ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
English

মহাকাশে বোয়িংয়ের প্রথম ক্যাপসুল

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০২:৩১ পিএম
মহাকাশে বোয়িংয়ের প্রথম ক্যাপসুল
ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি এভিয়েশন কোম্পানি বোয়িং তাদের প্রথম মনুষ্যবাহী ক্যাপসুল পাঠানোর মিশন শুরু করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এরই মধ্যে ক্যাপসুলবাহী রকেট কক্ষপথের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার কথা।

স্টারলাইনার নামের সেই ক্যাপসুলটি আগেই নাসার থেকে মনুষ্য মিশন পরিচালনা করার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।

প্রথম মিশনে স্টারলাইনারে চড়ে আইএসএসে যাচ্ছেন মহাকাশচারী বুচ উইলমোর ও সুনীতা উইলিয়ামস।

সোমবার (৬ মে) স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩৪ মিনিটে নাসার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস সেন্টার থেকে অ্যাটলাস ভি রকেটে করে যাত্রা শুরু করার কথা তাদের। এই রকেটটি আবার যৌথভাবে তৈরি করেছে ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স ও বোয়িং-লকহিড মার্টিন।

দুই নভোচারীর মধ্যে সুনীতা উইলিয়ামস এর আগেও আইএসএসে দুই দফা মিশনে ছিলেন। সব মিলিয়ে তিনি সেখানে কাটিয়েছেন ৩২২ দিন। এমনকি সাতবারে ৫০ ঘণ্টারও বেশি স্পেসওয়াক করেছেন তিনি। স্টারলাইনারে চড়ে আইএসএসে আবার যাওয়া নিয়ে সুনীতা বলেন, ‘আমি যখন মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাব, আমার মনে হবে আমি নিজের বাড়িতে ফিরে এলাম।’

তবে বোয়িংয়ের আগে আইএসএসে প্রথম বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে ক্যাপসুল পাঠিয়েছিল ইলন মাস্কের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএস। তাদের ‘ক্রু ড্রাগন’ ক্যাপসুল এখন পর্যন্ত মহাকাশে বহু মনুষ্যবাহী ও কার্গো মিশন পরিচালনা করেছে। সূত্র: নাসা

চামড়াশিল্পে অণুজীবের ব্যবহার

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১০:১০ এএম
চামড়াশিল্পে অণুজীবের ব্যবহার
চামড়া প্রক্রিয়াকরণে অণুজীবের কার্যকারিতা রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সারা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত হিসেবে পরিচিত চামড়া শিল্প। তবে এই শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সনাতন পদ্ধতিতে চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ক্রোমিয়াম, সালফাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া অন্যান্য ভারী ধাতুর ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। এ সমস্যা সমাধানে অণুজীবের ব্যবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা একটি বিপ্লবী পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন।

অণুজীবনির্ভর প্রযুক্তি চামড়াশিল্পে বিশাল পরিবর্তন এনেছে। চামড়া প্রক্রিয়াকরণে এর কার্যকারিতা দেখা যায়। সাধারণত চামড়া প্রক্রিয়াকরণের জন্য চুন ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। তবে বর্তমানে ব্যাসিলাস সাবটিলিস (Bacillus subtilis) নামের ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন ধরনের এনজাইম ব্যবহার করে চামড়া থেকে অপ্রয়োজনীয় প্রোটিন ও চর্বি অপসারণ করা হচ্ছে। এই জৈব পদ্ধতি কেবল পরিবেশবান্ধব নয়, বরং এটি চামড়ার গুণগত মানও বৃদ্ধি করে।

ট্যানিং প্রক্রিয়ায় অণুজীবের ব্যবহার দিন দিন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে ক্রোমিয়াম ট্যানিং পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তবে বর্তমানে ট্রাইকোডার্মা রিসেই (Trichoderma reesei) ও অ্যাসপারজিলাস নাইজার (Aspergillus niger) নামের অণুজীব থেকে তৈরি এনজাইম ব্যবহার করে ক্রোমিয়ামমুক্ত ট্যানিং করা সম্ভব হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে তৈরি চামড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠিন পরিবেশগত মানদণ্ডগুলোও পূরণ করতে পারে।

