শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চীনের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট যোগাযোগ চান চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও বিষয়টি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের মতে, চীন হচ্ছে বাংলাদেশের কল-কারখানার কাঁচামালের অন্যতম জোগানদাতা। দেশের সব ধরনের কল-কারখানার কাঁচামাল, গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ চীন থেকেই আসে। চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানা ও পোশাকশিল্প কারখানার মালিকদের দীর্ঘদিনের দাবি চীন-চট্টগ্রাম ফ্লাইট যোগাযোগ। বিশেষ করে, কার্গো পরিবহনের জন্য এমনটা চান ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামের সরকারি তিনটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল রয়েছে। যা দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী হাব। একই সঙ্গে বেসরকারিভাবে হালকা ও ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে ৭৫০টি। এসব প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কাঁচামাল চীন থেকেই আনতে হয়। অনেক সময় সামান্য গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ প্রয়োজন হলে সরাসরি চীন থেকে কার্গোর মাধ্যমে চট্টগ্রামে আনা যায় না। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে চট্টগ্রামে আনতে হয়।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চীনের বিভিন্ন বিমানবন্দরের সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় বিভিন্ন দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীদের সময় নষ্ট হয়, শিপমেন্ট বিলম্ব হয়, অনেক সময় অর্ডার বাতিল হয়।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ব্যবসার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামে প্রচুর কল-কারখানা রয়েছে, তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। প্রচুর বিদেশি ক্রেতাদের যাতায়াত চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের প্রত্যেক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চীনের ব্যবসা রয়েছে। ফলে চীনের সঙ্গে আকাশ যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেছি চীনের সঙ্গে ফ্লাইট যোগাযোগ করা জন্য। আমি চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি থাকাকালে বাংলাদেশ বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম চেম্বারের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল চীনের সঙ্গে চট্টগ্রামের আকাশ পথের সরাসরি যোগাযোগ। কিন্তু সেটি এখনো হয়ে উঠেনি। চীনের তৈরি কাঁচামাল দিয়েই চট্টগ্রামের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চলে। এ ক্ষেত্রে কোনো একটি অর্ডারের পণ্য তৈরির সামান্য কাঁচামালের সংকট হলে তখন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এক্ষেত্রে চীন-চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট থাকলে কাঁচামালের সংকট দূর করা সহজ হতো। ঠিক সময়ে যেকোনো অর্ডার শিপমেন্ট করা যেত। চীনের যেকোনো বিমানবন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট চালু হোক। এতে চট্টগ্রামের ব্যবসার পালে হাওয়া লাগবে। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।’
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল বশর বলেন, ‘চীনের সঙ্গে চট্টগ্রামের ফ্লাইট চালু হলে কর্তৃপক্ষ কার্গো পরিবহনে বড় ধরনের সুফল পেত। চট্টগ্রামে দুবাইয়ের সঙ্গে যে পরিমাণ কার্গো ব্যবসা হয় এর চেয়ে বেশি হতো চীন থেকে। ফলে সরকারই লাভবান হতো। ব্যবসায়ীদের উপকার হতো। বিশেষ করে চীন-চট্টগ্রাম ফ্লাইটে তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামালের কার্গো বেশি আসত। আমাদেরও দাবি, চীনের সঙ্গে চট্টগ্রামের আকাশ যোগাযোগ দ্রুত চালু হোক।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামেও চীনের উদ্যোক্তারা আসছেন, বিদেশি ক্রেতারা আসছেন। চীনের নাগরিকদের যাতায়াত বেড়েছে। ফলে চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য চীন-চট্টগ্রাম ফ্লাইট চালু করা সময়ে দাবি। ফ্লাইট না থাকায় জরুরি কার্গো আনা যায় না। বিকল্প উপায়ে কার্গো আনতে হলে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হন। সে ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকলে দ্রুত আনা যেত। আমাদের দাবি হচ্ছে সপ্তাহে একটি হলেও ফ্লাইট চালু করা হোক চীনের কুনমিং অথবা যেকোনো বিমানবন্দরের সঙ্গে। এতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।