ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শনিবার রাতে

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
শনিবার রাতে
অলংকার: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

আগের চাইতে এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে ফাতেমার। আগের মতো আর অন্ধকারাচ্ছন্ন বস্তিতে থাকতে হচ্ছে না। এখন দুই রুমের আধাপাকা টিনশেডের ঘর, নিচটা সিমেন্টের। ঘরলাগোয়া একটা টিনের ঘের দেওয়া জায়গা আছে গোসলটোসল করার জন্য। কিছুটা দূরে বারোয়ারি একটা জলের কল আর পায়খানা আছে। আশপাশের পনেরো-বিশটা ঘরের মানুষের জন্য চলে যায়। তেমন অসুবিধা হয় না। তাছাড়া সামনের গলির মাথায়ও একটা জলের কল আছে, সেখানেও যায় অনেকে।

আগে যেখানে থাকত ফাতেমা, সেটা ছিল ছোটলোকদের বস্তি। নানা কিসিমের চোর-ছ্যাচ্চোর, নেশাখোর আর হারামিদের আস্তানা। ফাতেমা তাদের ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ ভয়ে তটস্থ থাকত। স্বামী শহীদকেও দু-একবার বলেছে সে তার ভয়ের কথা। কিন্তু অটোচালক শহীদ সারা দিন আর বেশ রাত পর্যন্ত অটো চালানোর ধকল শেষ করে ফাতেমার কথার অত গুরুত্ব দিতে পারত না। দু-একদিন কিছু ঝগড়াঝাটি করে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছিল ফাতেমাও। ক্লান্ত স্বামীকে আর বিরক্ত করতে চায়নি।

কিন্তু হঠাৎ একদিন শহীদ রাতে ফিরে নিজেই বস্তির এই ঘর ছেড়ে অন্য এক জায়গায় যাওয়ার কথা বলে। আর চার-পাঁচ দিন পরেই ভাসানটেকের এই আধাবস্তির একেবারে শেষ দিকের একটা ঘরে এসে ওঠে।

এখানে আসার পরে একদিন রাতে ফাতেমাকে কাছে টেনে নিয়ে শহীদ বলে, অহন ঠিক আছে তো। অহন কি আর ভয় লাগে? দু’বার প্রশ্ন করার পর ফাতেমা মৃদুস্বরে উত্তর দেয়: না।

এ ব্যবস্থায় ফাতেমা যে খুশি হয়েছে সেটা পরিষ্কার বুঝতে পারে শহীদ। ফাতেমাও খুশিমনে এখানকার পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে থাকে। ইতোমধ্যে মাসখানেক যেতে না যেতেই পাশের ঘরের রোকেয়ার সঙ্গেও আলাপ পরিচয় করে ফেলেছে। রোকেয়ার বছর পাঁচেকের ছেলে জামাল, সারাক্ষণ দুষ্টুমি করে। ফাতেমা তাকেও বেশ বশ করে ফেলেছে। এখন সে প্রায় সময়ই ঘুরঘুর করে ফাতেমার চারপাশে। সারা দিন শহীদকে কাছে পায় না ফাতেমা। পায় শুধু রাতে। কিন্তু তখনো খুব বেশি কথা হয় না, শহীদ এত ক্লান্ত থাকে যে শুয়েই প্রায় রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে দু-একদিন যদিও শহীদ তার শরীরের চাহিদা মেটাতে কাছে টেনে নেয়। কিন্তু ফাতেমার প্রস্তুতির আগেই যেন দ্রুত কাজ শেষ করে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। এতে ফাতেমা আনন্দের চাইতে কষ্ট পায় বেশি। কিছুদিন থেকে ফাতেমা লক্ষ্য করছে শহীদের মধ্যে কিছুটা যেন পরিবর্তন এসেছে। মেজাজটাও একটু চড়েছে। ধীরস্থির ভাবটাও অনেকটা কমে গেছে।

গতরাতে বিছানায় শুতে এসেই শহীদের মুখ থেকে মদের নাকি অন্য কিছুর একটা ঝাঁঝালো গন্ধ পেয়ে চমকে ওঠে ফাতেমা। পরে মুখ ফিরিয়ে বলে, তুমি আইজ কী খাইয়া আইছো, কও দেহি-

ফাতেমার কথাটা যেন শুনতেই পায়নি এমন ভাব করে অনেকটা জোর করেই ফাতেমার শরীরটাকে কাছে টেনে নিতে চায় শহীদ। দুই হাতে জোর খাটায়।

উঁহু, আগে কও, কী খাইছ- ফাতেমা শহীদের হাতটাকে তার বুকের ওপর থেকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। শহীদ একটু থমকায়। তারপর কিছুটা রাগের সঙ্গেই বলে ওঠে, এসব ফাও কথা কওয়ার আর সময় পাও না!

না, আগে কও- ফাতেমার কণ্ঠেও কিছুটা জেদের আভাস ফোটে। এরকম তো আগে ছিল না-
এই তো গ্যাঞ্জাম কর- শহীদ এবার রীতিমতো রেগে যায়, মাইয়ামানুষ চুপচাপ থাকবা। বেশি জানোনের দরকার নাই-

ফাতোমা অবাক হয়। কিছুটা লেখাপড়া জানা ফাতেমা ভালোমন্দটা মোটামুটি বুঝতে পারে। কেন যেন তার মনে হতে থাকে শহীদ খারাপ লাইনে ঢুকেছে, খারাপ মানুষের সঙ্গে মিশে নেশা ধরেছে। তাছাড়া কিছুদিন ধরে সে দেখছে শহীদের হাতে বেশ টাকা আসছে যেন কোথা থেকে। আগে এমন ছিল না। ফাতেমা কষ্ট বুঝতে পারে, এসব টাকাই ওর মাথাটা গরম করে তুলছে। ফাতেমা অস্ফুটস্বরে বলতে থাকে- বুঝতে পারছি, হঠাৎ অ্যাতো ক্ষ্যাপছ ক্যান-

মানে, কী কইতে চাও তুমি, শহীদের ভ্রু কুঁচকে তাকানোটা ফাতেমা অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারে না।
কওয়ার আর কী আছে, সত্য কতা কইলেই তো দোষ-
সত্য কতাটা কী? শহীদ পাশ ফিরে সরাসরি তাকায় ফাতেমার দিকে। একটু থামে, তারপর বলে, হোন, একটা কতা কই, বেশি চালাকি আমার সহ্য অয় না।...
সোজা কতা, মাইয়া মানুষ মাইয়া মানুষের মতো থাকবা, বেশি বাড়বা না- তাইলে খবর আছে- রাগে অন্য পাশে ফেরে শহীদ। একটু পরে ঘুমিয়ে পড়ে।