চামড়াশিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রেও রয়েছে অণুজীবের অনেক বেশি ভূমিকা। সিউডোমোনাস অ্যারুজিনোসা (Pseudomonas aeruginosa) ও অ্যাসপারজিলাস নাইগার-এর মতো অণুজীব ক্ষতিকর ‘ক্রোমিয়াম-৬কে’ কম ক্ষতিকর ‘ক্রোমিয়াম-৩এ’ পরিবর্তন করতে পারে। এ ছাড়া চামড়াশিল্পের জৈববর্জ্য পচিয়ে উন্নতমানের জৈবসার তৈরির প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করা হয়েছে।

রং ও ফিনিশিং করার পদ্ধতিতে অণুজীবের ব্যবহার চামড়াশিল্পে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। স্ট্রেপ্টোমাইসিস (Streptomyces) ও সিউডোমোনাস (Pseudomonas) প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক রং রাসায়নিক রঙের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই রংগুলো মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ।

বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ রাখতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য বিভাগ পরিবেশের জন্য ভালো হয়, এমন পদ্ধতিতে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে। এই প্রযুক্তি দেশের চামড়াশিল্পের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। প্রাথমিক খরচ ও উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এই প্রযুক্তি গ্রহণ করা কঠিন হতে পারে। এ ছাড়া রাসায়নিকের ওপর নির্ভরশীল শিল্পকারখানায় নতুন পদ্ধতি গ্রহণে কিছুটা অনীহা দেখা যায়।

এই সমস্যা মোকাবিলা করতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় স্তরে সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে। গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, শিল্প মালিকদের জন্য উৎসাহ প্রদান এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা- এই প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করতে সাহায্য করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৩০ সালের মধ্যে ক্রোমিয়ামবিহীন ট্যানিং বাধ্যতামূলক করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা এই প্রযুক্তির চাহিদা আরও বৃদ্ধি করবে।

চামড়াশিল্পে অণুজীবের ব্যবহার শুধু পরিবেশ রক্ষায় নয়, এটি এই শিল্পের দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি নিশ্চিত করবে। এই প্রযুক্তি চামড়াশিল্পকে নতুন অধ্যায়ে নিয়ে যাবে, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নতি ও পরিবেশের সুরক্ষা একসঙ্গে সম্ভব। বিজ্ঞান, শিল্প ও নীতিনির্ধারকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই পরিবর্তনকে দ্রুত করতে পারে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

/আবরার জাহিন

চীনে মানবমস্তিষ্কে ব্রেইন চিপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ০৪:৫৫ পিএম
চীনে মানবমস্তিষ্কে ব্রেইন চিপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ
চীনে মানবমস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তি শুধু চিন্তাশক্তির মাধ্যমে ভিডিও গেম খেলতে সক্ষম হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

মানবমস্তিষ্কে চিপ বসিয়ে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করেছে চীন, যাতে ব্যবহার করা হয়েছে ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) প্রযুক্তি। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তি শুধু চিন্তাশক্তির মাধ্যমে ভিডিও গেম খেলতে সক্ষম হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে চীন এই প্রযুক্তির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা শুরু করেছে। এর মাধ্যমে প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে।

চীনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, প্রথম পরীক্ষাটি করা হয়েছে ৩৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তির ওপর, যিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারটি অঙ্গ হারিয়েছেন। পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি শুধু চিন্তাশক্তির মাধ্যমে ভিডিও গেম ‘মারিও কার্ট’ খেলতে সক্ষম হন। 

গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীরা রোবোটিক বাহু কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এজেন্টও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

চীনা অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন ব্রেইন সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজিতে (সিইবিএসটিআই) এই পরীক্ষা চালানো হয়। এতে রোগীর খুলির ভেতর একটি ক্ষুদ্র গর্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে নরম ইলেকট্রোড বসানো হয়, যা স্নায়ুর কার্যকলাপ শনাক্ত করে।

