ম্যালেরিয়া একটি জীবাণুঘটিত রোগ। সংক্রমিত মশার কামড়ের মাধ্যমে জীবাণুটি মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যাদের ম্যালেরিয়া আছে তাদের সাধারণত উচ্চ জ্বর এবং কখনো কখনো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। মায়োক্লিনিক অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফারজানা আলম
নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় এই রোগটি খুব একটা দেখা না গেলেও, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় দেশগুলোয় ম্যালেরিয়া সাধারণ সমস্যা। প্রতি বছর প্রায় ২৯ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং ৪ লাখেরও বেশি মানুষ এই রোগে মারা যায়।
ম্যালেরিয়ার কারণ এবং যেভাবে ছড়ায়
মশাবাহিত প্লাজমোডিয়াম জীবাণুর মাধ্যমে ম্যালেরিয়া রোগ হয়। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে মানুষের দেহে এটি ছড়ায়। সংক্রমিত মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে, ওই ব্যক্তির রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্রবেশ করে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত করে। এ ছাড়া ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো সুস্থ মানুষকে রক্ত দান করলে তার দেহেও এই জীবাণু প্রবেশ করে। ম্যালেরিয়াবাহিত মশা সাধারণত সন্ধ্যা থেকে ভোরের মধ্যে কামড়ে থাকে।
প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স, ফ্যালসিপ্যারাম, ম্যালেরি, ওভাল এবং নলেসি নামের পাঁচ প্রজাতির জীবাণু মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের কারণ। এদের মধ্যে যেকোনো একটি জীবাণু বহনকারী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়। ফ্যালসিপ্যারাম সবচেয়ে ভয়াবহ ধরনের ম্যালেরিয়া। এতে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
ম্যালেরিয়ার লক্ষণ
ম্যালেরিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। এ সময় জ্বর ১০৪-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। নির্দিষ্ট বিরতিতেও জ্বর আসা-যাওয়া করে। হতে পারে এক দিন পরপর জ্বর আসছে এবং তা তিন-চার দিন দীর্ঘ হওয়ার পর ঘাম দিয়ে কমে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে জ্বর ছেড়ে গেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও কমে যেতে পারে। জ্বর ছাড়াও এই রোগের অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, মাথাব্যথা, খিঁচুনি এবং মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত শীত অনুভব করা। এ ছাড়া অনিদ্রা, অত্যধিক ঘাম হওয়া, ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা, অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া।
ম্যালেরিয়া হলে করণীয় ও চিকিৎসা
ম্যালেরিয়া হয়েছে সন্দেহ হলে প্রথমেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই কেবল ম্যালেরিয়া হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ছাড়া বর্তমান সময়ে দ্রুত এক বিন্দু রক্ত নিয়েই ম্যালেরিয়ার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ম্যালেরিয়ার রোগী সপ্তাহ খানিকের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যান।
তবে কোনো জটিলতা থাকলে রোগ সেরে উঠতে সময় বেশি লাগতে পারে। ম্যালেরিয়া শনাক্ত হলে এর ধরন এবং সংক্রমণের তীব্রতার ওপর এই রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে। সাধারণত তীব্রতা কম হলে চিকিৎসকরা মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে থাকেন। তবে সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পরামর্শ থাকে ডাক্তারদের। মনে রাখতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা
এখন পর্যন্ত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য কার্যকর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি, তবে একটু সতর্ক থাকলেই এ রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। সেজন্য ম্যালেরিয়ার মৌসুমে বা ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় লম্বা হাতার জামা-কাপড় পরার অভ্যাস করতে হবে। সন্ধ্যার আগে ঘরের জানালা বন্ধ করতে হবে যেন ঘরে মশা প্রবেশ করতে না পারে। দিনে-রাতে, যেকোনো সময় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করতে হবে।
দরজা-জানালায় মশা নিরোধক নেট ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া মশা প্রতিরোধক ক্রিম এবং স্প্রে ব্যবহার করা ভালো। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঘরের আশপাশে, বাগানে বা ছাদের কোথাও যেন পানি জমে মশা বংশবিস্তার না করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
কলি