ঢাকা ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪

এই গরমে সুস্থ থাকতে করণীয়

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
এই গরমে সুস্থ থাকতে করণীয়
গরমের সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে। ছবি: রিং আই

গরমে হাঁসফাঁস গোটা দেশ। গরমের সময় কমন কিছু রোগের পাশাপাশি হিটস্ট্রোকের মতো মারাত্মক সমস্যায়ও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ঘামাচি, পানিস্বল্পতা ছাড়াও জ্বর, অবসাদ, অ্যালার্জি, সূর্যরশ্মিতে চামড়া পুড়ে যাওয়া, ফুড পয়জনিং বা বদহজমের কারণে বমি বা ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যাও বাড়ছে। লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ

পানিস্বল্পতা
গরমের সময় পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা বেশি হয়। এই সময় ঘামের কারণে পানির সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়। এতে রক্তচাপ কমে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পানিশূন্যতার জন্য মাথাব্যথা বা মাথা ঝিমঝিম করে। এ ধরনের সমস্যাকে অবহেলা করা ঠিক নয়। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি, যাদের রোদের মধ্যে বা গরমের মধ্যেই বাইরে কাজ করতে হয়। যারা প্রয়োজনমতো পানি পান করে না বা করার সুযোগ পায় না, তাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে। তীব্র পানিস্বল্পতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা কিংবা কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।

তাই এ সময়ে মাঝেমধ্যে পানি পান করা উচিত। পাশাপাশি ডাব, তরমুজ বা পানিজাতীয় ফলমূল বেশি খাওয়া উচিত। এতে পানিশূন্যতা রোধসহ শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা হয়।

অ্যালার্জি
গরমের সময় ত্বকে ঘামাচি ও অ্যালার্জি হতে পারে। শরীরে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়ে ঘর্মগ্রন্থি ও নালি ফেটে ত্বকের নিচে ঘাম জমতে থাকে। ঘামাচি হয়। আবার ঘাম ও ময়লা জমে ঘর্মনালির মুখ বন্ধ হয়ে ইনফেকশনও হতে পারে। অনেকের ঘামে প্রচুর গন্ধও হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও ঘাম ও ময়লার কারণে ছত্রাকজনিত রোগও এ সময় বেশি হয়।

যারা সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে বেশিক্ষণ থাকে, তাদের ত্বক পুড়ে যেতে পারে। এতে ত্বক লাল হয়ে যায়, জ্বালাপোড়া করে, চুলকায় ও ফোসকা পড়ে। মূলত সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিই এর জন্য দায়ী। যারা একটু ফরসা বা যাদের ত্বক অতিসংবেদনশীল বা সেনসিটিভ, তাদের এ সমস্যা বেশি হয়।

ফুড পয়জনিং
খাবার খেয়ে বারবার বমি করা, পাতলা পায়খানা হওয়া, জ্বর, পেট ব্যথা ইত্যাদি বেশি হলে ধরে নেওয়া যায় ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। গরমের সময় ফুড পয়জনিং বেশি হয়। এ সময় খাবার দ্রুত পচে যায় বলে এতে জীবাণু সহজে সংক্রমিত হয়। এ জন্য বাসি বা পচা খাবার, অস্বাস্থ্যকর ও জীবাণুযুক্ত খাবার, গরমে নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার খাওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি হাত-মুখ, থালা-বাটি ভালোভাবে ধুয়ে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খেলে ফুড পয়জনিংয়ের আশঙ্কা কমে। কারও ফুড পয়জনিং হলে সময়মতো এর চিকিৎসা করা না হলে তীব্র পানিস্বল্পতা, এমনকি রক্তস্বল্পতা সৃষ্টি হয়েও জটিলতা বাড়তে পারে।

এ ধরনের সমস্যা হলে ডাবের পানি, স্যালাইন, শরবত ইত্যাদি বেশি বেশি খাওয়া যেতে পারে। রোগী মুখে না খেতে পারলে এবং জটিল পরিস্থিতি মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অথবা ভালো কোনো হাসপাতালে ভর্তি করে শিরায় স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।