সিইবিএসটিআইর গবেষক ঝাও ঝেংতুও বলেন, ‘ইলেকট্রোডটি এতটাই নরম যে, এটি বাঁকানোর জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয়, তা মস্তিষ্কের দুটি নিউরনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার শক্তির সঙ্গে তুলনীয়। এর ফলে ইলেকট্রোড দীর্ঘসময় ধরে মস্তিষ্কের টিস্যুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারে। এতে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয় না বা চিপটি বাদ দেওয়ার প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় না।’

বিসিআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের স্টার্টআপ নিউরালিঙ্ক ইতোমধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। নিউরালিঙ্কের চিপ ব্যবহার করে পঙ্গু ব্যক্তি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন।

ইলন মাস্ক দাবি করেন, আগামী দশ বছরে কয়েক মিলিয়ন মানুষকে নিউরালিঙ্ক চিপের আওতায় আনা হবে। তার মতে, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমন্বয়ের পথ খুলে দেবে। প্রাথমিক নিউরালিঙ্ক পরীক্ষাগুলো কোয়াড্রিপ্লেজিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপর নিবদ্ধ ছিল। নিউরালিঙ্কের প্রধানের মতে, বিসিআই ডিভাইসগুলো শেষ পর্যন্ত মানুষকে এআইর সঙ্গে যুক্ত হতে সাহায্য করবে, যা মানুষকে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্সের (এজিআই) সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষমতা দেবে।

সম্প্রতি নিউরালিঙ্ক নতুন করে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন পেয়েছে, যা দিয়ে বিশ্বব্যাপী তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।

অন্যদিকে চীনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিইবিএসটিআই জানিয়েছে, তারা ২০২৮ সালের মধ্যে নিজেদের প্রযুক্তি বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছে। প্রাথমিকভাবে এটি পঙ্গু ও মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্তদের জীবনমান উন্নত করতে চিকিৎসাযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের চিপ নিউরালিঙ্কের তুলনায় আকারে ছোট এবং আরও নমনীয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এই গবেষণা কেবল চিকিৎসা নয়, ভবিষ্যতের মানব-মেশিন সম্পর্কেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

গ্রেগর মেন্ডেলের যুগান্তকারী আবিষ্কার মটরশুঁটির বীজ থেকে জিনতত্ত্ব

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ১২:০৪ পিএম
গ্রেগর মেন্ডেলের যুগান্তকারী আবিষ্কার মটরশুঁটির বীজ থেকে জিনতত্ত্ব
মটরশুঁটির বীজ থেকে যুগান্তকারী জিনতত্ত্ব আবিষ্কার করেন গ্রেগর মেন্ডেল। ছবি: সংগৃহীত

সাধারণ দেখতে একটি মটরশুঁটির বীজ থেকে এক বিপ্লবী আবিষ্কারের সূচনা হয়েছিল। এই আবিষ্কার আমাদের জীবন ও অস্তিত্বের গঠন সম্পর্কে ধারণাই পাল্টে দিয়েছে। যুগান্তকারী এই আবিষ্কারের নেপথ্যে ছিলেন গ্রেগর জোহান মেন্ডেল নামের এক গির্জার যাজক, যিনি আজ বিশ্বজুড়ে ‘জিনতত্ত্বের জনক’ হিসেবে পরিচিত।

১৮৫৬ সালের বসন্তে অস্ট্রিয়ার ব্রনো শহরের এক অনাড়ম্বর গির্জায় মেন্ডেল তার গবেষণা শুরু করেন। সেখানে বিশাল কোনো গবেষণাগার বা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না। তার ছিল শুধু মাটি, গাছের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অনুসন্ধিৎসু মন। গবেষণার জন্য তিনি মটরশুঁটি গাছ বেছে নেন। কারণ এটি সহজলভ্য, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত ও দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে।

মেন্ডেল লক্ষ করেন, মটরশুঁটি গাছে নানা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। কোনো মটরশুঁটি গাছের ফুল বেগুনি, কোনোটির সাদা, কোনো গাছের বীজ গোল, কোনোটির আবার চ্যাপ্টা। তিনি হাজার হাজার উদ্ভিদের মধ্যে ক্রস-ব্রিডিং করে সযত্নে ফলাফল লিপিবদ্ধ করেন। বছরের পর বছর ধরে এই গবেষণা চলে, আর এর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বংশগতির অসাধারণ সূত্রগুলো আবিষ্কৃত হয়।

