শনিবার রাতে । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

শনিবার রাতে

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
শনিবার রাতে
অলংকার: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

আগের চাইতে এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে ফাতেমার। আগের মতো আর অন্ধকারাচ্ছন্ন বস্তিতে থাকতে হচ্ছে না। এখন দুই রুমের আধাপাকা টিনশেডের ঘর, নিচটা সিমেন্টের। ঘরলাগোয়া একটা টিনের ঘের দেওয়া জায়গা আছে গোসলটোসল করার জন্য। কিছুটা দূরে বারোয়ারি একটা জলের কল আর পায়খানা আছে। আশপাশের পনেরো-বিশটা ঘরের মানুষের জন্য চলে যায়। তেমন অসুবিধা হয় না। তাছাড়া সামনের গলির মাথায়ও একটা জলের কল আছে, সেখানেও যায় অনেকে।

আগে যেখানে থাকত ফাতেমা, সেটা ছিল ছোটলোকদের বস্তি। নানা কিসিমের চোর-ছ্যাচ্চোর, নেশাখোর আর হারামিদের আস্তানা। ফাতেমা তাদের ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ ভয়ে তটস্থ থাকত। স্বামী শহীদকেও দু-একবার বলেছে সে তার ভয়ের কথা। কিন্তু অটোচালক শহীদ সারা দিন আর বেশ রাত পর্যন্ত অটো চালানোর ধকল শেষ করে ফাতেমার কথার অত গুরুত্ব দিতে পারত না। দু-একদিন কিছু ঝগড়াঝাটি করে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছিল ফাতেমাও। ক্লান্ত স্বামীকে আর বিরক্ত করতে চায়নি।

কিন্তু হঠাৎ একদিন শহীদ রাতে ফিরে নিজেই বস্তির এই ঘর ছেড়ে অন্য এক জায়গায় যাওয়ার কথা বলে। আর চার-পাঁচ দিন পরেই ভাসানটেকের এই আধাবস্তির একেবারে শেষ দিকের একটা ঘরে এসে ওঠে।

এখানে আসার পরে একদিন রাতে ফাতেমাকে কাছে টেনে নিয়ে শহীদ বলে, অহন ঠিক আছে তো। অহন কি আর ভয় লাগে? দু’বার প্রশ্ন করার পর ফাতেমা মৃদুস্বরে উত্তর দেয়: না।

এ ব্যবস্থায় ফাতেমা যে খুশি হয়েছে সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারে শহীদ। ফাতেমাও খুশিমনে এখানকার পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে থাকে। ইতোমধ্যে মাসখানেক যেতে না যেতেই পাশের ঘরের রোকেয়ার সঙ্গেও আলাপ পরিচয় করে ফেলেছে। রোকেয়ার বছর পাঁচেকের ছেলে জামাল, সারাক্ষণ দুষ্টুমি করে। ফাতেমা তাকেও বেশ বশ করে ফেলেছে। এখন সে প্রায় সময়ই ঘুরঘুর করে ফাতেমার চারপাশে। সারা দিন শহীদকে কাছে পায় না ফাতেমা। পায় শুধু রাতে। কিন্তু তখনো খুব বেশি কথা হয় না, শহীদ এত ক্লান্ত থাকে যে শুয়েই প্রায় রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে দু-একদিন যদিও শহীদ তার শরীরের চাহিদা মেটাতে কাছে টেনে নেয়। কিন্তু ফাতেমার প্রস্তুতির আগেই যেন দ্রুত কাজ শেষ করে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। এতে ফাতেমা আনন্দের চাইতে কষ্ট পায় বেশি। কিছুদিন থেকে ফাতেমা লক্ষ্য করছে শহীদের মধ্যে কিছুটা যেন পরিবর্তন এসেছে। মেজাজটাও একটু চড়েছে। ধীরস্থির ভাবটাও অনেকটা কমে গেছে।

গতরাতে বিছানায় শুতে এসেই শহীদের মুখ থেকে মদের নাকি অন্য কিছুর একটা ঝাঁঝালো গন্ধ পেয়ে চমকে ওঠে ফাতেমা। পরে মুখ ফিরিয়ে বলে, তুমি আইজ কী খাইয়া আইছো, কও দেহি-

ফাতেমার কথাটা যেন শুনতেই পায়নি এমন ভাব করে অনেকটা জোর করেই ফাতেমার শরীরটাকে কাছে টেনে নিতে চায় শহীদ। দুই হাতে জোর খাটায়।

উঁহু, আগে কও, কী খাইছ- ফাতেমা শহীদের হাতটাকে তার বুকের ওপর থেকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। শহীদ একটু থমকায়। তারপর কিছুটা রাগের সঙ্গেই বলে ওঠে, এসব ফাও কথা কওয়ার আর সময় পাও না!

না, আগে কও- ফাতেমার কণ্ঠেও কিছুটা জেদের আভাস ফোটে। এরকম তো আগে ছিল না-
এই তো গ্যাঞ্জাম কর- শহীদ এবার রীতিমতো রেগে যায়, মাইয়ামানুষ চুপচাপ থাকবা। বেশি জানোনের দরকার নাই-

ফাতোমা অবাক হয়। কিছুটা লেখাপড়া জানা ফাতেমা ভালোমন্দটা মোটামুটি বুঝতে পারে। কেন যেন তার মনে হতে থাকে শহীদ খারাপ লাইনে ঢুকেছে, খারাপ মানুষের সঙ্গে মিশে নেশা ধরেছে। তাছাড়া কিছুদিন ধরে সে দেখছে শহীদের হাতে বেশ টাকা আসছে যেন কোথা থেকে। আগে এমন ছিল না। ফাতেমা কষ্ট বুঝতে পারে, এসব টাকাই ওর মাথাটা গরম করে তুলছে। ফাতেমা অস্ফুটস্বরে বলতে থাকে- বুঝতে পারছি, হঠাৎ অ্যাতো ক্ষ্যাপছ ক্যান-

মানে, কী কইতে চাও তুমি, শহীদের ভ্রু কুঁচকে তাকানোটা ফাতেমা অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারে না।
কওয়ার আর কী আছে, সত্য কতা কইলেই তো দোষ-
সত্য কতাটা কী? শহীদ পাশ ফিরে সরাসরি তাকায় ফাতেমার দিকে। একটু থামে, তারপর বলে, হোন, একটা কতা কই, বেশি চালাকি আমার সহ্য অয় না।...
সোজা কতা, মাইয়া মানুষ মাইয়া মানুষের মতো থাকবা, বেশি বাড়বা না- তাইলে খবর আছে- রাগে অন্য পাশে ফেরে শহীদ। একটু পরে ঘুমিয়ে পড়ে।