হিটস্ট্রোক
হিটস্ট্রোক মানে হচ্ছে, যখন শরীরের তাপমাত্রা পরিবেশের অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে বেড়ে যায়। কখনো কখনো এই তাপমাত্রা বেড়ে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার কাছাকাছিও যেতে পারে। এটা একটা জটিল পরিস্থিতি, যা হঠাৎ ঘটে। সাধারণত চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী বৃদ্ধরা, যাদের গরমে সহ্যক্ষমতা কম, কিডনি, হার্ট, লিভার, ডায়াবেটিসের রোগী, যথেষ্ট পানি পান করেন না বা যারা ক্রীড়াবিদ, ব্যায়ামবিদ এবং প্রচণ্ড রোদে কাজ করেন— এমন লোকেরা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।

হিটস্ট্রোকে দেহে পানির পরিমাণ কমে যেতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ অনেক বেড়ে যায় (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি হতে পারে)। এ সময় তেমন ঘাম হয় না এবং ত্বকের বর্ণ লালচে হয়, নিঃশ্বাস দ্রুত হয়, মাংসপেশির খিঁচুনি হয়, হাত-পা কাঁপে, হৃৎস্পন্দন দ্রুত বা ক্ষীণ হয় এবং রক্তচাপ কমে যায়, বমি বমি ভাব অথবা বমি হয়, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, তীব্র মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিমঝিম করে, পেশি দুর্বল হয়ে আসে, অনেক সময় রোগী পুরো নিস্তেজ হয়ে পড়ে যায়, এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি কোমা বা শকে চলে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোককে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। দ্রুত ও সঠিকভাবে হিটস্ট্রোকের চিকিৎসা না করালে মৃত্যুও হতে পারে। কেউ যাতে এতে আক্রান্ত না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন-

আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ঠান্ডা বা বরফ মিশ্রিত পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন। বিশেষ করে রোগীর বগল, কুঁচকি, ঘাড়সহ নানা স্থান মুছে দিন।

আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে দিন, পা একটু উঁচু করে দিন। মাথা একটু নিচের দিকে থাকা ভালো।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বা ফ্যানের কাছে অর্থাৎ শীতল পরিবেশে আনুন।

শরীরের কাপড় খুলে দিন বা আলগা করে দিন। মোজা-জুতা অবশ্যই খুলে দিন।

রোগীর জ্ঞান থাকলে পানি, ডাবের পানি, শরবত, জুস বা খাবার স্যালাইন দিন। রোগীকে গোসল করতে বলুন। শরীরে পানি ঢালার ব্যবস্থা করুন।

যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তবে দ্রুত হাসপাতালে নিন। এ অবস্থায় ঘরে চিকিৎসা করার সুযোগ নেই।

অন্যান্য সমস্যা
গরমের সরাসরি প্রভাব ছাড়াও অন্য কিছু সমস্যা হতে পারে। গরমে পানির তীব্র অভাব থাকায় পানিদূষণ বেশি হয়। মানুষ বাধ্য হয়েও দূষিত পানি গ্রহণ করে। অনেক সময় অজান্তেই জীবাণুযুক্ত পানীয় পান করে। এ কারণে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-ই ইত্যাদি বেশি হতে দেখা যায়। ডায়রিয়া ও পেটের অন্যান্য পীড়ায়ও অনেকে আক্রান্ত হয়। এসব রোগ থেকে বাঁচতে যেখানে-সেখানে শরবত, পানি ইত্যাদি পান করবেন না। বিশেষ করে রাস্তাঘাটে তৈরি শরবত মোটেই পান করবেন না। বরং বিশুদ্ধ পানি পান করুন।

কিছু করণীয়

প্রয়োজন ছাড়া সরাসরি রোদে যাবেন না। যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।

বাইরে বের হলে যতটা সম্ভব সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করুন। পরনের কাপড় হতে হবে হাল্কা, ঢিলাঢালা ও সুতি। শরীর যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে হবে। সম্ভব হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এটা রোদে পোড়া থেকে সুরক্ষা দেবে।

প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করতে হবে। যেহেতু ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়, সেহেতু লবণযুক্ত পানীয়, যেমন, খাবার স্যালাইন পান করতে হবে। অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।

অন্য সময়ের চেয়ে এখন পানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। দিনে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। পানির সঙ্গে সামান্য লবণ, চিনি, লেবুর রস মিশিয়েও খেতে পারেন, যা শরীরে এনার্জি বাড়িয়ে দেবে। বাইরে বেরোলে কোল্ড ড্রিংকসের পরিবর্তে ডাবের পানি পান করুন।

খাবার যেন টাটকা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। গরু, খাসির মাংস বা রেড মিট এড়িয়ে মাছ খান।