মেন্ডেলের গবেষণা তিনটি প্রধান সূত্রে প্রতিফলিত হয়েছে, যা আধুনিক বংশগতিবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেছে। এগুলো হলো:

পৃথকীকরণের সূত্র: প্রতিটি জীবের একেকটি বৈশিষ্ট্যের জন্য দুটি জিন থাকে, যার একটি আসে মাতৃসূত্র থেকে এবং অন্যটি পিতৃসূত্র থেকে।

স্বাধীন বণ্টনের সূত্র: একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী জিন অন্য বৈশিষ্ট্যের জিনকে প্রভাবিত না করে স্বাধীনভাবে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়।

প্রকট ও প্রচ্ছন্নতার সূত্র: সব জিন একইভাবে নিজেদের প্রকাশ করে না। কিছু জিন প্রকটভাবে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, অন্যগুলো প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে।

মেন্ডেল ১৮৬৬ সালে তার গবেষণা প্রকাশ করলেও তৎকালীন বিজ্ঞানী মহল সেটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেনি। ফলে জীবদ্দশায় তিনি এর স্বীকৃতি পাননি। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ১৯০০ সালে তিনজন ভিন্ন বিজ্ঞানী তার গবেষণা পুনরায় আবিষ্কার করলে বিশ্ব জানতে পারে, মেন্ডেল প্রকৃতির এক গোপন রহস্য বহু আগে উন্মোচন করেছিলেন।

আজ আমরা জিন, ডিএনএ, বংশগত রোগ, ক্লোনিং বা জিন-সম্পাদনার মতো যেসব বিষয়ে আলোচনা করি, তার মূলে রয়েছে মেন্ডেলের সেই মটরশুঁটি গাছ নিয়ে গবেষণা। কৃষি থেকে চিকিৎসা, প্রাণিবিজ্ঞান থেকে জৈবপ্রযুক্তি সব ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিদিন তার রেখে যাওয়া জ্ঞানের ভিত্তিতে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।

প্রকৃতি তার নিয়ম নানাভাবে প্রকাশ করে, তবে খুব কম মানুষ তা উপলব্ধি করতে পারেন। মেন্ডেল সেই বার্তা শুনতে পেয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, প্রতিটি বীজের ভেতর লুকিয়ে আছে বংশগতির ধারা, অতীত ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। নীরবে কাজ করে যাওয়া এই মহান বিজ্ঞানী শিখিয়েছেন, জ্ঞান অর্জন শুধু যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং তা গভীর পর্যবেক্ষণ, নিষ্ঠা ও ধৈর্যের সমন্বিত প্রয়াস।

মিসরের লাক্সরে নতুন তিন প্রাচীন সমাধির সন্ধান

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম
মিসরের লাক্সরে নতুন তিন প্রাচীন সমাধির সন্ধান
মিশরের লাক্সরে দ্রা আবু আল-নাগা সমাধিক্ষেত্রে হায়ারোগ্লিফের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ছবি: সংগৃহীত

মিসরের লাক্সর শহরে ফের নতুন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। দেশটির পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, লাক্সরের দ্রা আবু আল-নাগা সমাধিক্ষেত্রে নিউ কিংডম যুগের (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০-১০৭০) তিনটি নতুন সমাধির সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। সম্প্রতি মিসর সরকারের দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক অর্জন। এই আবিষ্কার দেশটির গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধনের আগে সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সুপ্রিম কাউন্সিল অব অ্যান্টিকুইটিসের মহাসচিব মোহামেদ ইসমাইল খালেদ জানান, সমাধিগুলোর দেয়ালে পাওয়া শিলালিপি ও চিত্রের মাধ্যমে মালিকদের নাম ও পদবি শনাক্ত করা গেছে। সমাধিগুলোর মালিকদের সম্পর্কে গভীর ধারণা পেতে অন্যান্য সমাধির শিলালিপি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

নতুন আবিষ্কৃত তিনটি সমাধির মধ্যে একটি আমুন-ইম-ইপেটের, যিনি রামেসাইড যুগে দেবতা আমুনের এস্টেটে কাজ করতেন। এই সমাধিটি বেশির ভাগই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তবে অবশিষ্ট অংশে ছিল শেষকৃত্যের আসবাবপত্র বহনকারীদের এবং এক ভোজসভার চিত্র।

