ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

ছয় মাসে সামিট পাওয়ারের আয় কমেছে ৯২৭ কোটি টাকা

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২০ পিএম
আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২১ পিএম
ছয় মাসে সামিট পাওয়ারের আয় কমেছে ৯২৭ কোটি টাকা
গাজীপুরে সামিট পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুত কেন্দ্র। ছবি : সংগৃহীত

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেডের (এসপিএল) ব্যবসায় দেখা দিয়েছে মন্দা। এতে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কোম্পানিটি দাবি করেছে, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হারে তারতম্যের কারণে মুনাফা কমেছে। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যাংকের মাধ্যমে বিল পরিশোধে বিলম্বের কারণে ঘাটতিতে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিলম্বে বিল পরিশোধের বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে কোম্পানিটি। তাদের আপত্তি ছিল, অনেক দেরিতে যখন বিল পরিশোধ করা হচ্ছে, তখন ডলারের দর আর আগের অবস্থায় থাকে না। দেরিতে বিল পরিশোধ করায় ডলারের দামের সঙ্গে তারতম্য দেখা দেয়। এতে বড় অঙ্কের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে আগের তুলনায় তাদের মুনাফা কমেছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৩০৬ কোটি টাকা, আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩০৮ কোটি টাকা। কোম্পানিটির অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ২ হাজার ২০৯ কোটি টাকা, আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে ছয় মাসে কোম্পানিটির আয় কমেছে ৯২৭ কোটি টাকা বা ২৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৮২৯ কোটি টাকা, আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে যা ছিল ১ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা, আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে যা ছিল ১৫২ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৭১ পয়সা, আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৫৭ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ৭৭ পয়সায়।

বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠানটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৪৬ শতাংশ। একই হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ঘোষিত লভ্যাংশ ও অন্যান্য এজেন্ডায় বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নিতে আগামী ১৮ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টায় সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিষ্ঠানটির ২০২২-২৩ অর্থবছরে সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৭ পয়সা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩ টাকা ৮৭ পয়সা। সে হিসাবে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস কমেছে ৪৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নিট পরিচালন নগদপ্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ৭ টাকা ৪ পয়সা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ৫ টাকা ৯১ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা ২ পয়সায়, আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩৫ টাকা ৭২ পয়সা।

২০২১-২২ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করে সামিট পাওয়ারের পর্ষদ। আলোচ্য অর্থবছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৮৭ পয়সা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ৫ টাকা ২৫ পয়সা। ওই বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ৭২ পয়সায়, আগের অর্থবছর শেষে যা ছিল ৩৪ টাকা ৪৫ পয়সা।

২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আলোচিত সময়ে ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ২৫ পয়সা এবং ৩০ জুন ২০২১ শেষে সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৪ টাকা ৪৫ পয়সায়। এ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে ৮ টাকা ৫৩ পয়সা।

২০১৯-২০ অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তার আগে ১৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল সামিট পাওয়ার। ফলে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের মোট ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

২০০৫ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৫০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৬৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ২ হাজার কোটি ৯৪ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০৬ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২৩৯। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক ১৮ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাকি ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেডের আশুলিয়া, মাধবদী এবং চান্দিনায় অবস্থিত গ্যাসভিত্তিক তিনটি পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়েছে সরকার।

আশুলিয়া, মাধবদী ও চান্দিনায় ১০ (+১০%) মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং ট্যারিফ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্পন্সর কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে সরকারের ১৫ বছর চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট উত্তীর্ণ হয়। পরে সময় আরও পাঁচ বছর বৃদ্ধি করা হয়। তার মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট উত্তীর্ণ হয়। নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে দ্বিতীয়বার আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) সুপারিশ করে। বাপবিবো এবং নেগোসিয়েশন কমিটি কর্তৃক স্পন্সর কোম্পানির সঙ্গে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশকৃত চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত করে তিনটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর থেকে পাঁচ বছর বৃদ্ধির জন্য সামিট পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে ট্যারিফ কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ দশমিক ৮২ টাকা হিসেবে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে সংশোধিত চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত মেয়াদে (৫ বছরে) স্পন্সর কোম্পানিকে ৫৪৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। সামিট পাওয়ার সিঙ্গাপুরভিত্তিক হোল্ডিং কোম্পানি সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে তাদের ১৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা আছে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তায় হটলাইন চালু হচ্ছে