স্বভাবতই একটু রগচটা শহীদ, এটা জানে ফাতেমা। কিন্তু আজকের রাতের ব্যবহারটা এবং কথা বলার ধরন দেখে রীতিমতো শঙ্কিত হয়ে ওঠে। পারতপক্ষে ওর সঙ্গে এমন ব্যবহারের কোনো কারণই খুঁজে পায় না ফাতেমা। যদিও মনের মধ্যে একটা দুর্বলতা বাসা বেঁধেই আছে। বিয়ের পর প্রায় পাঁচ বছর হয়ে এল, এখনো কোনো বাচ্চাকাচ্চা হয়নি ফাতেমার। চেষ্টার ক্রুটি নেই, তারপরও হয়নি। কেন হয়নি সেটা বোঝার ক্ষমতা ফাতেমার নেই, বলতে পারে কোনো ডাক্তার। কিন্তু তার কাছে কখনো যাওয়া হয়নি। সবাই ধরে নিয়েছে ফাতেমার কোনো শারীরিক সমস্যার কারণেই এটা ঘটেছে। এ ব্যাপারটা নিয়ে শহীদ যে খুব কিছু বলেছে, তেমনটা না হলেও ফাতেমার মনের মধ্যে যখন তখন কাঁটার মতো খচ খচ করে বিধতে থাকে এই অক্ষমতার বিষয়টা।

সময়টা আসলে ভালো যাচ্ছে না ফাতেমার। এসব ঝামেলার মধ্যে আরেকটা উৎপাত জুটেছে। এই ঘরের মালিকের কে এক আত্মীয় মনির মিয়া এখানে সাত-আটটা ঘরের ভাড়া নিতে আসে। একদিন দেখেই ফাতেমার দিকে সে অন্য রকমভাবে তাকাতে শুরু করেছে। একদিন এসে সে জেনে গেছে সপ্তাহের শুধু শুক্রবার ছাড়া শহীদ অন্য দিনগুলোতে দিনের বেলা ঘরে থাকে না। সেজন্য তাকে শুক্রবার আসতে বলেছিল ফাতেমা। কিন্তু সে অহেতুকভাবে এলো বুধবার। তারপর ভাবী ডেকে নানা ধানাইপানাই গল্পজুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ফাতেমা অন্য কাজের কথা বলে তাকে কিছুক্ষণ পরেই বিদায় করে দেয়। তবে ফাতেমা বুঝতে পারে এবারেই শেষ হলো না। আবার আসবে এই উৎপাত। গায়ের রংটা একটু চাপা হলেও আটসাঁট বাঁধনে টানটান লম্বাটে শরীর ফাতেমার। চোখেও একটু টানা ভাব আছে। একটু ভালো করে দেখলেই ঘোর লাগে। বাচ্চাটাচ্চা না হওয়ার জন্য এতদিনেও বুক আর শরীরের ভাঁজ ঢিলে হয়নি কোথাও।

এই শরীরটাই এখন তার শত্রু হয়ে উঠেছে। ফাতেমা ভেবেছিল রাতে মনির মিয়ার কথাটা বলবে শহীদকে। কিন্তু তা আর হলো না। শুরু করার আগেই ঝামেলা বেঁধে গেল। এরপর আর সহজে ঘুম এল না ফাতেমার। শুয়ে শুয়ে ঘরের পেছনে বেশ কিছুটা দূরের ঝিলের পাড়ের ব্যাঙের ডাক শুনতে লাগল। সন্ধ্যার পরে বেশ বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টিতে চারদিক থেকে মজে যাওয়া ঝিলটার পাড়ের ঝোপঝাড় আর ছোট ছোট গাছপালার ভেতরে ব্যাঙ আর নানারকম পোকামাকড়ের বসতি গড়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে হচ্ছে মশার বংশবিস্তার। আশপাশে এখনো কিছু খোলা জমি পড়ে আছে, তাতে আবর্জনার স্তূপ। পুব আর দক্ষিণ দিকে বেশ কতগুলো বড় বড় বিল্ডিং উঠেছে। এদিকটা তার পেছনে বলে ও দিকের মানুষের এটা চোখে পড়ে না। ঝিলটা এখন একটা বড় নালার অবয়ব নিয়ে এঁকেবেঁকে কিছু দূর দিয়ে ফাতেমাদের সামনের রাস্তাটা ঘেঁষে পশ্চিম দিকে চলে গেছে। রাস্তাটা যেখানে বাঁক নিয়েছে তারপর আর কিছু দেখা যায় না। বাঁকের পরেই বিশাল বিল্ডিং উঠছে একটা। দিনরাত কাজ চলছে সেখানে। নানা রকম শব্দ পাওয়া যায় সর্বক্ষণ। পাঁচতলা পর্যন্ত ওঠা বিল্ডিংটার ইটকাঠের ফাঁকে ফাঁকে সারা দিন মানুষের চলমান চেহারা দেখা যায় দূর থেকে। সন্ধ্যার দিকে কাজ বন্ধ হলেই সব অন্ধকারে ডুবে থাকে।

এর মধ্যে মাত্র দুই দিন গেছে, তিন দিনের দিন শেষ বিকেলের আলো ফুরাতেই মনির এসে হাজির। এই ভয়টাই করছিল ফাতেমা। তার শরীরের নেশায় পেয়েছে মনিরকে, এটা বুঝতে আর সময় লাগেনি ফাতেমার। ভাবী ভাবী ডাকতে ডাকতে সে আজও একেবারে ঘরের ভেতরে ঢোকার মুখেই পাশের বাসার রোকেয়া ভাবীর কাছে জরুরি কাজ আছে বলে একরকম জোর করেই পালিয়ে বাঁচে ফাতেমা। কিন্তু সে বুঝতে পারে কাল পরশু আবার আসবে মনির। বুকের ভেতরের ভয়টা যেন বিপর্যস্ত করে দেয় ফাতেমাকে।

বেশ রাত করে ফেরে আজকাল শহীদ। এত কী কাজ কে জানে! আগে এত রাত হতো না। মেজাজও বেশ ঠান্ডা থাকত, এখন প্রায় সময়ই মেজাজ গরম থাকে, আর চুপচাপ কী যেন ভাবনাচিন্তায় ডুবে থাকে। ডাকলেও তেমনভাবে সাড়া পাওয়া যায় না। তবু আজ রাতে শোয়ার আগেই ফাতেমা শহীদের কাছে মনিরের ব্যাপারটা বলে ফেলল। চুপচাপ সবটা শুনে শহীদ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করল। তারপর তাকাল ফাতেমার দিকে, মনির কখন আহে?
ঠিক নাই, ফাতেমা বলে, আমার খুব ডর লাগে-

