বিভিন্ন বিষয়ের প্রতীক হিসেবে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। কখনো বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মরণে, ঐতিহাসিক ঘটনার উদযাপন কিংবা ধর্মীয় নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যম হিসেবে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্য কোনটি? যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪৩ মিটার উচ্চতার স্ট্যাচু অব লিবার্টি ভাস্কর্য, মাইকেলএঞ্জেলোর ৫ মিটারের ডেভিড ভাস্কর্য অথবা রিও ডি জেনিরোর ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার- এসব ভাস্কর্য বিশ্বের কয়েকটি বিখ্যাত নিদর্শন। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যগুলোর তুলনায় এগুলো অনেক ছোট। আসুন জেনে নেওয়া যাক, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যগুলো কতটা উঁচু এবং কোথায় অবস্থিত। জানাচ্ছেন আবরার জাহিন
দ্য স্ট্যাচু অব ইউনিটি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্য ভারতের গুজরাট রাজ্যের কেভাদিয়া শহরে অবস্থিত। ‘দ্য স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ নামে পরিচিত ভাস্কর্যের উচ্চতা ১৮২ মিটার। এটি লন্ডনের ‘বিগ বেন’-এর চেয়ে দ্বিগুণ ও নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অব লির্বাটির চেয়ে সাড়ে তিন গুণ উঁচু। যা প্রায় ৬০ তলা ভবনের সমান উঁচু।
দ্য স্ট্যাচু অব ইউনিটি ভাস্কর্যে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দেশটিতে তিনি লৌহমানব হিসেবে পরিচিত। যিনি ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশটির প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই বিশাল নির্মাণে প্রয়োজনীয় লোহা সংগ্রহের জন্য নানা ধরনের প্রচার কার্যক্রম চালানো হয়।
২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর ভাস্কর্যটির কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৩তম জন্মদিনে এটির উদ্বোধন করা হয়। ভাস্কর্যটি একই বছরের ১ নভেম্বরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
অতিকায় ভাস্কর্যটি তৈরিতে ১ হাজার ৭০০ টন ব্রোঞ্জ, ৫ হাজার ৭০০ টন স্টিল, ১৮ হাজার ৫০০ টন বিশেষ স্টিল বার এবং ২২ হাজার ৫০০ টন সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। খরচ হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ২ হাজার ৯৮৯ কোটি রুপি। দ্য স্ট্যাচু অব ইউনিটির ভাস্কর ভারতের ৯৩ বছর বয়সী শিল্পী রাম ভি সুতার।
স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাস্কর্যটি চীনের হেনান প্রদেশের লুশান কাউন্টির জাউকুন শহরে অবস্থিত। স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ নামের এই মূর্তি বৈরোচন বুদ্ধকে চিত্রিত করেছে। এটি একটি উষ্ণ ঝরনার কাছে অবস্থিত বলে ‘স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধ’ নামে পরিচিত। এই উষ্ণ ঝরনার নিরাময় ক্ষমতার জন্য খ্যাতি রয়েছে। এটি ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। ২৫ মিটার (৮২ ফুট) উচ্চতার একটি পদ্ম সিংহাসনসহ ১২৮ মিটার উচ্চতার এই মূর্তিটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভাস্কর্য।
বিশ্বাস স্বরূপম
বিশ্বাস স্বরূপম হলো ভারতের রাজস্থান রাজ্যের নাথদ্বারা শহরে নির্মিত হিন্দু দেবতা শিবের মূর্তি। ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর ১০৬ মিটার উচ্চতার এই মূর্তি উন্মোচন করা হয়েছে। কংক্রিটের নির্মিত এই মূর্তিতে তামার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু শিবমূর্তি।
অন্যদিকে বর্তমানে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ভাস্কর্য। মূর্তির ভেতরে একটি প্রদর্শনী হল রয়েছে। ২০ কিলোমিটার দূর থেকে স্পট দেখা যায়।
লায়কুন সেক্যা
মায়ানমারের খাতাকান তাউংয়ে অবস্থিত লায়কুন সেক্যা বুদ্ধমূর্তি অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। লায়কুন সেক্যা ভাস্কর্যটি গৌতম বুদ্ধের একটি হেলান দেওয়া মূর্তির পাশে আরেকটি মূর্তি দাঁড়িয়ে থাকা গৌতম বুদ্ধকে চিত্রিত করেছে। এটি তুলে ধরে বৌদ্ধ ধর্মীয় ‘পরিনির্বাণ’। বৌদ্ধ চিন্তাধারায় নির্বাণ হলো মৃত্যু ও পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি। পরিনির্বাণ হলো চূড়ান্ত নির্বাণ, যা জ্ঞানপ্রাপ্ত ব্যক্তির দেহের মৃত্যুর সঙ্গে ঘটে।
এটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সালে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। ২০০৮ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হলে এই মূর্তি সাময়িকভাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তির স্বীকৃতি লাভ করেছিল। তবে বর্তমানে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ভাস্কর্য। গৌতম বুদ্ধের এই ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১১৬ মিটার। এটি মায়ানমারের একটি আকর্ষণীয় স্থাপনা।
জাহ্নবী