স্বভাবতই একটু রগচটা শহীদ, এটা জানে ফাতেমা। কিন্তু আজকের রাতের ব্যবহারটা এবং কথা বলার ধরন দেখে রীতিমতো শঙ্কিত হয়ে ওঠে। পারতপক্ষে ওর সঙ্গে এমন ব্যবহারের কোনো কারণই খুঁজে পায় না ফাতেমা। যদিও মনের মধ্যে একটা দুর্বলতা বাসা বেঁধেই আছে। বিয়ের পর প্রায় পাঁচ বছর হয়ে এল, এখনো কোনো বাচ্চাকাচ্চা হয়নি ফাতেমার। চেষ্টার ক্রুটি নেই, তারপরও হয়নি। কেন হয়নি সেটা বোঝার ক্ষমতা ফাতেমার নেই, বলতে পারে কোনো ডাক্তার। কিন্তু তার কাছে কখনো যাওয়া হয়নি। সবাই ধরে নিয়েছে ফাতেমার কোনো শারীরিক সমস্যার কারণেই এটা ঘটেছে। এ ব্যাপারটা নিয়ে শহীদ যে খুব কিছু বলেছে, তেমনটা না হলেও ফাতেমার মনের মধ্যে যখন তখন কাঁটার মতো খচ খচ করে বিধতে থাকে এই অক্ষমতার বিষয়টা।

সময়টা আসলে ভালো যাচ্ছে না ফাতেমার। এসব ঝামেলার মধ্যে আরেকটা উৎপাত জুটেছে। এই ঘরের মালিকের কে এক আত্মীয় মনির মিয়া এখানে সাত-আটটা ঘরের ভাড়া নিতে আসে। একদিন দেখেই ফাতেমার দিকে সে অন্য রকমভাবে তাকাতে শুরু করেছে। একদিন এসে সে জেনে গেছে সপ্তাহের শুধু শুক্রবার ছাড়া শহীদ অন্য দিনগুলোতে দিনের বেলা ঘরে থাকে না। সেজন্য তাকে শুক্রবার আসতে বলেছিল ফাতেমা। কিন্তু সে অহেতুকভাবে এলো বুধবার। তারপর ভাবী ডেকে নানা ধানাইপানাই গল্পজুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ফাতেমা অন্য কাজের কথা বলে তাকে কিছুক্ষণ পরেই বিদায় করে দেয়। তবে ফাতেমা বুঝতে পারে এবারেই শেষ হলো না। আবার আসবে এই উৎপাত। গায়ের রংটা একটু চাপা হলেও আটসাঁট বাঁধনে টানটান লম্বাটে শরীর ফাতেমার। চোখেও একটু টানা ভাব আছে। একটু ভালো করে দেখলেই ঘোর লাগে। বাচ্চাটাচ্চা না হওয়ার জন্য এতদিনেও বুক আর শরীরের ভাঁজ ঢিলে হয়নি কোথাও।

এই শরীরটাই এখন তার শত্রু হয়ে উঠেছে। ফাতেমা ভেবেছিল রাতে মনির মিয়ার কথাটা বলবে শহীদকে। কিন্তু তা আর হলো না। শুরু করার আগেই ঝামেলা বেঁধে গেল। এরপর আর সহজে ঘুম এল না ফাতেমার। শুয়ে শুয়ে ঘরের পেছনে বেশ কিছুটা দূরের ঝিলের পাড়ের ব্যাঙের ডাক শুনতে লাগল। সন্ধ্যার পরে বেশ বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টিতে চারদিক থেকে মজে যাওয়া ঝিলটার পাড়ের ঝোপঝাড় আর ছোট ছোট গাছপালার ভেতরে ব্যাঙ আর নানারকম পোকামাকড়ের বসতি গড়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে হচ্ছে মশার বংশবিস্তার। আশপাশে এখনো কিছু খোলা জমি পড়ে আছে, তাতে আবর্জনার স্তূপ। পুব আর দক্ষিণ দিকে বেশ কতগুলো বড় বড় বিল্ডিং উঠেছে। এদিকটা তার পেছনে বলে ও দিকের মানুষের এটা চোখে পড়ে না। ঝিলটা এখন একটা বড় নালার অবয়ব নিয়ে এঁকেবেঁকে কিছু দূর দিয়ে ফাতেমাদের সামনের রাস্তাটা ঘেঁষে পশ্চিম দিকে চলে গেছে। রাস্তাটা যেখানে বাঁক নিয়েছে তারপর আর কিছু দেখা যায় না। বাঁকের পরেই বিশাল বিল্ডিং উঠছে একটা। দিনরাত কাজ চলছে সেখানে। নানা রকম শব্দ পাওয়া যায় সর্বক্ষণ। পাঁচতলা পর্যন্ত ওঠা বিল্ডিংটার ইটকাঠের ফাঁকে ফাঁকে সারা দিন মানুষের চলমান চেহারা দেখা যায় দূর থেকে। সন্ধ্যার দিকে কাজ বন্ধ হলেই সব অন্ধকারে ডুবে থাকে।

এর মধ্যে মাত্র দুই দিন গেছে, তিন দিনের দিন শেষ বিকেলের আলো ফুরাতেই মনির এসে হাজির। এই ভয়টাই করছিল ফাতেমা। তার শরীরের নেশায় পেয়েছে মনিরকে, এটা বুঝতে আর সময় লাগেনি ফাতেমার। ভাবী ভাবী ডাকতে ডাকতে সে আজও একেবারে ঘরের ভেতরে ঢোকার মুখেই পাশের বাসার রোকেয়া ভাবীর কাছে জরুরি কাজ আছে বলে একরকম জোর করেই পালিয়ে বাঁচে ফাতেমা। কিন্তু সে বুঝতে পারে কাল পরশু আবার আসবে মনির। বুকের ভেতরের ভয়টা যেন বিপর্যস্ত করে দেয় ফাতেমাকে।