মনিররে চিনি আমি, এহানেই দেখছি দুই দিন, রাস্তার মোড়ের রশিদ সাইবের লগে গোলমাল করছিল একেবারেই হারে হারামজাদা, হেই দিন কিছু কই নাই-
একটু থামে শহীদ। তারপর আস্তে করে বলে, তোর আবার সায় নাই তো, ফাতু-
ফাতেমা অবাক চোখে তাকায় শহীদের দিকে। বলে, এই চিনছ তুমি আমারে! হায় আল্লাহ-
শহীদ ফাতেমাকে কাছে টেনে নেয়। শুয়ে পাশ ফিরতে ফিরতে বলে, চিন্তা করিস না, দাওয়াই আছে, সুতার মতো সোজা অইয়া যাইব-

শহীদের কথা শুনে বুকের ভেতরের ভয়টা একটু যেন চাপা পড়ে। নিজেকে বিনা বাধায় সপে দেয় শহীদের বুকের নিচে।
সকালে শহীদ কাজে বেরোবার আগে শুধু বলে, এরপর যেদিন আইবে, বলবা, দুই দিন পরে যেন রাইত ১১টার পরে আহে, বুঝছ?
কী কও তুমি! ভয় পেয়ে যায় ফাতেমা, তারপর আমি কী করুম!

তোমার কিছু করন লাগব না, দ্যাখবা আহে কি না, দরজা আটকাইয়া ঘরের মধ্যে থাকবা। দরজা খোলবা না। ফাতেমা শহীদের কথাবার্তার কোনো আগামাথা পায় না। তার ভয়টা অন্য জায়গায়, যদি একবার তাকে বাগে পায় মনির মিয়া তাহলে কী হবে সেটা ভাবতেও বারবার শিউরে ওঠে ফাতেমা। মনির ওকে হাতে পেলে তো ছিঁড়েখুড়ে খেয়ে ফেলবে রাক্ষসের মতো। তবু মৃদু প্রতিবাদ করেও শেষাবধি রাজি হয় সে-

দেখা যাক, কী হয় শেষ পর্যন্ত। এই উৎপাত শেষ হওয়া দরকার। এক দিন দুই দিন যায়, তিন দিনের দিন সেই শেষ বিকেলেই আবার যথারীতি হাজির হয় মনির। আজ পালায় না ফাতেমা। দুরুদুরু বুক নিয়ে সে দরজা খোলে। দরজার ওপাশে মনির দাঁড়ায়। মুখে হাসি ঝুলিয়ে ফাতেমাকে দেখেই বলে ওঠে, ভালো আছ নি ভাবি?

দুই হাতে খোলা দরজাজুড়ে দাঁড়ানো ফাতেমা মৃদু স্বরে বলে, কী ব্যাপার, বলেন-
এট্টু বইস্যাই না হয় কতা কই, মনির ঘরে ঢুকতে চায়, খাড়াইয়া কি সব কতা কওন যায়-
আইজ না, আরেকদিন আইয়েন, আস্তে করে বলে ফাতেমা। আইজ কাম আছে অহন, বওয়ার সোমায় নাই- আরেক দিন না হয় কতা হইব-

এট্টু সময় দেও ভাবি, তোমার লগে তো কতাই হইল না, খালি আই আর যাই-। মনির হাল ছাড়ে না। তুমি না- 
না, ভাইজান, আইজ না, আপনে, আইজ তো বুধবার, একটু থেমে ফাতেমা তারপর আস্তে করে বলে, আপনে শনিবার রাইতে আইয়েন, মনির তাকিয়ে থাকে ফাতেমার দিকে। একটু পরে বলে, আপনে কইছেন?
ফাতেমা মাথা নাড়ে।
কখন আমু?
রাইতে, ১১টার পর-

থমকে দাঁড়ায় মনির। কী ভেবে কিছুক্ষণ পরে বলে, ঠিকাছে, তুমি যহন কইছ। মনির চলে যায়।
মনির চলে যাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে খাটের ওপর বসে পড়ে, দম ছাড়ে ফাতেমা। এতক্ষণ যেন দম বন্ধ করে ছিল। বুকের ভেতরের দুপদুপ শব্দ পরিষ্কার শুনতে পায় কানের ভেতরে। রাতে শহীদ ফিরলে তাকে বিস্তারিত জানায় ফাতেমা। শহীদ খুব মনোযোগসহকারে শোনে ফাতেমার কথা। শেষে একসময় অস্ফুটস্বরে শুধু বলে, শনিবার রাইত ১১টা!
গভীর রাতে শহীদের স্বগতোক্তির মতো কথাটা ভীতিকর হয়ে কানে বাজে ফাতেমার। বুকের ভেতরের দুপদুপ শব্দটা আবার যেন পরিষ্কার শুনতে পায়।

পরের দিন সারাটা সকাল কোনো কাজে মন বসাতে পারে না ফাতেমা। শহীদ কাজে চলে যাওয়ার পরে একটা ভয়ের আবহ এসে ঘিরে ধরে তাকে। কাউকে কিছু বলতেও পারে না। কমবেশি ভয়ের মধ্যেই সময় চলে যায়। আসে শনিবার। ভেতরে ভেতরে আরও অস্থির হয়ে ওঠে ফাতেমা।
শহীদ সকালে কাজে যাওয়ার আগে ফাতেমা সামনে এসে দাঁড়ায়।
কি ভয় পাইলানি? শহীদের কথা শুনে যেন চমকে ওঠে ফাতেমা, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সব ঠিক অইয়া যাইব- চিন্তা কইর না-
শহীদের কথা শুনে কিছুই বোঝে না ফাতেমা। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

সন্ধ্যার পরে রাত যত বাড়তে থাকে ফাতেমার উৎকণ্ঠাও বাড়তে থাকে। যত ভয়ংকর সব ঘটনা কল্পনায় ভর করে মনের মধ্যে এসে ধাক্কা দেয়। এর মধ্যে আবার সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়েছে টিপ টিপ বৃষ্টি। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বৃষ্টিও বাড়তে থাকে, ঝিলের ওদিক থেকে ব্যাঙের ডাক শোনা যাচ্ছে শুধু। ঘরের মধ্যে একা ফাতেমা। শুধু ভাবছে কখন আসবে শহীদ। শহীদ না এলে কী করবে ফাতেমা! মনির এসে পড়লে কোথায় যাবে, কীভাবে পালাবে!

