধারণা পাওয়া যাবে। টেস্টগুলো করার পর আগ্রহের সঙ্গে মিল রেখে বেশকিছু ক্যারিয়ার অপশনের সাজেশন দেখতে পারবেন। এমনকি সে পেশায় যেতে হলে কোন কোন পথ অবলম্বন করতে হবে তাও জেনে নিতে পারবেন।
অপ্রচলিত ক্যারিয়ারও রয়েছে
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, শিক্ষকতার মতো প্রচলিত ক্যারিয়ার ছাড়াও দেশে আরও পেশা রয়েছে। সেগুলো দিয়েও আজকাল কিছু ক্যারিয়ার পথ তৈরি হয়েছে, যাতে অনেকেই সফল হচ্ছেন। যেমন ফটোগ্রাফি, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মেকআপ আর্টিস্ট, স্টাইলিস্ট, ক্যারিয়ার গ্রুমিং, কর্পোরেট ট্রেইনার, পাবলিক স্পিকার, ফ্যাশন ডিজাইনিং, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ফিল্ম মেকিং, ইউটিউবিং, ব্লগিং ইত্যাদি। এসব বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ আছে। তবে এসব বিষয়ে তাত্ত্বিক শিক্ষার চেয়ে প্র্যাকটিকালি শেখার প্রয়োজন বেশি।
ক্যারিয়ার মাত্রই চাকরি নয়
ক্যারিয়ার মাত্রই চাকরি নয়। আপনি চাইলে উদ্যোক্তাও হতে পারেন। উদ্যোক্তা হলে নিজের কাজের স্বাধীনতা যেমন থাকে, তেমনি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়। বিশেষত আমাদের দেশে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তরুণরা এগিয়ে এলেই বিভিন্ন উদ্যোক্তাত্তিক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ ভালো হবে।
আয়ের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে
ক্যারিয়ার বলতে আমরা সাধারণত অর্থ উপার্জনের মাধ্যমকেই বুঝি। লেখাপড়া শেষ করে একটা স্মার্ট বেতনের চাকরি পেতে হবে, সরল চোখে এটাই বড় চাওয়া। তবে ক্যারিয়ার নির্বাচনে বেতনটা যে একমাত্র জরুরি বিষয় তাও কিন্তু নয়। যে খাতগুলো ৪-৫ বছর পরও চাহিদাসম্পন্ন থাকবে, তাতে আয় কেমন হতে পারে সেটা পরিচিত কারও সঙ্গে পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়। এ ছাড়া এ তথ্যগুলো জানতে আপনি ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন।
পেশার কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে হবে
যে পেশায় আপনার আগ্রহ আছে, সে পেশা সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হবে অর্থাৎ রিসার্চ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ওই পেশায় কর্মরত মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে পারেন। পাশাপাশি ওই পেশার কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পেতে সেখানে গিয়ে সরাসরি কথা বলতে পারেন। এতে কাজের ধরন, পরিবেশ- সবকিছু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। এরপর সবকিছু যাচাই করে ভবিষ্যৎ পছন্দের পেশাটিকে বেছে নিতে হবে। এবং সেই পেশাকে উদ্দেশ করে পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি চালিয়ে যেতে হবে।
পরিকল্পনা সাজাতে হবে
পেশা বেছে নেওয়ার পর সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করার জন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পনাগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে- লং টার্ম ও শর্ট টার্ম। মূল উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর জন্য যেসব দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন সেগুলোকে শর্ট টার্ম প্ল্যানিংয়ের আওতাভুক্ত করতে হবে। সাধারণত যেসব কাজ পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব সেগুলোকে শর্ট টার্মে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পরের ধাপগুলো যেগুলো সম্পন্ন করতে তিন থেকে পাঁচ বছর লাগতে পারে সেগুলোকে লং টার্ম প্ল্যানিং এ সাজিয়ে একটি খসড়া তৈরি করতে হবে।
তাছাড়া মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর পুরো প্রক্রিয়ায় কী কী বাধা-বিপত্তি আসার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলোও খসড়া পরিকল্পনায় টুকে রাখা যেতে পারে। এভাবে একটি ক্যারিয়ার একশন প্ল্যান তৈরি করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। তবে জীবনে সফল হতে হলে এমন কাজ বেছে নেওয়া উচিত, যে কাজ আগ্রহ কিংবা ভালোবাসা থেকে করা যায়! এতে সেই নির্দিষ্ট কাজকে কখনো ‘কাজ’ মনে হবে না। কাজ করতে গিয়ে অযথা একঘেয়েমিও জেঁকে বসবে না।
জাহ্নবী