বর্ণনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে অবস্থিত? এই এলাকার প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে পরিণত হওয়ার পেছনে কী কারণ তা লেখ।
উত্তর: উয়ারী-বটেশ্বর বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত। প্রাচীন নিদর্শনপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এখানে খননকাজ শুরু হয়। খনন করে পাওয়া যায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-প্রাচীর, ইটের স্থাপত্য, মুদ্রা, গয়না, পোড়ামাটির ফলক, ধাতব বস্তু, অস্ত্র ইত্যাদি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ফলে এই এলাকাটি বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রশ্ন: উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কীভাবে মানুষের নজরে এল?
উত্তর: বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত উয়ারী-বটেশ্বর। উয়ারী ও বটেশ্বর পাশাপাশি দুটি গ্রাম। এই দুই গ্রামের মানুষ বিভিন্ন সময় মাটি খনন করতে গিয়ে প্রায়ই পেত রৌপ্যমুদ্রা, প্রাচীন শহরের রাস্তা-গলি-বন্দরের পোড়ামাটি, মূল্যবান পাথর ও কাচের পুঁতি।
উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো প্রথম মানুষের সামনে পরিচিত করেন স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ পাঠান ও তার ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠান। পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান প্রত্নতাত্ত্বিক এই এলাকাকে বিশেষভাবে পরিচিত করেন। এভাবেই উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো মানুষের নজরে আসে।
প্রশ্ন: কোন কোন নিদর্শন থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের সময়কাল জানা যায়?
উত্তর: ১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকরা মাটি খনন করার সময় একটি পাত্রে কিছু মুদ্রা পান। এগুলো ছিল বঙ্গদেশের ও ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্য মুদ্রা। ১৯৫৫ সালে বটেশ্বর গ্রামের শ্রমিকরা ত্রিকোণকার ও একমুখ চোখা ভারী লোহার দুটি পিণ্ড পায়। ১৯৫৬ সালে উয়ারী গ্রামে মাটি খননকালে হাবিবুল্লাহ পাঠান ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রার ভাণ্ডার পান। ১৯৭৪-৭৫ সালের পর থেকে হাবিবুল্লাহ পাঠান উয়ারী-বটেশ্বরের প্রচুর প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করেন। প্রাচীন নিদর্শনপ্রাপ্তির ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালে এখানে খননকাজ শুরু হয়। খনন করে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর, ইটের স্থাপত্য, বন্দর, রাস্তা, গলি, পোড়ামাটির ফলক, মূল্যবান পাথর, পাথরের বাটখারা, কাচের পুঁতি, মুদ্রাভাণ্ডার প্রভৃতি নিদর্শন পাওয়া যায়। এসব নিদর্শন থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের সময়কাল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: উয়ারী-বটেশ্বর এলাকা সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা যা ধারণা করেছেন তা বর্ণনা করো।
উত্তর: উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের ধারণা, সে সময় ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সুদূর রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত ‘উয়ারী-বটেশ্বর’ রাজ্যের যোগাযোগ ছিল। উয়ারী-বটেশ্বরের আশপাশে প্রায় ৫০টি পুরোনো জায়গা পাওয়া গেছে। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম, যেমন- রাঙ্গার টেক, সোনারুতলা, কেন্দুয়া, মরজাল, টঙ্গীরাজার বাড়ি, মন্দিরভিটা, জানখাঁরটেক ও টঙ্গীরটেকে প্রাচীন বসতির চিহ্ন পাওয়া যায়। দুর্গ-প্রাচীর, ইটের স্থাপত্য, মুদ্রা, গয়না, ধাতব বস্তু, অস্ত্র থেকে শুরু করে জীবন ধারণের যত প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে তা থেকে সহজেই বলা যায়, এখানকার মানুষ যথেষ্ট সভ্য ছিল। এই স্থানের বসতি এলাকাটি সম্ভবত রাজ্যের রাজধানী ছিল।
গৌরাঙ্গ কুমার মন্ডল, সহকারী শিক্ষক, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বসুন্ধরা শাখা, ঢাকা/ আবরার জাহিন