এসব ভাবতেই উত্তেজনা আর ভয়ে একেবারে অস্থির হয়ে ওঠে। এক সময় ঘরের আলোটা নিভিয়ে দেয়। জানালাটা বন্ধ বিকেল থেকে। দরজাটা তো আগে থেকেই বন্ধ আছে। তবু আবার গিয়ে দেখে ঠিকভাবে বন্ধ আছে কি না সব। ফাতেমাকে যেন বাতিকে পেয়েছে।

বেশ জোরে বাতাস বইছে। বৃষ্টিও চলছে। সামনের গলিটায় এতক্ষণে পানি জমে গেছে। শহীদের তো এতক্ষণে চলে আসার কথা। ফাতেমা জানে, মনির ঠিকই আসবে। বৃষ্টি বাদলে শয়তানদের আরও সুবিধা হয়। 

এর মধ্যে হঠাৎ মনে হলো, আসলে বোকা সে, তার উচিত ছিল সন্ধ্যার পরপরই রোকেয়া ভাবীর কাছে চলে যাওয়া। শহীদ ফিরলে পরে সে ঘরে ফিরতে পারত। কেন যে সে শহীদের কথার ওপর ভরসা করে ঘরেই বসে রইল! কিন্তু এখন তো কোনো পথই নেই। বুকের ভেতর থেকে ভয়ের আবহ যেন কান্না হয়ে ফিরে এল এবার ফাতেমার চোখ ছাপিয়ে।

বাতাসের চাপে দরজা জানালায় একটু শব্দ উঠলেই বারবার চমকে উঠতে লাগল ফাতেমা। খাটের এক কোনোয় অন্ধকারে ভয়ের কাঁথা জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিশ্চল বসে থাকে সে।

মাথা ঝুঁকে একটা বালিশ খামচে ধরে ওইভাবে চোখবন্ধ করে কতক্ষণ বসেছিল ফাতেমা বলতে পারবে না। 
হঠাৎ ঘোর কাটল দরজা ধাক্কানোর শব্দে। বাইরে এখন আর বৃষ্টি নেই। ধরমড়িয়ে উঠে বসে ফাতেমা। বুকের ভেতরে শ্বাসটা যেন আটকে আছে। ঠিক শুনল তো শব্দটা! ভ্রু কুঁচকে খাট থেকে পা নামিয়ে সোজা তাকিয়ে থাকে সে দরজার দিকে। রাত ক’টা বাজে, কে জানে! ১১টা কি বেজে গেছে! 

এবারে শব্দটা আরেকটু জোরে হয়। কেউ কি ডাকছে তার নাম ধরে! কেউ এসেছে দরজার সামনে! শহীদ না কি মনির! শহীদের কথা মনে হতেই একটু যেন সাহস বাড়ে। মাটিতে পা রেখে উঠে দাঁড়ায়, তারপর আস্তে আস্তে যায় দরজার কাছে। অন্ধকারের মধ্যে ভয়ে আলো জ্বালার কথা মনেই আসে না।

দরজায় আবার শব্দ হয়। এবার কান পাতে ফাতেমা। চারদিকে ব্যাঙ আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়াও হঠাৎ শহীদের চাপা কণ্ঠ শুনতে পায়- ফাতেমা, ফাতু কপাট খোল-
কেডা! ভয়ার্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে ফাতেমা।
আরে আমি, কপাট খোল- ফাতু-
অন্ধকারের মধ্যেই দরজা খুলে একপাশে সরে দাঁড়ায় ফাতেমা। তুই কই? বলতে বলতে শহীদ অন্ধকারের মধ্যে হাত বাড়ায় ফাতেমার দিকে, লাইট নাই! থাউক, লাইটের দরকার নাই। ছায়ামূর্তির মতো ভেতরে ঢুকলে শহীদকে ধরে ফাতেমা কেঁদে ফ্যালে। অ্যাতো দেরি করলা ক্যান-
ভয় নাই। এই তো আমি- শহীদ জড়িয়ে ধরে ফাতেমাকে।
কয়ডা বাজে? ভয়ে ভয়ে জানতে চায় ফাতেমা।
আড়াইটার বেশি। এট্টু দেরি হইল কাজকাম সাইরা... মনির আইছিল?
না।
আর আইব না, ওপারে চইল্যা গ্যাছে-

শহীদের এই ভাষাটার অর্থ জানে ফাতেমা। অন্ধকারের মধ্যে ফাতেমার শিরদাড়া বেয়ে ভয়ের একটা শীতল অনুভূতি নিচের দিকে নেমে যেতে থাকে।

এ সপ্তাহের নতুন বই

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
এ সপ্তাহের নতুন বই
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

জ্ঞানসমুদ্রে পিপাশা নিবারণের অন্যতম  হাতিয়ার হলো বই। একটি ভালো বই মানুষের জানাশোনার পরিসরকেই বিস্তৃত  করে না বরং বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন ঘটিয়ে জীবনকে বদলে দিতে পারে। কবি ও ছড়াকার রেদোয়ান মাসুদ বলেছেন, ‘বই হচ্ছে জোনাকি পোকার মতো, চারদিকে অন্ধকার অথচ নিজে জ্বলে থাকে।’...

সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা 
যতীন সরকার
শ্রেণি: সাহিত্য ও সাহিত্যিক বিষয়ক প্রবন্ধ
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪ 
পৃষ্ঠা: ১৫০; মূল্য: ৪০০ টাকা 

যতীন সরকার এ যুগের শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদ। অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল ধরে তার শানিত লেখনী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন পাঠককে সমৃদ্ধ করে এসেছে। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান এই প্রাবন্ধিকের চিন্তাচর্চার পরিসর সুদূরবিস্তৃত। সংস্কৃতি, সমাজ, সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে তার ক্ষুরধার বিশ্লেষণ পাঠকের সামনে নতুন ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা তার গভীর মননচর্চার উজ্জ্বল দীপ্তিতে ভাস্বর। এই চিন্তানায়ক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে কোনো সংকটমুক্তির পূর্বশর্ত সাংস্কৃতিক জাগরণ। তিনি শুধু সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা করেননি, সে লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত উপায় নির্দেশ করেছেন। রুচির অবক্ষয়ের এ যুগে চিন্তাউদ্দীপক ও প্রসাদগুণসম্পন্ন প্রবন্ধ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। শক্তিমান প্রাবন্ধিক যতীন সরকারের প্রবন্ধসম্ভার বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