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৮ এএম
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তায় হটলাইন চালু হচ্ছে
ছবি: সংগৃহীত

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে পুলিশের নির্ধারিত জরুরি যোগাযোগ লাইনে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। এ উদ্যোগের মাধ্যমে যেকোনো নিরাপত্তাজনিত ঘটনা তাৎক্ষণিক জানানো এবং দ্রুত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সভাপতিত্বে গত সোমবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। তারা সম্প্রতি গাজায় হামলা নিয়ে বিক্ষোভের সময় বিদেশি কোম্পানিগুলোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল- নেসলে বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা শু কোম্পানি বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো ও জুবিল্যান্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশ।

বৈঠকে জানানো হয়, ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শহরে এসব কোম্পানির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মামলা হয়েছে।

বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, আইজিপি, সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা ও বিডার কর্মকর্তাদের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসা শুধু সময়োপযোগী নয়, নজিরবিহীন। এটি কেবল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এটি এক ধরনের বার্তা যে, বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পাশে আছে, বিশেষ করে যখন চ্যালেঞ্জ আসে।

তিনি আরও বলেন, এ কোম্পানিগুলো হাজার হাজার কর্মজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকার উৎস। প্রতিবাদের অধিকার আছে, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়। বিডা চেয়ারম্যান পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির জন্য প্রশংসা করেন।

প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ভাঙচুর, ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রমে বিঘ্ন নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতার কথা বলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আইজিপি কার্যালয় জানায়, ভুক্তভোগী কোম্পানিগুলোর জন্য নির্দিষ্ট জরুরি যোগাযোগ লাইন চালু করা হবে, যার মাধ্যমে তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশি সহায়তা পাবে।

আইজিপি বাহারুল আলম বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এখানে আসিনি, বরং আস্থা গড়ে তুলতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই এসেছি।

এ আলোচনার ফলে বিডা, পুলিশ এবং ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, দ্রুত সাড়া দেওয়া ইউনিট এবং উন্নত সংকট যোগাযোগ চ্যানেল।

বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এ সংলাপ কেবল প্রতিক্রিয়ার জন্য নয়। এটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য। আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, এটি সরকারের অঙ্গীকার প্রতিফলিত করে যে, আমরা বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকি শুধু ভালো সময়ে নয়, প্রতিকূল সময়েও।

কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা বিডা ও বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনার প্রতি নতুন আস্থা ব্যক্ত করেন।

এ উদ্যোগ বিডার বৃহত্তর মিশনের অংশ, যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ, টেকসই ও বিনিয়োগবান্ধব গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলা, যা অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

সোনার দামে রেকর্ডের পর রেকর্ড, বাড়ল রূপার দামও

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৪ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
সোনার দামে রেকর্ডের পর রেকর্ড, বাড়ল রূপার দামও
ছবি: সংগৃহীত

এক দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে আবার বেড়েছে সোনার দাম। এ দফায় ভরিপ্রতি বেড়েছে ৫ হাজার ৩৪১ টাকা। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৭ টাকা। দেশের বাজারে এটিই এখন স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর কথা জানায়। বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার দাম সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন দাম আজ বুধবার থেকে কার্যকর হবে। এর আগে গত সোমবার প্রতি ভরি সোনার দাম ৪ হাজার ৭১৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ৫ হাজার ৩৪১ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ৫ হাজার ১০৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ৪ হাজার ৩৭৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ৩ হাজার ৭৩২ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৫১২ টাকা।

