ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা বিশাল আকারের প্রাচীন সামুদ্রিক সরীসৃপের জীবাশ্ম শনাক্ত করেছেন। সাগরে সাঁতার কাটা এই প্রাণী প্রায় ২০২ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরের পাশাপাশি বাস করত। সামনাসামনি রাখা দুটি বাসের চেয়েও দীর্ঘ এই প্রাণী।
২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের এক সমুদ্রসৈকতে একজন শৌখিন জীবাশ্ম সংগ্রাহক একটি হাড় খুঁজে পান, যা ছিল সামুদ্রিক সরীসৃপের জীবাশ্ম হয়ে যাওয়া চোয়ালের হাড়। ২০২০ সালে এক বাবা ও মেয়ে একই রকম আরেকটি চোয়ালের হাড় খুঁজে পান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবাশ্ম দুটি দৈত্যাকার ইকথায়োসর সরীসৃপের। এই সরীসৃপ প্রায় ২৫ মিটার দীর্ঘ হতে পারে।
এটি একটি বিশাল প্লিওসরের চেয়েও বড়। যার মাথার খুলি ডরসেট এলাকার খাঁড়া পাহাড়ে এম্বেডেড অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এটি ডেভিড অ্যাটেনবোরোর ডকুমেন্টারি ‘দ্য জায়ান্ট সি মনস্টার’-এ ছিল।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্যালিওন্টোলজিস্ট ড. ডিন লোম্যাক্স লিখেছেন, ‘চোয়ালের আকারের ওপর ভিত্তি করে আমরা অনুমান করতে পারি, পুরো প্রাণীটি প্রায় ২৫ মিটার লম্বা, যা প্রায় একটি নীল তিমির সমান দীর্ঘ।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাণীটির সঠিক আকার নিশ্চিত করতে একটি সম্পূর্ণ মাথার খুলি বা কঙ্কালের মতো আরও প্রমাণ প্রয়োজন। কারণ এখন পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি হাড়ের খণ্ড পাওয়া গেছে। দৈত্যাকার ইকথায়োসর ব্যাপকভাবে বিলুপ্তের পর বেঁচে থাকা ইকথায়োসররা আর কখনো বিশাল আকারে পৌঁছায়নি।’
জীবাশ্ম সংগ্রাহক পল দে লা স্যালে সামারসেট সমুদ্রসৈকত ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে প্রথম জীবাশ্মটি পান। যার মাধ্যমে প্রাণীটির অস্তিত্বের খবর প্রথম পাওয়া যায়। এ সময় তার স্ত্রী ক্যারল সঙ্গে ছিলেন। বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ স্টিভ এচেসের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ২৫ বছর ধরে জীবাশ্ম সংগ্রহ করেছেন।
এই জীবাশ্মটি পরে তার সারা জীবনের সন্ধানে পরিণত হয়েছিল। যখন তিনি ডিন লোম্যাক্সের সঙ্গে কথা বলে অনুমান করেছিলেন, তারা একটি বড় আবিষ্কারের দিকে যাচ্ছেন। তারা ২০১৮ সালে প্রথম তাদের আবিষ্কারের বিষয়টি প্রকাশ করেন। তবে প্রাণীটি কত বড় ছিল তা বোঝার জন্য তারা আরও প্রমাণ সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন।
ডিন লোম্যাক্স বলেন, ‘আমরা আরও আবিষ্কারের জন্য প্রত্যাশা করছিলাম।’ অবশেষে ২০২০ সালে মেয়ে জাস্টিন ও বাবা রুবি রেনল্ডসের উপকূলে পান এর আরেকটি জীবাশ্ম।
ডিন আরও বলেন, ‘আমি ব্যাপকভাবে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। আমি ঠিক সেই সময় বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের কাছে পলের মতো এই বিশাল ইকথায়োসরের দৈত্যাকার চোয়ালের দ্বিতীয় হাড় ছিল।’
পল সৈকতে ছুটে যান এবং তাদের রহস্য উন্মোচন করতে সাহায্য করেন। পল বলেন, ‘আমি সব কাদা খনন করেছি। প্রায় এক ঘণ্টা পর আমার বেলচা শক্ত কিছুতে আঘাত করে। হাড়টি পুরোপুরি সংরক্ষিত অবস্থায় বেরিয়ে এসেছিল।’ দলটির সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও দ্বিতীয় চোয়ালের টুকরোগুলো খুঁজতে থাকে, যার শেষ টুকরোটি ২০২২ সালে পাওয়া গেছে।
এই আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রাণীটির আকার অনুমান করার জন্য আরও প্রমাণ পাওয়া যায়। তখন তারা বিশাল এই প্রাণী ইকথায়োসরের একটি নতুন প্রজাতি হিসেবে শনাক্ত করেন। যাকে তারা ইকথিওটিটান সেভারনেনসিস বা সেভারনের দৈত্য টিকটিকি মাছ নাম দেন। ডিন রুবি রেনল্ডসের সঙ্গে সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র যখন লিখেছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, তিনি যে নমুনাটি খুঁজে পেয়েছেন তার নামও হতে পারে রুবি।
পল যে নমুনাটি পান, তা তিন বছর ধরে তার গ্যারেজে রেখে দলটি বিশ্লেষণ করে। শিগগিরই এটি ব্রিস্টল জাদুঘর এবং আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হবে। পল বলেন, ‘আমি এটি জানতে পেরেছি ও গভীরভাবে এটি নিয়ে পড়াশোনা করেছি। তবে এটি একটি স্বস্তিরও কারণ, আমাকে এটি নিয়ে আর ভাবতে হবে না।’ ডিন বলেছেন, আবিষ্কারটি তুলে ধরেছে শখের বশে জীবাশ্ম সংগ্রহ করাও কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবার ও সব ধরনের মানুষই আশ্চর্যজনক আবিষ্কার করতে পারে। যার জন্য তাকে একজন বিশ্ব বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। যতক্ষণ আপনার ধৈর্য এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকে, ততক্ষণ আপনি আবিষ্কার করতে পারেন।’
সূত্র: বিবিসি।
এ.জে/জাহ্নবী