লোনা মাটির ফসল 
মৃত্যুঞ্জয় রায় 
শ্রেণি: ফসল ও শাকসবজি চাষ
প্রকাশনী: অনিন্দ্য প্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪ 
পৃষ্ঠা: ২৪০; মূল্য: ৬০০ টাকা 

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, এ কথা আমরা সবাই জানি। সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় তা উপকূলীয় অঞ্চলের নদী-খাল দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। সমুদ্রের পানি লবণাক্ত। তাই সেসব পানি ও জোয়ারের পানি এসব অঞ্চলের মাটিকে প্লাবিত করার ফলে মাটি দিন দিন অধিক লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর, কৃষি ও পরিবেশের ওপর। লোনা মাটিতে ফসল চাষ করতে হলে আগে লোনা মাটি ও লবণাক্ততার কারণ সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেন লবণাক্ততা বাড়ছে তা জানলে লবণাক্ততা কমানোর কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এই গ্রন্থে লোনা মাটি ও লবণাক্ততা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দেওয়া হয়েছে, সে মাটির ব্যবস্থাপনা কী হবে, কী কী ফসল চাষ কীভাবে করা যাবে সেসব বিষয়ে আলোচনা আছে এ গ্রন্থে।...

জীব-জন্তু 
সুকুমার রায়
শ্রেণি: প্রাণী ও জীবজগৎ (বয়স ৪-৮)
প্রকাশনী: গ্রন্থিক প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪ 
পৃষ্ঠা: ১০৮; মূল্য: ৩৩০ টাকা 

গরিলা থাকে আফ্রিকার জঙ্গলে। গাছের ডালপালার ছায়ায় সে জঙ্গল দিনদুপুরেও অন্ধকার হয়ে থাকে, সেখানে ভালো করে বাতাস চলে না, জীবজন্তুর সাড়াশব্দ নেই। পাখির গান হয়তো কচিৎ কখনো শোনা যায়। তারই মধ্যে গাছের ডালে বা গাছের তলায় লতাপাতার মাচা বেঁধে গরিলা ফলমূল খেয়ে দিন কাটায়। সে দেশের লোকে পারতপক্ষে সে জঙ্গলে ঢোকে না- কারণ গরিলার মেজাজের তো ঠিক নেই, সে যদি একবার ক্ষেপে দাঁড়ায়, তবে বাঘ ভালুক হাতি তার কাছে কেউই লাগে না। বড় বড় শিকারি, সিংহ বা গন্ডার ধরা যাদের ব্যবসা, তারা পর্যন্ত গরিলার নাম শুনলে এগোতে চায় না। পৃথিবীতে প্রায় সবরকম জানোয়ারকেই মানুষ ধরে খাঁচায় পুরে চিড়িয়াখানায় আটকাতে পেরেছে- কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো বড় গরিলাকে মানুষ ধরতে পারেনি। মাঝে দু-একটা গরিলার ছানা ধরা পড়েছে, কিন্তু তার কোনোটাই বেশি দিন বাঁচেনি।...

সুন্দর মনের সর্বনাশে 
আদিল মাহমুদ 
শ্রেণি: কাব্যগ্রন্থ
প্রকাশনী: নালন্দা, ঢাকা
প্রকাশকাল: একুশে বইমেলা ২০২৪ 
পৃষ্ঠা: ৬৪; মূল্য: ২০০ টাকা 

এই কাব্যগ্রন্থের প্রত্যেকটি কবিতা তাসবি দানার মতো এক সুতোয় গাঁথা। কাছাকাছি সময়ে লেখা। এজন্য কবিতাগুলোর আর আলাদাভাবে নাম দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি কবি। তবে বৃষ্টি বা নদীর বয়ে যাওয়া পানির মতো একের পর এক কবিতা মিল রেখে সাজানো। এখানে আছে আপন আল্পনার আঁকা একটি কাল্পনিক প্রেমের অভ্যর্থনা, আলাপ, পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা এবং তার শেষ পরিণতির উপাখ্যান। প্রেমের অন্তরঙ্গ রূপ এঁকেছেন তিনি নিবিড় সূক্ষ্মতায়। প্রেমানুরাগী মনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে, এমনটাই দেখতে পাবেন কবিতাগুলোর সর্বাঙ্গে।

The Garden
দ্য গার্ডেন
ক্লেয়ার বিমস
প্রকাশক: ডাবলডে, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র    
প্রকাশকাল: ৯ এপ্রিল ২০২৪  
পৃষ্ঠা: ৩০৪; মূল্য: ২২.৭৫ ডলার 

আমেরিকার তরুণ কথাসাহিত্যিক ক্লেয়ার বিমস এ মাসেই প্রকাশ করেছেন তার নতুন উপন্যাস ‘দ্য গার্ডেন’। এ উপন্যাসের কাহিনিতে বলা হয়েছে, প্রধান চরিত্র ইরিন উইলার্ডের চারবার গর্ভপাত হয়েছে। পঞ্চমবারের মতো গর্ভধারণ করার পর তার স্বামীর সঙ্গে যায় বার্কশায়ারের এক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। চিকিৎসক দম্পতি তাদের বাড়িতেই চালায় ডক্টরস হল নামের হাসপাতাল। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যায় ইরিন। এখানে আসার পর তার মনে পড়ে যায় অনেকদিন আগে ভুলে যাওয়া এক বাগানের কথা। অন্যদিকে ইরিনের জটিল অবস্থা সারানোর ব্যাপারে চিকিৎসক দম্পতির একাধিক চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ইরিন বুঝতে পারে, ওই বাগানের নিজস্ব শক্তিই তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির পথে অন্তরায়। হাসপাতালের অন্যান্য রোগীর সঙ্গে পরামর্শ করে ইরিন সিদ্ধান্ত নেয়, তারা সবাই মিলে বাগানের অশুভ শক্তির প্রভাব তাদের ওপর থেকে দূর করে ফেলবে।

পাপেট

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
পাপেট
অলংকরণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

