হেরিং বোন সড়কের অন্তত ২০ হাজার ইট তুলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী এবং ওই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মহির উদ্দিন ও ৪ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ করেছেন হাটের ইজারাদার। দুই ইউপি সদস্য ইট তোলা ও কিছু ইট বিক্রির কথা স্বীকার করলেও চেয়ারম্যানের দাবি তিনি কিছুই জানেন না।
স্থানীয়রা জানান, বালারহাট বাজার হাটশেড মেরামত ও হাটের রাস্তা পাকাকরণের কাজ চলছে। এর মধ্যে ইটের হেরিং বোন সড়কের ইট তুলে নিয়ে যাওয়া হয় গত সপ্তাহে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় সীমান্তবর্তী বালারহাট বাজার হাটশেড মেরামত ও হাটের রাস্তা পাকাকরণ কাজ করছে স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন। এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। গত ২২ এপ্রিল নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হাছেন আলী, ইউপি সদস্য মহির উদ্দিন এবং শহিদুল ইসলাম ইউপি ভবন উন্নয়নের নাম করে কাঁচা বাজার এলাকায় হেরিং বোন রাস্তার প্রায় ২০ হাজার ইট তুলে নিয়ে যান। এর মধ্যে দুই হাজার ইট ভেঙে খোয়া তৈরি করে পরিষদের মাঠে রাখা হয়েছে। বাকি ইট বিক্রি করা হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সহিদার রহমান কাজল বলেন, এলজিইডির সঙ্গে চুক্তির সময় ওই সড়কের ইট তুলে নেওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু কাজ শুরুর পর ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান রাস্তার ইট তুলে নিয়ে গেছেন। ফলে রাস্তায় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলো ভরাট করতে বালু ফেলতে হবে। ২০-২৫ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হবে ঠিকাদারকে। তিনি বলেন, ‘ইট তোলার সময় আমি চেয়ারম্যানকে বাধা দিয়েছি। তিনি ইউনিয়নের উন্নয়নের কথা বলে অনেকটা জোর করে ইট তুলে নিয়ে যান।’
ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদার রাস্তার ইট না তুলে তার ওপর বালু দিয়ে ঢেকে দিচ্ছিলেন। এটা দেখে আমরা প্রায় ১২ হাজার ইট তুলে এনেছি। এসব ইট দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গোডাউন সংস্কার করা হবে। একটাও বিক্রি করা হয়নি। খোয়া করে পরিষদের মাঠে রাখা হয়েছে।’ আর এক ইউপি সদস্য মহির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দেখলাম ঠিকাদারের লোকজন বালু দিয়ে ইট ঢেকে দিচ্ছেন। পরে লোকজন দিয়ে ১৪ হাজার ইট তুলে আনা হয়।’ তিনি দাবি করেন, তুলে আনা ইটের আট হাজার ইট খোয়া করা হয়েছে। বাকি ইট বিক্রি করে ঠিকাদারকে ২০ হাজার ও খোয়া ভাঙা মিস্ত্রিকে ৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আট হাজার টাকা চেয়ারম্যানের কাছে রয়েছে। ওই টাকায় সিমেন্ট কিনে সংস্কার কাজ করা হবে।’
তবে নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী বলেন, ‘হাটের রাস্তার ইট ইউনিয়নের কেউ তুলে আনেননি। ঠিকাদার এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, ‘নিলাম ছাড়া হাটের ইট তুলে বিক্রি করে থাকলে সেটা ঠিক হয়নি। বিষয়টি সেভাবে জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।’