এর আগে গত সোমবার ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ৪ হাজার ৭১৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা, ২১ ক্যারেটের ভরিতে ৪ হাজার ৪৯১ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৬ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ৩ হাজার ৮৬০ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪১ হাজার ১৬৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার ভরিতে ৩ হাজার ২৮৯ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮০ টাকা। গতকাল এ দামেই সোনা কেনাবেচা হয়েছে।

সোনার দাম বাড়ানোর পাশাপাশি রূপার দামও বাড়ানো হয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপায় ২৮৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮৪৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রূপার ভরিতে ২৬৯ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ হাজার ৭১৮ টাকা। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি রূপায় ২২২ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৩৩৩ টাকা আর সনাতন পদ্ধতির রূপায় ভরিপ্রতি ১৬৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ টাকা।

সিপিডির গবেষণা আগামী বাজেটে রপ্তানিতে ভর্তুকি না দেওয়ার পরামর্শ

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪২ পিএম
আগামী বাজেটে রপ্তানিতে ভর্তুকি না দেওয়ার পরামর্শ

করহার কমিয়ে দিয়েও কর ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব। অর্থাৎ কর আদায় বাড়ানো সম্ভব হবে। এ জন্য কর ফাঁকি রোধ করতে হবে, কর প্রশাসনের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে এবং করের ব্যয়গুলো যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকেই আয়বৈষম্য দূর করতে কর ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। আগামী বাজেটেই এর প্রতিফলন দেখতে চায় সংস্থাটি। সেই সঙ্গে আগামী বাজেটে রপ্তানিতে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে সিপিডি। 

সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘করপোরেট আয়কর সংস্কার ও কর ন্যায্যতার দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ। এরপর সংবাদ ব্রিফিংয়ে গবেষণা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর ফাঁকির কারণে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ হারিয়েছে করপোরেট কর ফাঁকির কারণে। ২০২৩ সালে আনুমানিক করপোরেট কর ফাঁকির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকে কর ফাঁকির পরিমাণ বেড়েছে, ২০১২ সালে ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে তা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় তামিম আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক অবস্থার মতো বাংলাদেশেও করপোরেট কর কমতির দিকে। পোশাক, আইসিটিসহ অনেক খাত কর সুবিধা পেয়ে থাকে। ২ লাখ ৮৮ হাজার কোম্পানি রেজিস্ট্রার্ড, কিন্তু ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিশন করেছে মাত্র ৯ শতাংশ কোম্পানি বা ২৪ হাজার ৩৮১ কোম্পানি। এটা একটা বড় বৈষম্য। যারা কর দিচ্ছে তাদের ওপর করের বোঝা বাড়ছে।

সিপিডি বাংলাদেশের ক্রমাগত কর ফাঁকি সমস্যার পেছনে বেশ কয়েকটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছে- যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ করের হার, দুর্বল প্রয়োগ, জটিল আইনি কাঠামো এবং করব্যবস্থার মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি। সিপিডি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, কর ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে, উচ্চমাত্রার কর ফাঁকি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং যারা আইন অনুসরণ করে তাদের ওপর বোঝা বাড়িয়ে দেয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এনবিআর এখন অনেক সংস্কার উদ্যোগ নিচ্ছে। যেখানে রাজস্ব আদায় বাড়ানোই মূল বিষয়। ফলে এখনই এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও বেশি প্রশ্ন তুলতে হবে। কর কাঠামোর ডিজিটালাইজেশন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা বলে আসছি। কিন্তু এ বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের অনীহা দেখা গেছে। শুধু কর্মকর্তারাই নয়, ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এ্কই অনীহা রয়েছে। যদিও সামগ্রিক স্বার্থেই এনবিআরের ডিজিটালাইজেশন খুব জরুরি।’ 

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সব আর্থিক লেনদেন একক ডিজিটাল সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। এতে দেশের যেকোনো প্রান্তে লেনদেন হলেও সেটা কর কাঠামোর মধ্যে সহজে যুক্ত করা যাবে। 

