সিলেটে এবার সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ মে) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বোরো ধান-চাল ও গম সংগ্রহের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এবার প্রতি কেজি ধানের মূল্য ৩২ টাকা, চাল ৪৫ টাকা ও আতপ চালের মূল্য ৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল কেনার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত মিলারদের সঙ্গে চুক্তির সময়সীমা নির্ধারিত করা হয়েছে।
সিলেট ছাড়া হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জেও ধান-চাল সংগ্রহের অভিযানের উদ্বোধন করা হয়েছে। সিলেট ব্যুরো, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
সিলেট:
সিলেটে এবার ২৪ হাজার ২৫৮ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ধান ৯ হাজার ৫৬৬ টন, সেদ্ধ চাল ৯ হাজার ৮৭৩ টন এবং আতপ চাল ৪ হাজার ৮১৯ টন কেনা হবে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সিলেট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া মোস্তফা, সিলেট সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত উপপরিচালক (পিপি) মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান ও সিলেট সদর, খাদিমনগর খাদ্য গোদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আমন্ত্রিত কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রযুক্তির সুবিধায় অ্যাপের মাধ্যমে কিছু উপজেলায় ধান-চাল কেনা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। এ ব্যাপারে বলা হয়, সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও কানাইঘাটসহ মোট ৬টি উপজেলায় ধান সংগ্রহ করা হবে। ইতোমধ্যে কৃষক নিবন্ধন শুরু করা হয়েছে। নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর লটারির মাধ্যমে বিক্রেতা কৃষক নির্বাচন করা হবে। অ্যাপের মাধ্যমে সিলেট সদর, বিশ্বনাথ, বিয়ানীবাজার ও কানাইঘাটসহ মোট ৪টি উপজেলায় চাল সংগ্রহ করা হবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানায়, অ্যাপের আওতার বাইরের উপজেলাগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে। উপজেলা সংগ্রহ কমিটি অনুমোদিত কৃষক তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে বিক্রেতা কৃষক নির্বাচন করা হবে। প্রত্যেক কৃষক সর্বোচ্চ ৩ হাজার টন, সর্বনিম্ন ১২০ কেজি ধান গুদামে বিক্রি করতে পারবেন। সিলেটে লাইসেন্স করা ১৪টি সেদ্ধ, ৬৩টি আতপ চালকল রয়েছে।
সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জে দুই কৃষকের কাছ থেকে ৬ টন ধান কিনে ধান-চাল সংগ্রহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক।
সুনামগঞ্জ খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর সুনামগঞ্জ থেকে সরকারিভাবে ২৯ হাজার ৮১১ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মিলাদের কাছ থেকে ৯ হাজার ৬৮৪ টন সেদ্ধ চাল ও ৯ হাজার ৯৫৪ টন আতপ চাল সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। তবে ২০২৩ সালে এই জেলার কৃষকদের কাছ থেকে ১৭ হাজার ৪৮৩ টন ধান কেনার কথা থাকলেও সরকার ১৫ হাজার ৫৫৪ টন ধান কিনেছিল। সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম ভুঞা জানান, চলতি মৌসুমে ধানের দাম বাড়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে।
হবিগঞ্জ:
হবিগঞ্জ থেকে এবার ১৪ হাজার ৭৬০ টন ধান, ৪ হাজার ১৬৬ টন আতপ চাল এবং ১৪ হাজার ৯৬৬ টন সেদ্ধচাল কেনার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে, কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, পুরো জেলায় সার্বিকভাবে ৮০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। হাওরের প্রায় ৯৯ শতাংশ জমির ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, জেলায় সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় হাওরে। সেই ক্ষেত্রে হাওরের ধান কাটা-মাড়াই শেষে কৃষক কম দামে পাইকার ও ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকি ধান বছরের খোরাকির জন্য গোলায় তুলেছেন। এরপর ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ায় হাওরের কৃষকরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবেন। একই সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বাড়বে।
বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা এলাকার কৃষক সুমন মিয়া বলেন, ‘সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ২৮০ টাকা মণ। আর আমরা পাইকারের কাছে বিক্রি করছি ৭৭০ টাকা মণ। অনেক অপেক্ষা করছি, কখন সরকার ধান কিনবে। আমরা ঋণ পরিশোধ করতে ধান কেটে বিক্রি করে ফেলেছি। এখন সরকার ধান কিনলেও আমাদের কোনো লাভ নেই।’
একই এলাকার কৃষক আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘সরকার ধান কিনতে দেরি করেছে। তার ওপর আবার মাত্র ১ হাজার ২৮০ টাকা দরে ধান কিনছে। সরকারকে ধান দিতে হলে ট্রাক ভরে খাদ্য গোদামে নিয়ে যেতে হয়। যে কয়টা টাকা লাভ হওয়ার কথা, সেটি গাড়ি ভাড়া আর শ্রমিকের মজুরিতেই চলে যাবে। এরপর দেখা যাবে খাদ্য কর্মকর্তা বলতেছেন, ধান পরিষ্কার না, ভালোভাবে শুকানো হয়নি। নানা অজুহাত।’
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা চাই থোয়াই প্রু মার্মা বলেন, ‘অন্য বছর কৃষকরা যে অভিযোগ করেন এবার তা পারবেন না। কারণ অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে ধান বিক্রি করতে হবে। এ ছাড়া ধান বিক্রির টাকা কৃষক তার নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাবেন।’
চলতি বছর জেলার ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৫০ টন।