মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মৌ চাষ শুরু করেন মেজবাহ উদ্দিন শামীম। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এখন তিনি স্বাবলম্বী। বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষ করে মৌসুমের ছয় মাসে অন্তত ৩০ লাখ টাকার মধু বিক্রি করেন তিনি। লাভজনক হওয়ায় জেলায় দিন দিন বাড়ছে মৌ চাষ।
অনার্স শেষ করে শেয়ার ব্যবসায় লোকসানের মুখে পড়েন মেজবাহ উদ্দিন শামীম। হতাশ হয়ে ২০১৯ সালে কৃষি অফিসের সহায়তা নিয়ে মৌ চাষের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। চারটি মৌ বাক্স নিয়ে শুরু করেন মৌ চাষ। এখন তিনি ২০০ মৌ বক্সের মালিক।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে তিনি মৌ বক্স বসিয়েছেন। প্রতি বক্স থেকে গড়ে ৫৭ কেজি মধু আহরণ করেন। প্রতি বক্স থেকে মাসে দুই থেকে তিনবার মধু আহরণ করা হয়। প্রতি কেজি মধু তিনি খুচরা বিক্রি করেন ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মেজবাহ উদ্দিন শামীম বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চারটি ডিজিটাল মৌ বক্স দিয়েছিল। সেখান থেকে আমার মৌ চাষের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে আমার খামারে ২০০ মৌ বক্স রয়েছে। প্রতি বক্স থেকে সপ্তাহে ৫ থেকে ৭ কেজি করে মধু আহরণ করছি। আমার এই মৌ চাষ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বিভিন্ন উপজেলার উদ্যোক্তারা এসে মৌ বক্স ও মৌমাছি নিয়ে যাচ্ছেন।’
মধু কিনতে আসা সোলায়মান বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বাজারে ভেজাল মধুতে সয়লাব। খাঁটি ও প্রকৃত মধু চেনার জন্য কোনো উপায় নেই। কীভাবে মধু আহরণ করেন সেটি দেখতে এসেছি এবং আহরণ শেষে তিন কেজি মধু কিনেছি। এতে করে আমি দুই দিক থেকে লাভবান হলাম। প্রথমত খাটি মধু কিনতে পারলাম, দ্বিতীয়ত কীভাবে মধু আহরণ করে তা দেখতে পেলাম।’
অপর ক্রেতা আবদুল কাদের বলেন, ‘আমি অনেকের কাছে শুনেছি এখানে খাঁটি মধু পাওয়া যায়। স্বচক্ষে দেখার জন্য এসেছি কীভাবে মধু সংগ্রহ করে। আমি আমার পরিবারের জন্য এক কেজি মধু কিনেছি।’
মধু কিনতে আসা আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আমি নিজে একটি মৌ খামার গড়ে তোলার চেষ্টা করব। আমার বাড়ির আশপাশে সরিষা চাষ হয়। আমি শামীম ভাইয়ের কাছ থেকে দুটি মৌ বক্স কিনে আমার বাড়ির পাশে প্রাথমিকভাবে শুরু করব।’
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, ‘ চার বছর আগে শামীমকে কৃষি অফিস থেকে চারটি মৌ বক্স দিয়ে তাকে সহায়তা করা হয়। বর্তমানে তার খামারে ২০০টির বেশি মৌ বক্স রয়েছে। তাকে দেখে আরও অনেকেই মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। জেলা কৃষি অফিস থেকে সরকারি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’