আমুন-ইম-ইপেটের সমাধিটি একটি ছোট উঠোন দিয়ে শুরু হয়েছে, যা একটি প্রবেশদ্বার এবং তার পর একটি বর্গাকার হলের দিকে গিয়ে কুলুঙ্গিতে শেষ হয়। এর পশ্চিম দেয়াল ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

অন্য দুটি সমাধি ছিল ১৮তম রাজবংশের আমলের। এর মধ্যে একটি সমাধি বাকি নামের একজন ব্যক্তির, যিনি শস্যভাণ্ডারের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন। বাকির সমাধিতে একটি করে আঙিনা, দীর্ঘ করিডর, লম্বা হল ও অসমাপ্ত কক্ষ রয়েছে।

তৃতীয় সমাধিটি ছিল ‘এস’ নামের এক ব্যক্তির। তিনি একাধিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মরূদ্যানের আমুন মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক, লেখক ও উত্তর মরূদ্যানের মেয়রও ছিলেন। এই সমাধিতেও একটি ছোট আঙিনা, প্রবেশদ্বার ও লম্বা হল রয়েছে।

পর্যটন ও পুরাকীর্তিমন্ত্রী শেরিফ ফাতি এ আবিষ্কারকে মিশরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের আবিষ্কার ভবিষ্যতে সাংস্কৃতিক পর্যটন ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক হবে।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছর জানুয়ারিতেও লাক্সরের বিখ্যাত শহরের কাছে বেশ কয়েকটি সমাধি আবিষ্কৃত হয়েছিল। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬০০ বছর আগের প্রাচীন পাথরের তৈরি সমাধি ও সমাধির কূপ রয়েছে। এগুলো নীল নদের পশ্চিম তীরে দেইর আল-বাহরিতে কুইন হাটশেপসুটের সমাধি মন্দিরের কজওয়েতে আবিষ্কৃত হয়েছিল। গত বছরের শেষদিকে মিশরীয় ও আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদরা লাক্সরের কাছে ১১টি সিল করা কবরসহ একটি প্রাচীন সমাধি খনন করেন। এই সমাধি হাটশেপসুট মন্দিরের পাশে দক্ষিণ আসাসিফ সমাধিক্ষেত্রে পাওয়া গিয়েছিল।

এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে তারিখ জানানো হয়নি। তবে এই গ্রীষ্মেই গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম পুরোপুরি চালু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গিজায় অবস্থিত এই জাদুঘরে এক লাখের বেশি পুরাকীর্তি প্রদর্শন করা হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশরের হাজার বছরের ইতিহাসের নানা নিদর্শন।

এ ধরনের ধারাবাহিক আবিষ্কার প্রমাণ করে, মিশরের প্রত্নতত্ত্ব এখনো বিস্ময় আর রহস্যে ঘেরা। আর নতুন জাদুঘরের দ্বার খুললে বিশ্বের নজর আরও একবার ফিরবে মিশরের অতীত ঐতিহ্যের দিকে।

প্রতিকূলতা জয় করে বিজ্ঞানে অমর ম্যারি কুরি

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ০২:৪১ পিএম
প্রতিকূলতা জয় করে বিজ্ঞানে অমর ম্যারি কুরি
গবেষণাগারে কর্মরত ম্যারি কিুরি। ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সের এক ঠাণ্ডা শীতের সকাল। প্যারিসের ইকোল সুপেরিওর দে ফিজিকের এক ছোট্ট টিনশেড ঘরে তখন শোঁ শোঁ করে ঢুকছে হিমেল বাতাস। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যন্ত্রপাতি, ফ্লাস্ক আর কাচের সিলিন্ডার। টিনশেডের ওয়ার্কশপে এক রাসায়নিকের ওপর মনোযোগী এক নারী। নাম ম্যারি কুরি। বিজ্ঞানমনস্ক এই নারীর জীবনকাহিনি কেবল গবেষণার গল্প নয়, তা সংগ্রামেরও ইতিহাস।