খাদ্যতালিকায় রাখুন টকজাতীয় খাবার, সবজি ও ফল। ফলমূলের মধ্যে তরমুজ, কলা, আঙুর, সবেদা খেতে পারেন।

রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন টক দই, যা রোদের তাপ থেকে শরীরকে সুস্থ রাখবে।

ক্যাফিনযুক্ত পানীয় একেবারে নয়। কফি বা চায়ের পরিবর্তে শরবত খান।

প্রতিদিন গোসল করার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে একাধিকবার। শরীর ঘাম ও ময়লামুক্ত রাখুন।

শ্রমসাধ্য কাজ যথাসম্ভব কম করার চেষ্টা করুন। এ ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নিন এবং প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করুন।

গ্রন্থনা: হৃদয় জাহান

কলি 

থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা ও করণীয়

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম
থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা ও করণীয়

থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা ও করণীয় সম্পর্কে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি (ডায়াবেটিস ও হরমোন) বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিন

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানব শরীরের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ থাইরয়েড হরমোন। এটি কম-বেশি হলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই নির্দিষ্ট মাত্রায় থাইরয়েড হরমোন থাকা খুব জরুরি। শরীরের বিভিন্ন কোষে শর্করা, আমিষ ও স্নেহ-জাতীয় খাবারের বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করাই এর কাজ। এটি মানব শরীরের বৃদ্ধি, স্নায়ুর গঠন, যৌন ক্ষমতা, প্রজনন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে, ওজন হ্রাস, ক্ষয় হওয়া, মাসিকের সমস্যা ও চোখ ভয়ংকরভাবে বড় হয়ে যেতে পারে। বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণও এই থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয় থাইরয়েড নামক গ্রন্থি থেকে। এই গ্রন্থি গলার সামনের উঁচু হাড়ের পেছনের দিকে ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালিকে প্যাঁচিয়ে থাকে।
থাইরয়েডের হরমোনজনিত সমস্যাকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতাজনিত সমস্যা
থাইরয়েডের গঠনগত সমস্যা (যেমন- গলগণ্ড)
থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ
থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যানসার।

থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতাবিষয়ক সমস্যা দুই রকম হতে পারে। যেমন- হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম।

হাইপোথাইরয়েডিজম
হাইপোথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েডের লঘু ক্রিয়া হলো থাইরয়েডের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এ রোগে পুরুষের চেয়ে নারীরা কয়েক গুণ বেশি ভোগে।

কারণ 
কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম বা জন্মগত থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি।  
থাইরয়েড হরমোনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সক্রিয় হলে (একে অটোইমিউন হাইপোথাইরয়েডিজম বলে)।
অপারেশনের কারণে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বাদ দিতে হলে বা অন্য কারণেও থাইরয়েড নষ্ট হয়ে গেলে।
মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি যথেষ্ট টিএসএইচ নিঃসরণ না করলে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা থাকলে।
রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে।

লক্ষণ 
অবসাদগ্রস্ত হওয়া, অলসতা বা ঘুম ঘুমভাব।
ওজন বেড়ে যাওয়া।
পায়ে পানি আসা।
ক্ষুধামান্দ্য।
চুল পড়া।
ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া।
মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
কোষ্ঠ কাঠিন্য।
রক্তচাপ বৃদ্ধি।
বন্ধ্যত্ব।
গর্ভপাত।
শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া।
শরীরে শীত শীত ভাব।
অনিয়মিত পিরিয়ড ইত্যাদি।

হাইপারথাইরয়েডিজম
রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে হাইপারথাইরয়েডিজম হয়।  

কারণ
প্রধান কারণ গ্রেভস ডিজিজ, যাতে অ্যান্টিবডি অতিরিক্ত মাত্রায় থাইরয়েডকে উত্তেজিত করলে হাইপারথাইরয়েডিজমের সমস্যা দেখা দেয়। 
অন্যান্য কারণের মধ্যে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের প্রদাহ, ওষুধের প্রতিক্রিয়া, টিউমার ইত্যাদি।

লক্ষণ  
ক্ষুধা বেড়ে গেলেও ওজন কমে।
শরীরে গরম অনুভব।
বুক ধড়ফড় করা।
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।
ত্বক কালো হয়ে যাওয়া।
ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া।
চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসা।
অস্থিসন্ধিতে ব্যথা।
পিরিয়ডের সমস্যা।
বন্ধ্যত্ব।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
থাইরয়েড গ্রন্থি ও হরমোনের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে নিচের পরীক্ষাগুলো করা হয়।  

