ভারতে মঙ্গলবার (৭ মে) লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৬০ শতাংশ।
এবার সাত দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। তৃতীয় দফায় ভোট হয় ১০টি রাজ্য ও ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৯৩টি আসনে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল মোট ৯৪টি আসনে। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রার্থী না থাকায় গুজরাটের সুরাটে ভোট হয়নি।
সুরাট আসনে বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থীসহ যে আটজন দাঁড়িয়েছিলেন, তারা সবাই নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এতে করে সুরাটের বিজেপি প্রার্থী মুকেশ দালাল সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন।
বাকি ৯৩ আসনের মধ্যে গুজরাটে ২৫টি, কর্ণাটকে ১৪, মহারাষ্ট্রে ১১, উত্তরপ্রদেশে ১০, মধ্যপ্রদেশে ৯, ছত্তিশগড়ে ৭, বিহারে ৫, পশ্চিমবঙ্গে ৪, আসামে ৪ ও গোয়াতে ২টি আসনে ভোট হয়। এ ছাড়া দাদরা নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ– এই দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেও ভোট হয়েছে। মূলত তৃতীয় দফা সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটির ৫৪৩টি আসনের বেশির ভাগেই ভোট হয়ে গেল।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওই ৯৪ আসনের মধ্যে ৮১টিই পেয়েছিল বিজেপি জোট এনডিএ। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী ইউপিএ জোট পেয়েছিল মাত্র ১১টি আসন। আসামের একটি আসন এবং দমন ও দিউ আসনে ছোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন।
আগের ধারবাহিকতা ঠিক রেখে এবারও ওই আসনগুলোর বেশির ভাগে বিজেপিকে জিততে দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তৃতীয় দফায় হেভিওয়েট প্রার্থীরাও লড়েছেন। যেমন, গুজরাট রাজ্যের গান্ধীনগর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অমিত শাহ, যিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডান হাত হিসেবে পরিচিত। গান্ধীনগর আসনটিও বিজেপির শক্ত ঘাঁটি, সেটি প্রায় ৩৫ বছর ধরে দলটির দখলে রয়েছে।
ভোটে লড়েছেন বিজেপি নেতা শিবরাজ সিং চৌহানকেও। তিনি দাঁড়িয়েছিলেন বিদিশা আসন থেকে। ওই আসনটিও বিজেপির দখলে রয়েছে ৩৫ বছর ধরে। এ ছাড়া বিজেপির হয়ে মধ্য প্রদেশের গুনা রাজ্য থেকে দাঁড়িয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। বিজেপির প্রতীকে এটি তার প্রথম নির্বাচন হলেও এর আগে তিনি কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
বিজেপি এবারের লোকসভা নির্বাচনে চার শরও বেশি আসনে জেতার লক্ষ্য নিয়েছে। কিন্তু শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, তাদের সে স্বপ্ন হয়তো অল্পের জন্য পূরণ হবে না। ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে এ পর্যন্ত ওই রেকর্ড শুধু কংগ্রেসই করতে পেরেছে। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ডের পর দলটি বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে বিজয়ী হয়। সেবার দলটি আসন জিতেছিল ৪১৪টি।
সাধারণ নির্বাচন নয়: রাহুল গান্ধী
এদিকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন সাধারণ নির্বাচন নয় বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। পাশাপাশি তিনি ভোটারদের দলে দলে ভোট দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে রাহুল লিখেছেন, ‘আজ ভোটের তৃতীয় ধাপ। আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ জানাই দলে দলে এসে ভোট দেওয়ার এবং আপনাদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত করার। মনে রাখবেন, এটি সাধারণ নির্বাচন নয়। এটি গণতন্ত্র ও দেশের সংবিধানকে সুরক্ষিত রাখার নির্বাচন।’
এর আগে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গেও দেশের জনসাধারণকে দলে দলে এভাবে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানান। ১৪০ কোটি ভারতীয়র ভাগ্য যে এর ওপর নির্ভর করছে, সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে বলেন।
আহমেদাবাদে মোদির ভোট
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল সকালে গুজরাটের আহমেদাবাদে ভোট দেন। সকাল সাড়ে সাতটার কিছু সময় পর ভোটকেন্দ্র নিশান উচ্চবিদ্যালয়ে পৌঁছান মোদি। এ সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ তাকে অভিবাদন জানান। ওই স্থানে বিপুল মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। তারা মোদিকে দেখে স্লোগান দেন। সূত্র: এনডিটিভি, বিবিসি