বেশ রাত করে ফেরে আজকাল শহীদ। এত কী কাজ কে জানে! আগে এত রাত হতো না। মেজাজও বেশ ঠান্ডা থাকত, এখন প্রায় সময়ই মেজাজ গরম থাকে, আর চুপচাপ কী যেন ভাবনাচিন্তায় ডুবে থাকে। ডাকলেও তেমনভাবে সাড়া পাওয়া যায় না। তবু আজ রাতে শোয়ার আগেই ফাতেমা শহীদের কাছে মনিরের ব্যাপারটা বলে ফেলল। চুপচাপ সবটা শুনে শহীদ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করল। তারপর তাকাল ফাতেমার দিকে, মনির কখন আহে?
ঠিক নাই, ফাতেমা বলে, আমার খুব ডর লাগে-

মনিররে চিনি আমি, এহানেই দেখছি দুই দিন, রাস্তার মোড়ের রশিদ সাইবের লগে গোলমাল করছিল একেবারেই হারে হারামজাদা, হেই দিন কিছু কই নাই-
একটু থামে শহীদ। তারপর আস্তে করে বলে, তোর আবার সায় নাই তো, ফাতু-
ফাতেমা অবাক চোখে তাকায় শহীদের দিকে। বলে, এই চিনছ তুমি আমারে! হায় আল্লাহ-
শহীদ ফাতেমাকে কাছে টেনে নেয়। শুয়ে পাশ ফিরতে ফিরতে বলে, চিন্তা করিস না, দাওয়াই আছে, সুতার মতো সোজা অইয়া যাইব-

শহীদের কথা শুনে বুকের ভেতরের ভয়টা একটু যেন চাপা পড়ে। নিজেকে বিনা বাধায় সপে দেয় শহীদের বুকের নিচে।
সকালে শহীদ কাজে বেরোবার আগে শুধু বলে, এরপর যেদিন আইবে, বলবা, দুই দিন পরে যেন রাইত ১১টার পরে আহে, বুঝছ?
কী কও তুমি! ভয় পেয়ে যায় ফাতেমা, তারপর আমি কী করুম!

তোমার কিছু করন লাগব না, দ্যাখবা আহে কি না, দরজা আটকাইয়া ঘরের মধ্যে থাকবা। দরজা খোলবা না। ফাতেমা শহীদের কথাবার্তার কোনো আগামাথা পায় না। তার ভয়টা অন্য জায়গায়, যদি একবার তাকে বাগে পায় মনির মিয়া তাহলে কী হবে সেটা ভাবতেও বারবার শিউরে ওঠে ফাতেমা। মনির ওকে হাতে পেলে তো ছিঁড়েখুড়ে খেয়ে ফেলবে রাক্ষসের মতো। তবু মৃদু প্রতিবাদ করেও শেষাবধি রাজি হয় সে-

দেখা যাক, কী হয় শেষ পর্যন্ত। এই উৎপাত শেষ হওয়া দরকার। এক দিন দুই দিন যায়, তিন দিনের দিন সেই শেষ বিকেলেই আবার যথারীতি হাজির হয় মনির। আজ পালায় না ফাতেমা। দুরুদুরু বুক নিয়ে সে দরজা খোলে। দরজার ওপাশে মনির দাঁড়ায়। মুখে হাসি ঝুলিয়ে ফাতেমাকে দেখেই বলে ওঠে, ভালো আছ নি ভাবি?

দুই হাতে খোলা দরজাজুড়ে দাঁড়ানো ফাতেমা মৃদু স্বরে বলে, কী ব্যাপার, বলেন-
এট্টু বইস্যাই না হয় কতা কই, মনির ঘরে ঢুকতে চায়, খাড়াইয়া কি সব কতা কওন যায়-
আইজ না, আরেকদিন আইয়েন, আস্তে করে বলে ফাতেমা। আইজ কাম আছে অহন, বওয়ার সোমায় নাই- আরেক দিন না হয় কতা হইব-

এট্টু সময় দেও ভাবি, তোমার লগে তো কতাই হইল না, খালি আই আর যাই-। মনির হাল ছাড়ে না। তুমি না- 
না, ভাইজান, আইজ না, আপনে, আইজ তো বুধবার, একটু থেমে ফাতেমা তারপর আস্তে করে বলে, আপনে শনিবার রাইতে আইয়েন, মনির তাকিয়ে থাকে ফাতেমার দিকে। একটু পরে বলে, আপনে কইছেন?
ফাতেমা মাথা নাড়ে।
কখন আমু?
রাইতে, ১১টার পর-

থমকে দাঁড়ায় মনির। কী ভেবে কিছুক্ষণ পরে বলে, ঠিকাছে, তুমি যহন কইছ। মনির চলে যায়।
মনির চলে যাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে খাটের ওপর বসে পড়ে, দম ছাড়ে ফাতেমা। এতক্ষণ যেন দম বন্ধ করে ছিল। বুকের ভেতরের দুপদুপ শব্দ পরিষ্কার শুনতে পায় কানের ভেতরে। রাতে শহীদ ফিরলে তাকে বিস্তারিত জানায় ফাতেমা। শহীদ খুব মনোযোগসহকারে শোনে ফাতেমার কথা। শেষে একসময় অস্ফুটস্বরে শুধু বলে, শনিবার রাইত ১১টা!
গভীর রাতে শহীদের স্বগতোক্তির মতো কথাটা ভীতিকর হয়ে কানে বাজে ফাতেমার। বুকের ভেতরের দুপদুপ শব্দটা আবার যেন পরিষ্কার শুনতে পায়।

পরের দিন সারাটা সকাল কোনো কাজে মন বসাতে পারে না ফাতেমা। শহীদ কাজে চলে যাওয়ার পরে একটা ভয়ের আবহ এসে ঘিরে ধরে তাকে। কাউকে কিছু বলতেও পারে না। কমবেশি ভয়ের মধ্যেই সময় চলে যায়। আসে শনিবার। ভেতরে ভেতরে আরও অস্থির হয়ে ওঠে ফাতেমা।
শহীদ সকালে কাজে যাওয়ার আগে ফাতেমা সামনে এসে দাঁড়ায়।
কি ভয় পাইলানি? শহীদের কথা শুনে যেন চমকে ওঠে ফাতেমা, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সব ঠিক অইয়া যাইব- চিন্তা কইর না-
শহীদের কথা শুনে কিছুই বোঝে না ফাতেমা। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

সন্ধ্যার পরে রাত যত বাড়তে থাকে ফাতেমার উৎকণ্ঠাও বাড়তে থাকে। যত ভয়ংকর সব ঘটনা কল্পনায় ভর করে মনের মধ্যে এসে ধাক্কা দেয়। এর মধ্যে আবার সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়েছে টিপ টিপ বৃষ্টি। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বৃষ্টিও বাড়তে থাকে, ঝিলের ওদিক থেকে ব্যাঙের ডাক শোনা যাচ্ছে শুধু। ঘরের মধ্যে একা ফাতেমা। শুধু ভাবছে কখন আসবে শহীদ। শহীদ না এলে কী করবে ফাতেমা! মনির এসে পড়লে কোথায় যাবে, কীভাবে পালাবে!