রক্তে হরমোনের মাত্রা।
আল্ট্রাসনোগ্রাম।
রেডিও-অ্যাকটিভ আয়োডিন আপটেক ও স্ক্যানটেস্ট।
এফএনএসি।

চিকিৎসা
হাইপো বা হাইপার দুই ক্ষেত্রেই ওষুধের মাধ্যমে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতার চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে হাইপারথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ না করলে সার্জারি বা রেডিও-অ্যাকটিভ আয়োডিনথেরাপি দেওয়া হয়।

থাইরয়েড গ্রন্থির গঠনগত সমস্যা
থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে গেলে তাকে থাইরয়েড নডিউল বলে। অনেক সময় হরমোন নরমাল থেকেও থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। সাধারণত আয়োডিনের অভাবে গলাফোলা রোগ হয়ে থাকে। যাকে সাধারণ ভাষায় বলে ঘ্যাগ বা গলগণ্ড রোগ।

আয়োডিনের অভাব
বাংলাদেশের মানুষ আয়োডিনযুক্ত লবণ খাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ স্কুলগামী শিশু ও গর্ভবতী মায়ের আয়োডিনের অভাব রয়ে গেছে। এ আয়োডিন শরীরে অতিপ্রয়োজনীয় থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুঃখের বিষয়, সারা পৃথিবীতে এখনো দুই হাজার মিলিয়ন মানুষ আয়োডিনের অভাবে ভুগছে। কিছু কিছু জিনগত কারণেও থাইরয়েড নডিউল হতে পারে। আবার থাইরয়েড নডিউল বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট (ক্যানসার) দুই রকমই হতে পারে।

চিকিৎসা
সময়মতো রোগ নির্ণয় করা গেলে থাইরয়েড নডিউল বা ক্যানসার নিরাময় করা যায়। বিনাইন নডিউলের চিকিৎসা রোগ অনুযায়ী ওষুধ দ্বারা অথবা নডিউল থেকে পানি বের করে অথবা রেডিও-অ্যাকটিভ আয়োডিন সেবনের মাধ্যমে করা হয়। ক্যানসার হলে অপারেশন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। অনেক ক্যানসারের ক্ষেত্রে রেডিও-অ্যাকটিভ আয়োডিন সেবনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে থাইরয়েড হরমোনের সব ধরনের চিকিৎসাই দীর্ঘদিন থেকে হয়ে আসছে। এ জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

অনুলিখন: হৃদয় জাহান

 কলি

‘ব্যাংকক হসপিটাল হেলথ উইক’-এ স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন থাইল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
‘ব্যাংকক হসপিটাল হেলথ উইক’-এ স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন থাইল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা

গ্লোবাল ট্রেইলস ট্যুরিজমের উদ্যোগে রাজধানীর তারকাখচিত হলিডে ইন হোটেলে তিনদিন ব্যাপী ‘ব্যাংকক হসপিটাল হেলথ উইক’ চলছে। চিকিৎসা সেবা শুরু করার আগে অর্থোপেডিক বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংয়ে ডাক্তাররা চিকিৎসা সম্পর্কে অবগত করেন।

আজ রবিবার (২৬ মে) হেলথ উইকের তৃতীয় দিনে নিউরোলজি বিভাগের ডা. ইয়ুদ্রাক প্রাসার্ট, ডা. চাঞ্জিরা সাতুকিৎচাই ও ডা. চাইসাক রোগী দেখছেন। শুক্রবার (২৪মে) জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই হেলথ উইক শুরু হয়। দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। এদিন রুগী দেখেন ব্যাংকক হসপিটালের ডা. পংটরন সিরিথিয়ানচাই, ডা. পানুয়াত সিলাওয়াটশানানাই ও ডা. চাইডেজ সম্বুন।

গ্লোবাল ট্রেইলস ট্যুরিজমের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ ইসহাক মিয়া বলেন, আমাদের দেশের অনেক রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান। এর মধ্যে থাইল্যান্ড অন্যতম। আমরা এই “ব্যাংকক হসপিটাল হেলথ উইক”এ ব্যাংকক হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এখানে তারা ফ্রিতে চিকিৎসাসেবা দিবেন। যাদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার দরকার পরবে তারা যেন থাইল্যান্ড গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।

এইবারই প্রথমবারের মত গ্লোবাল ট্রেইলস ট্যুরিজম এবং থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান থাইমেডিক্স এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকায় আন্তর্জাতিক মানের এই হেলথ উইক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। থাইল্যান্ড গিয়ে চিকিৎসা করাতে সব ধরণের সহযোগিতা পেতে গ্লোবাল ট্রেইলস ট্যুরিজমের অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন www.thaimedics.com এই ওয়েবসাইটে। 

জাহ্নবী

ওভারিয়ান ক্যানসার ভালো হয়

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
ওভারিয়ান ক্যানসার ভালো হয়

নারীদের ডিম্বাণু (ওভাম) সৃষ্টিকারক অঙ্গ (ওভারি)-এর টিস্যুর ক্যানসারকে ওভারিয়ান ক্যানসার বলে। ওভারিয়ান টিউমার বিনাইন (ক্যানসারবিহীন) অথবা ম্যালিগন্যান্ট (ক্যানসারযুক্ত) হতে পারে। গাইনোলজিক্যাল বা স্ত্রীরোগসম্বন্ধীয় ক্যানসারের মধ্যে এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং সাধারণত বয়স্ক নারীদের মধ্যে দেখা যায়। মাইউপচার ও কেয়ার হাসপাতাল অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফারজানা আলম

ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার খুব ধীরগতিতে বিকশিত হয় বলে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা খুব মুশকিল। রোগটির কিছু সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ আছে। যেমন- অনিয়মিত ঋতুস্রাব অথবা ঋতুপ্রবাহ ও চক্রে পরিবর্তন। এ ছাড়া যৌনমিলনের সময় ব্যথা, বুক জ্বালা, পিঠ ও পেলভিক বা শ্রোণীচক্রে ব্যথা, শ্রোণী অঞ্চল ফুলে ওঠা। পাশাপাশি ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া, বমিভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা, শ্বাসকষ্ট হওয়া। এ ছাড়া ক্লান্তি ও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।

ওভারিয়ান ক্যানসারের কারণ
ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের সঠিক কারণ এখনো জানা না গেলেও, কিছু কারণ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

বয়স ৬০-এর বেশি: নারীদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি বেড়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে ঘটে।

স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত।

পারিবারিক ইতিহাস: কারও আত্মীয়র মধ্যে ডিম্বাশয়ের ক্যানসার বা বিআরসিএ ১/২ জিনের মতো মিউটেশনে আক্রান্ত কেউ থাকলে তারও এটা হতে পারে।

এন্ডোমেট্রিওসিস: এটা এমন এক অবস্থা যেখানে টিস্যু জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের ক্ষেত্রেও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হতে পারে।
অন্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ধূমপান, ফাস্টফুড খাদ্যাভ্যাস, স্থূলকায় রোগ, ডিওডোরেন্ট ব্যবহার, ট্যালকম পাউডার ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, দারিদ্রতা এবং শৈশবস্থা থেকে খারাপ খাদ্যাভ্যাস থেকে এই রোগ হতে পারে।

ওভারিয়ান ক্যানসারের পর্যায়
ডিম্বাশয়ের ক্যানসারকে চারটি পর্যায়ে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। 
স্টেজ এক্সএনএমএক্স: স্টেজ-১-এ, ক্যানসারের টিউমার এক বা উভয় ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এই পর্যায়ে তিনটি উপশ্রেণি আছে। পর্যায়-১-এ মানে বৃদ্ধি শুধু একটি ডিম্বাশয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পর্যায়-১-বি নির্দেশ করে যে এটি ডিম্বাশয় এবং টিউব উভয়েই ছড়িয়ে পড়েছে। স্টেজ-১-সি ডিম্বাশয়ের বাইরের পৃষ্ঠে বা ডিম্বাশয়ের চারপাশে তরলে পাওয়া ক্যানসারকে বোঝায়।

স্টেজ এক্সএনএমএক্স: স্টেজ-২ ডিম্বাশয়ের ক্যানসার ডিম্বাশয় এবং টিউব অতিক্রম করেছে, কিন্তু এখনো শ্রোণী অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। সাবটাইপগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেজ-২-এ, যেখানে ক্যানসার জরায়ুতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং স্টেজ-২-বি, যেখানে এটি অন্যান্য পেলভিক টিস্যুতে বেড়েছে।

স্টেজ এক্সএনএমএক্স: স্টেজ-৩-তে, টিউমারটি পেট এবং লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়েছে। সাবটাইপ স্টেজ-৩-এ ক্যানসার মাইক্রোস্কোপিকভাবে পেট বা পেলভিক লিম্ফ নোডের আস্তরণে পাওয়া যায়। ৩-বি-তে, জমা ২ সেন্টিমিটারের কম। পর্যায়-৩-সি টিউমারগুলো বড় এবং লিম্ফ নোডগুলোয় থাকতে পারে।

স্টেজ এক্সএনএমএক্স: পর্যায়-৪ মানে ক্যানসারটি লিভার, ফুসফুস বা প্লীহার মতো আরও দূরবর্তী অঙ্গগুলোয় মেটাস্টেসাইজ হয়েছে। পর্যায়-৪-এ ফুসফুসের কাছাকাছি তরলে থাকে। ৪-বি সাবটাইপের ক্ষেত্রে উপরের পেটের লিম্ফ নোড এবং অঙ্গগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা 
ওভারিয়ান ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকরা বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেন। যেমন-
তলপেট এবং পেলভিকের আল্ট্রাসাউন্ড: ডিম্বাশয় সংক্রান্ত কোনোরকম অসুখের ক্ষেত্রে আল্ট্রাসাউন্ডকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয় প্রথম টেস্ট হিসেবে।

সিটি স্ক্যান: বড় আকারের টিউমার শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হলেও, এতে কিন্তু ছোট আকারের টিউমার ধরা পড়ে না।

এমআরআই স্ক্যান: এটি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসার শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

রক্ত পরীক্ষা: সিএ-১২৫ পরীক্ষা করা হয় সিএ-১২৫-এর মাত্রা জানার জন্য, যা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারযুক্ত কোষগুলো উৎপন্ন করে।

ক্যানসার নির্ণয় হলে, নানাভাবে এর চিকিৎসা করা হয়। যেমন- কেমোথেরাপি, অপারেশন, রেডিয়েশন থেরাপি। এ ছাড়া আকুপাংচার, ভেষজ ওষুধ, ধ্যান এবং যোগব্যায়ামের মতো কিছু পরিপূরক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, যা প্রচলিত চিকিৎসার সঙ্গেই ব্যবহৃত হয়।

কলি

সমস্যার নাম টক ঢেকুর

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ১১:৪২ এএম
সমস্যার নাম টক ঢেকুর

টক ঢেকুর বা চুকা ঢেকুর হলো পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের উপস্থিতির কারণে সালফারযুক্ত ঢেকুর। দ্রুত খাওয়া, ধূমপান অথবা চুইং গাম চিবানোর সময় অতিরিক্ত বাতাসও আমরা গিলে ফেলি, ফলে পেটে এই গ্যাস হয়। হেলথলাইন অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব

টক ঢেকুর সাধারণত রিফ্লাক্স রোগে আক্রান্ত ব্য়ক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। সেজন্য বুক জ্বালা, পেট ফাঁপা, গ্যাসের অনুভূতি, বারবার বাতকর্ম হওয়া, বমিভাব এবং মুখে দুর্গন্ধের মতো উপসর্গগুলো অনুভূত হয়। খাবার খাওয়ার পর উপসর্গ বেশ গুরুতর আকার নিতে পারে এবং রাতে রোগী পেট উপর দিকে করে শুতে বাধ্য হয়।

কারণ
শরীরে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের সৃষ্টির কারণে চুকা ঢেকুর ওঠে। মুখ গহ্বরে ও পাচনতন্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পেটে যাওয়া খাবারের পচনের ফলে এই গ্যাস উৎপন্ন হয়। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য ও ব্রকোলির মতো সবজি এবং মদ হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস উৎপন্ন করে। বারবার এবং দীর্ঘস্থায়ী চুকা ঢেকুরের কারণ হলো- গ্যাস্ট্রো-ইসেফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইয়ারডি) ও ইরিটেবেল বাওয়েল সিন্ড্রোমের মতো হজমের রোগ। ফলে পেটের গ্যাস উপরের দিকে উঠে আসায় ঘন ঘন ঢেকুর হয়। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে- খাদ্যে বিষক্রিয়া, বিশেষ ওষুধ, মানসিক চাপ এবং গর্ভাবস্থা।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
ডাক্তার রোগীর কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে রোগ সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। এরপর নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এর মধ্যে আছে এন্ডোসকপি পরীক্ষা।

