ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রহিম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে বিনিয়োগ করবে ১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। নতুন বিনিয়োগের পর প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে প্রায় ২৪ শতাংশ। এতে লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটি মুনাফায় ফিরে আসবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নতুন বিনিয়োগের অংশ হিসেবে সর্বশেষ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। নতুন বিনিয়োগের অর্থায়ন করা হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য উৎস থেকেও অর্থের সংস্থান করবে প্রতিষ্ঠানটি।
রহিম টেক্সটাইল মিলসের কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, সময়ে সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে আধুনিকায়ন করতে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে পরিচালনা পর্ষদ। নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বাড়বে। তেমনি বাড়বে রাজস্ব।
তথ্যে দেখা যায়, রহিম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড মূলত নিউ এশিয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। বার্ষিক ২৪ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। তথ্যে দেখা, নতুন বিনিয়োগের অংশ হিসেবে অবকাঠামো নির্মাণ, যন্ত্রাংশ স্থাপন এবং আনুষঙ্গিক কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে।
আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের লোকসান হয়েছিল ১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি এ সময় বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, গ্যাসসংকট, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং ডলারের বিনিময় বৃদ্ধি ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
চলতি অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) মুনাফায় ফিরে এসেছে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির লাভ হয়েছে ৬০ লাখ টাকা। এক বছর আগে একই সময়ে মোট লোকসান ছিল ৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা লাভ করেছে। এক বছর আগে একই সময়ে প্রাতষ্ঠানটির লোকসান হয়েছিল ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বৃদ্ধির জন্য বাজারজাতকরণে খরচ হ্রাস, মৌলিক কাঁচামালের মূল্য হ্রাস, একই সঙ্গে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয় হ্রাস পাওয়ার কারণে লাভবান হতে সহায়তা করেছে বলে জানানো হয়েছে।
তথ্যে দেখা যায়, রহিম টেক্সটাইল মিলের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক তিন কোটি ইয়ার্ড (৩০০ লাখ গজ) ডাইং, প্রিন্টিং এবং ফিনিশিং। নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের পর প্রতিবছর ১৯ লাখ ৪৪ হাজার গজ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সক্ষমতা বৃদ্ধির পর ৩১ লাখ ৫০ হাজার শঙ্কুর সেলাই থ্রেড, ৪৫ লাখ পিস ড্র কর্ড, ২৫২ লাখ ইয়ার্ডের ইলাস্টিক টুইল। ৪৫ লাখ গজের টেপ, ৭ লাখ ২০ হাজার গজের জ্যাকার্ড টেপ এবং বছরে ৩০০ লাখ পিস হিট সিল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
এতে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বিক্রয় থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে প্রায় ২৪ শতাংশ। এতে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃদ্ধি পাবে বলে জানানো হয়েছে। নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের পর পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। এতে এসব পণ্য আগের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি করা যাবে।
রহিম টেক্সটাইল মিলস টেক্সটাইল খাতের শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প। প্রতিষ্ঠানটি রং, মুদ্রণ এবং কাপড় ফিনিশিংয়ের কাজ করে থাকে।
১৯৮৮ সালে তালিকাভুক্ত রহিম টেক্সটাইলের অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ২৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৯৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬৮৩। এর ৭১ দশমিক ১৭ শতাংশ কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালক, ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে।