বাংলাদেশ বেতার রংপুর আঞ্চলিক প্রেরণ কেন্দ্রের গাছ গোপনে কেটে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রের আঞ্চলিক প্রকৌশলী আবু ছালেহের নির্দেশে লক্ষাধিক টাকার এসব গাছ কাটা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকৌশলীর দাবি, পুলিশ ব্যারাক রক্ষা করতেই এগুলো কাটা হয়েছে। তবে বন বিভাগ জানিয়েছে, গাছগুলো কাটা বিধি সম্মত হয়নি। প্রকৌশলী আবু ছালেহের বিরুদ্ধে অচল জেনারেটর সচল দেখিয়ে তেল আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে অফিস সহায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বড় স্যারের নির্দেশে রেডিও টেকনিশিয়ান মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বাইরে থেকে গাছ কাটার লোকজন নিয়ে আসেন। পরে তারা বাউন্ডারির ভেতরের পুলিশ ব্যারাকের কাছে থাকা লক্ষাধিক টাকা মূল্যের মেহগনি ও নিমসহ কয়েকটি পুরোনো গাছ কেটে ফেলেন। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক আঞ্চলিক প্রকৌশলীকে জানাই। তিনি বিষয়টি জানেন বলে আমাকে জানান। পরে গাছগুলো সরাতে আমিও আবুল কালাম আজাদকে সহায়তা করি। কারণ আমি ছোট চাকরি করি, স্যারের নির্দেশ আমি অমান্য করতে পারি না। এ কারণেই স্যারের নির্দেশেই সহায়তা করেছি।’
এ বিষয়ে রেডিও টেকনিশিয়ান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এগুলো ছোট বিষয়, এসব নিয়ে নিউজ না করাই ভালো। আর-ই (আঞ্চলিক প্রকৌশলী) স্যার গাছগুলো কাটতে বলেছিলেন। কারণ গাছগুলো বাতাসে ভেঙে পড়লে পুলিশ ব্যারাকে সমস্যা হতে পারে। এজন্যই গাছগুলো কাটার নির্দেশ দিয়েছিল আঞ্চলিক প্রকৌশলী।’ এ বিষয়ে নিউজ না করার জন্য তিনি বারবার অনুরোধ করেন।
তবে অফিসের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বেতার রংপুরের আঞ্চলিক প্রকৌশলী আবু সালেহ ছয় বছর ধরে এই স্টেশনে আছেন। দীর্ঘদিন একই স্থানে থাকায় শুধু গাছ কাটা নয়, অফিসের বৈদ্যুতিক অচল জেনারেটর সচল দেখিয়ে তেল আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এ ছাড়াও চাষযোগ্য ৪০ একর আবাদি জমি ফেলে রাখাসহ নানা ধরনের অনিময়-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বেতার রংপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রকৌশলী আবু সালেহ বলেন, ‘কেন্দ্রের ভেতরে কিছু গাছ অনেক পুরোনো হয়ে পোকা ধরেছিল। যেকোনো সময় বাতাসে গাছগুলো ভেঙে পুলিশ ব্যারাকের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত। কারণ পুলিশের ওখানে অনেক অস্ত্র ও গোলাবারুদ থাকে যেগুলো দেখভালের দায়িত্ব আমার। যাতে পুলিশের ঘরের কোনো ক্ষতি না হয়, এ কারণে আমি মৌখিকভাবে গাছগুলো কাটার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাই। মৌখিকভাবে বলায় আমি গাছগুলো কাটার অনুমতি দিয়েছি। তবে কোনো গাছ আমি আত্মসাৎ করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব অনিয়ম-দুর্নীতির কথা আমাকে জানানো হয়েছে, সেগুলো আমি করিনি। তারপরেও আমি বন বিভাগের লোকজনকে ডেকে গাছগুলো তাদের মাধ্যমে সরকারি নিয়মে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানিয়েছি।’ তিনিও এই বিষয় নিয়ে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
বন বিভাগের রংপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘যেকোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটতে গেলে বিধি মোতাবেক কাটতে হয়। কিন্তু রংপুর বেতারের আঞ্চলিক প্রেরণ কেন্দ্রের ভেতরের গাছগুলো কাটার সময় বন বিভাগকে জানানো হয়নি। রংপুর বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী আবু সালেহ গাছ কাটার এক সপ্তাহ পর আমাকে জানান। পরে আমি সেখানে গিয়ে কয়েকটি গাছের টুকরো দেখতে পাই। পরবর্তীকালে গাছগুলোর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। তবে গাছগুলো কাটা বিধি সম্মত হয়নি।’
এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘রংপুর বেতারের আঞ্চলিক প্রেরণ কেন্দ্রের গাছগুলো যদি বিধি মোতাবেক কাটা হয়ে থাকে, তাহলে ভালো কথা। আর যদি সরকারি নিয়ম না মেনে কাটা হয়, তাহলে যিনি কেটেছেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’