এসব ভাবতেই উত্তেজনা আর ভয়ে একেবারে অস্থির হয়ে ওঠে। এক সময় ঘরের আলোটা নিভিয়ে দেয়। জানালাটা বন্ধ বিকেল থেকে। দরজাটা তো আগে থেকেই বন্ধ আছে। তবু আবার গিয়ে দেখে ঠিকভাবে বন্ধ আছে কি না সব। ফাতেমাকে যেন বাতিকে পেয়েছে।

বেশ জোরে বাতাস বইছে। বৃষ্টিও চলছে। সামনের গলিটায় এতক্ষণে পানি জমে গেছে। শহীদের তো এতক্ষণে চলে আসার কথা। ফাতেমা জানে, মনির ঠিকই আসবে। বৃষ্টি বাদলে শয়তানদের আরও সুবিধা হয়। 

এর মধ্যে হঠাৎ মনে হলো, আসলে বোকা সে, তার উচিত ছিল সন্ধ্যার পরপরই রোকেয়া ভাবীর কাছে চলে যাওয়া। শহীদ ফিরলে পরে সে ঘরে ফিরতে পারত। কেন যে সে শহীদের কথার ওপর ভরসা করে ঘরেই বসে রইল! কিন্তু এখন তো কোনো পথই নেই। বুকের ভেতর থেকে ভয়ের আবহ যেন কান্না হয়ে ফিরে এল এবার ফাতেমার চোখ ছাপিয়ে।

বাতাসের চাপে দরজা জানালায় একটু শব্দ উঠলেই বারবার চমকে উঠতে লাগল ফাতেমা। খাটের এক কোনোয় অন্ধকারে ভয়ের কাঁথা জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিশ্চল বসে থাকে সে।

মাথা ঝুঁকে একটা বালিশ খামচে ধরে ওইভাবে চোখবন্ধ করে কতক্ষণ বসেছিল ফাতেমা বলতে পারবে না। 
হঠাৎ ঘোর কাটল দরজা ধাক্কানোর শব্দে। বাইরে এখন আর বৃষ্টি নেই। ধরমড়িয়ে উঠে বসে ফাতেমা। বুকের ভেতরে শ্বাসটা যেন আটকে আছে। ঠিক শুনল তো শব্দটা! ভ্রু কুঁচকে খাট থেকে পা নামিয়ে সোজা তাকিয়ে থাকে সে দরজার দিকে। রাত ক’টা বাজে, কে জানে! ১১টা কি বেজে গেছে! 

এবারে শব্দটা আরেকটু জোরে হয়। কেউ কি ডাকছে তার নাম ধরে! কেউ এসেছে দরজার সামনে! শহীদ না কি মনির! শহীদের কথা মনে হতেই একটু যেন সাহস বাড়ে। মাটিতে পা রেখে উঠে দাঁড়ায়, তারপর আস্তে আস্তে যায় দরজার কাছে। অন্ধকারের মধ্যে ভয়ে আলো জ্বালার কথা মনেই আসে না।

দরজায় আবার শব্দ হয়। এবার কান পাতে ফাতেমা। চারদিকে ব্যাঙ আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়াও হঠাৎ শহীদের চাপা কণ্ঠ শুনতে পায়- ফাতেমা, ফাতু কপাট খোল-
কেডা! ভয়ার্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে ফাতেমা।
আরে আমি, কপাট খোল- ফাতু-
অন্ধকারের মধ্যেই দরজা খুলে একপাশে সরে দাঁড়ায় ফাতেমা। তুই কই? বলতে বলতে শহীদ অন্ধকারের মধ্যে হাত বাড়ায় ফাতেমার দিকে, লাইট নাই! থাউক, লাইটের দরকার নাই। ছায়ামূর্তির মতো ভেতরে ঢুকলে শহীদকে ধরে ফাতেমা কেঁদে ফ্যালে। অ্যাতো দেরি করলা ক্যান-
ভয় নাই। এই তো আমি- শহীদ জড়িয়ে ধরে ফাতেমাকে।
কয়ডা বাজে? ভয়ে ভয়ে জানতে চায় ফাতেমা।
আড়াইটার বেশি। এট্টু দেরি হইল কাজকাম সাইরা... মনির আইছিল?
না।
আর আইব না, ওপারে চইল্যা গ্যাছে-

শহীদের এই ভাষাটার অর্থ জানে ফাতেমা। অন্ধকারের মধ্যে ফাতেমার শিরদাড়া বেয়ে ভয়ের একটা শীতল অনুভূতি নিচের দিকে নেমে যেতে থাকে।

বাংলাদেশ

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৬ পিএম
বাংলাদেশ

তোমার দুচোখ ক্লান্ত ভারী, চুলও এলোমেলো
হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে উড়ে মেঘের দেশে গেল
ঘুমাওনি কি কাল সারা রাত চোখের কোনে কালি
অনাদরে কাটছে সময়? দেয়ালজোড়া বালি?

দণ্ড

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৩ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৬ পিএম
দণ্ড

ডাকলে যদি ফিরলে কেন তবে?
স-ব দ্বিধা মেঘ ঝেড়ে ফেলে
              দাঁড়িয়েছিলাম সবে।

যেই মেলেছি আলোকিত ভোরের দিকে চোখ,
কিন্তু কেন আকাশজুড়ে নামল ব্যাকুল শোক?
সেই শোকেতে জীবনভরা নিমজ্জিত রই,
দিয়েছিলাম কবে তোমার পাকা ধানে মই?

দণ্ড দিলে দণ্ড নিলাম দু’হাত পেতে আমি,
তার বদলে সারা জীবন সুখে থেকো তুমি!