বিজ্ঞানের ইতিহাসে ম্যারি কুরি এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি কেবল প্রথম নারী হিসেবে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার জয় করেননি, পরবর্তী সময়ে রসায়নেও নোবেল জয় করে গড়েন অনন্য নজির। ম্যারি কুরি এমন এক নারী, যিনি তার স্বামী পিয়েরে কুরির সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম নোবেল জিতেছিলেন। তার কন্যা আইরিন কুরিও পরে নোবেল পুরস্কার পান। তার জীবন ছিল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামের এক উপাখ্যান, যা আজও অগণিত মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়।

নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরি ও ম্যারি কুরি। ছবি: সংগৃহীত

পোল্যান্ডের ওয়ারশ শহরে ১৮৬৭ সালে রুশ শাসনের অধীনে জন্ম হয় মারিয়া সালোমিয়া স্কেলাদস্কার, যিনি পরে ম্যারি কুরি নামে পরিচিত হন। ম্যারির ডাকনাম ছিল মানিয়া। পরিবারে পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। মাত্র ৯ বছর বয়সে বড় বোনকে হারান এবং ১১ বছর বয়সে মাকে। এই শোক ও প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠা ম্যারি পড়াশোনার মাঝে খুঁজে নিতেন সান্ত্বনা ও শক্তি।

অসুস্থতা ছিল তার জীবনসঙ্গী। অপুষ্টিজনিত দুর্বলতায় ১৫ বছর বয়সে একবার জ্ঞান হারান। তখন বড় বোন ব্রনিয়া তাকে নিজের কাছে এনে যত্নে সুস্থ করে তোলেন। মানিয়া সব সময় পড়ালেখায় মগ্ন ছিলেন। বইয়ে ডুবে থেকে নিজেকে পুনরুদ্ধার করেছেন বারবার।

তৎকালীন পোল্যান্ডে নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই ১৮৯১ সালে বড় বোনের অনুপ্রেরণায় মানিয়া পাড়ি জমান প্যারিসে। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব প্যারিসে (সরবোন) ভর্তি হন পদার্থবিদ্যায়। সীমাহীন আর্থিক কষ্ট ও কঠোর অধ্যবসায়ের মধ্যে তিনি পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে দ্য সিটি অব প্যারিস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিজিকস অ্যান্ড কেমিস্ট্রি হায়ার এডুকেশন ইনস্টিটিউটে ডক্টরাল স্কলার হিসেবে বৃত্তি পান।

তার ইস্পাতে চৌম্বকত্ব নিয়ে পড়াশোনা করার কথা থাকলেও এতে তেমন আগ্রহ ছিল না। তিনি তখন ইউরোপের বিজ্ঞান বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেন। জেনেছেন উইলহেলম রন্টজেনের এক্স-রে আবিষ্কারের খবর। সে সময় রন্টজেন তার স্ত্রীর হাতের আংটিসহ একটি এক্স-রে ফিল্ম প্রচার করে পপ সংস্কৃতিতেও নিজের স্থান করে নেন। তবে পরমাণুর গঠন নিয়ে যে গবেষণা চলছিল আর্নেস্ট রাদারফোর্ড ও হেনরি বেকেরেলের গবেষণাগারে, তা মানিয়াকে আকৃষ্ট করে। তিনি বেকেরেলের ইউরেনিয়াম থেকে নির্গত রশ্মি আবিষ্কারে চমকিত হন এবং এ বিষয়ে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেন।

প্যারিসে তার পরিচয় হয় বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরির সঙ্গে, যিনি পরে তার জীবনসঙ্গী হন। এই দম্পতি একসঙ্গে শুরু করেন তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা। উনিশ শতকের শেষদিকে পরমাণুর গঠন নিয়ে নানা মতের উদ্ভব হয়। এই বিতর্কের ভেতর ১৮৯৮ সালে ম্যারি কুরি দাবি করেন, পরমাণুর ভেতরে পরিবর্তন ঘটছে। বেকেরেলের ধারণা পরিমার্জন করে ম্যারি বলেন, কেবল ইউরেনিয়াম থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পারমাণবিক রশ্মি নির্গত হয় না, অন্যান্য পরমাণু থেকেও তা হতে পারে।

