মিসরের কায়রোয় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। এসবের মধ্যেই রাফা নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন উত্তেজনা। গতকাল সোমবার প্রথম ভাগে ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা রাফার বেশ কিছু অংশে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে সরে যেতে বলেছে।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) রাফার পূর্বের এলাকা পর্যন্ত মানবিক এলাকা বর্ধিত করেছে। সেখানেই মূলত মানুষকে সরে যেতে বলছে বাহিনীটি। তারা জানিয়েছে, বর্ধিত মানবিক এলাকায় ফিল্ড হাসপাতাল, তাঁবু এবং খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য রসদের সুবিধা থাকবে।
ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় প্রায় গোটা গাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। প্রাণহানিও হয়েছে ব্যাপক। এক সময় তাদেরই নির্দেশনায় বাসস্থান ছেড়ে রাফায় আশ্রয় নিয়েছিল গাজাবাসী। সে সময় ওই অঞ্চলটিকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এখন সেখানে মানুষ আছে ১০ লাখেরও বেশি।
ইসরায়েলি বাহিনী এখন রাফায় স্থল অভিযান চালাতে চায়। তাদের দাবি, এটি না করা হলে হামাসকে নির্মূলের যে লক্ষ্য তারা নিয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব হবে না। তবে এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে ইসরায়েলি মিত্রদের। উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অন্যান্য দেশও। তারা বলছে, এরকম কোনো স্থল অভিযান চালানো হলে মানবিক বিপর্যয় তৈরি হবে। রাফার লাখ লাখ মানুষ বিপদে পড়বে।
স্থল অভিযান শুরু না করলেও রাফায় বিভিন্ন সময়ে বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি, রাফায় হামাস লুকিয়ে আছে এবং সেখানকার সাধারণ মানুষকে মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য করে ১০টি বস্তু ছোড়া হয়েছে দক্ষিণ গাজার রাফা সীমান্তের কাছ থেকে। হামাসের এক সশস্ত্র বাহিনী সে হামলার দায়ও স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো হয়েছিল। তবে হামাস রাফার মানুষকে মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে না বলেই জানিয়েছে।
এদিকে, রাফায় পাল্টা হামলা চালিয়ে হামাসের ওই হামলার জবাব দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১২ জন। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, কায়রোয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে দুই দিনের আলোচনা চলার পর এসব খবর সামনে এল। আলোচনায় খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই বলছে, তারা মূল দাবিগুলো মানবে না। তারপরও আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এবারের প্রস্তাবে ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া গাজা থেকে ইসরায়েলি জিম্মি ও ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির কথা বলা হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, তারা বর্তমান প্রস্তাবকে ‘ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে’ দেখছে। তবে মূল গণ্ডগোল বেঁধেছে যুদ্ধবিরতি সাময়িক হবে না কি স্থায়ী হবে, তা নিয়ে। হামাস চাইছে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত রবিবার এ ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্র এটি গ্রহণ করে নিতে পারছে না। আমরা এমন পরিস্থিতি মানতে প্রস্তুত নই, যেটিতে হামাস ব্রিগেড বাংকার থেকে বের হয়ে এসে আবার গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে, নিজেদের সামরিক অবকাঠামো পুনরায় গড়ে তুলবে এবং দক্ষিণের পর্বতের আশপাশে ও দেশের সব অংশে থাকা ইসরায়েলি অবকাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলবে। এটি হবে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের মারাত্মক পরাজয়।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আক্রমণ চালায় হামাস। সে সময় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। এ ছাড়া হামাস জিম্মি করে নিয়ে আসে কয়েক শ ব্যক্তিকে। এসবের জেরে গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। কিন্তু তাদের নির্বিচার হামলায় বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বেশি, এ পর্যন্ত ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজার ৯ শতাধিক।
এসব নিয়ে নেতানিয়াহু ও তার প্রশাসন মিত্র দেশ ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপের মুখে রয়েছেন। সূত্র: বিবিসি