বৃষ্টির পূর্ভাবাস আগেই ছিল তাই বোরো ধান কাটার তোড়জোড় শুরু হয় মৌলভীবাজারের হাওরগুলোতে। হালকা বৃষ্টির মধ্যেই হাওরপাড়ের বোরো চাষিরা ঘরে ধান তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সম্ভাব্য ভারী বৃষ্টিপাতের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষায় হাওর অঞ্চলে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলে বোরো ধান কাটার পরামর্শ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
তীব্র দাবদাহের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। তবে মৌলভীবাজারে হালকা বৃষ্টি হলেও কোথায় শিলাবৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তর কৃষকদের ক্ষতি থেকে বাঁচতে বৃষ্টির আগে পাকা ধান ঘরে তোলার নির্দেশনা দিয়েছিল।
চাষিরা জানান, সময় কম পাওয়ায় শ্রমিকের বদলে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করছেন চাষিরা। এতে দ্রুত সময়ে মাঠের ধান ঘরে তুলতে পারছেন। মৌলভীবাজারে যদি আর বৃষ্টি না হয় তবে বোরো ধানের ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তারা।
সরেজমিনে মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের বানেশ্রী, রায়পুর, রসুলপুর, জুমাপুর, কাদিপুরসহ অন্তেহরি এলাকায় দেখা গেছে, হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা করে বোরো ধান কাটার ধুম লেগেছে। দল বেঁধে চাষিরা কাস্তে দিয়ে ধান কাটা উৎসবে মেতে উঠেছেন। কোনো কোনো স্থানে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারসহ বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কাটা হচ্ছে। চাষিরা জানান, এবার আগাম জাতের ধান কাটা অনেকটা শেষ পথে। যদি কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি না হয় তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে। সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত কাউয়াদীঘি হাওরে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সারা জেলায় ৬১ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এবার ব্রি ধান-৮৮, ৮৯ ও ৯২ জাতের ধানের বেশি চাষ হয়েছে। কাউয়াদীঘি হাওরের নিচু অংশে ৯০ শতাংশ ও ওপরের অংশে ৬০ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। পুরোদমে ধান কাটা মাড়াই শেষ হতে আরও ৪ থেকে ৫ দিন সময় লাগবে।
রাজনগর উপজেলার চাষি তুহিন রশিদ বলেন, প্রচণ্ড গরমের পর কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবুও হাওরে ধান কাটা হচ্ছে। হার্ভেস্টার মেশিন মাঠে থাকায় অল্প সময়ের মধ্যেই ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। মেশিনে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ পড়ছে।
সদর উপজেলার বানেশ্রী এলাকার সালেক মিয়া জানান, এখন অনেক স্থানে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে; কিন্তু ভারী বৃষ্টি হলে নিচু এলাকার জমিতে পানি জমে যাবে। এ ছাড়াও ধান রোপণ থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত শ্রমিক, সার, কীটনাশক ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। তারপরও তীব্র রোদ, ভ্যাপসা গরম ও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি কিছুই তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না।
জুমাপুরের সোহানুর মিয়া বলেন, ‘হাওরের নিচু এলাকায় প্রায় ১ বিঘা জমির ধান কাটছি। আরও কিছু ধান জমিতে আধাপাকা আছে। এ মুহূর্তে যদি শিলাবৃষ্টি হয় ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জমিতে পানি জমে গেলে আর ধান কাটতে পারব না। আবার মাঠে ধান রাখা যাবেও না। তাই যে রকম আবহাওয়া আছে এরকম আরও বেশ কিছুদিন থাকলেও আমাদের জন্য ভালো।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, মূল হাওরের নিচু অংশসহ উপরিভাগের ধান কাটা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে হাওরের বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হয়ে যাবে। আমরা কৃষকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি।’