খাদ্য তালিকা ও জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনতে পারলে রোগী অনাবশ্যক ও বিরক্তিকর টক ঢেকুর থেকে মুক্তি পেতে পারেন। বিশেষ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার চুকা ঢেকুর কমাতে সাহায্য করতে পারে। গ্রিন টি হজমের উন্নতিতে অন্যতম সহায়ক উপাদান, এর দারুণ রকমের ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণ রয়েছে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আরও একটি দুর্দান্ত উপকরণ, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়।

এটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে বাড়তে দেয় না। ব্রকোলি, অঙ্কুরিত শুঁটিদানা ও রসুনের মতো গ্যাসবর্ধক খাবারগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। ধূমপান বন্ধ করা উচিত। দুগ্ধজাত খাদ্য কমানো দরকার। মদের মতোই কার্বনেটেড পানীয় গ্রহণ বন্ধ করা উচিত, কারণ এটি চুকা ঢেকুরের অন্যতম কারণ।

কলি

কিডনিতে পাথর হলে করণীয়

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ১১:৩৮ এএম
কিডনিতে পাথর হলে করণীয়

কিডনিতে পাথর বা রেনাল ক্যালকুলি হলো কিডনি বা মূত্রনালির মধ্যে একটি শক্ত ও স্ফটিক দানাদার পদার্থকে বোঝায়। এই পাথরের অবস্থান মূত্রতন্ত্রের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। ইয়াশোদা হসপিটাল অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম

পাথরের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে এটাকে কয়েকভাগে ভাগ করা যায়। 
নেফ্রোলিথিয়াসিস: কিডনিতে পাথর থাকে।
ইউরোলিথিয়াসিস: মূত্রাশয় বা মূত্রনালিতে পাথর থাকে।
ইউরেটেরোলিথিয়াসিস: পাথর মূত্রনালিতে অবস্থিত।

কার কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বেশি?
যদিও কিডনিতে পাথর যে কারও হতে পারে, তবে কিছু শ্রেণির লোকদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বেশি। এর মধ্যে রয়েছে- গর্ভবতী নারী, ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষ, যাদের কিডনিতে পাথরের পূর্ব ইতিহাস রয়েছে এবং যাদের পরিবারের সদস্যদের কিডনিতে পাথর রয়েছে।
নির্দিষ্ট কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং চিকিৎসার অবস্থা যেমন- গাউট, হাইপারক্যালসিউরিয়া, হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি থেকেও কিডনিতে পাথর হতে পারে। এ ছাড়া অ্যান্টাসিড, মূত্রবর্ধক ইত্যাদির মতো নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণকারী রোগীদের মধ্যেও এটা দেখা যায়।

কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ কী?
কিডনিতে পাথর তৈরি হয় যখন পাথর গঠনকারী পদার্থ (লবণ) প্রস্রাবে নির্গত হয়। প্রস্রাবের সংমিশ্রণে পরিবর্তন বা প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস কিডনিতে পাথর গঠনে সহায়তা করে। এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী কিছু সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কম তরল গ্রহণ করা। এ ছাড়া কঠোর ব্যায়ামের কারণে ডিহাইড্রেশন থেকে, প্রস্রাবের বহিঃপ্রবাহে যেকোনো ধরনের বাধা থাকলে, মূত্রনালিতে সংক্রমণ হলে, বিপাকের অস্বাভাবিকতার কারণে প্রস্রাবের সংমিশ্রণে পরিবর্তন হলে পাথর তৈরি হতে পারে। 
কিছু খাদ্যাভ্যাস যেমন- উচ্চ প্রোটিন গ্রহণ, অত্যধিক লবণ বা চিনি, ভিটামিন ডি সম্পূরক দীর্ঘক্ষণ গ্রহণ এবং পালংশাকের মতো অক্সালেটযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া থেকেও এটা হতে পারে।

কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কী কী?
কিছু কিডনি পাথর ‘নীরব’ পাথর হিসেবে পরিচিত। কারণ তারা কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না। কখনো কখনো কিডনিতে পাথরে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ব্যথা বা রেনাল কোলিক রিপোর্ট করেন, যা নিম্ন পিঠে বা কুঁচকির অঞ্চলে হঠাৎ অসহনীয় ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। এ ছাড়া পুরুষ এবং নারী উভয়ের মধ্যে কিছু অতিরিক্ত উপসর্গ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি (হেমাটুরিয়া)। এ ছাড়া মূত্রনালিতে সংক্রমণের কারণে জ্বর এবং ঠাণ্ডা লাগা, প্রস্রাব করতে অসুবিধা হওয়া। পাশাপাশি পিঠে ব্যথা, তলপেট এবং কুঁচকির দিকে প্রসারিত ব্যথা, প্রস্রাবের রঙে অস্বাভাবিকতা, ব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব এবং বমি। এ ছাড়া পুরুষদের পেনাইল বা টেস্টিকুলার এলাকায় ব্যথা।

কীভাবে কিডনি পাথর নির্ণয় করা হয়?
আপনি যদি কিডনিতে পাথরের কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ অনুভব করেন, অবিলম্বে একজন নেফ্রোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন। আপনার ডাক্তার/নেফ্রোলজিস্ট সাধারণত এর ভিত্তিতে অবস্থা নির্ণয় করবেন। যেমন- চিকিৎসা ইতিহাস এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা।
এসব পরীক্ষার মধ্যে আছে রক্ত পরীক্ষা। এ ছাড়া ইমেজিং পরীক্ষা। যার মধ্যে আছে সাধারণ পেটের এক্স-রে বা আলট্রাসাউন্ড, নন-কনট্রাস্ট সিটি স্ক্যান।

কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা কী?
কিডনিতে পাথর নিশ্চিত হলে নেফ্রোলজিস্ট পাথরের আকার, উপসর্গ এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভর করে উপযুক্ত চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন। কখনো কখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল গ্রহণ করলে ছোট আকারের পাথর হলে মূত্রনালির মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যায়। ব্যথা থাকলে ডাক্তার ব্যথা উপশম করতে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে পাথর পাস করতে সহায়তা করার জন্য ওষুধও দিতে পারেন।

কীভাবে কিডনি পাথর অপসারণ করা হয়?
বড় পাথরের ক্ষেত্রে সেটা নিজে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই এক্ষেত্রে নেফ্রোলজিস্ট কিডনি পাথর অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিতে পারেন। তবে আরও কিছু চিকিৎসা আছে। যেমন-এক্সট্রাকর্পোরিয়াল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি (ESWL): আলট্রাসাউন্ড শক ওয়েভগুলো বড় পাথরগুলো গুঁড়া করে ফেলে। সেই গুঁড়াগুলো প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে।
ইউরেটেরোস্কোপি: ইউরেটার বরাবর টিউব ঢুকিয়ে কিডনির ছোট পাথর অপসারণ করা যেতে পারে। বড় পাথরের জন্য, ডাক্তার তাদের দ্রবীভূত করতে বা ভেঙে ফেলার জন্য ইউরেটেরোস্কোপের মধ্যে লেজার ব্যবহার করতে পারেন।
ওপেন সার্জারি: কিডনির পাথর অপসারণের জন্য ওপেন সার্জারি বা অপারেশন খুব কমই এখন আর ব্যবহার করা হয়। পাথর আটকে গেলে, প্রস্রাব প্রবাহে বাধা, প্রচণ্ড ব্যথা এবং রক্তপাত হলেই ডাক্তার ওপেন সার্জারির পরামর্শ দিতে পারেন।

কিডনিতে পাথর কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
কিডনির পাথর যাতে না হয় সেজন্য নিয়মিত প্রচুর তরল পান করতে হবে। স্থূল ব্যক্তিদের ইউরিক অ্যাসিডের পাথর ওজন কমানোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ডায়েট টিপস
সোডিয়াম বা লবণ খাওয়া কমিয়ে দিন। প্রক্রিয়াজাত খাবার, আচার, ফাস্ট ফুড খাওয়ার ওপর নজর রাখুন। টেবিলে অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার সীমিত করুন। মাংস খাওয়া কমিয়ে প্রোটিনের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করুন। সেজন্য সয়া ফুড, বাদাম, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি খান। অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পালংশাক, বীট, চিনাবাদাম ইত্যাদি খাওয়া কমিয়ে দিন। ক্যালসিয়াম অক্সালেট এবং ক্যালসিয়াম ফসফেট ধরনের পাথর হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পরিমিত ক্যালসিয়াম খান।

কলি