এসো তবে রাগ-বেহাগে

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:৪০ পিএম
এসো তবে রাগ-বেহাগে

আমায় নিয়ে চলছে এখন দয়াল রসের খেলা…
তোমার সঙ্গে মেলে না আর রৌদ্র-বৃষ্টির কোনো একটি বেলা?
তুমি থাকো সোমেশ্বরী কিংবা ধরো কংস পরপারে
যমনগরে তোমার পাশে, থাকি আমি- ডাকি বারে বারে।

যখনই আমি দেখব বলে মুখটি বাড়াই ধীরে
তুমি তখন বিরল-পাখি যাও চলে যাও আরও দূরে 

মৃত্যুরূপে আসো যদি, প্রণয়বিধুর, বন্ধু তো হও আগে!
যখনই হোক- এসো তবে মাতৃরূপেন রাগ-বেহাগে…

বহুমূত্র

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:২৪ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:২৪ পিএম
বহুমূত্র
অলংকরণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

পিঠ চুলকাচ্ছে, কিন্তু হাত পেছনে নিতে পারছিল না ফজর আলি। এতটাই চুলকাচ্ছে, কোথাও দাঁড়িয়ে-বসিয়েও থাকতে পারছিল না সে। অগত্যা সরু এবং কিছুটা মসৃণ একটা আমগাছের সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে ঘষতে লাগল। এতটাই ঘষাঘষি করল পিঠের ছাল-চামড়া উঠে প্রায় রক্তাক্ত; যা দেখে আমগাছও বেকুব।

তখন প্রায় দুপুর। চোত মাসের ঠা ঠা গরম। তবুও তার ঘন ঘন হিসু চাপছিল। লুঙ্গির কাছা তুলে আমগাছের গোড়াতেই সোঁ সোঁ করে বদনাখানেক হিসু করল সে; যা দেখে আমগাছ আরও বেকুব। আমগাছের মতো সে নিজেকে বেকুব ভাবল  না; বরং মজাই পাচ্ছিল; কারণ, দেখতে না দেখতে পিঁপড়েরা সারি বেঁধে তার হিসুর আশপাশ জড়ো হচ্ছিল। প্রায় দেড় যুগ ধরে খেয়াল করছে বিষয়টা; তবে আজকের মতো নয়। কোত্থেকে এত এত পিঁপড়ে এসে হাজির! তার হিসুতে চিনি আছে নাকি, মনে মনে হাসল সে। 

বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি, এখনো বিয়ে থা করেনি। শরীর ঝিমঝিম করা, হাত-পা জ্বালা, ঘাড় টনটন করা, মাথাঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা, ঘন ঘন হিসু- এগুলো দীর্ঘদিন ধরে, কিন্তু ডাক্তারের কাছে কখনো যায়নি সে। যাওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেনি। খুব বেশি কাবু মনে করলে পাড়ার হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতো। ডাক্তার তাকে তার নিজস্ব উদ্ভাবনী বটিকা সেবনের পরামর্শ প্রদানের পর খাদ্যতালিকাও ধরিয়ে দিত; যেখানে বেশি বেশি ভাত খাওয়ার কথা থাকত এবং শারীরিক দৌর্বল্য কাটাতে ইচ্ছেমতো আখের রস, গুড়ের সরবত কিংবা গ্লুকোজ।

তাতেও স্বাস্থ্য ফিরছিল না; বরং দিনকে দিন তালপাতার সেপাই বনে যাচ্ছিল। বাড়ির সবাই চিন্তায় পড়ল। বিশেষ করে তার মা। সবাই বলাবলি করল বিয়ে না দিলে তার স্বাস্থ্য ফিরবে না। কিন্তু যে বেটা বিয়ে করবে তার মধ্যে তো জোশ থাকতে হবে? তার মধ্যেই জোশ নেই। বিয়ের কথা শুনলে কেমন যেন গুটিয়ে যেত সে! ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাতে চাইত। চক্ষুলজ্জার ভয়ে পালাত না ঠিকই, বিয়ের সম্বন্ধ এলেই দূরে দূরে থাকত। কিন্তু এভাবে বেশি দিন দূরে দূরে থাকতে পারল না আর। পাশের গ্রাম থেকে সম্বন্ধ এলে পরিবারের সবাই জোর করে বিয়ের কড়া পরিয়ে দিল তার হাতে।

পাত্রী বেশ নাদুসনুদুস এবং খাটো। বেঢ়পও বটে; ছোটখাটো হস্তির মানুষরূপী সংস্করণ। গুনে গুনে ধাপ ফেলত; এবং যেখানে ফেলত সেখানকার মাটি আধা ইঞ্চি দেবে যেত। মাংসজাত খাবার এবং কুম্ভকর্ণের ঘুম তার পছন্দের তালিকায়। স্বামীগৃহে পা ফেলেই রান্নাঘরে ঢুকল সে। থালায় ভাত নিলে পোষায় না; তাই গামলায় ভাত নিয়ে শক্ত চেয়ারে বসে কাঁচালঙ্কাসহকারে জাবর কাটতে লাগল। নতুন বউ দেখার জন্য বাড়িতে মানুষের ঢল; সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে হাতিমার্কা পা দু-খানা দোলাতে দোলাতে জাবর কাটার কাজ শেষ করল; তার পর হাই তুলতে তুলতে, এ-বাড়ির ঘর-দরজা তার আগে থেকেই পরিচিত এরকম ভাব করে, ঘুমুতে গেল। 

বউমার এহেন আচরণে হতভম্ব শাশুড়ি দৌড়ে গেলেন রান্নাঘরে। ভাতের হাঁড়ির ঢাকনা তোলার পর তার চক্ষুচড়ক। হাঁড়ির তলানিতে যে কটা ভাত পড়ে আছে তা চশমা ছাড়াই গোনা যায়। মাথায় হাত তুলে ছেলেকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘ওরে ফজর আলি, দে হাত তালি। এরকম বউমাই তো চেয়েছিলাম রে। এতদিন খেয়ে খেয়ে শুকেছিস, এবার না খেয়ে খেয়ে শুকাবি। বউমার পেট ভরানোর মতো ধান গোলায় আছে তো?’