নাতালীর বিদায়ের সময় বাবা যখন নাতালীর হাত সাইফের হাতের মধ্যে দিয়ে বলতে লাগলেন, বাবা আমাদের অতি আদরের নাতালীকে এতদিন আমরা খাইয়ে-পরিয়ে শিক্ষাদীক্ষায় বড়ো করেছি। আজ থেকে ওর ভরণ-পোষণের সব দায়িত্ব তোমার কাঁধে তুলে দিলাম। প্রাণভরে দোয়া করি তোমরা সুখী হও। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে থেকো। স্রষ্টা তোমাদের মঙ্গল করুন। বাবা খুব বেশি কথা বলতে পারলেন না। বাবা নাতালী আর সাইফের হাত ছেড়ে দিয়ে চোখের জল মুছতে লাগলেন। এই ফাঁকে নাতালী এক ঝটকায় সাইফের হাত থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিল। সাইফের মধ্যে ভাবোদয় হয়, নাতালী কী লজ্জা পেয়ে হাত সরিয়ে নিল! নাতালীর অস্থিরতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে সাইফের চোখে। এত অস্থির হয়ে উঠছে কেন নাতালী? সাইফ গাড়িতে ওঠে। নাতালীর মামা একরকম জোর করেই নাতালীকে গাড়িতে সাইফের পাশে বাসিয়ে দেয়। বরের গাড়ি চলতে থাকে। নিরাপদ দূরুত্বে সরে বসে নাতালী। বর-কনের গাড়িতে ড্রাইভার ছাড়া অন্য কেউ নেই। সাইফ নাতালীর সান্নিধ্য পেতে চায়। কথা বলতে চায়। পেছনে বরযাত্রীদের গাড়ি। শহরের উপকণ্ঠে নাতালীদের বাড়ি। সেখান থেকে সাইফদের বাড়ির দূরত্ব পাঁচ-ছয় কিলোমিটার হবে। পাকা রাস্তা। শান্ত নিবিড় রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষাদি দাঁড়িয়ে আছে ছবির মতো। রাস্তার দুই পাশে বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ দেখা যায়। দিগন্তের কাছে নত হয়ে আছে সুনীল আকাশ। উত্তর দিকে নিঃসঙ্গ একটা রেলস্টেশন। স্টেশনের পাশে কৃঞ্চচূড়া গাছের নিচে ছোট্ট একটা বাজার। বাজারে মানুষের আনাগোনা। নাতালী কথা বলছে না দেখে নাতালীর দিকে আর না তাকিয়ে গাড়ির জনালা দিয়ে প্রকৃতির অবারিত সৌন্দর্য উপভোগ করছিল সাইফ। বেলা ডুবুডুবু করছে। গরম যেন কমছেই না। এসি ছেড়ে দিয়েছে ড্রাইভার। তারপরও ঘামছে নাতালী। ঘামছে সাইফ। নাতালীর মাথাটা ভারী হয়ে ওঠে। সাইফ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করে নাতালীর সাথে। নাতালী সেই-যে মুখ নিচু করে বসে আছে আর মুখ উপরে তুলছে না। সাইফের দিকে মিঠা নয়নে একনজর দৃষ্টি দেবে তাও দিচ্ছে না। সাইফ ভাবে, এ কেমন মেয়েরে বাবা, বিয়ের ফুল ফোটা থেকে শুরু করে স্বামীর সান্নিধ্য পাওয়া পর্যন্ত মেয়েদের মধ্যে যে এক ধরনের অবেগ-অনুভূতি কাজ করে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না! দুই বছর চাকরি করার পর বিয়ে করলাম। ত্রিশের কোঠায় বয়স। শুনেছিলাম সবুরে মেওয়া ফলে, এখন দেখছি মাকাল ফলতে শুরু করেছে। কোথাও কী ভুল হয়ে গেল! কী সব ছাইভস্ম ভাবছি!

গাড়ি চলছে। সাইফ আবারও নাতালীর গা ঘেষে বসার চেষ্টা করে। হাতটা নিজের হাতের মধ্যে টেনে নেয়। নাতালী তীর্যক নয়নে সাইফের দিকে নেত্রপাত করে। কর্কশ স্বরে বলে, হাত ছেড়ে দিয়ে সরে বসেন। আমার খুব খারাপ লাগছে। কালবিলম্ব না করে দ্রুতই হাত ছেড়ে দিয়ে সরে বসে সাইফ। সাইফ ভাবে, যে গরম পড়ছে তাতে খারাপ তো লাগতেই পারে। তারপরও ভাবনারা পিছু ছাড়ে না সাইফের। নতুন বউ বলে কথা! গলার স্বরটা একটু নিচু করেও তো বলতে পারত কথাটা। বেশ উঁচু গলায় কত সহজেই বলে ফেলল, হাত ছেড়ে দেন। ড্রাইভার কী শুনে ফেলেছে নাতালীর কথা?

সাইফের ভাবনার রেশ কাটতে না কাটতেই নাতালীকে নিয়ে বরযাত্রীরা মহা ধুমধামে নিশাপুরে সাইফদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো। নতুন বউ দেখার জন্য গ্রামের নারী-পুরুষ উপচে পড়ে বাড়িতে। প্রাইভেটকার থেকে নামানো হলো বর-কনেকে। শরবত ও মিষ্টি খাইয়ে ছেলে ও ছেলের বউকে বরণ করে নিল সাইফের মা। এসব আয়োজন নাতালী আড়চোখে দেখে। মৃদু হাসে। উৎসুখ চোখজোড়া কী যেন খুঁজে ফেরে। ঈদের পর থেকেই প্রচণ্ড দাবদাহে অস্থির জনজীবন। নাতালীর মুখ ঘেমে বাজে একটা অবস্থা হয়েছে। মেকআপ করা মুখে কোথাও সাদা কোথাও ভেজা কাদার মতো লেপটে আছে বিউটিশিয়ানের পালিশ করা কালারফুল পাউডার। সাইফের মা শাড়ির আঁচল দিয়ে আলতো করে নাতালীর মুখের ঘাম, ভেজা পাউডার মুছে দিল। সাইফের মা-বাবা দুজনই স্কুলশিক্ষক। মা সাইফ আর নাতালীকে বুকের সঙ্গে আগলে নিয়ে একতলা বাড়ির বারান্দায় পাশাপাশি রাখা দুটো চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন নতুন বউ দেখে যাচ্ছে। এ ওর কাছে বলাবলি করছে, দেখো দেখো সাইফের বউ কি সুন্দর! ডাগর ডাগর চোখ। উঁচু নাক। গোলগাল মুখ। না মোটা না পাতলা। বাহ্ বাহ্, দুজনকে খুব মানিয়েছে!