তিনি বেকেরেলের ইউরেনিয়াম রশ্মির নাম পরিবর্তন করে একে ‘রেডিওঅ্যাকটিভ রেডিয়েশন’ বলেন। ম্যারি কুরি প্রথম ‘রেডিওঅ্যাকটিভিটি’ বা তেজস্ক্রিয়তা শব্দটি ব্যবহার করেন। প্রায় একই সময়ে রাদারফোর্ড বলেন, রেডিওঅ্যাকটিভ পরমাণু বিকিরণের পর নিজেই রূপান্তরিত হয়। ম্যারি কুরি ও রাদারফোর্ডের এই ধারণা ছিল সাহসী ও যুগান্তকারী। তিনি দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, পরমাণুর অভ্যন্তরে পরিবর্তন ঘটছে, যা ছিল তৎকালীন প্রতিষ্ঠিত ধারণার পরিপন্থি।

ম্যারি ১৯০০ সালে আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা কংগ্রেসে বলেন, ‘দ্য স্পন্টেনিটি অব রেডিয়েশন ইজ অ্যান এনিগমা, আ সাবজেক্ট অব প্রোফাউন্ড অ্যাস্টোনিশমেন্ট।’ অর্থাৎ পরমাণুর স্বতঃস্ফূর্ত বিকিরণ অবাক করা এক রহস্য। পদার্থের এই বিস্ময়কর গুণের পেছনের কারণ তাকে জানতেই হবে। 

তিনি বিস্তর পড়াশোনার মাধ্যমে জানতে পারেন, ১৪ শতকে চেক-জার্মান সীমান্তে রুপার খনিতে ‘পিচব্লেন্ড’ নামের একটি খনিজ পাওয়া গেছে। সে খনিজে ইউরেনিয়াম রয়েছে বলে ধারণা করা হতো। ম্যারি কুরি বোহেমিয়া থেকে প্রায় ৫ হাজার কেজি পিচব্লেন্ড নিয়ে এলেন নিজ গবেষণাগারে। তিনি ও পিয়েরে কুরি এই খনিজ থেকে ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য পারমাণবিক পদার্থ আলাদা করার কাজে লেগে পড়েন। এতে তারা ‘ফ্র্যাকশনাল ক্রিস্টালাইজেশন’ নামক এক নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে রেডিয়াম আলাদা করতে সক্ষম হন। এই পারমাণবিক পদার্থ পর্যায় সারণিতে ৮৮ নম্বর উপাদান হিসেবে যুক্ত হয়। এই আবিষ্কার পারমাণবিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

১৯০৩ সালে ম্যারি কুরি, পিয়েরে কুরি ও হেনরি বেকেরেল তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ম্যারি তার পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করেন। এটি ছিল নারী বিজ্ঞানীদের জন্য এক অসাধারণ অনুপ্রেরণা।

পরে ১৯১১ সালে রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কার এবং রেডিয়ামের বিশুদ্ধীকরণ ও বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের জন্য তিনি এককভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। এই মহীয়সী বিজ্ঞানী ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি দুটি ভিন্ন বিজ্ঞানে নোবেল পান এবং একমাত্র মা, যার কন্যা আইরিন কুরিও পরবর্তী সময়ে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

সাফল্যের পাশাপাশি তার জীবনে নেমে আসে গভীর শোক। ১৯০৬ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী পিয়েরে কুরির মৃত্যু হয়। স্বামীকে হারানোর পরও তিনি গবেষণার কাজ এবং দুই কন্যার প্রতিপালন নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যান। তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে দীর্ঘসময় কাজ করার ফলে তার স্বাস্থ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার পরও থেমে যাননি তিনি। ম্যারি কুরি বিশ্বাস করতেন, পরমাণুর গভীর রহস্য বিজ্ঞানের এক অমীমাংসিত ধাঁধা।

ম্যারি কুরির জীবন কেবল বৈজ্ঞানিক সাফল্যের কাহিনি নয়, বরং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থেকে অদম্য ইচ্ছা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জ্ঞানার্জন যে মানুষকে শোক ও হতাশা থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং কোনো বাধাই যে অদম্য সাহসের কাছে হার মানে, ম্যারি কুরির জীবন তারই এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।