তিনি যতটা হতভম্ব তার চেয়ে ফজর আলি অনেক বেশি তার নবোঢ়ার ঘুমানো দেখে। শোয়ামাত্রই তার নাকের সরব গর্জনে পুরো ঘরটাই যেন কাঁপছিল। থেকে থেকে মুখ হা করে সাইলেন্সার পাইপের মতো ভোঁস ভোঁস করে বাতাস ছাড়ছিল; ফলে খাটের ওপর মশারির যে ছাদ বেশরমভাবে নাচানাচি করছিল। মাকে ডেকে এনে উঠোনের দিকে হা করা জানালার পাশে দাঁড়াল যেন ঘরের ভেতর মজাদার কৌতুক পরিবেশিত হচ্ছে। তারা তাদের চোখ সরাতে পারছিল না; কারণ, শুধু মশারির ছাদ নাচানাচি করছিল তা না, আলনায় রাখা কাপড়-চোপড়ও। হঠাৎ বউ তাদের দিকে পাশ ফিরাল এবং নাক দিয়ে শুশুকের মতো ভোঁস করে বাতাস ছাড়ল। সেই বাতাসের ঝাপ্টা বদ্ধ ঘরের দূষিত বাতাস ঘর ছেড়ে পালানোর মতো ছুটে এল জানালার দিকে;  আর তাতেই মা-ছেলের ঝড়ের কবলে পড়ার মতো অবস্থা হলো।

সেখান থেকে সরে এসে ফজর আলি মায়ের হাত ধরে বলল, ‘আম্মা, তুমি তোমার বউমা নিয়ে থাকো, আমি পালাই।’ বলতে বলতে সে এমন ভাব করছিল যেন সে এক্ষুনি পালাবে। ছেলের হাত খপ করে টেনে ধরে মা বললেন, ‘কোথায় যাবি রে বাপ? আজ তোর বাসররাত না!’

তখন বিকেলের শেষ আলো ইতিউতি তাকাচ্ছিল, কখন অন্ধকারের সহিস ফিরে আসে! অবশেষে ফিরে এসে গাঢ় কণ্ঠে তাদের ডেকে নিয়ে গেল বাসরঘরে। বাপ-দাদার আমলের ঢাউস খাট। তোষকের ওপরে নতুন চাদর বিছিয়ে দিয়েছেন মা। হাজার হলেও তার একটামাত্র ছেলে। হাত-পা জ্বালা করে, তাই ছেলের জন্য গ্লুকোজের ঘন সরবত আর বউমার জন্য গরম দুধের গ্লাস তেপায়ার ওপর রেখে দিয়েছেন তিনি। সঙ্গে কিছু ফলফলাদি।

‘আমাকে পেয়ে তুমি খুশি?’
‘খুব খুশি। তোমার মতো স্লিম ফিগারের বউ কজনার ভাগ্যে জোটে?’
‘আর কোনো গুণ নাই?’
‘গুণের শেষ নাই তোমার। মুখে দুটো দাঁত 
থাকলে সার্কাস পার্টি থেকে ভালোই আয় করতে পারতাম। নাক ডাকলে পাখার বাতাসের দরকার পড়বে না। আর হ্যাঁ, বেশি দিন বাঁচলে দেশে দুর্ভিক্ষ আসতেও সময় নেবে না।’
মন খারাপ করলে ফজর আলি তার গালে টোকা দিয়ে আবার বলল, ‘মন খারাপ করছ কেন, লক্ষ্মীটি? আমি তো তোমার প্রশংসাই করছি। তোমার নামটাও অনেক সুন্দর; থত্থরি বেগম।’
থত্থরি বেগম একটু আহাল্লাদি হলো বটে; তবে অভিমানও ঝরাল, ‘শুধু নামটাই; আমার হাসিটা?’
‘আহারে! হাসিতে অমাবস্যার চন্দ্রযোগ।’
‘গায়ের ত্বক? মা বলে দুধেআলতা।’
‘তোমার মায়ের চোখ না চুলা?’
থত্থরি বেগম হেসে উঠে স্বামীর দিকে পাশ ফেরাল। তার বুকে হাত রেখে প্রসঙ্গ পাল্টাল, ‘তোমার বুকের পাটা দেখে আমার নানার কথা মনে পড়ছে।’
‘তোমার নানা কি আমার মতন?’
‘হ্যাঁ গো। দুপুরবেলা নানা শীতলপাটিতে চিৎ হয়ে শুলে আমরা নাতি-নাতিনরা তার পাটার মতো বুকের ওপর শোয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তাম। কী বাহাদুর ছিলেন! বুঝতেই দিতেন না তিনি কষ্ট পাচ্ছেন। 
নানার কথা মনে পড়ায় তোমার বুকের ওপর শুতে 
ইচ্ছা করছে।’
‘সে আর কি! শোও। তোমার ইচ্ছা পূরণ করি।’

কষ্টেসৃষ্টে তার বুকের ওপর উঠে শুয়ে পড়ল থত্থরি বেগম। যেন কোনো দরবেশ তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন; তার ওপর কুদরতি ফুঁ দিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে গেল সে। এদিকে ফজর আলির অবস্থা চিড়েচ্যাপ্টা। যেন দেয়ালচাপায় পড়েছে সে। দম বন্ধ হয়ে আসছিল তার, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। দুহাতে দেয়াল ওপরের দিকে ঠেলছিল, কিন্তু ঠেলতে পারলে তো? গড়ানি দিয়ে কোনোরকমে বুকের ওপর থেকে দেয়ালটা নামাতে সক্ষম হলো সে; তারপর ঢকঢক করে সরবতটা গলায় ঢেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বাইরে এল। পিঠ চুলকাচ্ছিল; উঠোনের কোণায় আমগাছ, তার বাকলে পিঠ ঘষতে লাগল। 

সপ্তাখানেক পরেই কুরবানির ঈদ এসে হাজির। শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে লোকজন এসে জামাই ও তাদের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গেল। ফজর আলির শাশুড়ি মাশআল্লাহ! কুমায়ন অঞ্চলে চড়ে বেড়ানো হস্তিনীর মতো দেখতে। নিজে সামনে যা পান তাই খান, অন্যকেও সেভাবে খাওয়াতে চান। নতুন জামাইকে গণ্ডেপিণ্ডে খাওয়াচ্ছিলেন; জামাই বাধা দিলে বললেন তিনি, ‘কোরবানির গোশত খেলে কিচ্ছু হয় নারে বাবা। আল্লার বরকত আছে। পেট ঠ্যাসে খাও। হকনল্লি পর্যন্ত ডুবে খাও।’ পরক্ষণে হাসলেন, ‘তোমার শ্বশুর হরিপদ গোয়ালার কাছ থেকে মিষ্টি দই আর লক্ষণের দোকান থেকে রসগোল্লা এনেছে। গোশতে বেশি বেশি ঝাল-মসল্লা দিয়েছি, যাতে দই-মিষ্টি খাইতে মজা পাও।’ শ্লেষ্মা ঝেড়ে এবার কণ্ঠ ভেজালেন অহংবোধে, ‘আমাদের সবাই হাতির বংশধর রে বাবা। কয়েকদিন এই শাশুড়ির হাতের রান্না খাও, দেখবে তোমার পাতলাপুতলা শরীর কেমন মোটাতাজা হয়।’