প্রতিবেশী-স্বজনদের মুখে প্রশংসার কথা শুনে সাইফের মা কোমল কণ্ঠে বলেন, তোমরা আমার সাইফ আর বউমার জন্য দোয়া করো আল্লাহ যেন ওদের সংসারজীবন সুখে-শান্তিতে ভরিয়ে দেন। মায়ের এমন স্নিগ্ধ আবেগময় কথা শুনে সাইফের মনটা উতলা হয়। তার মনজুড়ে যেন বিষণ্ন সন্ধ্যা নামে।

ভানু সারা দিন তেজ দেখিয়ে ডুব মেরেছে। জোনাকজ্বলা রাত আসে সবুজ কলার পাতায়। বারান্দায় বসে আছে দুজন। স্ট্যান্ড ফ্যানের বাতাসও গরম। এভাবে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না সাইফের। মন ভালো নেই তার। সারা পথ নতুন বউ একটি কথাও বলেনি। কেবলই নিঝুম অস্থিরতা। বিয়ে বাড়ির ঝারবাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। 

বাড়িতে প্রতিবেশীদের বিচরণ কমে এসেছে। সাইফের চাচাতো ভাবীরা নাতালীকে নিয়ে ঘরে যায়। বিয়ের শাড়ি পাল্টিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাতালী ভাবীদের সঙ্গে কথা বলে। সাইফও উঠে পোশাক পরিবর্তন করে হাত-মুখে পানি দেয়। সাইফের বড় চাচার বড় ছেলের বউ স্থানীয় একটি কলেজের বাংলার লেকচারার। ভীষণ মিশুক। অল্প সময়ে মানুষকে আপন করে নেয়। নাতালীর পাশে বসে সে মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলে। নাতালীকে সে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। সে বলে, তোমার ভাগ্যটা খুব ভালো নাতালী, সাইফের মতো সৎ, স্মার্ট, ভদ্র, বিনয়ী, করিৎকর্মা বর তোমার কপালে জুটেছে। 

ভাবীর কথা শুনে নাতালী চোখ দুটো বড় বড় করে বলল, তাই! আমার তো কোনো গুণই নেই, তাহলে কেমন করে থাকব আপনার গুণধর দেবরের সঙ্গে!

কে বলেছে তোমার গুণ নেই, তোমার ঠোঁটের যে স্নিগ্ধ হাসি, সেটি দিয়েই তো তুমি সাইফের মাথা খারাপ করে দেবে। কথা বলেতে গেলে দুই গালে টোল পড়ে। এতে যে তোমাকে আরও বেশি মোহনীয় দেখায়, তা কি তুমি জানো?

এসব তো আমার জানার কথা নয়। যে আমাকে ভালোবাসবে সে জানলেই হবে।

তুমি তো সুন্দর করে কথা সাজিয়ে উত্তর করতে পার। শুনেছি তুমি মেধাবী মেয়ে।

আমার মতো বোকা মেয়ে এই ধরাধামে আর একটিও আছে বলে আমার মনে হয় না। বই পড়ে খাতায় লিখে ভালো রেজাল্ট করা এক বিষয় আর জীবনকে সাজিয়ে-গুছিয়ে চলা অন্য এক বিষয়। জীবনকে সাজাতে পারলাম না। গার্ডিয়ানের হঠকারী সিদ্ধান্তের বলী হয়ে আপনাদের বাড়িতে এলাম। কেন এলাম, কী করব, এখন কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

মধুময় শুভদিনে এমন করে হতাশার কথা বলছ কেন?

আপনাকে আমি ম্যামই বলি। ম্যাম, মানুষের জীবনে অনেক গল্প থাকে, কিন্তু আমার জীবনের গল্পটা একটু অন্যরকম।
তোমার জীবনের অন্যরকম গল্পটা শুনতে পারি-

আপনাকে বলা যাবে না ম্যাম। কষ্ট পাবেন। সাইফ সাহেবকে সব বলব।
সাইফ কষ্ট পাবে না?
জানি না ম্যাম। তারপরও তাকেই বলতে হবে। 

সাঈফের বড় ভাবী নাতালীর কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। ভাবোদয় হয়, একটা সুবোধ ছেলের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে! চোখের বর্ষায় ভিজল ভাবীর মায়াবী মুখের চারপাশ। দিন শেষে ক্লান্তির মধ্যে যে ভালোলাগাটুকু ছিল তাও মুহূর্তে উড়ে যায়। অবস্বাদে ভরে ওঠে মন। তাহলে কী সাইফের এতদিনের লালিত স্বপ্নগুলো সজনে পাতার মতো ঝরে যাবে!

বিয়ে বাড়ির হইচই থেমে গেছে। ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছুঁইছুঁই করছে। একবুক হতাশা নিয়ে ভাবী নাতালীকে বাসর ঘরের খাটে বসিয়ে দিলেন। সাইফকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে নিঃশব্দে বের হয়ে গেলেন।

ভাবী উঠোনে নেমে গেলে সাইফ বাসর ঘরের দরোজায় সিটকিনি লাগিয়ে খাটের দিকে এগিয়ে আসে। আবহমানকাল ধরে বাঙালি মেয়েরা খাট থেকে নেমে বরের পা ছুঁয়ে সালাম করে। নাতালী এসব করল না। সাইফ খাটের কিনারে বসতেই নাতালী নড়ে উঠল। সাইফ ভাবে, আনন্দময় দ্বিধা নিশ্চয় নাতালীর মধ্যে কাজ করছে। ঘেমে ভিজে গেছে নাতালীর শরীর। মাথায় ঘোমটা নেই। সাইফ অনেক কথা বলতে চায়। নাতালী আগের মতোই নীরব। সাইফ কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। কেউ যদি কথা না বলে তাকে তো বোঝাও মুশকিল। সাইফ বিরক্ত হয়ে বলল, কথা বলবেন না, ঠিক আছে আপনি ঘুমান আমি অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাই। সাইফ ছিটকিনি খুলছিল। নাতালী ডাকল, দাঁড়ান-

সাইফ বলল, আমি তো সেই কখন থেকে দাঁড়িয়েই আছি।
ওই সোফাটায় বসুন।

সাইফ শান্ত ছেলের মতো একবুক আশা নিয়ে বসে। তার বুকটার মধ্যে বাকবাকুম রব ওঠে। এতক্ষণে বিবির মুখে কথা ফুটল!

নাতালী সাইফের মুখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আমি আপনাকে কয়েকটি কথা বলব, শুনবেন?
অবশ্যই শুনব। বউয়ের কথা কেউ না শুনে পারে!

আমি তো আপনার বউ হইনি আর আপনি বউ বানিয়ে ফেললেন-
বরের সঙ্গে ফাজলামো করছেন, তিন শর্তে কবুল বলে বিয়ে করেছেন আর বলছেন বউ হননি। বাসর ঘরে বসে নাটক করছেন। বাসর ঘরে এসব কথা মানায়? আমার জীবনকে জীবন বলে মনে হচ্ছে না! আমি কি পাপেট?