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রতিবছর ৭১ হাজার কোটি টাকা এনবিআরকে শুধু কর প্রণোদনার কাজেই ব্যয় করতে হয়। যেটা আসলে সত্যিকার অর্থে কোনো কাজে আসছে না। বিনিয়োগ কখনোই প্রণোদনার নিয়ামক হতে পারে না। একটা বিশেষ সময়ে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রণোদনা দেওয়া হলেও সেটা আজীবন বহাল থাকতে পারে না। বাংলাদেশের প্রণোদনার সংস্কৃতি পুরোটাই রাজনৈতিক। এই রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রভাব থেকে প্রণোদনাকে বের করতে হবে এবং খাতভিত্তিক ঢালাও প্রণোদনা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। তা না হলে আমাদের এলডিসি উত্তরণের পর বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। খাতভিত্তিক বিনিয়োগে প্রণোদনা দিতে গিয়ে আমাদের শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় করতে পারছে না সরকার। তাই শুধু এলডিসি উত্তরণের জন্যই নয়, সামগ্রিকভাবেই এনবিআরের কর কাঠামোর পরিবর্তন দরকার।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী দিনে সরকার যদি উচ্চমাত্রায় রাজস্ব না পায় তাহলে ভর্তুকি, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষ জনবল তৈরি করা সরকারের পক্ষে সহজ হবে না। প্রত্যক্ষ কর, অপ্রত্যক্ষ কর ও করবহির্ভূত আয় এই তিন উৎস থেকে মূল রাজস্ব আদায় করি। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে করপোরেট খাত থেকে। প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব এখান থেকে আসে। আর ভ্যাট থেকে আসে ৪০ শতাংশ রাজস্ব। এই দুই উৎস থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ রাজস্ব প্রতিবছর আসছে। এ জন্য করপোরেট কর ও ভ্যাটের সংস্কার নিয়েও আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।’

বেনাপোল বন্দরে স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ, বাড়ছে চোরাচালান

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪১ এএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
বেনাপোল বন্দরে স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ, বাড়ছে চোরাচালান
ছবি: খবরের কাগজ

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা পণ্যবোঝাই ট্রাক স্ক্যানিং কার্যক্রম এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। এতে বাড়ছে চোরাচালান।

বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবি, স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ীরা পড়ছেন হয়রানিতে। নিরাপদ বাণিজ্যঝুঁকিতে থাকলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নীরব।

বাণিজ্যসংশ্লিষ্টরা জানান, যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বেশি বাণিজ্য হয়। কাস্টমস, বন্দর, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে রয়েছে। চোরাচালান ঠেকাতে বেনাপোল বন্দরের বাইপাস সড়কে একটি মোবাইল স্ক্যানিং মেশিন ছিল। এটিv পরিচালনায় ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস।

তবে যান্ত্রিক ত্রুটিতে মেশিনটি প্রায় এক বছর বন্ধ। পরে বেনাপোল বন্দর কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালে নতুন স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়। এটি পরীক্ষামূলকভাবে কার্যক্রম শেষে তিন মাস আগেই প্রস্তুত। তারপরও কোনো ট্রাক স্ক্যানিং হচ্ছে না। এতে চোরাচালান ও অনিয়ম বেড়ে যাচ্ছে। নিরাপদ বাণিজ্য হুমকির মুখে।

ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত সূত্র জানায়, এক বছরে ট্রাক থেকে ১৬টি স্বর্ণের চালান আটক করেছে বিএসএফ। এপারের নিরাপত্তা দুর্বল হওয়ায় চোরাই পণ্য সহজেই ওপারে ধরা পড়ছে। স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আসছে চোরাই পণ্য। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

আমদানিকারক আল মামুন বলেন, ‘স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় দুর্নীতিবাজরা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অতিরিক্ত পণ্য আনছে। এতে অপরাধ বাড়ছে, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্ক্যানিং মেশিন সচল রাখা জরুরি।’