কেন সে পাতলাপুতলা, তার ভেতরে কী সমস্যা, একমাত্র ফজর আলির দেহের কলকব্জারা তা ভালো জানে। এমনিতে মিতবাক সে। কথার পিঠে কথা বলা অনাবশ্যক মনে করল; তবে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে রহস্যময় হাসি ফুটল।

চিলমচিতে হাত ধুয়ে উঠে দাঁড়াল সে। তার পর কাঁচা সুপারি দিয়ে মুখভর্তি পান চিবাতে চিবাতে শোবার ঘরে এল। তার খুব ঘুম পাচ্ছিল; যাকে বলে মরণঘুম। পিঠও চুলকাচ্ছিল। চন্দ্রকলার চক্রে তখন অমাবস্যা। ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে বাইরে যেতে মন সায় দিল না। বিছানায় এসে বুকের নিচে বালিশ দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল; তার পর বউকে ইঙ্গিত করল তার পিঠ চুলকে দিতে। তার পাশে আসনপিঁড়ি হয়ে বসতে থত্থরি বেগমের কষ্ট হচ্ছিল; তবুও তার পিঠ চুলকে দিচ্ছিল সে। ফজর আলির চুলকানির অত্যাচারের অসহনীয় মাত্রা কমছিল না তো বটেই; বরং বেড়ে যাচ্ছিল। অসন্তুষ্ট চিত্তে শরীর ঝাঁকাল সে, ‘হাতির মতো শরীর; হাতে কি জোর নাই?’

থত্থরি বেগমও রেগে ফায়ার; কড়া জবাব তার, ‘তিন ইঞ্চি করে লম্বা নখ দিয়ে চুলকে দিচ্ছি তা-ও হচ্ছে না! কোদাল আনব?’

‘কোদাল দিয়ে তো কবর খোঁড়ে,’ শীতল কণ্ঠে জবাব দিল ফজর আলি।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠছিল না সে। চারদিকে বলাবলি শুরু হলো ফজর আলি মানুষটা অনেক ভালো মানুষ ছিল। ঘুমের মধ্যে আল্লাহ তাকে তার কাছে নিয়ে গেছেন।

ধারাবাহিক উপন্যাস ত্রিপুরা উপাখ্যান ও সাবিনার কথা

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:১৬ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:২০ পিএম
ত্রিপুরা উপাখ্যান ও সাবিনার কথা

গত সংখ্যার পর

তোমরা আজ হয়তো ভাবতে পারবে না- এ সময় দিনেরাতে নদীর স্রোতের মতো ছিন্নমূল মানুষ প্রবেশ করতে থাকে ত্রিপুরার নানা অঞ্চল দিয়ে। এত বড় শরণার্থী বিপর্যয় আগে কোথাও ঘটেনি পৃথিবীতে! একটি হিসাব থেকে বুঝতে পারবে ত্রিপুরার মানুষ বাংলাদেশের যুদ্ধের দাহন কতটা ভোগ করেছে। ১৯৭১ সালে রাজ্যের মোট লোকসংখ্যা যেখানে ১৫.৫৬ লাখ, সেখানে বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩.৪২ লাখ বা প্রায় ১৪ লাখ। পরের দিকে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। ফলে ত্রিপুরার জনজীবন ও অর্থনীতিতে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়। কী করবে মানুষ বুঝে উঠতে পারে না। 

মল্লিকা সেনগুপ্ত: স্যার, একটি প্রশ্ন করি। সমাজ, অর্থনীতিতে এই যে ভয়ংকর রকম চাপ, সাধারণ মানুষের এত যে কষ্ট, এর পরও কেন সবকিছু মেনে নেয় ত্রিপুরার মানুষ? 

রথীন দত্ত: সঠিক প্রশ্নই করেছ। ব্যাপারটা স্বভাবতই ভাববার। তবে আমার কী মনে হয় জান, প্রকৃতির, মাটির একটা টান আছে, যা ভঙ্গুর নয়, নানা টানাপোড়েনে ভূখণ্ড ভাগ হয়ে গেলেও সেই অবিভাজ্য টান ধরে রাখে প্রকৃতি। এর মধ্যে আছে ভাষা-সংস্কৃতি ও জলবায়ুর এক গন্ধ। হয়তো সে কারণেই কষ্টকে কষ্ট বলে ভাবেনি ত্রিপুরাবাসী। 

ইতিহাসগতভাবে ত্রিপুরায় যে বাঙালি তার ৯৫ ভাগ পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে এসেছে- প্রায় সবাই ওপারের মানুষ- বলতে পার দেশ ভাগে বিতাড়িত মানুষ। এই মানুষদের সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী, যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নতুন ভারতে পাড়ি দিয়েছে ১৯৪৭-এর দাবানলে পুড়ে। আবার এমন অনেকে আছেন যাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন রাজ দরবারের কর্মচারী। কিন্তু এদের সবার আশা-আকাঙ্ক্ষা, রাগ-বিরাগ বৈশিষ্ট্য এক। অতএব, ১৯৪৭-এর আগে-পরের যে বিভেদ তা টিকে থাকেনি- নিমিশে উবে গেছে! হিন্দু, মুসলমান, পাহাড়ি ও নানা ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীর ভেতরে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মুসলমান এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নির্বিবাদে ঠাঁই করে নিয়েছে- মানুষের ভেতরে মানুষ যেভাবে ঠাঁই করে নেয়! এই আত্মীয়তার ক্ষেত্রে ধর্ম ও কলোনিয়াল লিগেসি বিরোধ টানেনি। ধর্ম যে ব্যক্তির একান্ত আপনার বিষয়, রাষ্ট্র বা সমাজের নয় এবং ধর্ম বিশ্বাস যে ভাষা-সংস্কৃতির বিভাজন মানে না, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তা নতুন করে শিখিয়ে দিয়েছে। 