নাতালী দেখল সাইফ রেগে যাচ্ছে। কথাগুলো এখনই বলতে হবে। কোনোরকম রাখঢাক না করে নাতালী বলল, আমি একটি ছেলেকে ভালোবাসি। তাকেই বিয়ে করব। আত্মহত্যা করব না বিধায় বাবা-মায়ের চাপে আপনার ঘরে ভুল করে চলে এলাম। ক্ষমা করবেন। আপনার অনেক ক্ষতি আমি করে ফেললাম। যার মাসুল আপনাকে অনেক দিন ধরে দেওয়া লাগবে। ক্ষমা করবেন। ওই যে আপনি বললেন, আমি তিন শর্তে কবুল বলেছি। আসলে আমি কবুল বলিনি।

রাগতস্বরে সাইফ বলল, তবে কী বলেছেন?
আবুল বলেছি আবুল। আ আস্তে বলেছি আর বুল জোরে বলেছি, তিনবারই বলেছি আবুল আবুল আবুল-
শেষ পর্যন্ত সত্যি সত্যি আপনি আমাকে পাপেট বানিয়ে ছাড়লেন! আপনার কাছে আমি পাপেট! আমার এতদিনের স্বপ্ন-সাধ-আহ্লাদ, ভালোবাসা এক নিমেষেই ধুলিসাৎ করে দিলেন। শেষবারের মতো নাতালীর মুখের দিকে তাকিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো হাসতে হাসতে বাসর ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল সাইফ।

ভাবী এতক্ষণ না ঘুমানোর দলে ছিলেন। সাইফের পাগলা হাসির শব্দে দরোজা খুলে বাইরে বেরোতেই সাইফকে দরোজার সামনে দঁড়িয়ে হাসতে দেখেন। হতভাগা সাইফকে ভাবী কী বলে সান্ত্বনা দেবেন?
কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারল না।

পশ্চিম আকাশে কালবোশেখির ঝোড়ো মেঘ। গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করে মেঘ ডাকছে। অবিরাম ডেকেই চলেছে।

পাখি

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
পাখি
অলংকরণ: নাজমুল আলম মাসুম

ডানা আছে বলেই উড়তে হবে নাকি 
                                       পাখি

এই যে পাতার সংসারে 
সবুজের ভেতর সুখ ডেকে ওঠে
সুরেলা সুরে,
খরকুটোর গল্পটা নীড়ের রন্ধ্রে ছড়িয়ে
সুগঠিত হয় রোদ-ছায়ার ফ্রেমে। 
হাওয়ার তালে জ্যোৎস্না দোলে
নদীর পাললিক অবয়বে। 

অফুরন্ত নীলের বিস্তৃত বুকে
যেখানে আকাশ নিজেই নোঙর ফেলে
বসতি গড়তে চেয়ে
নক্ষত্র জড়ো করে পাঁজরে,
রংধনুটা রঙের প্রতি বাঁকে
উড়াল রাখে ভিন্ন কারুকাজে। 

চোখের কোণে জমা মায়ার গোধূলি 
বিকেলের দিগন্ত থেকে কোন অংশে 
কম কী?

ডানা আছে বলেই উড়তে হবে নাকি 
                                         পাখি।

একগুচ্ছ খয়েরি খঞ্জনা

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
একগুচ্ছ খয়েরি খঞ্জনা
অলকরণ: নাজমুল আলম মাসুম
বিলেতি গাবের মতো মখমলে মোড়া
একগুচ্ছ খয়েরি খঞ্জনা
আমার প্রত্যাবর্তনে নিত্যদিন ফিরে আসে-
শৈশবের স্মৃতিধন্য অর্জুন ছায়ায়।
 
ওদের কণ্ঠে চঞ্চল উচ্ছ্বাস উল্লাস!
বিমূর্ত চিত্রকলার মতো সুবাসিত গান-
মায়াবতী সুরধারা যেন জলতরঙ্গের!
আমাকে নন্দিত করে ঋদ্ধ করে-
প্রেমময় খুনসুটি।
 
কার্পেটের মতো বোনা সবুক উঠোনে
পাখিগণ খুঁটে খায় নিজস্ব আহার
দিনান্তে নাচের মুদ্রা পায়ে উড়ে যায়
মেহগনি বুনো অন্ধকারে…
 
ওরা কোথা থেকে আসে, ফের 
কোথা চলে যায়-
একগুচ্ছ খয়েরি খঞ্জনা?

আজি হতে সহস্র বর্ষ পরে

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
আজি হতে সহস্র বর্ষ পরে
অলংকরণ: নাজমুল আলম মাসুম

কবিসভা পথ হারাইয়াছে। সহস্র বছর ধরিয়া তাহারা পথ খুঁজিতেছে। ইতিমধ্যে কাফেলা দীর্ঘ হইতে দীর্ঘতর হইয়াছে। বড় অস্থির, তাই তাহাদের কণ্ঠের পারদ ক্রমাগত বাড়িয়া চলিয়াছে।

কত বিচিত্র সব কবি! একজন বলিলেন, আমি সম্মুখে এক মহাপর্বতের অস্তিত্ব অনুভব করিতেছি- যাহা আকাশ ভেদ করিয়া নীরবে দণ্ডায়মান। অন্যজন (যিনি নিরন্তর নিজেকে দেখিয়া এবং নিজ কণ্ঠসুধা পান করিয়া তাহাতে সমাধিস্থ হইয়া থাকেন) বলিলেন- জনাব, আপনার চোখের সমস্যা রহিয়াছে। যাহা দেখিতেছেন তাহা টিলারও যোগ্য নহে!

‘আমরা তো চতুর্দিকে কেবল অভ্রভেদী পর্বতই দেখিতেছি! স্নিগ্ধ, মৌন।’ -হাহাকার করিয়া উঠিলেন বিপন্ন কবিসভা। ‘তবে কি আমরা পথ হারাইয়াছি?’ সমাধিস্থ কবি গর্জন করিয়া উঠিলেন, যতসব মূর্খের দল! আমাকে অনুসরণ করুন। আমিই পৃথিবীর সর্বশেষ কবি ও পণ্ডিত! 

পর্বত হাসে। দিবসের প্রথম আলো তাঁহাকে সশ্রদ্ধ প্রণতি জানায়। টাইগার হিলের কনকনে ঠান্ডায় জমে যেতে যেতে অলৌকিক সেই আলোর আরতি দেখেন সহস্র বর্ষ পরের কোনো এক কবি।