বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম আবার বেড়েছে। জুনে সরবরাহের চুক্তিতে বেশির ভাগ অঞ্চলের জন্য সৌদি আরবের অপরিশোধিত জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ানোর পর এবং গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ মনে হওয়ায় সোমবার (৬ মে) জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তি (ফিউচার মার্কেট) মূল্য বেড়েছে। সেই সঙ্গে নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব এখনো তেল উৎপাদনকারী অঞ্চলে (দেশে) আরও প্রসারিত হতে পারে। খবর রয়টার্সের।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটির খবরে বলা হয়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য ৭৭ সেন্ট বা দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৩ ডলার ৭৩ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য ৮৭ সেন্ট বা ১ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৮ ডলার ৯৮ সেন্ট হয়েছে।
গত সপ্তাহে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উভয় বেঞ্চমার্কেই ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক লোকসানের মুখে পড়েছে। এই সময়ে ব্রেন্টের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য ৭ শতাংশের বেশি এবং ডব্লিউটিআইয়ের চুক্তিমূল্য ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ কমেছে। কারণ, বিনিয়োগকারীরা মার্কিন চাকরির পরিসংখ্যান দুর্বল হওয়া এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা দেখেছেন।
খবরে বলা হয়, গাজা উপকূলে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে, যার ফলে তেলের দামে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকির বিমা প্রিমিয়াম কমেছে।
একদিকে হামাস বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ শেষ করার দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে গাজার দক্ষিণাংশে দীর্ঘদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসা আক্রমণ শুরু করতে প্রস্তুত ইসরায়েল। এমন প্রেক্ষাপটে আলোচনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, যার ফলে তেলের দাম নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অভিযানে একটি সীমিত সুযোগের অংশ হিসেবে সোমবার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের রাফাহ থেকে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান আইজির বাজার বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেছেন, খবরে বলা হয়েছে যে, ইসরাইল আরও সামনে অগ্রসর হতে চায় এবং রাফাহতে তাদের অভিযান বাড়াতে চায়। এতে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে লাইনচ্যুত করার এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাকে পুনরায় প্রশমিত করার ঝুঁকি রয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, সৌদি আরব জুন মাসে সরবরাহের চুক্তিতে এশিয়া, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বিক্রি করা তেলের জন্য অফিশিয়াল বিক্রয় মূল্য (ওএসপি) বৃদ্ধি করেছে।
এই পদক্ষেপটি গ্রীষ্মের মাসগুলোতে শক্তিশালী চাহিদার প্রত্যাশাকে নির্দেশ করে। এটি তেলের দাম বৃদ্ধিতে একটি অতিরিক্ত কারণ হিসেবে কাজ করছে।
বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি পণ্য আমদানিকারক চীন। এটি সৌদি আরবের তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক অঞ্চল। দেশটিতে সেবা খাতের কার্যক্রম টানা ১৬ মাস ধরে সম্প্রসারণের আওতায় রয়েছে। এদিকে নতুন ক্রয়াদেশের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের আশা-ভরসা দৃঢ় হয়েছে, ফলে দেশের (চীনের) অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে সেরে উঠবে- এমন প্রত্যাশা জাগিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশ হওয়ায় চীনের চাহিদা সবসময়ই জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্যের দামে ভূমিকা রাখে। একই কারণে এবারও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চীনের চাহিদা অন্যতম সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।