সবাই যেখানে স্থায়ী চাকরি বা ব্যবসাকে পেশা বেছে নিতে চান। সেখানে ব্যতিক্রম বরগুনার বেলাল। স্থায়ী চাকরি ছেড়ে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। ১০ ডলার দিয়ে শুরু করা বেলালের এখন বছরে আয় ৩০ হাজার ডলার।
চাকরি করেও যেখানে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত; সেখানে বর্তমানে তিনি কোটি টাকার মালিক। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় তরুণদেরও ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়ে বেকারত্ব থেকে মুক্তির দীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।
বলছিলাম বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা মাদারতলী চরকখোল গ্রামের যুবক বেলাল হোসাইনের কথা। তার বাবা আলমগীর হোসাইন ছিলেন একজন দিনমুজর। মা আকলিমা বেগম একজন গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। তিন সন্তানের লেখাপড়া ও ভরণ-পোষণ নিয়ে হিমশিম খেতে হতো বেলালের বাবা-মায়ের।
একদিকে নিজের লেখাপড়া, অন্যদিকে পরিবারের হাল ধরার কথা চিন্তা করে ২০০৪ সালে রাজধানীতে পাড়ি জমান বেলাল। সেখানে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা করে ২০০৮ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবেও কাজ শুরু করেন। কিন্তু স্বাধীনচেতা কম্পিউটার অপারেটরের ছোট্ট গণ্ডিতে আটকে থাকেননি। ২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। প্রথমে ফাইভার নামে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম থেকে ১০ ডলার আয় করেন তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম ফাইভার, আপওয়ার্ক ও ফ্রিল্যান্সার ডট কমসহ বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করেন তিনি। গড়ে তুলেছিলেন সামি ডট কম নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানও। সেখানে ৪০ জন তার অধীনে কাজ করছেন। ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের হয়ে ফেনী জেলার প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
২০২০ সালে বাবা আলমগীর হোসাইনের মৃত্যুর পর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন বেলাল। ফ্রিল্যান্সিং থেকে এক মাসে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ডলারসহ এখন তার বাৎসরিক আয় ৩০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩০ লাখ টাকারও বেশি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থ দিয়েই বাড়ি বানিয়েছেন, কিনেছেন গাড়ি ও কৃষিজমি। দারিদ্র্যকে খুব কাছ থেকে দেখা বেলাল হোসাইন নিজেই শোনাচ্ছিলেন তার এ সফলতার গল্প।
বেলাল হোসাইন বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতার পেছনে সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পটি আমার জন্য আশীর্বাদ ছিল। আমি স্বপ্ন দেখি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের হাজারো বেকার তরুণ স্বাবলম্বী হয়ে দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনবেন।’
বেলাল হোসাইনকে দেখে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বেলাল হোসেনও স্বপ্ন দেখছেন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ ও বেকারদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার। তাই নিজ বাড়িতেই আগ্রহী স্থানীয় তরুণ ও যুবকদের শিখিয়ে চলেছেন ফ্রিল্যান্সিং।
বেলাল হোসাইনের কাছে ফ্রিল্যান্সিং শেখেন পাথরঘাটার জাহিদ হাসান অশ্রু ও রিফাত শেখ। কথা হলে তারা জানান, ফ্রিল্যান্সিং করে বেলাল হোসাইনের মতো তারাও স্বাবলম্বী হতে চান। তাই ভালোভাবে শিখতে ও কাজ পেতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন।
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, বেলাল হোসাইনের মতো দেশের হাজারো বেকার তরুণ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে একটি সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।