প্রায় প্রতিটি মানুষই স্বাধীনভাবে কাজ করতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর বর্তমান সময়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ এনে দিয়েছে ফ্রিল্যান্সিং। বাংলাদেশেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের সফলতা এবং উত্থান অনেকাংশে তা সত্য প্রমাণ করেছে। মানুষ এখন ৯টা থেকে ৫টা জব কনসেপ্ট থেকে অনেকটা দূরে সরে এসেছে। ফ্রিল্যান্সিং হলো এমন এক বিশ্বাসী মাধ্যম যেটার দ্বারা ঘরে বসে প্রচুর অনলাইন ইনকাম করা সম্ভব। কিছু স্টেপ বা ধাপ আছে যা অনুসরণ করে আপনি শুরু করতে পারেন আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার। বিস্তারিত জানাচ্ছেন তারেক বিন ফিরোজ
লক্ষ্য নির্ধারণ জরুরি
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গঠনে লক্ষ্য বা ভিশন থাকা অত্যন্ত জরুরি। যা আপনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
আপনি যে কাজের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে যুক্ত হতে চান তা নিয়ে থাকতে হবে আপনার স্বচ্ছ জ্ঞান এবং ধারণা। সেই সঙ্গে থাকতে হবে লাইফে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৌশল।
আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে। একই সঙ্গে আপনার নতুন নতুন ইনোভেটিভ আইডিয়া, কালার সেন্স এবং কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করার মতো যোগ্যতা থাকতে হবে। দীর্ঘদিন গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করার পর মোশন গ্রাফিক্স, এনিমেশন সেক্টরে ক্যারিয়ার প্রসার করবেন কি না সে সম্পর্কে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখতে হবে।
মোট কথা, আপনার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন
অনেকেই কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ না নিয়ে মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দেন। আবার অনেকেই আছেন যারা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কীভাবে কাজ করতে হয় তা না জেনে এপ্লাই করে ফেলেন। এর ফলে নানা ধরনের বিপত্তি ঘটে।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মেন্টরশিপ। আপনাকে আপনার মেন্টর বা ট্রেইনারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। যাতে করে আপনি গ্রুমিং এবং গাইডলাইন পেতে পারেন।
প্রত্যেকটা ট্রেনিং প্ল্যাটফর্মে একটা কমিউনিটি থাকে যেখানে কাজের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানে সেই কমিউনিটি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনাকে এই প্ল্যাটফর্মে একটিভ থাকতে হবে।
মার্কেটপ্লেস নির্ধারণ
ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুতে মার্কেটপ্লেস নির্ধারণ করার সময় অনেক সতর্কতার সঙ্গে মুভ করতে হয়। অনেক ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস যেমন-ফাইবার, আপওয়ার্ক, পিপল পার আওয়ার, ফ্রিল্যান্সার আছে যাদের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায়। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি এবং কাজের চাহিদা বুঝে প্ল্যান করতে হবে। তবে ফাইভার মার্কেটপ্লেস অনেক সহজ তাই অনেকেই ফাইভার মার্কেটপ্লেস দিয়ে তাদের ক্যারিয়ার শুরু করে। যদিও ফাইভারে রুলস রেগুলেশন একটু বেশি কঠোর।
এই মার্কেটপ্লেসগুলোর ধরন একে অপরের থেকে ভিন্ন তাই এগুলোতে কাজ করতে গেলে আপনাকে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
পোর্টফলিও তৈরি করুন
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট তৈরির পরবর্তী ধাপ হচ্ছে পোর্টফোলিও তৈরি। প্রথম প্রথম নিজের পোর্টফলিও তৈরি করাটাও খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং। আপনি লোকাল মার্কেটে কয়েকটা কাজ করে নিজের পোর্টফলিও ভারী করতে পারেন।
পোর্টফোলিও তৈরি করা বিষয়ে ইন্টারনেটে অনেক টিপস এবং ট্রিক্স আছে যেগুলো আপনাকে জানতে হবে এবং সেইভাবে আপনার পোর্টফলিও গোছাতে হবে।
কাজ অনুসন্ধান এবং আবেদন
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে আপনাকে আপনার কাজের জায়গায় স্মার্ট হতে হবে। আপনাকে কাজের অনুসন্ধান করতে হবে এবং সেই সঙ্গে আবেদন করতে হবে।
যেহেতু আপনি এ সেক্টরে নতুন তাই প্রথমদিকে আপনাকে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রথম কাজের এপ্লাই করতে হবে। আপনি শুধু যে কাজে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সেই সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করবেন।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে যেকোনো কাজের দুটি ধরন আছে। একটা হচ্ছে প্রজেক্ট এবং টাস্ক বেসিস আরেকটা হচ্ছে আওয়ারলি বেসিস।
প্রথমে আপনি প্রজেক্ট এবং টাস্ক বেসিস কাজ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। যা ধীরে ধীরে আপনার কনফিডেন্স বাড়াতে সাহায্য করবে।
আপনার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা বাড়লে আপনি আওয়ারলি বেসিসে কাজ শুরু করতে পারেন।
প্রাইসিং করুন ভেবে চিন্তে
ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুর দিকে একজন ফ্রিল্যান্সারকে তার প্রাইসিং নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। প্রথম দিকে তার সার্ভিস চার্জ এমনভাবে ধরতে হবে যাতে করে ক্লায়েন্টদের কাছে সেটা বোঝা মনে না হয়। অন্যদিকে দেখতে হবে সেটা যেন নিজের পরিশ্রমের সঙ্গে সংগতিপূর্ণও হয়। আবার নিজের সামান্য সুবিধা এবং স্বার্থের লোভে মার্কেট নষ্ট করা যাবে না। আবার আপনার কম্পিটিটর প্রাইস নজরে রাখতে হবে।
বায়ার যদি আপনার প্রাইসে কাজ করতে না চায় তাহলে অবশ্যই আপনার নেগোশিয়েট করতে হবে। বায়ারকে এটাও বুঝাতে হবে কেন আপনি কাজটার জন্য যোগ্য।
উপরে উল্লেখিত ধাপগুলো সহজেই পূরণের মাধ্যমে আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করতে পারেন অনায়াসে।
সার্ভিস বিক্রয়ের দক্ষতা অর্জন
আপনি যদি আপনার সার্ভিস এবং স্কিল সফলভাবে প্রচার ও তা থেকে সেলস জেনারেট করতে না পারেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং করে কোনো লাভ নেই। ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি হলেও এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় অনেকেই এ ব্যাপারে ব্যাপক উদাসীন থাকে।
আমরা আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ থেকে শুরু করে স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ঠিকমতো করতে পারি না। সেক্ষেত্রে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
বর্তমানের সময় হলো ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের, তাই বর্তমানের আধুনিক ছেলেমেয়েরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের গুরুত্ব অনেক ভালো করেই বুঝতে পারে। ফলে, ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার তৈরি করে অনলাইনে ইনকাম করার বিষয়টি তরুণ প্রজন্মের কাছে বর্তমানে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
জাহ্নবী