কবিতা: ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
মূলভাব
প্রশ্ন: ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার মূলভাব লেখ।
উত্তর: মূলভাব: ১৯৫২ থেকে ১৯৬৯- এই দীর্ঘ সময়ে বাঙালির নতুন প্রজন্ম যে বায়ান্নর চেতনা থেকে দূরে সরে যায়নি তার প্রমাণ ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতা। নতুন প্রজন্ম স্বাধিকার আদায়ে উজ্জীবিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। এর পটভূমি বা প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৫২ সালে বাঙালি জাতীয়তাবাদের গণবিস্ফোরণে। এরপর বাঙালি আর পেছন ফিরে তাকায়নি। শামসুর রাহমানের ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে কবির ‘নিজ বাসভূমে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে। দেশপ্রেম, গণজাগরণ এবং সংগ্রামী চেতনার কবিতা ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে লেখা এই কবিতায় স্মৃতিচারণ করা হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের। ১৯৬৯-এ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির গণ-আন্দোলনের বিপ্লবী চিত্র এ কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৬৯ সালে জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার, কল-কারখানা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকার রাজপথে জড়ো হয় এবং গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তারা নিজেদের শক্তির গণজাগরণ ঘটায় সারা দেশে। কবি এই আপামর মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনাকে অনন্য এক শিল্পভাষ্যে, প্রতীকী অবয়বে তুলে ধরেছেন এ কবিতায়। কবিতাটি একাধারে ইতিহাসকে তুলে ধরেছে, অন্যদিকে ইতিহাসের বর্ণনা থেকেই উঠে এসেছে- ১৯৬৯ সালেই বাঙালির চোখে-মুখে সবুজ-শ্যামল নতুন বাংলাদেশের মুখচ্ছবি স্পষ্ট হচ্ছিল। এই প্রতিবাদী বাঙালির আরেক নাম বরকত, সালাম। কবির চেতনায় বরকত-সালাম ১৯৬৯ সালেও ঢাকার রাজপথে ছিল। কারণ ১৯৫২ পরবর্তী প্রজন্ম একুশের কৃষ্ণচূড়ার রঙেই বিপ্লব-রঙিন হয়েছিল। ১৯৫২ না এলে ১৯৬৯ ঘটার প্রয়োজনই হতো না। বাঙালিত্বের বোধ জাগ্রত না হলে ১৯৬৯-এ গণতান্ত্রিক চেতনা জাগ্রত হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। এ কারণেই বারবার কবি ১৯৫২ আর বাংলা ভাষার কাছে ফিরে গেছেন। অনুভব করেছেন ১৯৫২ সালের রক্তস্নাত বাংলা ভাষাকে। অনুভব করেছেন বাংলা ভাষাই বাঙালির প্রাণ। ১৯৬৯ সালের রক্তদানে বাংলা ভাষা অর্থাৎ বাঙালি আবারও সেই ফুলেরই বন্দনা করল। এ কবিতায় কবি প্রতীকীভাবে দেখিয়েছেন বাংলা ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকলে বাঙালি জাতি থাকবে। ঐতিহাসিক বায়ান্ন’র চেতনায় সবাই সচেতন থাকলে বাঙালি বারবার সালাম-বরকতের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হবে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায়।
আবু সায়েম মো. জামিল, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা/ আবারার জাহিন