মল্লিকা সেনগুপ্ত: হয়তো তাই হবে। কিন্তু এপার ওপারে দুই পারেই যেভাবে উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ছে, নতুন করে বিভেদ তৈরি হচ্ছে, তাতে কিন্তু শঙ্কার কারণ আছে। 

সার্জন রথীন দত্ত: নিশ্চয়ই, শঙ্কার কারণ তো আছেই। দেখ, ১৯৭১ কেবল বাংলাদেশের নয়, ভারতেরও সমানভাবে। ভারতের সেনাবাহিনী হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের মিত্রবাহিনী। অকাতরে প্রাণ দিয়েছে মুক্তিবাহিনী, রক্ত গেছে মিত্রবাহিনীরও। অতএব, দুই দেশকে এক রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল ১৯৭১, নতুন ইতিহাস তৈরি করেছিল। সেই ভাতৃত্বকে উগ্র ধর্মবাদ চর্চা দিয়ে বিনষ্ট করা কখনো সমীচীন নয়। 
মল্লিকা সেনগুপ্ত: ঠিক বলেছেন, স্যার। এবার তাহলে আগের প্রসঙ্গে যাই আমরা। 

সার্জন রথীন দত্ত আবারও আগের প্রসঙ্গে ফিরলেন। ফেরার আগে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিলেন। 

বুঝলে, পরিস্থিতি যথেষ্টই ঘোলাটে তখন। কী হবে, কীভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে? ভারত সরকার শেষ পর্যন্ত কতটা নামবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে- কিছুই নিশ্চিত নয়। মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি সশরীরে থাকলে পরিস্থিতি একরকম হতো। কিন্তু তিনি তো নেই। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ও দলের হুইপ ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলামসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স তাদের দেখাশোনা করছে। অন্য নেতাদের কেউ কেউ গোপন পথে মেঘালয় ও আসামে পাড়ি দিয়েছেন। কে কোথায় উঠেছেন কেউ খবর রাখে না। একটা সুখবর খবর হলো তাজউদ্দীন আহমদ এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বুঝতেই পার সাক্ষাৎকারটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ- ভারতের সমর্থনের প্রশ্নে কত বড় ইতিবাচক ঘটনা। 

মল্লিকা সেনগুপ্ত: স্যার, পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা আছে, থাকবেও। তবু শ্রীমতি গান্ধী সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? 
সার্জন রথীন দত্ত: দেখ, আমি রাজনীতির মানুষ নই। মিসেস গান্ধীর রাজনৈতিক বিরোধীরা যা ইচ্ছে বলতে পারেন। কিন্তু যদি ১৯৭১ সালের কথা বল, তাহলে আমার মতামত খুবই স্পষ্ট। আমার মনে হয় কি জান, ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী না হয়ে যদি অন্য কেউ থাকতেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি ভারতের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তির সঠিক রূপয়ানে গুরুত্ব না দিত এবং বাংলাদেশ যুদ্ধের রাজনৈতিক মূল্যায়ন মস্কোর ভূমিকা যথার্থ না হতো, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিলম্বিত হওয়ার কারণ ছিল। 

মল্লিকা সেনগুপ্ত: বুঝলাম স্যার, এবার আগের কথায় ফিরি আমরা। 

শোন, তাজউদ্দীনের সঙ্গে শ্রীমতি গান্ধীর পরপর দুটি বৈঠক হয়। বিস্তারিত আলোচনার পর স্থির হয়, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের সরকার গঠন করা হবে, যে সরকার যুদ্ধ পরিচালনা করবে। আরও ঠিক হয় ভারত তার ভূমি ব্যবহার করে রেডিওসহ সব ধরনের প্রচার কাজ চালাতে দেবে। আরও বড় সিদ্ধান্ত হয় ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠবে- যার দেখাশোনা করবে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সংকট দেখা দিল বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া নেতৃবৃন্দের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপিত না হওয়ায়। এ ক্ষেত্রে বিএসএফ সহায়তা করল। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সবাইকে খুঁজে বের করা সম্ভব হলো। 

এদিকে আগরতলায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা, বিশেষ করে যারা ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে এমএনএ বা এমপিএ হয়েছেন তারা পাকিস্তান বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নিলেন। ২ এপ্রিল ১৯৭১ তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসলেন মেলারমাঠে অনিল ভট্টাচার্যের বাড়িতে। 

সেদিনের বৈঠকটি ছিল পাকিস্তানি গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ, যা এক মাইলফলক। জহুর আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভা থেকে আওয়ামী লীগের ৩৫ জন এমএনএ, এমএলএ সর্বপ্রথম বিশ্ববাসীর সামনে একটি যৌথ বিবৃতি প্রচার করলেন। বিবৃতিটি পাঠানো হয় জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট-এর কাছে। Stop this Genocide- ‘বন্ধ কর এই গণহত্যা’ শিরোনামে ইংরেজিতে তৈরি হয় বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রথম যৌথ বিবৃতিটি।

চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ-আল-হারুন, টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক সুভাষ চক্রবর্তী এবং পান্নালাল দাশগুপ্ত সম্পাদিত ‘কম্পাস’ সাময়িকীর নিজস্ব প্রতিনিধি অমর রাহা এটি রচনা করতে সহায়তা করেন। এরা সবাই তখন আগরতলায়। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) বার্তা সংস্থার অফিসের একটি পুরনো টাইপ রাইটারে এই বিবৃতি টাইপ করা হয়। পিটিআইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মধুসুধন গুহ রায় তখন বাংলাদেশের যুদ্ধ ‘কভার’ করতে আগরতলায় আছেন। মধুবাবু টেলিফোনে কলকাতায় হেয়ার স্ট্রিটের পিটিআই অফিসে খবরটি পাঠিয়ে দিলেন। এটি ছিল তার ‘স্কুপ নিউজ’। কারণ অন্য কাউকেই খবরটি তখনো দেওয়া হয়নি। পরদিন সব জাতীর স্তরের খবরের কাগজে খবরটি ফলাও হয়ে বেরোল। এরপর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। 

চলবে...

১ম পর্ব

২য় পর্ব

৩য় পর্ব

৪র্থ পর্ব

৫ম পর্ব

৬ষ্ঠ পর্ব

৭ম পর্ব

৮ম পর্ব

৯ম পর্ব

১০ম পর্ব

১১তম পর্ব