ট্রাকচালক শাহ আলম বলেন, ‘স্ক্যানিং সচল থাকলে কেউ ট্রাকে চোরাই পণ্য তুলত না। জরুরি ভিত্তিতে স্ক্যানিং চালু করা দরকার।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটসের বেনাপোল অফিসের ব্যবস্থাপক বনি আমিন বলেন, ‘পুরোনো মোবাইল স্ক্যানিং মেশিন সচল না থাকায় ট্রাক স্ক্যানিং সম্ভব হয়নি। নতুন মেশিন প্রস্তুত থাকলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ট্রাক পাঠাচ্ছে না।’

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন বলেন, ‘চোরাচালান রোধে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হলেও তা এক বছরের বেশি সময় বন্ধ। অথচ কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য এটি চালু করা জরুরি।’

বেনাপোল স্থলবন্দরের ডেপুটি ডিরেক্টর মামুন কবীর তরফদার বলেন, ‘বন্দরে স্ক্যানিং পরিচালনায় কাস্টমস দায়িত্বে। মেশিন বন্ধ থাকায় চোরাচালান বাড়ছে। নিরাপদ বাণিজ্যের জন্য স্ক্যানিং দ্রুত চালু হওয়া প্রয়োজন। আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।’

দ্রুত বাড়ছে সরকারের ব্যাংক ঋণ

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩০ এএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
দ্রুত বাড়ছে সরকারের ব্যাংক ঋণ
ছবি: খবরের কাগজ

রাজস্ব আদায় এবং বৈদেশিক ঋণ ছাড় কাঙ্ক্ষিত হারে না হওয়ায় অর্থবছরের শেষ সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ দ্রুত বাড়ছে। তবে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেই বেশি ঋণ নিচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ৯৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো আগের নেওয়া ঋণের ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে। ফলে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৬৮ হাজার ৯৩০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করায় সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ ছিল ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। আর ৯ মাস শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত দুই মাসে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ বেড়েছে প্রায় চারগুণ। 

চলতি অর্থবছর বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। সম্প্রতি সেটা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৯৯ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে যে গতিতে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া এবং এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বিদেশি ঋণ না পাওয়ায় ঘাটতি সংস্থানে ব্যাংকেই নজর দিচ্ছে সরকার। ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়লেও সঞ্চয়পত্র থেকে কাঙ্ক্ষিত হারে ঋণ পাচ্ছে না। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। গত ৩১ মার্চ শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৩৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ করেনি সরকার। গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি। গত ৩১ মার্চ শেষে স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৫৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এই ৯ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরকার উল্টো পরিশোধ করেছে ৪১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। 

এদিকে, গত ৩১ মার্চ শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে সরকারের নিট ঋণস্থিতি ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৯৮২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে দেড়গুণের বেশি। 

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ে এত নাজুক পরিস্থিতি এর আগে কখনোই হয়নি। ৯ মাসে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছর ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সার্বিকভাবে শুল্ক ও কর আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আর ৯ মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে ঘাটতির পরিমাণ হয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ের কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। ফলে চলতি অর্থবছরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

এদিকে, ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নেওয়ায় বিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বেশির ভাগ সময়েই বেসরকারি খাতে কমেছে ঋণ প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরেও একই ধারা বহাল রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম আট মাস ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। সেই সঙ্গে কমছে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের প্রয়োজনীয় মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি। এতে দেশে বিনিয়োগ স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থনীতিবিদরা সরকারকে ব্যাংকমুখী না হয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণের জোগান থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে যত সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা। 

এই বিষয়ে জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার যদি বেশি ঋণ নেয় তাহলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে বিনিয়োগ কম হবে, আর বিনিয়োগ কম হলে কর্মসংস্থান কম হবে। ফলে প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এমন অবস্থায় সরকারকে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ না নিয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

সরকারের ঋণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমীন খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম থাকায় ব্যাংকগুলো সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করছেন। এর মাধ্যমেই উচ্চ সুদে সরকারকে ঋণ দিয়ে ব্যাংকগুলো আয় করছে। কারণ, ব্যক্তি ঋণে ঝুঁকি থাকলেও সরকারি ঋণে কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতিতে বড় ধরনের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।