![ফেনী হতে পারে শিল্পায়নের অন্যতম কেন্দ্র](uploads/2024/05/27/Feni-Industry-Area-1716802063.jpg)
কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ফেনী বাংলাদেশে শিল্পায়নের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। গত শনিবার ফেনীতে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে তারা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ সুবিধা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
ফেনী জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইআরডি সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে দেশের সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে প্রস্তুত করতে হবে।
ইআরডি সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে ব্যাপক ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে সরকার সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত উন্নয়ন সাধন করছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের সংযোগস্থলে ফেনীর অবস্থানগত গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণে ফেনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
কর্মশালার সভাপতি ও ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার আশা প্রকাশ করেন কর্মশালা হতে আগত মতামত ও পরামর্শগুলো উত্তরণ-সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন গবেষণা, পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়নে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কি প্রভাব পড়তে পারে বা নতুন কি সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে সেই বিষয়ে স্থানীয় বেসরকারি খাত বিশেষত রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রতিনিধিদের মধ্যে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালায় অভারভিউ অব এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ড. মো. রেজাউল বাশার সিদ্দিকী।
কর্মশালায় প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলার সম্মানিত উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার, গোলাম মো. বাতেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু তাহের এবং ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আইনুল কবির শামীম।
কর্মশালায় আলোচকরা ফেনী জেলায় অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ব্যাংকের ঋণের সুদের হার হ্রাসকরণ এবং কর ও শুল্ক প্রদান পদ্ধতিসমূহ আরও সহজীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)-এর ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সকল মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছে। ফলে, পাঁচ বছর প্রস্তুতিকালীন সময় শেষে বাংলাদেশ নভেম্বর ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে সরকার ভিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি, বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-সংক্রান্ত একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে। উত্তরণ-সংক্রান্ত মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য জাতীয় কমিটির দিকনির্দেশনায় সাতটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী প্রস্তুতিকালীন সময়ে উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক অংশীদারসহ সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে মতবিনিময়ক্রমে একটি স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নের লক্ষ্যে ইআরডি সচিবের নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সহ-নেতৃত্বে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি কাজ করছে। উত্তরণের সম্ভাব্য প্রভাবগুলো চিহ্নিতকরণ, প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি, উত্তরণ-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ বিভাগগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং ওই ঐতিহাসিক অর্জনকে দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচারের লক্ষ্যে ইআরডির অধীনে সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।
এমতাবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রক্রিয়া এবং তার ফলে সৃষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে স্থানীয় পর্যায়ের অংশীদারদের অবহিত করা এবং উত্তরণ প্রক্রিয়াটি মসৃণ ও টেকসইকরণের প্রক্রিয়ায় তাদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এসএসজিপি প্রকল্পের সহায়তায় এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, ইআরডি ও এসএসজিপি প্রকল্পের কর্মকর্তারা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।